#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৯
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
আর দেরী করলো না ইমন ঘোরের মাঝে মুসকান তার মনের যে সত্যিটা প্রকাশ করে দিয়েছে তা তাদের দুজনকে একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলিত করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ইমন যখন তাকে পাঁজাকোল করে বিছানার দিকে এগুতে লাগলো সে তখন মৃদু কেঁপে ওঠলো। হুঁশে এসে বুঝলো সে কি ভয়ংকর বাক্য এবং শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছে!
সর্বাঙ্গ কাঁপছে মুসকানের। একজোড়া মানব-মানবীর নিঃশ্বাসের তীব্র শব্দে পুরো ঘর মুখরিত হয়ে ওঠেছে। মুসকানের ভয়ার্ত মুখশ্রী সারা শরীরে ভয়ংকর কম্পন ওঠায় কিছুটা দুঃশ্চিতায় পড়ে গেলো ইমন৷ দু’হাতে বিছানা খামচে ধরে ঠোঁট কামড়ে কাঁপছে মুসকান। ইমন নিজের শার্টের বোতামগুলো পরপর খুলে দেহ থেকে শার্টটি বিচ্যুত করে ফেললো। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো মুসকানের দিকে। একহাত মুসকানের থুতনিতে রেখে মুখ উঁচিয়ে মাতোআরা সুরে বললো,
“আমার মনে হয় আরো সময় নেওয়া উচিৎ। ”
চোখ বুজেই ভয়ানকভাবে শ্বাস নিতে থাকলো মুসকান। ইমন বুঝলো সত্যি মুসকানের সময়ের প্রয়োজন তাই ওঠার জন্য উদ্যত হলো। মুসকান যখন টের পেলো ইমন সরে যাচ্ছে তখন আঁতকে ওঠে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে একহাতে খামচে ধরলো ইমনের হাত। ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মুসকান তাকে চাইছে আবার ভয়ও পাচ্ছে। কতোটা নার্ভাস হয়ে আছে তা কেবল ওর চোখে মুখেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। পুরো মুখশ্রীতে ঘামগুলো চকচক করে ওঠেছে৷ ঘাম জমেছে নাকে ওষ্ঠের উপরে, থুতনিতে। বক্ষঃস্থল করছে ক্রমশ ওঠানামা। এই অনুভূতি হবেই না বা কেন? একজন পুরুষ কে যে কিনা তার স্বামী তার কাছে নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেবে। হয় যদি প্রথম অনুভূতি তাহলে তো বোঝাই যায় কতোটা ঝড় কতোটা যন্ত্রণাময় সুখ মিশ্রিত থাকে। ইমনও ঠিক বুঝলো মুসকানের ভিতর কি চলছে৷ তাই আর দূরত্ব নয় এভাবে আর সময় নেওয়ার মানে হয় না৷ বরং মুসকানের ভয়টুকুকে জয় করতে হবে। দূরে নয় কাছে গিয়ে এই ভয় দূর করতে হবে। হাজব্যান্ড ওয়াইফ তারা তাদের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণও দূরত্ব থাকতে পারেনা। একে অপরের কাছে নিজেকে মেলে ধরার প্রথম ধাপ বোধহয় আজ থেকেই শুরু৷
লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো ইমন। অজস্র মায়া ভরা আদরে ভরিয়ে তুললো মেয়েটাকে। অন্যসব পুরুষদের মতো প্রথম মিলনে স্ত্রী’র যন্ত্রণায় সুখ খুঁজে পেলো না। বরং আফসোস হলো কেন এতোটা কষ্ট পেতে হলো মুসকান’কে?
.
