হৃৎপিণ্ড_২ ( দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ) পর্ব ২৩

0
367

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৩
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
“কেন আমার বউ কি তোদের মতো গাঁজা খাইছে নাকি? ”

ইমনের কথা শুনে দিহান গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললো,

“দোস্ত বাসর রাতে বউ’কে গাঁজা খাওয়ালে কিন্তু আহামরি সমস্যা হয় না। ”

দিহানের কথা শুনে ইমন সায়রী দুজনই চোখ কটমট করে তাকালো। দিহান জিবে কামড় দিয়ে বললো,

“সরি সরি একটুর জন্য ভুলে গেছিলাম। শালা বিয়ে করলি করলি ছোট বোন’কে বিয়ে করতে গেলি কেন? ”

এবার যেনো দ্বিগুণ ফুঁসে ওঠলো ইমন। সায়রীর দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

” এই স্ক্রু ঢিলা’কে এখান থেকে নিয়ে যাবি? ”

সায়রী দিহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইমন’কে বললো,

“এসব মাতালদের দায়িত্ব একদম নিতে পারবো না আমি। ”

দিহান তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আঙুল ওঠিয়ে কিছু বলবে তার পূর্বেই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো সায়রী। তাই আঙুলটা ব্রেকফেল করে ইমনের দিকে চলে গেলো। তৎক্ষনাৎ ইমন এমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো যে হুট করে আগুনে ছ্যাঁকা খেলে যেমন অনুভূতি হয় তেমন মুখোভঙ্গিতে হাত সরিয়ে ঝড়ের গতিতে রুম ত্যাগ করলো দিহান। ইমন বিরবির করে কয়েকটা গালি দিয়ে বেশ শব্দ করেই দরজা চাপিয়ে লক করে দিলো। কিঞ্চিৎ চমকে ওঠলো মুসকান। সহসা বক্ষঃস্থলে ধুকপুকানি বেড়ে গেলো তার। অস্থিরচিত্তে ডানে-বামে নজর বুলিয়ে নিঃশব্দে বিছানার এক কোণায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো। ইমন মুসকান’কে শোয়া অবস্থায় দেখতেই এগিয়ে গিয়ে হাত ঘড়ি খুলে সেন্টার টেবিলের ওপর রাখলো। তারপর বিছানায় বসে শান্ত গলায় কয়েকবার ডাকলো মুসকান’কে কিন্তু সাড়া শব্দ পেলো না। ঠিক বুঝলো অভিমানে সিক্ত হয়ে তার অর্ধাঙ্গিনী কথা বলছে না। তাই হাত বাড়িয়ে কাঁধে স্পর্শ করে বললো,

“দীর্ঘ প্রতিক্ষার এই পরিণয় পেয়ে উপরওয়ালার নিকট শুকরিয়া না জানালে তিনি অসন্তুষ্ট হবে মুসু। ”

নড়েচড়ে ইমনের হাতটি কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলো মুসকান। ক্ষীণ স্বরে বললো,

“আমার শরীর ভালো লাগছে না আমি ঘুমাবো। ”

মুচকি হেসে একহাত বাড়িয়ে মুসকানকে টেনে তুললো ইমন। ফলশ্রুতিতে ফুলে সজ্জিত বিছানাটি এলোমেলো হয়ে গেলো। মুসকান অভিমানে গাল ফুলিয়ে ইমনের দিকে এক নজর তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে ফেললো। ইমন এক হাত বাড়িয়ে ওর এক গাল ছুঁয়ে আদুরে স্বরে বললো,

“আজকের দিনে এভাবে রাগ করতে হয় না। ”

মুসকান এবার এক ঝটকায় ইমনের হাত সরিয়ে দিলো। ত্যাজি কন্ঠে বললো,

“আর গতদিনে তুমি যা করলে এসব বুঝি করতে হয়? ”

” অফকোর্স করতে হয়। একটা চুমু খেতে বলাতে যার চোখ দিয়ে বন্যা বইয়ে যায় তার সাথে এর থেকে আর কি ভালো আচরণ করবো? ”

রাগান্বিত হয়ে ইমনের থেকে সরে বসলো মুসকান। ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“আমার থেকেও তোমার কাছে চুমু গুরুত্বপূর্ণ? ”

“ইয়েস কারণ চুমুটা তুমিই আমাকে দেবে। ”

