হৃৎপিণ্ড_২ ( দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ) পর্ব ২৮

0
385

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৮
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ”

উক্ত বাণীটি শুনতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো ইমন। চোখ বুঝে লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো। দু’হাতে আবদ্ধ করে নিলো মুসকানকে। মাথায় আলতো চুমু খেয়ে শক্ত করে বুকের ভিতর চেপে রাখলো। শান্ত গলায় বললো,

” আই নিড ইউ মুসকান। আই টোটালি ওয়ান্ট ইউ৷ বাট আই উইল গিভ ইউ টাইম। শুধু আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। ”

কেঁদে ফেললো মুসকান এইটুকুনিরই অভাব ফিল করছিলো সে। ক্রন্দনরত অবস্থায় দু’হাতে যতোটা পারে শক্ত করে জড়িয়ে রইলো ইমন’কে।
.
শাড়ির কুঁচি গুলো খুব যত্নশীলহাতে ঠিক করে দিচ্ছে ইমন৷ মুসকানের দৃষ্টিজোড়া আনন্দাশ্রুতে চিকচিক করছে। ইমন তার কাজ সম্পন্ন করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আঁচল টা ঠিকভাবে গুছিয়ে দিয়ে ভাবুক কন্ঠে বললো,

“এবার ঠিকঠাক লাগছে। বিয়ের সপ্তম দিন অবদি অবশ্যই সর্বক্ষণ শাড়িতে দেখতে চাই। ”

মাথা ঝাকালো মুসকান। নিম্নস্বরে প্রশ্ন করলো,

“রাগ কমেছে? ”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইমন। রাগ যদিও পড়ে গেছে তবুও গতরাতের কথা ভাবতেই ইচ্ছে করছে কঠোর হতে। কিন্তু তার কঠোরতায় যে মেয়েটা মিইয়ে যাচ্ছিলো। মুখ ফুটে যখন বলছিলো তার খুব কষ্ট হচ্ছে তখন তার বুকের ভিতর অস্থির হয়ে ওঠেছিলো। নিজের রাগটাকে ধামাচাপা দিয়ে নিজেকে সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ করে সেক্রিফাইস শব্দটাকেই বেছে নিলো। ভাবনার মাঝেই দু’বার হাঁচি দিয়ে ওঠলো ইমন৷ বৃষ্টিতে ভেজার ফল বুঝি কঠিন নিয়মেই ভুগতে হয় এবার! বারকয়েক হাঁচি দিয়ে ধীরে ধীরে পা এগিয়ে বিছানায় বসলো। মুসকান উদগ্রীব হয়ে ইমনের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“এখন কি হবে? ”

ইমন ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো,

” কি? ”

“ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে তো। ”

“কিছু হবে না এতো অল্পতেই ভয় পেলে চলবে নাকি লাইট অফ করে দিয়ে আসো। ”

মুসকান চিন্তান্বিত হয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিলো। ইমন শুয়ে পড়লো শরীরটা তার ভীষণ উইক লাগছে। জ্বরে আক্রান্ত হবে বেশ বুঝলো কিন্তু কিছু বললো না আর না মেডিসিন খাওয়ার কথা ভাবলো। বউ আছে কাছে, বউয়ের থেকে বড়ো মেডিসিন হয় নাকি? নতুন নতুন বিয়ে করে নতুন নতুন জ্বরই বোধ হয় আসবে। নতুন নতুন সেবা যত্নও পাওয়া যাবে৷ ভাবতে ভাবতেই দুর্বল শরীরটা ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। এদিকে মুসকান সব টিপটাপ করে ইমনের গা ঘেঁষে শুতেই অত্যাধিক উষ্ণতা অনুভব করলো। ইমনের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে বুঝলো সে ঘুমিয়ে গেছে। তাই আর কিছু না ভেবে গা ঘেঁষে একহাতে জড়িয়ে গুটিশুটি হয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু শেষরাতে ইমনের শরীরের মাত্রাতিরিক্ত তাপে টিকতে পারলো না সে। ঘুম ছেড়ে গেলে বুঝতে পারলো ইমন মৃদু কাঁপছে। চোখ কচলে হাত বাড়িয়ে ললাট স্পর্শ করতেই বুকের ভিতর টা ধক করে ওঠলো তার। দুচোখ জলে ভরে ওঠলো। হাত, পা কাঁপতে শুরু করলো ভয়ে। পাতলা কাথা টেনে ইমনের গায়ে জড়িয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে ইরাবতী’কে ডাকার জন্য ছুটে গেলো।