রাত তখন বেশ গভীর। পুরো শরীর ভয়ংকর মাত্রায় কাঁপছে মুসকানের৷ দুচোখ বেয়ে ঝড়ছে অজস্র অশ্রুকণা। মুসকান’কে বুকে জড়িয়ে স্থির হয়ে শুয়ে আছে ইমন৷ কষ্ট হচ্ছে তার খুব কিন্তু করার সত্যি কিছু নেই। কিছু সুখ থাকে যা কেবল যন্ত্রণা দিয়েই পাওয়া যায়। যেমনটা একজন মা হাজারো ত্যাগ স্বীকার করে অকুলান প্রায় ব্যাথা সহ্য করে একটি শিশুকে জন্ম দেয় এবং তার ওষ্ঠকোণে ফুটে ওঠে সার্থকতার এক হাসি। পৃথিবীতে এমন অনেক যন্ত্রণা রয়েছে যা প্রতিটি মানুষই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে কেবল মাত্র সুখের আশায় বড়ো কিছু প্রাপ্তির আশায়। সুখ জিনিস টা এমনই এক জিনিস যা দুঃখের সংস্পর্শে না এলে পাওয়াই যায় না৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকানের মাথায় আলতো হাত বুলালো ইমন। এক সময় বুকে মুখ গুঁজেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো মুসকান। ইমন হাত বাড়িয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করলো দিহান’কে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে দিহান বললো,
“কিরে এই রাতে জাইগা ক্যা তুই? ”
“সকাল সকাল সায়রী’কে পাঠিয়ে দিস দিহান। ”
“কি হইছে তোর কন্ঠ এমন শোনায় কে? সিরিয়াস কিছু হইছে কি? ”
“এতো প্রশ্ন করিস না জাষ্ট সায়রী’কে পাঠাবি। ”
এটুকু বলেই কেটে দিলো ইমন। মুসকানের মাথা একটি গভীর কিস করে চোখ বুজে ভারী শ্বাস ছাড়তে লাগলো।
.
ফজরের আজান পড়েছে মাত্র। ইমন মুসকান’কে কয়েকবার ডাকলেও সে ওঠলো না। গালে আলতো থাপ্পড় দেওয়ায় একটু নড়ে ওঠে আধোচোখে তাকালো। ইমন আলতো হেসে বললো,
“মুসু আজান দিয়েছে শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়তে হবে। ”
আঁতকে ওঠে পরোক্ষণেই মিইয়ে গেলো মুসকান। বুকে মুখ গুঁজে গভীর এক শ্বাস ছাড়লো। ইমন আবারো তাগাদা দিতে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো মুসকান। ইমনের বুকটা কেঁপে ওঠলো একগাল ছুঁয়ে বললো,
” ওঠতে হবে। ”
সায় দিয়ে ওঠতে উদ্যত হলো মুসকান। কিন্তু ইমন বাঁধা দিলো। তারপর নিজে ওঠে এলোমেলো শাড়িটা দিয়ে মুসকানকে পেঁচিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
.
বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে মুসকান। আধঘন্টা হয়ে এলো ইমন তাকে প্রশ্ন করছে কি সমস্যা হচ্ছে কিন্তু মেয়েটা কিছুই বলছে না৷ প্রতিবার কোন সমস্যা হচ্ছে না আওড়াচ্ছে। অথচ তার হাবভাবে স্পষ্ট বিরাট সমস্যা হচ্ছে। হয়তো লজ্জার জন্যই বলতে পারছে না৷ বিরক্ত হয়ে সায়রীকে কল করলো ইমন। নিচে কল করে পারুলকে বলেও দিলো মুসকান, সায়রী আর তার জন্য পাস্তা বানাতে। পাস্তা বানাতে বানাতেই সায়রী হাজির হলো। ইরাবতী তখন রান্না ঘরে রান্নায় ব্যস্ত। আকরাম চৌধুরী রেডি হয়ে বের হচ্ছেন কোথাও। সায়রী তাদের সাথে আলাপচারিতা শেষ করে উপরের দিকে পা বাড়ালো । রুমের সামনে গিয়ে ঠকঠক করতেই ইমন বললো,
“আয় দরজা খোলাই আছে। ”
সায়রী রুমে প্রবেশ করতেই অস্বস্তি, লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো মুসকান। এক ঢোক গিলে আরেকটু গুটিয়ে ওড়না দিয়ে বেশ ভালো মতোন গা ঢেকে বসলো। সায়রী বেশ খোশমেজাজে ইমনের পাশে গিয়ে সোফায় বসলো। ইমন ল্যাপটব অফ করে বেশ নিচু গলায় বললো,