“পারবো না আমি। ”

“পারতে তো হবেই। ”

“কখনোই না। ”

“বিয়ে করেছি বউ তুমি আমার যা বলবো তাই করতে হবে। এখন চলো নামাজ পড়তে হবে। ”

ইমন ওঠে দাঁড়ালো। কিন্তু মুসকান চুপটি মেরে বসেই রইলো। ইমন পিছন দিক ঘুরে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

“কি বললাম আমি মুসু…। ”

“আসছি যাও তুমি। ”

“চুপচাপ বিছানা ছাড়ো এক সেকেণ্ডও যেনো সময় না লাগে। ”

অভিমানে আরক্ত হয়ে ছলছল দৃষ্টিতে নেমে দাঁড়ালো মুসকান। সাথে সাথে ইমন ওর হাত টেনে নিয়ে গেলো বাথরুমে। তারপর দুজন এক সঙ্গে নামাজ শেষ করলো। নামাজ শেষে ইমন ওঠে বললো,

“জায়নামাজ গুলো গুছিয়ে কাবার্ডে রেখে এসো। ”

ইমন গিয়ে বিছানায় বসলো। দৃষ্টি তার মুসকানের দিকেই স্থির। সদ্য বিবাহিতা মুসকান’কে এতোটাই মোহনীয় লাগছে যে এক সেকেণ্ডের জন্যও দৃষ্টি সরাতে পারছে না। শুভ্র অনুভূতি’তে ছেঁয়ে গেছে মন।মুসকান জায়নামাজগুলো যথাস্থানে রেখে। পিছন ঘুরতেই দেখলো ইমন গভীর দৃষ্টিতে তারপানে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ওর বক্ষঃস্থলে মৃদু কেঁপে ওঠলো। এক ঢোক গিলে শাড়ির আঁচল টেনে ডান কাঁধে ওঠিয়ে ধীর পায়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো। দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে ফেললো ইমন৷ লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে আবার দৃষ্টি মেললো। বললো,

“শরীর খারাপ লাগছে? ”

কথাটি বলেই এক হাত বাড়িয়ে মুসকানের কপাল এবং গলা চেক করলো। ঈষৎ তাপ অনুভব করতেই বললো,

“এখানে বসো আসছি আমি। ”

ইমন ওঠে যেতেই চাপা একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বসলো মুসকান। কেমন গুমোট অনুভূতি’তে ছেঁয়ে গেছে তার হৃদয়। পুরো ঘরজুড়েই যেনো গুমোট ভাব, নাকি এটিই ঝড়ের পূর্বাভাস? অতিরিক্ত মানসিক চাপে মাথা ব্যাথা ধরে গেলো মুসকানের। পুরো শরীরেও কেমন ম্যাজম্যাজ করছে। একটা বিয়ে মানেতো আর কম ধকল নয়। সে ধকলের কথা চিন্তা করেই ইমন কিছু মেডিসিন এবং এক গ্লাস পানি নিয়ে মুসকানের সম্মুখে ধরলো। তা দেখামাত্রই সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো মুসকানের। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকাতেই ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো,

“কি হলো? ”

এক ঢোক গিলে মুসকান জিজ্ঞেস করলো,

“কিসের ওষুধ? ”

প্রশ্নটি করে নিজে নিজেই ভয় এবং লজ্জায় দৃষ্টি নত করে ফেললো। ইমন রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসলো। ওষুধ গুলো মুসকানের সম্মুখে ধরেই বললো,

“আমি কাকে বিয়ে করেছি আমার বউ কে হয়েছে এটা তোমার থেকেও আমি ভালো জানি। ”

বোকা চোখে মাথা উঁচিয়ে তাকালো মুসকান৷ ইমন গম্ভীর মুখোভঙ্গিতে বললো,

” মেডিসিন গুলো খেয়ে নাও শরীর ব্যাথা সেরে যাবে জ্বরও কমে যাবে। ”

লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মুসকান। ইমন ওর মুখের কাছে ওষুধ ধরতেই ওষুধ গুলো মুখে তুললো। তারপর পানি দিয়ে গিলে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে প্রশ্ন করলো,

“তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাও তাইনা? আমার কান্না তোমাকে খুব সুখ দেয়। ”

” আমি তোমাকে কষ্ট দেইনি বরং কষ্ট থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি দিচ্ছি। ঘুমিয়ে পড়ো সকাল সকাল ওঠতে হবে। ”

