হৃৎপিণ্ড_২ (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব ১১

0
730

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১১
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
সোফায় আধশোয়া হয়ে বসে একধ্যানে বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে ইমন। ঘড়ির কাটায় সময় সাতটা বেজে চৌদ্দ মিনিট। দৃষ্টি সরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তুলে আবারো মুসকানের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় দু’বার ডাকলো। কিন্তু মুসকান নড়েচড়ে আবারো পাশ কাটিয়ে শুয়ে রইলো। ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে ইমন এবার গলার স্বর উঁচু এবং দৃঢ় করে দু’বার ডাক দিলো। ফলশ্রুতিতে মুসকান হুড়মুড় করে ওঠে বসলো। ব্যস্ত ভঙ্গিত এদিক সেদিক তাকিয়ে যেই ইমন’কে দেখলো বিস্ময়ান্বিত হয়ে এক ঢোক গিললো। গুটিশুটি মেরে বসে এলোমেলো খোলা চুলগুলো দু’হাতে বেশ শক্তপোক্ত খোপা করে সীমিত আকারে হাই তুলে মুখটা কাচুমাচু করে বসে রইলো। ইমন আশ্চর্যান্বিত হয়ে ভ্রুজোড়া কুঁচকে ফেললো। চিন্তান্বিত হয়ে কেবল এটাই ভাবলো,

” ঘুমন্ত রমণীর মুখশ্রী’তে তার হৃদয় যতোটা না ঘায়েল হয়েছে তার চেয়ে অধিক ঘায়েল তো চুল খোপা করার স্টাইল দেখেই হয়ে গেলো।”

ওষ্ঠজোড়া ফাঁক করে গভীর এক শ্বাস ত্যাগ করলো ইমন। বললো,

” বাথরুমে সব রেডি আছে ফ্রেশ হয়ে আমার জন্য কফি আর মা,বাবার জন্য চা করবি। আর মনে আছে তো কি বলেছিলাম?”

মুসকান নিশ্চুপ হয়ে শুধু মাথা নাড়ালো। ইমন বাঁকা হেসে বললো,

” গুড গার্ল। ”

মুসকান বাথরুমে গিয়ে দেখতে পেলো একই রকম দু’টো ব্রাশ রাখা রয়েছে। দু’টোতেই পেস্ট লাগানো। কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে সে ব্রাশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতেই ইমন ঢুকলো বাথরুমে। হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠলো মুসকানের। গলা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে সমানে ঢোক গিলতে শুরু করলো। দু’হাতে ওড়না খামচে ধরে মিনমিনে গলায় বললো,

” আমি কোনটা নেবো। ”

“এজ ইউর ইউশ।”

ইমন মৃদু হেসে কাঁধ উঁচিয়ে ওষ্ঠ ফুলিয়ে কথাটি বলতেই মুসকানের এলোমেলো দৃষ্টিতে লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। শুধু মাত্র ট্রাউজার পরে খালি গায়ে মুসকানের সামনে আসাতে বড়োই বিব্রত বোধ করছে মুসকান অথচ ইমন কতো ইজি ভাবে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরুষ মানুষের লজ্জা বরাবর কমই থাকে। কিন্তু মুসকানের সামনে ইমন কোন কিছুই নিয়ে বিব্রত বা লজ্জা বোধ করে না। তাই মুসকানের লজ্জা আর অস্বস্তির কারণ টা ইমন ধরতে পারলেও ইচ্ছে করেই পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। আর বললো,

” কি হলো তাড়াতাড়ি কর এখানেই এতো সময় লাগলে বাকি কাজ হবে কি করে। ”

মুসকান রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে আড়চোখে ইমনের প্রশস্ত বুকটার দিকে তাকিয়েই আবার ঝটপট দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কাঁপা হাতে দ্রুত ব্রাশটা নিয়ে পিছনমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে অস্বস্তি ভরা ছোট করে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। ইমন মাথা চুলকে ওষ্ঠজোড়ায় ঈষৎ হাসিটুকু বজায় রেখেই ব্রাশ নিয়ে বাইরে চলে গেলো তবে যাওয়ার আগে মুসকানের কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে গেলো,