“আমি বাইরে যাচ্ছি ওর কি সমস্যা হচ্ছে সবটা শুনে সমাধান দিবি। ”
সায়রী ভ্রু কুঁচকে গলা উঁচিয়ে বললো,
“সমস্যা আবার কি সমস্যা মুসুর কি হয়েছে? মুরাদ জানে ওকে ফোন দিসনি আমি কি ফোন করবো? ”
বলেই দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো সায়রী। ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর হাত চেপে ধরলো। দাঁত চিবিয়ে বললো,
“আরে মহিলা উই বিকেম ইন্টিমেট ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম! ”
“হোয়াট এতোদিনে কি বলস! ”
“দেখ আমি খুবই চিন্তিত প্লিজ হেল্প মি বাইরে যাচ্ছি আমি। ”
ইমন বাইরে চলে গেলো। সায়রী বিস্ময়ান্বিত হয়ে ইমনের যাওয়ার পান থেকে চোখ ফিরিয়ে মুসকানের দিকে তাকালো৷ মুসকান লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো। দু’চোখে তার জলে ভরা৷ সায়রী নিজেকে স্বাভাবিক সত্তায় ফিরিয়ে এনে দ্রুত পায়ে মুসকানের কাছে গিয়ে বসলো৷ দু’হাতে মুসকানের কাঁধ চেপে ধরে বললো,
“মুসু তোর কি সমস্যা হচ্ছে ? ”
মুসকান কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে সায়রী’কে তার সমস্যা বললো সায়রী তাকে আশ্বস্ত করলো। বললো,
“ফার্স্ট টাইম তো এটা স্বাভাবিক ঠিক হয়ে যাবে ভয়ের কিছু নেই। বাট একটা সত্যি বলতো এই এতোদিনে ইমন তোর কাছে আসেনি? ”
মাথা নাড়ালো মুসকান সায়রী অবাক হয়ে বললো,
“বলিস কি বিয়ে করে বউ ঘরে রেখে দিছিলো? আল্লাহ ইমন ব্যাটার তো বেশ ধৈর্য্য। শুধু এরেন্জ ম্যারেজ হলে না হয় মানা যেতো লাভ ম্যারেজেও এতো ছাড় পাইছিস তুই কি ভাগ্যবতীরে। ”
লজ্জা পেলো মুসকান। সায়রী কথায় কথায় মুসকানকে ভালোভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে সাহস যোগালো মনে। ততোক্ষণে ওদের জন্য খাবার নিয়ে এলো পারুল। ইমনও চলে এলো তারপর তিনজন এক সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করলো। সায়রীর ক্লাস আছে তাই ইমনই ওকে স্কুল অবদি ড্রপ করে দিলো। এদিকে ইরাবতী মুসকান’কে নিচে নামতে না দেখে নিজেই উপরে চলে এলো। বললো,
“শরীর খারাপ নাকি মুসু? ”
ইরাবতী কে রুমে দেখেই চটপট বিছানা থেকে ওঠতে নিলো মুসকান। কিন্তু পারলো না ইরাবতী ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তারপর নিজেই কাছে এসে বিছানায় বসলো। মুসকানও বসে পড়লো আমতা আমতা করে বললো,
“একটু জ্বর আর ঠান্ডা লেগেছে। ”
“ওষুধ খেয়েছো? দেখেছো ইমনের কাণ্ড তোমার জ্বর আর আমাকে বলেও নি। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই মুসকানের কপাল চেক করে গলায় স্পর্শ করলো। সঙ্গে সঙ্গে শিউরে ওঠলো মুসকান। আঁতকে ওঠে হাত সরিয়ে ইরাবতী মুসকানের গলা দেখতেই লজ্জায় পড়ে গেলো খুব। মুসকানও মাথা নুইয়ে ফেললো। তার স্বামী যে আজ অজস্র লাভ বাইটে ভরিয়ে তুলেছে তার সর্বাঙ্গ। ইরাবতী ইতস্ততভাবে ওঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমি পারুলকে দিয়ে জ্বরের ওষুধ পাঠাচ্ছি। ”
“আমি খেয়েছি মা। ”
“তাহলে রেষ্ট করো নিচে আসার দরকার নেই। ”
বলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো ইরাবতী। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো মুসকান। আর কতো লজ্জা পেতে হবে তাকে? ইশ পরিস্থিতি গুলো কি বিদঘুটে!