দরজায় বেশ কয়েকবার ঠকঠক শব্দ শুনতেই বিছানা ত্যাগ করে ওঠে আসে ইরাবতী। দরজা খুলে মুসকান’কে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেয়ে হকচকিয়ে যায় সে। বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করে,

“কি হয়েছে মা কাঁদছো কেন? ”

মুসকান হেঁচকি তুলে বললো,

“নানাভাইয়ের খুব জ্বর এসেছে কেমন যেনো করছে তুমি তাড়াতাড়ি আসো। ”

ভ্রু কুঁচকে দ্রুত পায়ে ইরাবতী ছুটে গেলো ছেলের ঘরে। ছেলের কপাল, গলা চেক করে কিছুক্ষণ জলপট্রি দিয়ে জ্বরের মেডিসিন খাওয়িয়ে দিলো। ইমন আধঘুম অবস্থায় মাথা,কপাল টিপে দিতে বললো। মুসকান তাই করলো। ইরাবতীও বেশ কিছু সময় বসে থেকে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য নিজ রুমে গেলো। যাওয়ার আগে মুসকানকে বলে গেলো,

“এভাবে কান্নাকাটি করলে কি ইমন সুস্থ হবে? নামাজ টা পড়ে নাও আর স্বামীর একটু খেয়াল রাখো। কাল রাতে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরেছে। নিজের প্রতি ইদানীং অনেক বেশিই অযত্ন করছে। আমি আর কতো এই ছেলেকে বোঝাবো এবার তো দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে মুসু। ”

ইরাবতীর দীর্ঘশ্বাসগুলো মুসকানের বুকে চিনচিনে ব্যাথা দিলো। কেন যেনো তার এই দীর্ঘশ্বাসে আফসোসের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। আর সে আফসোস তাকে ঘিরেই। ইরাবতী এই ভেবে আফসোস করছে না তো যে তার ছেলের জন্য মুসকান হয়তো উপযুক্ত নয়। মুসকান তার ছেলেকে সামলাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ কিলবিল করছে না তো তার মনে?

মনের ভিতর অজস্র প্রশ্নগুলো জমা রেখে ইমনের বুকে মাথা রাখলো মুসকান। ফুঁপিয়ে ওঠে বললো,

“আর কখনো আমি তোমাকে ভিজতে দেবো না। আর কখনো তোমার অযত্ন করবো না, আর কখনো তোমার অবাধ্য হবো না। একবার তুমি ঠিক হয়ে যাও আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ”

জ্বরের ঘোরেই ইমন মুসকানের মাথায় এক হাত রাখলো। অস্ফুট স্বরে বললো,

“আমি ঠিক আছি মুসু এভাবে কাঁদছো কেন? ”

মাথা তুলে তাকালো মুসকান ইমন আধোআধো চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুসকান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছলো। ইমন তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে মোহনীয় সুরে আবদার করলো,

“মুসু কিস মাই লিপস ওয়ান্স প্লিজ। ”

শব্দ করে কেঁদে ফেললো মুসকান। বুকটা ভারী হয়ে ওঠলো খুব। ইমনকে এভাবে দেখে এভাবে আবদার শুনে অদ্ভুত এক ভয় জেঁকে বসলো তার মনে। ইমনের ঝাপসা দৃষ্টিজোড়া ঝড় বইয়ে দিলো তার অন্তরে৷ কোন কিছু বুঝলো না সে কোন কিছু বুঝতে চাইলো না। আর না পরোয়া করলো কোন প্রকার লজ্জার। দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে কেবল এগিয়ে গেলো ইমনের ওষ্ঠজোড়ার দিকে। দু’জোড়া ঠোঁট একে অপরের সঙ্গে মিলিত রইলো কয়েক সেকেণ্ড। জ্বরের ঘোরেও প্রিয়তমার ওষ্ঠের নেশায় মত্ত হতে ভুলেনি ইমন। মুসকান যখন ছাড় পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করলো ছেড়ে দিলো ইমন। হাঁপানো সুরে মুসকান বললো,

