হৃৎপিণ্ড_২ ( দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ) পর্ব ৩০

0
377

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩০
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
ইরাবতী খাবার বেড়ে ছেলে এবং ছেলের বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আকরাম চৌধুরী খাওয়া শুরু করেছে। খেতে খেতেই সে বললো,

“মুরাদ তো ছেলের বাবা হয়ে গেলো। কদিন পর দিহানও বাবা হবে। তোমার কি মনে হয় না আমাদেরও একটা বংশধরের প্রয়োজন? ”

“মনে হবে না কেন? সব কিছুরই একটা সময় আছে ওদের কেবল বিয়ে হলো বছর গড়াক তারপর না হয় বলা যাবে। ”

আকরাম চৌধুরী মুচকি হেসে ইরাবতীর কথায় সম্মতি দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিচে এলো মুসকান। পিছু পিছু এলো ইমনও। ইরাবতী মুসকান’কে উদ্দেশ্য করে বললো,

“মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে তাড়াতাড়ি বসো খেয়ে নাও। দুপুরের খাবারটা খেয়ে তো হসপিটাল যাবে। এ বাড়ি না আসো ও বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিতে। ”

মাথা নিচু করে বসলো মুসকান বসলো ইমনও। মুসকানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে খাবার খেতে শুরু করলো ইমন। ইরাবতী মুসকানের দিকে প্লেট এগিয়ে নিজেও বসে পড়লো। সবাই যখন খাওয়াতে মগ্ন মুসকানের তখন গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। সেই সকালে খেয়েছিলো তারপর এক ফোঁটা পানিও পেটে পড়েনি। গ্যাস্ট্রিকে বুকে, পিঠে চাপ দিচ্ছে। ক্ষুধাও মরে গেছে কেমন। কিন্তু এই সমস্যা গুলো এখন কাউকে বোঝানো মানে নিজের ওপর আরেকদফা ঝড় ওঠা। তাই দাঁতে দাঁত চেপে খাবার গিলার চেষ্টা করলো। ইমনের বাবার খাওয়া শেষে তিনি চলে গেলেন৷ ইমনও খাওয়া শেষ করে উপরে চলে গেলো। মুসকানের গলা অবদি ভাত আঁটকে ছিলো। শ্বশুর আর স্বামী ওঠে যাওয়ার পর পরই সাহস করে ছুটে বেসিনের সামনে গিয়ে গড়গড় করে বমি করতে লাগলো। ইরাবতী চমকে গিয়ে ভয়ে শিউরে ওঠলো। ছুটে গিয়ে ধরলো মুসকান’কে। উপর থেকে দ্রুত পায়ে নেমে এলো ইমনও। কারণ সে আগেই টের পেয়েছিলো এমন কিছু ঘটবে। তাই রুমে না গিয়ে দোতলা থেকেই নিচের দিকে খেয়াল রাখছিলো। তার ধারণাই সঠিক হলো।

চোখে, মুখে পানি দিয়ে মুসকান’কে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো ইরাবতী। ইমন গ্যাসট্রিকের ওষুধ ইরাবতীর হাতে দিয়ে প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে চলে গেলো উপরে। শরীরে আর কুলচ্ছে না মুসকানের। বমি করে একেবারেই শরীরটা নেতিয়ে গেছে ওর। ইরাবতী ওষুধটুকু খাওয়িয়ে দিয়ে ইমনকে ডেকে পাঠালো। সে নিশ্চিত তার ছেলে চরম খারাপ লাগা নিয়ে রুমে ঘাবটি মেরে বসে আছে। যা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাই ঘটে বারংবার। মুসকানটাও নিজের বোঝ টা বুঝতে চায় না। নিজের দোষে নিজে অসুস্থ হবে পাশাপাশি ছেলেটাকে মানসিক চাপ দেবে। এই মেয়ে এতো অবুঝ কেন বুঝে পায় না ইরাবতী। সবার বেলায় সব বোঝে শুধু নিজের বেলায় গাফিলতি। যার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয় ইমনেরও।
.
পারুল এসে এক প্লেট ফল আর এক গ্লাস জুস দিয়ে গেলো। ইমন সেগুলো নিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে বিছানায় এসে বসলো। মুসকান চুপ মেরে বসে আছে। শরীর খারাপ লাগার পাশাপাশি ভয়ে দম বন্ধ লাগছে তার। ইমনের চিন্তান্বিত অস্থির মুখটুকু দেখেই বার বার গলা শুকিয়ে আসছে। কিন্তু ইমন অত্যন্ত শান্ত গলায় বললো,

“খেয়ে নাও। ”