____________________
সারাদিন শুয়ে বসেই কাটলো মুসকানের। ইমনও কিছুটা ব্যস্ততায় কাটালো। প্রকৃতিতে নির্মল বাতাস বইছে। সময়টি বিকালবেলা। লম্বা লম্বা চুলগুলো আঁচড়ে বেঁধে ফেললো মুসকান। আয়নার সামনে দাঁড়াতেও আজ তার লজ্জা লাগছে খুব। পুরো মুখশ্রীতে যেনো ছেয়ে আছে ইমনের প্রেমময় স্পর্শ। ইমনের সেই উন্মাদ রূপটি যতোবার মনে পড়ছে ততোবারই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠছে তার। মানুষটা কেমন অস্বাভাবিক হয়ে গেছিলো, তার কষ্টে ব্যাকুলও হয়ে পড়েছিলো খুব৷ নিঃসন্দেহে মানুষ টা তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। তার কষ্টে আহত হয় মানুষটার হৃদয়। এতো ভালো কেন বাসে? এমন যন্ত্রণাময় সুখের স্পর্শ কেন দেয়? প্রেম মানেই কি যন্ত্রণা, ভালোবাসা মানেই কি সুখ? তার জীবনে ইমন চৌধুরী মানেই প্রেম, ইমন চৌধুরী মানেই ভালোবাসা। ইমন চৌধুরী মানেই যন্ত্রণাময় সুখ। ভাবনার অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলো মুসকান। ইমন যে কখন তার পিছনে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়েছে একটুও খেয়াল করেনি৷ কিন্তু যখন এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাতালকরা স্পর্শে শিহরিত করে তুললো তীব্র উত্তেজনায় কেঁপে ওঠলো বুক। পিছন ঘুরতে চেয়েও পারলো না৷ কারণ তার প্রেমিক পুরুষটি তার মাঝে বিভোর হয়ে গেছে। রাতে উন্মাদের মতো যে স্পর্শগুলো শরীরে বিশেষ ক্ষত তৈরি করেছে। সে ক্ষতগুলোতে এখন পরম আবেশে ওষ্ঠাধর ছোঁয়াচ্ছে।
.