বিছানা ছেড়ে ওঠে গিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করলো ইমন৷ মুসকান বুঝলো ইমন যে পর্যন্ত না চাইবে সে পর্যন্ত খোলাখুলি কথা বলা তো দূরের কথা অভিমান দেখিয়েও লাভ নেই। তাই ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে শুয়ে পড়লো সে । ইমন এসে তার পাশে শুতেই সে পাশ ফিরে কিছুটা দূরে সরে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকলো। ইমন অপেক্ষা করছিলো কখন মুসকান ঘুমে বিভোর হয়৷ কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি ঘুমের মেডিসিন খেয়েও মেয়েটার ঘুম পেলোনা বরং অভিমানে অশ্রুপাত করতে থাকলো। এতোটা সময় নিজেকে কঠিনভাবে সংযত করলেও এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো ইমনের। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকানের দিকে চেপে গেলো। একহাত বাড়িয়ে বউ’কে কাছে টানতে নিলেই ছিটকে সরে গেলো সে। কান্নার বেগ বাড়িয়ে ফুঁপাতে শুরু করলো। ইমন আরো একটু চেপে যেতেই দেয়ালের সঙ্গে ঠেকে গেলো মুসকান৷ তবুও ইমনের দিকে ফিরে তাকালো না। ইমনও তাকে ফেরার জন্য জোরাজোরি করলো না৷ নিজের উত্তপ্ত শ্বাস গুলো ছাড়তে ছাড়তে উষ্ণময়
বলিষ্ঠ হাতটি দ্বারা স্পর্শ করলো মুসকানের কাঁধ। মৃদু কেঁপে ওঠলো মুসকান। সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ব্যর্থ হলো সে। দুষ্টু হেসে ইমন বললো,

” আমি কিন্তু চাইনি বাধ্য করেছো তুমি আমায়। ”

বলতে বলতেই কাঁধ বরাবর আঁচলের সাথে ব্লাউজ আটকানো সেপটিপিন খুলে ফেললো। মুসকান নাক টানতে টানতে কম্পিত গলায় বললো,

“আমি ঘুমাবো। ”

“আমিতো এটাই চেয়েছিলাম কিন্তু বাসর রাতে ঘুমাতে হয় না এটা বার বার তুমিই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলে। নাও গেট রেডি ফর বাসর… ”

কথাগুলো বলেই মুসকানের উন্মুক্ত কাঁধে গভীরভাবে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো ইমন। সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো মুসকানের একহাতে বালিশ অপরহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরলো। ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে গেলো ইমনের। মুসকান’কে নিজের দিকে ফিরিয়ে ললাটে ভালাবাসাময় আলতো ছোঁয়া দিলো। লজ্জায়, ভয়ে আড়ষ্ট মুসকান চোখ বুজে বিছানা খামচে ধরলো। ড্রিম লাইটের আলোতে মুসকানকে স্পষ্টই দেখতে পেলো ইমন। ওষ্ঠকোণে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে ওঠলো তার। ধীর গতিতে চাদর খামচে ধরা একটি হাত ওঠিয়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে ছুঁইয়ে দিলো। অশ্রুসিক্ত নয়নজোড়া মেলে তাকালো মুসকান। ইমনের প্রগাঢ় চাহনি’তে মাতাল হয়ে আবারও চোখ বুজে ফেললো সে। হাতের পিঠে পরপর কয়েকবার চুমু খেলো ইমন। পরপরই কেঁপে ওঠলো মুসকান ধক ধক করে ওঠলো বক্ষঃস্থল। সবই দৃষ্টিগোচর করলো ইমন৷ বললো,

“সব অভিমান দূরে ঠেলে আমার বউ কি আমার হৃদয়ের গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে চায়? ”