মুসকান ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে খেতে লাগলো। ইমন বললো,

“তাড়াহুড়োর কি আছে আস্তেধীরে খাও আমি বকবো না, রাগারাগিও করবো না। ”

ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো মুসকান। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইমন এক হাত বাড়িয়ে মুসকানের কপোল ছুঁয়ে বললো,

“দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিলে এমন অবস্থা হতো না মুসকান। আর আমিও রিয়্যাক্ট করতাম না। ”

চোখ বেয়ে জল পড়তে শুরু করলো। এক আঙুলে সে জলটুকু মুছে দিয়ে মাথা এগিয়ে কপালে চুমু খেলো ইমন। বললো,

“মুরাদ বাবা হয়ে গেলো দিহানও হবে। আর আমার বউটা এখন অবদি নিজের যত্নই শিখলো না। এভাবে চলতে থাকলে আমি বাবা হওয়ার সাহসটুকু কোথায় পাবো মুসু? ”

নিজহাতে এক টুকরো আপেল মুখে তুলে দিলো ইমন। মুসকান চিবুতে চিবুতে অস্ফুট স্বরে বললো,

” তোমার সাহস লাগবে না বাচ্চা তো আমার পেটে থাকবে সাহস তোমার দিয়ে কি হবে? আমি এ মাসেই কনসিভ করবো। ”

হেসে ফেললো ইমন। গ্লাস সম্মুখে ধরে জুস খেতে ইশারা করলো, বললো,

“শরীরে এক কেজি মাংস নাই সে আবার করবে কনসিভ। নিজেরই কেয়ার করতে জানেনা সে আমার বাচ্চা’কে কি করে কেয়ার করবে? ”

গ্লাস সরিয়ে দিয়ে অভিমানী সুরে মুসকান বললো,

“কি বললে আমি তোমার বাচ্চার কেয়ার করতে পারবো না? তোমার কেয়ার করতে পারলে বাচ্চার কেয়ার কেন পারবো না তুমি কি আমাকে অযোগ্য বউ এবং মা বলতে চাচ্ছো? ”

বাঁকা হাসলো ইমন। আবারো জুসের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে খেতে ইশারা করলো। মুসকান নাক কুঁচকে নিজেই গ্লাস ধরে জুস খেতে লাগলো। ইমন মুচকি হেসে বললো,

“হাজব্যান্ডকে আর কই কেয়ার করো এই তিনমাসে একটা দিন স্বেচ্ছায় কাছে এসেছো? ”

“স্বেচ্ছায় কাছে যাওয়ার সুযোগ তুমি দিয়েছো ? ”

ইমন হকচকিয়ে গেলো। হকচকিয়ে গেলো মুসকান নিজেও। জুস গলায় আঁটকে কেশেও ওঠলো সে। কথার তালে তালে এমন একটি কথা বলে ফেলবে মুসকান নিজেও টের পায়নি। এবার লজ্জায় তার নাজেহাল অবস্থা। ইমন চোখ বড়ো বড়ো করেই তাকিয়ে আছে। মুসকান আড়চোখে ইমনের অমন চাহনি দেখে কপট রাগ দেখিয়ে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,

“এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি খাবো না। ”

“এক গ্লাস জুস খেতে এতো আহানা বাহান কেন? এবার কি আমাকে লাঠি বানাতে হবে? ”

“তুমি আমাকে মারবে? ”

“এটা শেষ করো তাহলে আদর করবো। ”

মুসকান চটপট জুসটুকু শেষ করলো। তারপর ইমনের পকেট থেকে ফোন বের করে কল করলো মুরাদকে। মুরাদ কল রিসিভ করতেই মুসকান বললো,

“দাদাভাই মুয়াজ কেমন আছে? ”

ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো,

“মুয়াজ আবার কে? ”

মুসকান ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“বাবুর নাম মুয়াজ রেখেছি মুরাদের ছেলে মুয়াজ সুন্দর না। ”

ফোনের ওপাশ থেকে মুরাদ বললো,

“বাবু ভালো আছে তুই খেয়েছিস? ”

“হ্যাঁ তোমরা খেয়েছো আম্মু কোথায়? ”

“এইমাত্রই খাইলাম রে আম্মা এখন খাচ্ছে। ”

“আচ্ছা তাহলে সকালে দেখা হচ্ছে এখন রাখি। ”