তিনমাস পর –
রিমির ডেলিভারির সময় হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে গেছে হসপিটালে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে ইমনকে ফোন করে মুসকান জানায় সে হসপিটাল যাবে। ইমন তাকে বলে বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে হসপিটাল যেতে ডেলিভারি চারটায় তখন বাজে দু’টা৷ কিন্তু মুসকান ইমনের কথা শুনে না৷ সে এতোটাই এক্সাইটেড কিসের গোসল কিসের খাওয়া। সে জাষ্ট হসপিটাল যাবে৷ ইমন কড়াভাবে বলার পরও মুসকান শুনে না সে অলরেডি সিএনজি নিয়ে নিয়েছে। অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলো ইমন৷ তারমধ্য মুসকান তার অবাধ্য হচ্ছে অযৌক্তিক বায়না করছে৷ তাই রাগ সামলাতে না পেরে জোরেশোরে এক ধমক দিলো। সঙ্গে সঙ্গে মাথা গরম করে ফোন অফ করে দিলো মুসকান। পৃথিবী উলটে গেলেও সে হসপিটাল ব্যতিত বাড়ি যাবেনা৷ কারণ বেবি হওয়ার পর সেই ফার্স্ট কোলে নেবে তাকে। বেবির নামটাও সে রাখবে। তাই ফোন অফ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ইমনের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে নতুন সদস্যটিকে নিয়ে কল্পনা জল্পনা করতে শুরু করলো। ছোট থেকেই সে বাচ্চা ভীষণ ভালোবাসে। আপনজন না হলেও অন্যদের বাচ্চাদেরই কতো আদর করে আর আজ তো তার নিজের ভাইয়ের বাচ্চা হবে। একদিকে খালামুনি অপর দিকে ফুপুমনি তার অনুভূতি কি ইমন বুঝবে নাকি। একটা ভেঙচি দিয়ে আনন্দের সহিত হসপিটাল চলে গেলো সে।
এদিকে আচমকাই ফোন অফ করায় চিন্তিত হয়ে পড়লো ইমন। বার বার ফোন করেও পেলো না৷ রাগ হচ্ছে ভীষণ এ মূহুর্তে মুসকানকে সামনে পেলে হয়তো কয়েকটা থাপ্পড় অনায়াসে দিয়ে দিতো। এতো ত্যাড়ামি সত্যি আর সহ্য করা যাচ্ছে না। সাড়ে তিনমাস হলো বিয়ে হয়েছে তাদের৷ এই তিনমাসে জাষ্ট একটা জিনিস নিয়েই সে হাঁপিয়ে গেছে তা হলো এই মেয়ে ঠিকভাবে খাবারটা খায় না। সারাদিন অফিস করে ঘ্যানঘ্যান করে খাওয়াতে আর কতো ভালো লাগে? কখনো কখনো মনে হয় মুসকান খুবই ম্যাচিওর আবার কখনো কখনো একেবারেই বাচ্চা। নানারকম টেনশন নিয়েই অফিস শেষ করলো ইমন। বিকাল পাঁচ টা বাজে তখন৷ দিহান ফোন করে জানালো মুরাদের ছেলে হয়েছে। খবর শুনে ইমন বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ ছেলের বাপ খুশিতো? ”
“বহুত…”
“মুসকান কি করে? ”
“সে বেবি নিয়ে ব্যস্ত। তুই আয় একবার দেখে যা। ”
“আসছি মুসকান’কে নিতে তো আসতেই হবে। ”
.
কেবিনের বাইরে বসে আছে ইমন। সারাদিনের ক্লান্তি তার চোখে মুখে স্পষ্ট। মরিয়ম আক্তার মুসকান’কে বোঝাচ্ছে বাড়ি যেতে ইমন অপেক্ষা করছে। কিন্তু মুসকান এক পা’ও নড়তে নারাজ। অপেক্ষা করতে করতে ইমনের মাথা এবার সিরিয়াস গরম হয়ে গেলো। মুরাদ আর দিহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“আমি কি ভিতরে যাব নাকি তোরাই ওকে আনার ব্যবস্থা করবি। ”
দিহান বললো,
“এ ভাই রাগ করিস না আমি সায়ুকে বলছি ওরে বোঝাই পাঠাতে। ”
মুরাদ বললো,
“তোর সমস্যা কি? অফিস করছোস ক্লান্ত বাড়ি গিয়া ফ্রেশ হো মুসু থাকুক আরেকটু পর আমি ওকে নিয়ে আমাদের বাড়ি যাব। কিছুদিন মুসকান এ বাড়ি থাকুক। ”
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ইমনের। বসা থেকে ওঠে রাগে রিরি করতে করতে বললো,