মিইয়ে যাওয়া মুসকান দৃষ্টি নত থাকা অবস্থায়ই মাথা নাড়ালো। ইমন বিশ্বজয়ী হাসি হেসে ওর থেকে সরে পাশেই শুয়ে পড়লো। মুসকানও চোখ বুজে থাকা অবস্থায় ইমনের বুকে মুখ গুঁজে দিলো। আর ইমন একহাত বাড়িয়ে মুসকানের চুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে বিলি কাটতে শুরু করলো। এক পলক তাকিয়ে ইমন’কে দেখে নিয়ে আবেশে চোখ বুজে ফেললো মুসকান। ইমন বিলি কাটতে কাটতে এটা সেটা গল্প করতে শুরু করলো। তাদের নতুন জীবনের সূচনা ঘটলো। তা নিয়েই নানারকম পরিকল্পণা করছিলো ইমন৷ সেগুলো শুনতে শুনতে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো টেরই পেলো না মুসকান৷ কিন্তু তার ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী দেখতে পেয়ে মৃদু হেসে ললাট চুম্বন করে তার পাশেই স্বস্তি নিয়ে শুয়ে পড়লো ইমন।
.
সায়রী’র ফোনে হঠাৎই অচেনা একটি নাম্বার থেকে কল এলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দিহান বললো,

“সায়ু একটু ছাদে আসবি প্লিজ। ”

কথাটি শোনামাত্রই কল কেটে দিলো সায়রী। পাশে তাকিয়ে ইমনের ফুপু আর আলিয়া’কে দেখে নিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গেই আবারো বেজে ওঠলো ফোন। সায়রী কেটে দিয়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে দ্রুত রুম ছেড়ে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো। বর্ডার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো দিহান। সায়রী গিয়ে ওর পাশে দাঁড়াতেই বিচলিত হয়ে দিহান বললো,

“গতমাসে তোর পিরিয়ড মিস গেছে না আমাকে জানিয়েছিস আর না নিজে কোন প্রকার টেষ্ট করেছিস। এসবের মানে কি বলবি তুই কি সত্যি চাস আমরা আলাদা হয়ে যাই? ”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সায়রী বললো,

“আমি আমার ব্যক্তিগত বিষয় রিমি ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করিনি। ”

“রিমিও মুরাদ ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করেনি আর মুরাদ আমি ছাড়া। ”

“এটা বলার জন্য ডাকা হয়েছে? ”

“কালই টেষ্ট করবি। ”

“যদি না করি? ”

“জোর করে করাবো। ”

“হ্যাঁ এটা তুই খুব ভালো পারিস। ”

“সরি সায়ু…”

চোখ,মুখ শক্ত করে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো সায়রী। তৎক্ষনাৎ দিহান ওর হাত টেনে ধরলো। বললো,

“টেষ্ট করে আমায় জানাবি সায়ু। ”

“যদি নেগেটিভ আসে? ”

“ব্যাপার না আল্লাহ যখন চাইবে তখনি পজিটিভ হবে। ”

“যদি পজেটিভ আসে? ”

“তাহলে আমাদের সব ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। ”

“কখনোই না। ”

“আমাদের বেবি সব ঠিক করে দেবে। ”

“তোর মতো অমানুষের বাচ্চা’কে আমি দুনিয়ার আলোই দেখাবো না। ”

“হোয়াট! ”

“হ্যাঁ পজেটিভ আসা মাত্রই তোর অংশকে খুন করবো আমি। সেদিন তুই যা করেছিস তার ফল কখনোই ভালো হবে না। ”

কথাটি বলামাত্রই গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ঠাশ করে এক থাপ্পড় দিলো দিহান। অগ্নি চক্ষুতে চেয়ে গলা চেপে ধরে বললো,

“কুত্তার বাচ্চা তোরেই আমি খুন করবো তোর মতো জঘন্য মনের মানুষ’কে দুনিয়ায় টিকতে দেবো না কখনোই না। ”