“সাবধানে আসিস। ”
.
দু’বছর পর –

রাত তখন প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। মুসকান বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছে আর ইমন সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করছে। বই পড়তে পড়তে চোখে প্রায় ঘুম নেমে এসেছে মুসকানের। এমন সময় ভিডিও কল এলো সায়রীর ফোন থেকে। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম উড়ে গেলো মুসকানের। কল রিসিভ করেই সায়রীর দেড় বছরের ছেলেটার সঙ্গে মেতে ওঠলো সে। সায়রীর ছেলের নাম রিহান। নামটা রেখেছে মুসকান নিজেই। প্রায় সময়ই মুয়াজ আর রিহানের সঙ্গে ভিডিও কলে সময় কাটায় সে। যা দেখেই বুকটা হাহাকার করে ওঠে ইমনের। বিয়ের একটা বছর কতোই না আবদার করেছে মেয়েটা একটা বাচ্চার জন্য। চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখেনি কিন্তু ইমনের কঠিন নিয়মে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। তারপর যখন সিদ্ধান্ত নিলো এবার বাচ্চা নেবে তখনই জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। এক সন্ধ্যায় মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। কার এক্সিডেন্টে মারাত্মক ইনজুরি হলো ইমনের৷ দীর্ঘ ছ’মাস চিকিৎসা চলার পর ওঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলেও ঠিকভাবে চলতে সমস্যা হতো। দেশ,বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ করে গতমাসেই মুসকান’কে নিয়ে দেশে ফিরেছে সে। এতো ঝামেলায় মুসকানের আর সেকেন্ড ইয়ারে এক্সাম দেওয়াও হয়নি। এইটুকু বয়সে এতোখানি সেক্রিফাইসই যথেষ্ট ইমনের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটার। প্রায় এক বছর হয়ে এলো তারা সেভাবে একে অপরের কাছাকাছি আসেনি। ২১ বছর বয়সী এক যুবতী মুসকান। জীবনের শুরুতেই এতো বড়ো ধাক্কা খেয়েও পিছু হাঁটেনি। বরং সবসময় নিজের সবটুকু দিয়ে ইমনের পাশে থেকেছে। এক্সিডেন্টের তিনমাস পর যখন শয্যায়িত ইমনের পাশে বসেই তার দাদি বলেছিলো,

“হায় হায় রে কি সর্বনাশ ঘটলোরে এমন অচল পোলাডার এখন কি হবে? এই বউতো এই ঘরে আর থাকবো না। না জানি কবে শুনি আকরামের ছেলের বউ গেছেগা। ”

এমন কথা শুনে অসুস্থ ইমনের দুহাত যখন মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছিলো। অঝড় ধারায় কাঁদতে কাঁদতে মুসকান কেবল একটি কথাই বলেছিলো,

“দাদি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আপনার নাতী’কে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগেই যেনো আমার মৃত্যু ঘটে।”

তার কিছুদিন পর যখন পাড়া-পড়শীররা তাকে দেখে কানাকানি করতো বলতো,

“এই মেয়ে জীবনেও এই ঘর করবো না৷ এতো কম বয়সী মেয়ে তারওপর বাচ্চা কাচ্চাও হয় নাই। এতো বয়সী ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করছিলো। বছর গড়াতে না গড়াতে শয্যায়িত হয়ে গেলো। আমি নিশ্চিত পরোকিয়ায় লিপ্ত হবে এই মেয়ে। টগবগে শরীরেরও তো কিছু চাহিদা আছে…. ”

সেদিন এমন কথোপকথন কানে আসায় ছুটে এসে ইমনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো মুসকান। কথায় আছে মানুষের বয়স বাড়ে পরিস্থিতির চাপে। মুসকানেরও বয়স বেড়ে গেলো। চারদিকের পরিস্থিতি তাকে করে তুললো ধৈর্য্যশীল। বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর সফলতাও আসলো। সেদিন যারা নানারকম কথাবার্তা বলে ওকে ভেঙে চুড়ে দিয়েছিলো আজ তারাই ওকে নিয়ে গর্ব করে। ইমন’কে উচ্চবাক্যে বলে, ” অনেক ভাগ্য করে এমন বউ পেয়েছো। ” ইমন তখন মুচকি হাসে প্রশান্তি’তে ভরে ওঠে তার বক্ষঃস্থল।
.
কথা শেষ করে বিছানা গোছাচ্ছিলো মুসকান। বিছানা গোছানো শেষে লক্ষ্য করলো ইমন ঘরে নেই। ভ্রু কুঁচকে বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে পা বাড়ালো। ইমন বেলকনির রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার আকাশের দিকে নিবদ্ধ। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো মুসকান। পিছন না ঘুরেই ডান হাত আকাশের দিকে ইশারা করে ইমন বললো,

“মুসকান একাকী রাতের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ঐ এক ফালি চাঁদ! আর আমার পুরো জীবনের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী তুমি। ”