” আর কিছুদিন পর থেকে এই উন্মুক্ত বুকেই দিনরাত লেপ্টে থাকতে হবে। তাই এতো আনইজি ফিল করার কিছু নেই৷ গতকাল কিন্তু নিজে থেকেও এখানটায় জায়গা করে নিয়েছিলি। ”

নিঃশ্বাসে বড়োই বেহাল দশা। একহাতে বক্ষঃস্থল চেপে ধরে আরেক হাতে ব্রাশের ডাঁট চেপে ধরে খিঁচ মেরে দাঁড়িয়ে আছে মুসকান। দীর্ঘসময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো সে। তারপর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মাথায় ওড়না চাপিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। নিচে কি ঘটেছে ইমন জানেনা তবে বাবা,মায়ের ওপর এটুকু কনফিডেন্স রয়েছে মুসকান যদি তার ভুল স্বীকার করে নেয় তারা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেবে। ইমনের সে বিশ্বাস অটুট রইলো। সত্যি মুসকান তাদের’কে সরি বলায় তারা মুসকানের সাথে স্বাভাবিক আচরণই করেছে। তাদের চা দিয়ে ইমনের জন্য কফি নিয়ে উপরে আসতেই ইমন বললো,

“পুরো পয়তাল্লিশ মিনিট পর কফি পেলাম? কফিটা কি দিয়ে বানালি? ”

মুসকান অভিমানী দৃষ্টিতে তাকাতেই ইমন মুচকি হেসে কফির মগ হাতে নিলো সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি সহকারে কফির মগে এক চুমুক দিয়ে জিগ্যেস করলো,

” ভালোবেসে বানিয়েছিস নাকি বাধ্য হয়ে? ”

থমথমে মুখে তাকালো মুসকান। ইমন তার অমন মুখ দেখেই ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,

” উমহ ভালোবাসাময় টেস্টই পাচ্ছি এমনি জিগ্যেস করলাম। কাবার্ডের ভেতরে নিউ ফোন রয়েছে ওটা তোর বিনাবাক্যে গ্রহণ করবি। ”

মুসকান দম বন্ধকর পরিস্থিতি থেকে কখন বেরোতে পারবে সেই চিন্তাই করে যাচ্ছে। এটাও বুঝে গেছে ত্যাড়ামি করার ফল খুব একটা ভালো হবে না। বরং চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো সব কথা শুনে এ বাড়ি থেকে বের হতে পারলেই তার শান্তি। তাই চুপচাপ গিয়ে ফোন বের করলো। সবকিছু ঠিকঠাকই রয়েছে তার সিমটাও এখানে তোলা। সেই সাথে ওয়াল পেপার ইমনের ছবিও সেট করা তা দেখেই মনে মনে ভেঙচি কেটে বললো,

” ভালোবাসা একেবারে উতলে ওঠেছে। ”
.
সকালের নাস্তা শেষে ইমন মুসকান’কে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পূর্বে হঠাৎই ইমন মুসকানের খুব কাছে চলে গেলো। মুসকান শিউরে ওঠে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। ইমন হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে টেনে মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করলো,

” আর কখনো ছেলে বন্ধু’দের সাথে আড্ডা জমাবি?”

এক ঢোক গিললো মুসকান আমতা আমতা করে বললো,

” কি বলছো? ওরা আমার বন্ধু ওদের সাথে আড্ডা দেবো না তো কি রাস্তা ঘাটের ছেলেদের সাথে দেবো? ”

ইমন কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

” ওরা রাস্তাঘাটের ছেলেই যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে। ”

” অবশ্যই আড্ডা দেব। ওরা আমার বন্ধু ছেলে বা মেয়ে মার্ক করে কারো সাথে বন্ধুত্ব করিনি আমি। ”

” আজকের পর কারো সাথে জাষ্ট ফোনে যোগাযোগ করে দেখিস। ”

ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মুসকান বললো,

“সমস্যা কি তোমার? আমার কি ফ্রেন্ড থাকতে পারেনা? ”

” না পারেনা। ”