“ফাইজলামি করস আমার সাথে? তোর বোন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দুপুরের খাবারটুকু খেয়ে আসছে? না খাওয়া না গোসল এইসব কি পাগলামি এগুলা আমি এলাও করবো না। জাষ্ট পাঁচ মিনিটে ওকে বের করবি। ”
মুরাদ চিন্তিত হয়ে বললো,
“আমি ওকে এখুনি খাওয়িয়ে আনছি তুই চিন্তা করিস না বাড়ি যা। ”
দিহান বললো,
“মুরাদ ইমনের অবস্থা ভালো না তুই মুসুরে ডাক সকালে আসবেনি। ”
“তুই চুপ কর মুসকান যখন এখন যেতে চাইছে না তো যাবো না। ”
দু’হাত মুঠো বন্দি করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো ইমন।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দিহান কেবিনের সামনে গিয়ে মুসকানকে ডাকলো। মুরাদ ইমনকে বললো,
“বুঝলাম না তোর আসলে সমস্যা কি? সিম্পল বিষয়ে রাগ দেখাচ্ছিস কেন? ”
ইমন বললো,
“এতো প্যাচাল ভালো লাগেনা আমি যখন বলছি ওকে আমার সাথে যেতে হবে মানে যেতেই হবে। ”
এরই মধ্যে মুসকান বেরিয়ে এলো চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
“আমি আজ এখানে থাকবো। ”
ইমন অগ্নি দৃষ্টি তে তাকালো। থতমত খেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো মুসকান। মুরাদ বললো,
“ঐ ওরে ভয় দেখাস ক্যান? ”
ইমন কারো কথায় কান না দিয়ে মুসকানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“পাঁচ মিনিট সময় দিলাম গাড়িতে এসে বসবে। কথা যদি ঠিক থাকে সকালে নিয়ে আসবো নয়তো বাড়ি নিয়ে একদম ঘরবন্দি করে দেবো। ”
ইমনের এহেন কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো মুরাদ। চিল্লিয়ে বললো,
“ঐ ঐ কি কস সমস্যা কি? কি হইছে তোর? ”
ইমন বাঁকা হেসে মুরাদের কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো,
“ছেলের বাপ কাল দেখা হচ্ছে। ”
আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না ইমন বড়ো বড়ো পা ফেলে হসপিটালের বাইরে চলে গেলো। এদিকে অঝর ধারায় অশ্রুপাত করতে লাগলো মুসকান। মুরাদ বিচলিত হয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“অফিস থেকে এসেছে মাথা গরম তুই খাসনি কেন দুপুরে? ভয় পাস না থাক আমি ওরে বুঝিয়ে আসি। ”
মুসকান কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“না আমি চলেই যাই সকালে আবার আসবো। ”
চিন্তিত হয়ে মুরাদ বললো,
“চল এগিয়ে দেই। ”
.
মুসকানকে গাড়িতে ওঠিয়ে দিয়ে ইমনকে মুরাদ বললো,
“ইমন রাগ করিস না কাল অফিস যাওয়ার পথে ওরে নিয়ে আসিস। আমি যদি শুনি তুই ওর সাথে রাগ দেখাইছোস খবর আছে কিন্তু…. ”
গম্ভীর ভঙ্গিতে গাড়ি স্টার্ট দিলো ইমন বললো,
“চিন্তা করিস না ছেলের কাছে যা। ”
.
বাড়ির পথে গাড়ি ঘোরালো ইমন। মুসকান নিঃশব্দে কেঁদেই চলেছে। ইমন এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“ফোন অফ করেছো কেন? ”
……………..
“দুপুর থেকে না খেয়ে আছো কেন? ”
………………
“বাড়ি কেন ফিরতে চাইলে না? ”
……………….
“আমি অফিসে সার্কাস দেখাতে যাই? ”
………………….
“আমাকে তোমার কি মনে হয় স্বামী বলে মনে হয় না? ”
…………………
মুসকানের থেকে একটি উত্তরও পেলো না ইমন। তাই ক্রোধান্বিত হয়ে আচমকাই গাড়ির ব্রেক কষলো। মুসকানের দিকে ফিরে গায়ের সর্বচ্চ শক্তি দিয়ে কাঁধ চেপে ধরলো বললো,
“এই কথা বল তুই নয়তো খুন করে ফেলবো তোকে।”
চলবে….