বুকের ভিতর অস্থিরতা বেড়ে গেলো মুসকানের। কাঁদতে ইচ্ছে করলো খুব৷ তার জীবনে অসংখ্য রাত কেটেছে নির্ঘুম। গত বছরগুলোতে অসংখ্য রাত দিন কেঁদে ভাসিয়েছে। উপরওয়ালার নিকট দু’হাত তুলে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে মানুষটার জন্য। তার কিছু চাওয়ার ছিলোনা শুধু মাত্র ইমনের প্রাণ ব্যতিত। আজো তার কিছু চাওয়ার নেই ইমন ছাড়া কিছুই চাইনা তার। শুধু পাশে হাতে হাত ধরে মানুষ টা থাকলেই চলবে। নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে মানুষ’টার বুকে একটুখানি ঠাঁই হলেই চলবে। দু’হাত বাড়িয়ে পিছন থেকে প্রচণ্ড শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুসকান ইমনকে। ফুঁপিয়ে কেঁদেও ওঠলো খুব। পিছন দিক হাত বাড়িয়ে মুসকানের দুহাত ধরে তার দিকে ঘুরলো ইমন। কপাল কুঁচকে বললো,

“কাঁদছো কেন? রিহানের সাথে কথা শেষ? ”

আবারো জড়িয়ে ধরলো মুসকান। বুকে মাথা রেখে নাক টানতে টানতে বললো,

“অনেক আগেই কথা শেষ। ”

“তাহলে কান্না কেন? ”

“এমনি। ”

“উহুম এমনি তো নয় কিছু একটা ভেবেই তো কান্না এসেছে। ”

“কিছু না। ”

চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে বুকে পড়ে রইলো মুসকান। ইমন লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে মুসকানকে সোজা করে দাঁড় করালো। দু’হাতের আঁজলে কপোলজোরা নিয়ে প্রগাঢ় চাহনিতে চেয়ে বললো,

” I want to give you baby gifts Do you want to give me baby gifts? ”

চমকে তাকালো মুসকান পরোক্ষণেই মাথা নুইয়ে ফেললো। নিঃশ্বাস ভারী করে শব্দ করে কেঁদে ওঠলো বললো,

“আমি কিছুই বলবো না তোমাকে, কিছুই বলবো না। ”

প্রচণ্ড অভিমানে আরক্ত হয়ে বলা কথাটি শুনতেই চোখ ছোট ছোট করে ফেললো ইমন। বললো,

“এতো অভিমান? সব অভিমান ভালোবাসা আর আদরে আদরে চুকিয়ে দেবো আজ।”

এক ঝটকায় ইমনের থেকে সরে গেলো মুসকান।
বাঁকা হেসে রুমে গেলো ইমনও।
.
সূর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে। গোধূলির পরে আসে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা যতই বাড়তে থাকে রাতের আগমণ ততই ত্বরান্বিত হয়।রাত যেমন প্রতিটি মানুষের বিশ্রামের সময় তেমন বিশেষ কোন আনন্দঘন মুহূর্ত ও ভালোবাসার সময় কাটাবার জন্যও নিখুঁত।

দীর্ঘ একটা সময় পর দু’টো মানুষ একে অপরকে কাছে পেলো। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পবিত্র। সেই পবিত্রতাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে মুসকান। নিজেকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে পেরেছে সে। কঠিন সময় গুলোতে সকলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সে ইমন চৌধুরীর যোগ্য স্ত্রী, সে ইমন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী। দীর্ঘদিনের তৃষ্ণার্ত একজোড়া মানব-মানবী যখন একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়। তখন তাদের মাঝে কতোটা আবেগ,কতোটা ভালোবাসা কতোটা সুখের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তা কেবল যেসব স্বামী স্ত্রী একে অপরের থেকে দীর্ঘকাল দূরে থেকে আবারো এক হয়েছে তারাই জানে। ভালোবাসাময় একটি রাত, ভালোবাসাময় অজস্র স্পর্শগুলোয় বিভোর থেকে নতুন দিনের সূচনা ঘটলো ইমন মুসকানের। সারারাত আজ কেউ দু’চোখের পাতা এক করেনি৷ তৃষ্ণার্ত প্রেমিকটি আজ একটুও ছাড় দেয়নি তার প্রিয়তমাকে। আর না তার প্রিয়তমা বাঁধা দিয়েছে তাকে। সে কেবল নিজের সর্বস্বটা দিয়ে স্বামী নামক মানুষটিকে খুশি করতে চেয়েছে। কিন্তু আসল খুশি আসল সুখ তো সেদিন পাবে মানুষ টা যেদিন তাদের স্বামী স্ত্রীর মিলনে উপরওয়ালা খুশি হয়ে একটি সন্তান দান করবে।
___________________
অফিস থেকে হঠাৎই কল করে ইমন অর্ডার করলো শাড়ি পড়তে। হঠাৎ শাড়ি, কোথাও বের হবে এমন প্রশ্ন করতেই সে বললো,