” তাহলে যদি আমি বলি সায়রী আপুর সঙ্গে তুমি কথা বলবে না,আড্ডা দেবে না শুনবে? ”

” না শুনবো না। ”

” তাহলে আমি কেন শুনবো? ”

চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ছাড়লো ইমন। যার পুরোটাই গিয়ে ঠেকলো মুসকানের মুখশ্রীতে। মুসকানের নিঃশ্বাসও তীব্র হয়ে এলো ইমন এক ঢোক গিলে শান্ত দৃষ্টি মেললো। মুসকানের কানের পিছনে একহাত ছুঁয়ে বললো,

” আমি তোকে এভাবে মেনে নিতে পারছিনা। আমি এই মুসকান’কে রেখে যাইনি। ”

“যাকে রেখে গিয়েছিলে সে তো আমি নই। সময় পাল্টেছে মনও বদলেছে। ”

ইমন আরেকহাত বাড়িয়ে মুসকানের চোয়ালজোড়া দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

” সে মনে যদি আমার জায়গা থাকে অবশ্যই আমার কথা মানতে হবে। একা একা বাইরে যাওয়া চলবে না, বাড়ি থেকে বের হলে অবশ্যই আমাকে জানিয়ে বের হতে হবে। আর হ্যাঁ নেক্সট কোনদিন বিয়ার টিয়ার খাওয়ার কথা মনেও আনতে পারিবি না। তাহলে কাল যা ঘটাইনি পরবর্তী’তে তাই ঘটাবো। ”

কিছু বললো না মুসকান নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। ইমন মুসকানকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো,

” আমার বউ হবি তো? ”

দৃষ্টিজোড়া ঝাপসা হয়ে এলো মুসকানের মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো ইমন স্মিত হেসে বললো,

” বরের কথা শুনতে হয়। ”

” কিন্তু বর’কে বুঝতে হবে প্রতিটা মানুষেরই ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। ”

” সেই স্বাধীনতা কি আমি বোঝাবো তোকে? ব্যক্তি স্বাধীনতা মানেই বেয়াদবি নয়। মুখের ওপর কথা বলবিনা শাসন করার বা বকা ঝকা করার একদম ইচ্ছে নেই শান্তিতে বিয়ে করতে চাই। এই বয়সে এসে কোন প্রকার ঝামেলা পাকিয়ে বিয়ে ভঙ্গ করতে চাইনা। নাকি বুড়ো হয়ে গেছি বলে এখন মন থেকে মানতে পারছিস না? ”

কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকিয়ে রইলো মুসকান। বললো,

” আমি এমনটা বলিনি। ”

” তাহলে আমি যেমন টা বলছি তেমনটা শোন। অন্তত বাসার বাইরে যাওয়ার আগে আমাকে টেক্সট দিবি দিবিতো? ইয়েস ওর নো? ”

মাথা নাড়ালো মুসকান ইমন কিছুটা স্বস্তি পেয়ে মুসকানের কপালে আলতোভাবে চুমু খেলো। মুসকান মৃদু কেঁপে ওঠতেই ইমন সরে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আড় চোখে মুসকানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো,

” এতো নার্ভাস হয়ে গেলে তো সমস্যা শান্তি’তে কিচ্ছু করতে পারবো না। তিন বছর সময় এমনি এমনি দিলাম নাকি? ”

লজ্জায় পুরো মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো মুসকানের। পাতলা মসৃণ ওষ্ঠজোড়াও মৃদু কাঁপছে। ইমন সেদিকে লক্ষ্য করে মুসকান’কে স্বাভাবিক রাখার জন্য পরিস্থিতি অন্য দিকে নিয়ে গেলো। বললো,

” আমরা কিন্তু ফুপু, ফুপা হতে যাচ্ছি + কাকা, কাকি। ”

চমকে ওঠলো মুসকান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

“মানে? ”

” মানে হচ্ছে রিমি প্র্যাগনেন্ট কি কপাল আমার দেখ বেষ্ট ফ্রেন্ডের বউয়ের বাচ্চা হতে চললো অথচ আমার বউটাই বাচ্চা থেকে বড়ো হয়ে ওঠলো না। কিভাবে কি করবো আমি আমার কপালে বাবা হওয়া লিখা রয়েছে তো? নাকি ফুপা,কাকা হয়েই জীবন কাটিয়ে দিতে হবে! ”