“আমি নামাজ পড়ে আসি। ”

চোখ বুজা অবস্থায় মৃদু হেসে সায় দিলো ইমন। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ওঠে ছুটে পালালো মুসকান।
.
ঠিক চারদিনের মাথায় জ্বর কমলো ইমনের। মুরাদ, দিহান,সায়রী দেখতে এসেছে ইমনকে। সেই সাথে দিহান সকলকে মিষ্টি মুখও করাতে এসেছে। মুসকান ইরাবতী আর পারুলকে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। সকলে বসে আছে ড্রয়িংরুমে। কথায় কথায় দিহান মুখ ফস্কে বলে ফেললো,

“এবার তিন নাম্বার বেবি আসার অপেক্ষায়। ইমন শোন আমি কিন্তু কষ্ট কইরা ছেলের বউ খুঁজতে পারুম না৷ তোর মেয়েরেই পুত্রবধু বানামু। ”

কফির মগে লাষ্ট চুমুক দেওয়া অবস্থায় কেশে ওঠলো ইমন৷ চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো মুরাদের। সায়রী বিরবির করে দিহানকে গালাগাল করতে লাগলো। ইমন কাশি থামিয়ে চোখ কটমট করে তাকালো। মুরাদ অপ্রস্তুত ভণিতায় মৃদু হেসে বললো,

“তোরে বন্ধু বানাইয়াই যে বিপদে পড়ছে বেয়াই বানাইয়া পাগলা গারদে যাওয়ার দরকার নাই। ”

শব্দ করে হেসে ওঠলো সায়রী। দিহান সায়রীর বাহুতে চিমটি কেটে বললো,

“আরে ঘরে শত্রু বিভীষণ দাঁত কেলানি বন্ধ না করলে প্রতিটা দাঁত খুলে ব্রেসলেট বানাই হাতে দিমু।”

হাসি থামিয়ে বিরক্ত হয়ে ওঠে দাঁড়ালো সায়রী। গটগট পায়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে ইমন আর মুরাদকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“ফালতু বকবক শোনার একদম মুড নাই থাক তোরা। ”

“আরে আরে সাদির আম্মু কি করছো কি। রেগো না রেগো না আমার সাদি যদি তোমার মতো রাগি হয় বিপদ হয়ে যাবে আমার। একদিকে ছেলের রাগ অপর দিকে ছেলের মায়ের রাগ মাঝখানে আমি মাসুম বাচ্চা! ”

ইমন আর মুরাদ হা করে তাকিয়ে রইলো দিহানের দিকে। মুরাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রশ্ন করলো,

“এই সাদিটা কে? ”

“আরে বাল বুঝোনা বউ তোমার ছয় মাসের বাচ্চা পেটে নিয়া ঘুরতাছে আর তুমি ভেজা বেড়াল সাজতাছো? আমার বউয়ের পেটে যে আমার দুইমাসের পোলা আছে তা জানো না? আর আমার বউয়ের নামের প্রথম লেটার আর আমার প্রথম মিলাইয়া সাদি রাখছি এইডাও বুঝোনাই, তুমি আমার কি বাল বুঝো? ”

“শালা এলিয়েনের বাচ্চা তুই পারিসও বটে। ”