“ইয়েস ডিয়ার আপনাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো আজ। ”

তাই মুসকান নিজেকে বেশ পরিপাটি করে সাজাচ্ছে। এতোগুলো দিনে শাড়ি পরাটাও শিখে নিয়েছে সে। শিখবে নাই-বা কেন? মানুষ টা যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলো তখন মাঝে মাঝেই যেভাবে হোক যেভাবে পারে সেভাবেই শাড়ি পরে পাশে বসে থাকতো। আর ইমন নির্নিমেষ দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকতো। এভাবে বেশ কয়েকবার পরতে পরতে এক সময় পারফেক্টভাবে শাড়ি পরাও শিখে নিলো। ইমনের শূন্যতায় অনেক কিছুই শিখে নিয়েছে সে। আর সে শূন্যতাগুলোই একসময় পূর্ণতায় রূপ নিয়েছে। সব কিছুর পরও উপরওয়ালার নিকট শুকরিয়া জানায় সে। কারণ শেষ টা সব সময় ভালোই হয়।
.
রুমে প্রবেশ করতেই ইমন দেখতে পেলো মুসকান তার ব্লাউজের ফিতা বাঁধতে চেষ্টা করছে। তাই দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ওর হাত সরিয়ে নিজেই বেঁধে দিতে দিতে বললো,

“আমি ছাড়া কিছুই সম্পূর্ণ হবে না। ”

আয়নায় তাকালো মুসকান ইমনের দৃষ্টিও আয়নাতে নিবদ্ধ। লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো মুসকানের চোয়ালজোড়া। তার সে লজ্জাটুকু আরেকটু গাঢ় করার জন্য ইমন আয়নাতে পুরোপুরি দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,

“অনেকটাই চেঞ্জ এসেছে দেখছি… ”

ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো মুসকান,

“কিসের? ”

ইমন দুষ্টু হেসে ঘাড়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে ভারী আওয়াজে বললো,

“বউয়ের। ”

শিউরে ওঠলো মুসকান। সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বললো,

“ধ্যাত সরো তুমি। ”

ইমন সরলো না বরং তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ছুঁইয়ে বললো,

“চুল তো একে একে পেকে যাচ্ছে বউ এবার তো মন বাবা ডাক শুনতে চায়।”

“আমিও শোনাতে চাই। ”

ইমন মুসকানের পেটে আলতো স্পর্শ করলো। শিউরে ওঠে ইমনের হাত চেপে ধরলো মুসকান। ইমন কাঁধে থুতনি ঘষতে ঘষতে বললো,

“সে যে এতো শিঘ্রই আসবে ভাবিনি। ”

আঁতকে ওঠলো মুসকান পিছন ঘুরে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“তুমি রিপোর্ট পেয়েছো? ”

মাথা দুলিয়ে হাসলো ইমন বললো,

“বলা বারণ। ”

কেঁদে ফেললো মুসকান হাত বাড়িয়ে ইমনের দুগাল আঁকড়ে ধরে বললো,

“আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্লিজ বলো? ”

মুসকানের কাঁপা হাতের স্পর্শে ,কাঁপা কন্ঠে স্থির হয়ে গেলো ইমন। সহসা জড়িয়ে ধরে মাথায় পরপর তিনবার চুমু খেয়ে বললো,

” তোমার মাঝে আমার ছোট্ট অংশ বেড়ে ওঠছে মুসকান। ফাইনালি আমি বাবা এবং তুমি মা হতে যাচ্ছি। ”

দু’হাতে ইমনের পিঠ খামচে ধরলো মুসকান। ফুঁপিয়ে ওঠে বললো,

“মা’কে বলেছো? আমি আম্মুকে ফোন করবো। ”

“ভয় লাগছে না? ”

“একটুও না। ”

“আমি যতোটা খুশি ততোটাই ভীতিগ্রস্ত হয়ে আছি। আমার বউ, আমার পিচ্চি বউ এতোটা মাস পিচ্চি পেটটাতে বাচ্চাটা ক্যারি করবে কি করে? ”

“পিচ্চি বউ পিচ্চি পেট বলে বলে ঢং করোনা তো। এতোই যদি দরদ তোমার বড়ো পেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করো তাহলে। ”

“হোয়াট! ”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here