যতোক্ষণ না কেশে ওঠলো ততোক্ষণ ছাড়লো না দিহান। কেশে ওঠা মাত্রই ছেড়ে দিয়ে ছাদ ত্যাগ করলো সে। রাগের বশীভূত হয়ে ঘোরে মাঝে এমন একটি কথা বলে ফেলবে তা হয়তো সায়রী নিজের কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু সেও তো ভুলতে পারছে না সেই রাতের কথা সেই দিনগুলোর কথা। দিহান উন্মাদ,দুষ্ট,চঞ্চল, লিমিট ছাড়া ভাষা তার কিন্তু দিহান কখনো স্বার্থপর হতে পারেনা। হতে পারেনা সে অমানুষ। দিহান শুধু তার স্বামী নয় স্বামী হওয়ার পূর্বে সে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড। এতো বিশ্বাস এতো ভালোবাসার মাঝে হঠাৎ এই ঝড় কেন এলো? একটা বাচ্চার জন্য তাদের সম্পর্কের অবনতি কেন ঘটলো? তাদের ভালোবাসাকে আজ কেনই বা ঠুনকো মনে হয়? এর পিছনের রহস্য যে অবদি সে জানতে না পারবে সে অবদি দিহান’কে ক্ষমা করবে না সে৷ কিন্তু দিহান কেন এই রহস্য ভেদ করতে দিচ্ছে না? কেন দিহান চাইছে না সায়রীর থেকে পরিপূর্ণ ক্ষমা?
_____________________
একটি শান্তিময় ঘুম,একটি সুন্দর সকাল, একটি সুন্দর জীবনের আগমনি বার্তা, মনটাই ফুরফুরে হয়ে গেলো মুসকানের৷ ইমনের বাহু থেকে আলগোছে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ওষ্ঠকোণে লাজুকতা মিশিয়ে মৃদু হাসলো। আবার কি মনে করে যেনো টোপ করে ইমনের গালে চুমুও খেলো। জেগে যায়নিতো মনে হতেই বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো। নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে ওঠে চলে গেলো বাথরুমে। হাত,মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতে গিয়ে অর্ধেক ভিজেই গেলো। কিন্তু গোসল করলো না। এতো সকালে গোসল করা মানে ঠান্ডা,সর্দির কবলে পড়া। তাই বাথরুম থেকে বেরিয়ে কাবার্ড খুলে হালকা গোলাপি রঙের একটি নতুন সুতি কাপড় বের করলো। কিন্তু সে তো শাড়ি পরতেই জানেনা। যেটুকু জানে তাতে কাজও হবে না। তাই মুখ ফুলিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে ইমনকে ডাকতে শুরু করলো। বারকয়েক ডাক দিতেই চোখ কচলাতে কচলাতে ওঠে বসলো ইমন৷ মুসকান আহ্লাদী সুরে বললো,

“আমি ভিজে গেছি চেঞ্জ করবো, কে শাড়ি পরিয়ে দেবে এখন? ”

হাই তুলতে তুলতে ইমন বললো,

“বউ যখন আমার আমিই পরাবো। ”

মাথা নত করে লাজুক হাসলো মুসকান। ইমন বললো,

” দু’কাপড় পড়ো আমি দু’মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

ইমন তয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মুসকান কাপড় পাল্টে পেটিকোট, ব্লাউজ পরে শাড়ি কিছুটা কোমড়ে গুঁজে আঁচল কাঁধে দিলো। তারপর আয়নার সম্মুখে গিয়ে পিছন মুখী হয়ে ব্লাউজের হুকগুলো লাগানোর চেষ্টা করলো। পারলো না তাই আয়নায় তাকিয়ে দুহাত পিছনে দিয়ে সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করলো নিচের একটা লাগাতে পারলেও বাকিগুলো লাগাতেই পারলো না। অধৈর্য হয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে যে একটা লেগেছিলো সেটাও খুলে ফেললো। শাড়ির আঁচল খুলার জন্য উদ্যত হতেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো ইমন। তৎক্ষনাৎ আঁচল দিয়ে পুরো পিঠ ঢেকে তীব্র অস্বস্তি নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো৷ ক্রমে ক্রমে বক্ষঃস্পন্দন বাড়তে থাকলো মুসকানের। হাত,পা কাঁপতে শুরু করলো। অদ্ভুত এক অনুভূতিতে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে শুরু করলো। ইমন সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে আগাগোড়া মুসকান’কে দেখে নিয়ে ধীর পায়ে এগুতে এগুতে বললো,

“এখানে, চারদেয়ালের ভিতরে তুমি এবং তোমার স্বামী রয়েছে অন্য কেউ নেই। তাহলে এই জড়োতার মানে কি? ”

মুসকানের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে থামলো ইমন৷ হাত বাড়িয়ে আঁচল সরাতে নিলেই মুসকান ইমনকে বাঁধা দিলো। জড়োসড়ো হয়ে সরে যাওয়ারও চেষ্টা করলো। মেজাজ বিগরে গেলো ইমনের। নিম্ন স্থানের ওষ্ঠ কামড়ে ধরে শাড়ির আঁচলে দৃঢ়ভাবে বলিষ্ঠ হাতটা চেপে ধরে একটানে পুরো শাড়িটাই খুলে ফেললো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here