মুরাদ আর দিহান একে অপরকে পঁচাতে,হাসি তামাসা খুনসুটি করতে ব্যস্ত আর ইমন সোফায় বসে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে একমনে মুসকানকে দেখতে ব্যস্ত। মেয়েটা কটাদিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে শুধু তার সেবাই করে গেছে। কান্নাকাটি করে বিদঘুটে অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিলো। সামান্য জ্বরেই এই অবস্থা কখনো তার বড়ো কোন অসুখ করলে ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়ে যাবে। আর যদি সে এ পৃথিবী থেকে চলে যায় মেয়েটাও হয়তো বাঁচবে না। চোখ বন্ধ করে ফেললো ইমন বুক ভারী হয়ে গেলো। বিরবির করে কেবল কিছু বাক্যই উচ্চারণ করলো,

“আমার মৃত্যু ঘটলে এই মেয়েটাকে দেখে রাখবে কে? শেষ অবদি পারবোতো ওকে আগলে রাখতে? বয়সটা আমার সত্যিই অনেক বেশি হয়ে গেলো না, আমি কি পারবো সারাজীবন ওকে আগলে রাখতে?”
_____________________
রাত প্রায় এগারোটা ছুঁই ছুঁই। ইমন মুরাদ আর দিহানের সঙ্গে বাইক নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। তাই ফিরতে হয়তো আরো অনেক সময় লাগবে। ইরাবতী আর আকরাম চৌধুরী ডিনার শেষ করে মুসকানের সঙ্গে বসে টিভি দেখছে। যদিও মুসকান ভাত খায়নি তবুও তার পেট খালি নেই। ইমনকে ছাড়া সে ভাত খাবে না তাই ইমন সন্ধ্যার দিকেই তার পছন্দের চিকেন উইংস আর চকোলেট কিনে দিয়ে গেছে। সেগুলো খাওয়ার ফলেই তার পেট ভরা৷ টিভি দেখতে দেখতে সোফায়ই গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে গেলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী ওকে দেখে ইরাবতী’কে বললো,

“ছেলেকে ফোন দাও ইরা রাত কতো হলো খেয়াল আছে? মেয়েটা না খেয়ে অপেক্ষা করছে এখন সে বিবাহিত তা কি ভুলে গেছে? ”

“তুমি উপরে যাও আমি ইমনকে ফোন করছি। ”

আকরাম চৌধুরী উপরে চলে গেলেন৷ ইরাবতী ইমনকে কল দেবে ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে ওঠলো। সঙ্গে সঙ্গেই ধড়ফড়িয়ে ওঠলো মুসকান৷ ইরাবতী বললো,

“আমি খুলছি আস্তে ধীরে ওঠো তুমি। ”

দরজা খুলেই ইরাবতী বেশ বকাঝকা করলো। ইমন মুচকি হেসে বললো,

“উফফ মা কতো দিন পর বেরিয়েছি আর তুমি বকছো? কদিন পর তো শুধু অফিস টু বাড়ি অফিস টু বাড়ি একটা দিন যতো পারি ঘুরাঘুরি করে নেই। ”

বলেই ভিতরে উঁকি দিয়ে মুসকানকে দেখে নিলো। ইরাবতী সরে দাঁড়িয়ে ইমনকে যাওয়ার জায়গা করে দিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। তারপর মুসকান কে বললো,

“তোমরা খেয়ে শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে। ”

ইমন সোফায় বসেছে মুসকান তাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলো। গ্লাস হাতে নিয়ে ইমন মা’কে জিগ্যেস করলো সে আর তার বাবা খেয়েছে কিনা? ইরাবতী জবাব দিয়ে বললো,

“মুসু বাদে সবাই খেয়েছে এবার মেয়েটাকে খেতে দে।”

বলেই গটগট পায়ে উপরে ওঠে গেলো ইরাবতী। ইমন পানিটা শেষ করে মুসকান কে ফেরত দিয়ে বললো,

“আমি খেতে দেবো? ভাত বেড়ে দিতে হবে? ”

বিরক্ত হয়ে এক পলক তাকিয়ে সোজা খাবার বাড়তে চলে গেলো মুসকান৷ বিরবির করে বললো,

“নিজেই খাওয়ার সময় পায়না সে নাকি আমাকে ভাত বেড়ে দেবে। ”