খুশিতে যখন প্রবল উত্তেজনায় ছটফট করছে মন তখনি ইমনের বলা শেষ বাক্য গুলো তার সব খুশিকে উধাও করে দিয়ে লজ্জায় মাথা নুইয়ে দিলো। ইমন সঙ্গে সঙ্গেই বললো,

” এবার দিহানের পালা তাইনা? ”

মুসকান দীপ্তিমান চেহেরায় মাথা নাড়ালো। ইমন বললো,

” বেচারা,বেচারী’রা ট্রাই করছে কিন্তু ফলাফল শূন্য।”

মুসকানের কেমন জানি প্রচণ্ড লজ্জা করছে আবার সায়রীর কথা শুনে মনটাও খারাপ লাগছে। তাই মনে মনে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলো,খুব শিঘ্রই যেনো আরো একটা সুখবর পায় দিহান আর সায়রীর থেকে।
.
রিমির রিপোর্ট পজেটিভ দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। পুরো বাড়িতে খুশির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সবাই’কে মিষ্টি মুখ করানো শেষে দিহান,মুরাদ,ইমন তিন জন একসাথে বেড়িয়েছে। মুরাদ বলে গেছে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হবে। তাই মুসকান রিমির সাথে রিমির রুমে শুয়ে ফেসবুকে গল্প পড়ছে। বই পড়ার অভ্যাসের জন্য দু’বছর আগে ফেসবুকেও গল্প পড়ার অভ্যাস করে নিয়েছে মেয়েটা। ফেসবুক ঘেটে ঘেটে বেশ কিছু মানসম্মত রাইটারের পেইজ ফলো করে রেখেছে। তাদের লেখাই ফ্রি টাইম পড়ে সে। রিমির শরীরটা বেশ দূর্বল লাগায় খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেছে সে। গতকাল রাতে ইমন ম্যাজিক ম্যান হয়েই তাকে ঘুম পাড়িয়েছে কিন্তু আজ কিভাবে ঘুমাবে সে? সেই তো স্লিপিং পিল খেয়েই ঘুমাতে হবে তাই ঘুমানোর পূর্বে গল্পটা শেষ করে নেবে। এমন ভাবনা চিন্তার মাঝেই ফোনে কল এলো তার। অচেনা নাম্বার হলেও মন বলছে চেনা মানুষটিই কল করেছে। তাই বারকয়েক ঢোক গিলে বক্ষঃস্থলের ধুকপুকানি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করলো,

” সাড়ে দশটা বাজে এখনো অনলাইনে কি? ”

” গল্প পড়ছিলাম। ”

” কোন গল্প নয় ডাটা অফ করে ঘুমাতে হবে এখন। ”

” হুম ”

গম্ভীর হয়ে হুম বলাটায় ইমন মেজাজি কন্ঠে বললো,

” এখানে মুখ ভার করার কি হলো? রিমির ঘর থেকে বের হো নিজের রুমে যা আমি দশমিনিটের মধ্যে আসছি। ”

” মানে? ”

” যা বললাম তাই। ”

ফোন কেটে দিলো ইমন। মুসকান সাথে সাথে আবার কল করলো কিন্তু রিসিভ হলো না। কয়েক মিনিটের মাঝেই গেটে শব্দ শুনতে পেলো। তড়িঘড়ি করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে গেলো মুসকান। গেট অবদি যেতে হলো না তাকে মরিয়ম আক্তার গিয়ে গেট খুলে দিয়েছে। কিন্তু মুরাদ ব্যাতিত কাউকে দেখতে পেলো না। মুরাদ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

” আম্মা সামনে সপ্তাহে ইরা কাকি আংটি প্লাস নাকফুল পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুমি কি বলো?”

ঘরে ঢুকতেই মুসকান গ্লাসে পানি ভরে মুরাদকে দিলো। মরিয়ম আক্তার বললেন,

” আমি কি বলবো তোর চাচাকে জানিয়ে উনাদের সম্মতি জানিয়ে দে। ”

মুসকানের অনুভূতি টা ঠিক কেমন হচ্ছে সে নিজেও জানে না। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে তার। গতকাল রাতে করা নিজের পাগলামোর কথা মনে করে অন্তত আর রাগ ঝাড়তে ইচ্ছে করলো না। যেখানে নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেখানে আজ এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না৷ তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে নিজের রুমে ঢুকে পড়লো।
.
রাত তখন এগারোটা। মুরাদ জানে না ইমন এসেছে শুধু মরিয়ম আক্তার জানে ইমন মাত্র একঘন্টা সময়ের জন্য এসেছে। মুসকান স্লিপিং পিল খায় এটা ওর শরীরের পক্ষে কতোটা ক্ষতিকারক তা কেবল মুসকান ব্যাতিত সবাই বুঝতে পারে হয়তো মুসকানও বুঝতে পারে কিন্তু সে নিরুপায় হয়েই খায়৷ তাই মেডিসিন ছাড়া মুসকানকে ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব টা ইমন নিজেই নিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে বিয়ের পূর্বে মুরাদ ঘোর বিরোধিতা করবে। প্রাণের বন্ধু হলেও বোনের জন্য শত্রুতে পরিণত হতে খুব একটা সময় নেবে না। ভালো,মন্দ তো বুঝবেই না আরো ভুল বোঝবে। দিহান ব্যাতিত ইমন এবং মুরাদ দু’জনেই হাই লেভেলের ত্যাড়া। তাই মুসকানের জন্য এ বিষয় টা মুরাদের থেকে চেপে যাওয়াই সমীচীন মনে করলো ইমন এবং মরিয়ম আক্তার।
.
টানা দু’দিন শান্তিতে রাতের ঘুমটা হওয়ার ফলে মুসকানের মনটা বেশ ফুরফুরা হয়ে গেছে। সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে অল্প খানিক খেয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলো। রিকশা দিয়ে যাচ্ছিলো সে সময়ই রাস্তার পাশে দেখা মিতুল ভাইয়ের সঙ্গে। সেও ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্যই রিকশার অপেক্ষা করছিলো৷ মুসকানের রিকশাটা তাকে পাস করার সময়ই সে রিকশাওয়ালা কে ডাক দেয়।

” এ মামা দাঁড়ান আরে মুসকান কেমন আছো? কি খবর তোমার? ”

মুসকান জোর পূর্বক হেসে বললো,

” ভালো আপনি কেমন আছেন? ”

মিতুল উত্তর দিতে দিতেই মুসকানের পাশে বসে পড়লো রিকশাওয়ালা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,

” এ মামা টান দেন। ”

মুসকান ভারী আশ্চর্য হয়ে বিরক্তি’তে চোখ মুখ কুঁচকে একপাশে চেপে বসে রইলো। মিতুল হাসি হাসি মুখে বললো,

” কি সৌভাগ্য আমার সকাল সকাল তোমার দেখা পেলাম। ”
.
মুসকানের আজ ক্লাস আছে সে বিষয়ে অবগত ইমন। তাই সকাল সকালই বের হয়েছে গাড়ি নিয়ে। পথে এক বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ার ফলে কথা বলতে গিয়ে কিছুটা লেট হয়ে গেছে। গাড়ি নিয়ে মুসকানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই মাঝপথে মুসকান যে রিকশায় ওঠেছে সে রিকশাটি তার গাড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিছু সময়ের জন্য হতভম্ব হয়ে যায় ইমন৷ পরোক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়।
দু’চোখে কেবল স্পষ্ট হয়ে ওঠে মুসকানের আড়ষ্ট মুখশ্রী এবং পাশে অপরিচিত এক যুবকের হাস্যজ্জ্বল চেহেরা।

চলবে…
আজ পর্বটা খুবই বাজে হয়ে গেছে মেবি। লেখার সময় বার বার ছন্দ কেটে যাচ্ছিলো তবুও একটা পর্ব সম্পন্ন করেছি শুধুমাত্র পাঠকদের জন্য। নয়তো আজ না লিখে ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে কাল দিতাম। তাই ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here