ইমন ঝড়ের গতিতে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। বললো,

“সিরিয়াসলি জান একটুও সময় পাচ্ছি না আমার এই হাতটাও আজ বড্ড ব্যস্ত খাওয়িয়ে দিলে খুব উপকার হতো। ”

আড়চোখে তাকিয়ে খাবার বেড়ে ইমনের পাশে বসলো মুসকান। বললো,

“সহযোগিতা করলে ভালো হয়। ”

ইমন বাঁকিয়ে তাকিয়ে ওষ্ঠকোণে দুর্বৃত্ত হাসি ফুটিয়ে তুলে চট করে মুসকানকে দু’হাতে উচিয়ে ডায়নিং টেবিলের ওপর বসিয়ে দিলো। মুসকান মৃদু চিল্লিয়ে বললো,

“কি করছো কি আরে…”

ইমন হাসি হাসি মুখে মুসকানের সম্মুখে বসে বললো,

“এবার সুবিধা হবে। ”

মুসকান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আচমকাই হেসে ফেললো। কিছুটা লজ্জাও পেলো। তারপর যত্নসহকারে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দিতে লাগলো। ইমনও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে তৃপ্তি সহকারে খাবারটা শেষ করলো। ইমনের খাওয়া শেষে মুসকান নিজের জন্য অল্প ভাত বেড়ে চেয়ারে বসলো। ইমন তখন চুপচাপ বসে ফোন ঘাটছিলো। হঠাৎই ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুসকানের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“তাড়াতাড়ি উপরে আসবে আমি ওয়েট করছি। ”

মুখে খাবার তুলে চিবুতে চিবুতে মাথা ঝাকালো মুসকান। ইমন দুষ্টু হেসে এবার তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কানের কাছে ওষ্ঠ ছুঁই ছুঁই করে বললো,

“ফুল প্রিপারেশন নিয়ে আসা চাই। ”

আঁতকে ওঠলো মুসকান। আতঙ্কিত দৃষ্টিজোড়া মেলেও ধরলো ইমনের দৃষ্টিতে। নিঃশ্বাসে বেড়ে গেলো চঞ্চলতা। বক্ষঃস্থলে কম্পন ধরলো খুব। ইমন মুসকানের মুখশ্রী’তে আলতো ফুঁ দিয়ে আবেগঘন স্বরে বললো,

” ফোর্স করবো না মুসু শুধু অপেক্ষাতে থাকবো। ”

আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না ইমন। সোজা চলে গেলো উপরে। তার দৃঢ় বিশ্বাস আজ মুসকান তাকে ফিরিয়ে দেবে না। আর মুসকান ভাতের থালা রেখে দিয়ে সব গুছিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে চলে গেলো উপরে। সব ভয়, লজ্জাকে কাটিয়ে ওঠার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করে রুমে প্রবেশ করলো। ছোট্ট একটি শ্বাস ত্যাগ করে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আর বিরবির করে নিজেই নিজেকে প্রশ্ব করলো,

“আর কতো অপেক্ষা করাবি মানুষ টাকে? আর কতো ধৈর্য্য ধরবে সে? আর কতোই বা সেক্রিফাইস করবে তোর জন্য? তার নিজেরও তো একটা চাওয়া, পাওয়া রয়েছে। তোর নিজেরও কি নেই মুসু তুই কি চাস না সম্পূর্ণরূপে তার হয়ে ওঠতে? ”

নিজের মনে প্রশ্ন গুলো করে নিজেই উত্তর দিলো,

” আমি সম্পূর্ণই তার হতে চাই। ”

“কার? ”

“তোমার ”

আর দেরী করলো না ইমন ঘোরের মাঝে মুসকান তার মনের যে সত্যিটা প্রকাশ করে দিয়েছে তা তাদের দুজনকে একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলিত করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ইমন যখন তাকে পাঁজাকোল করে বিছানার দিকে এগুতে লাগলো সে তখন মৃদু কেঁপে ওঠলো। হুঁশে এসে বুঝলো সে কি ভয়ংকর বাক্য এবং শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছে!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here