হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৩৮

0
548

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৮(সমুদ্রবিলাশ)
সাগরের ঢেউয়ের সাথে মোকাবেলা করে জাহাজ এগিয়ে চলেছে সাথে গা*ঙচি*লেরা উড়ে উড়ে সঙ্গী হচ্ছে। জাহাজের যাত্রীরা বাদাম, বিস্কিট ওদের ছুঁ*ড়ে দিলে ওরা লুফে নিচ্ছে। জাহাজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রিয়া ওদের দিকে বাদাম ছুঁ*ড়ে দিচ্ছে ছবিও তুলছে। জার্নিটা এই পাখিগুলোর জন্য আরও আনন্দদায়ক হয়েছে।
সেন্টমার্টিন পৌঁছে ওরা দুপুরে খাবার খেয়ে আধ ঘণ্টার মতো বিশ্রাম শেষে সমুদ্রতটে যায়। নীল পানি ও নারিকেল গাছের জন্য পরিচিত এই সেন্টমার্টিন দ্বীপটি। এই দ্বীপটিকে নারিকেল জিজ্ঞিরাও বলে থাকে। প্রিয়া ও জারিফ দুজনে সাগরে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জায়গাটা নির্জন। প্রিয়া উৎসুকতার সাথে বলে,

“এখানে যদি আমাদের নিজস্ব একটা ঘর থাকত! ইশ! শান্ত সবকিছু। মন শান্ত হয়ে গেছে।”

জারিফ চুপ করে প্রিয়ার উৎসুকতা দেখছে। ভেজা বালুতে প্রিয়া নিজেদের নাম লিখছে। ঝিনুকও কুড়িয়েছে কিছু। জারিফ কিছু বুনোফুল এনে প্রিয়ার কানের পিঠে গুঁজে দেয় আর বলে,

“আমার প্রহর এখানে থমকে যাক! আমি মুগ্ধনয়ন ভরে তোমায় দেখি এই সাগরপাড়ের কন্যা রূপে।”

প্রিয়া চমৎকার হেসে তার অর্ধেক আঁকিবুঁকির দিকে দেখিয়ে বলে,
“সাগরতটে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেলাম।”

জারিফও প্রিয়ার পাশে বসে প্রিয়ার সাথে মিলিয়ে লাভ শেইপটা পূর্ণ করে। আগেই ডাব কিনে এনেছিল এখন তারা নারিকেল গাছের গোড়াতে বসে খাচ্ছে। সমুদ্রতটে বড়ো বড়ো নৌকা বাঁধা। সারা বিকেল ওদের তীরে হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের কাঠের বাড়িটাও দেখে এসেছে। কী শৌখিন করে বানানো। ছুটি কাটাতে একটা উপভোগ্য শান্তির জায়গা। সেন্টমার্টিন এতোটাই মনোরোম যে যদি কক্সবাজার ঘোরার আগে সেন্টমার্টিন আসা হয় তবে কক্সবাজার গিয়ে অতোটা নজরকারা লাগে না। নারিকেল গাছে বেষ্টিত ছোটো আকারের দ্বীপটিতে সাত হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে।

ছোটো দ্বীপটিতে সন্ধ্যা নামল। সেই সাথে আ*তঙ্কও। যারা দূরে ঘুরতে যান তাদেরকে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে বলা হয়। প্রিয়ারা এখন হোটেলের সামনে সমুদ্রপাড়ে আছে। বন*ফা*য়া*র জ্বা*লিয়ে বসা সাথে আরও কিছু দম্পতিও। তাদেরও হা*নিমু*ন! সবাই মিলে আনন্দ করতে করতে সময় চলে যায়। ওরা সবাই আগামীকাল একসাথে প্রবালদ্বীপ যাবে বলে প্ল্যানিং করে। রাতের খাবার শেষে হোটেলের সামনে গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে নারিকেল গাছগুলোর আড়ালে রাতের সাগর দেখছে। শান্ত প্রায়। জারিফ কফি হাতে প্রিয়াকে পেছোন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“নিন আপনার কফি।”

“থ্যাংকিউ সো মাচ।”

জারিফ বারান্দার ম্যাটে বসল সাথে প্রিয়াকেও বসালো।
“মাই প্লেজার। রাত কিন্তু অনেক হলো। এখানে রাত এগারোটা মানে গভীর রাত।”

প্রিয়া বিবশ হয়ে বাহিরের দিকে নজর রেখে কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
“আজ নাহয় না ঘুমালাম। এখানে বসেই কা*টিয়ে দেই চলুন। ইচ্ছে ছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপে সারারাত সাগরপাড়ে আপনার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকব। কিন্তু সতর্কতার জন্য হলো না।”

জারিফ প্রিয়ার মুখটা আঁজলা ভরে নিজের দুইহাতের মুঠোয় নিলো। বলল,

“রজণী তার আপন গতিতে যাক,
প্রহর শেষে নতুন ভোরে আমি তোমাকে চাই!”
_________তিথী

_________________

প্রবালদ্বীপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে টলার ছুটছে। মেয়েরা সবাই গানের কলি খেলছে আর ছেলেরা সেটা উপভোগ করছে। আধ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলো ওরা। টলার থেকে ছোটো নৌকা করে দ্বীপে যেতে হয় কারণ এখন জোয়ারের সময় পানি বেশি। প্রবালদ্বীপ স্বচ্ছ নীল পানির নিচে প্রবালগুলো বড্ড সুন্দর লাগে কিন্তু সাবধান! ধা*রালো সেই প্রবাল। বেকায়দায় পা পরলে কে*টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জারিফ প্রিয়ার বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলছে। দুজনের কাপল ছবিও তোলা হয়েছে। প্রিয়া দুটো ছোটো সাদা প্রবাল পেয়েছে পানি থেকে। জারিফকে দেখিয়ে দেওয়ার পর জারিফ এনে দিয়েছে। দুজনের পরনে আকাশি রঙের ড্রেস। প্রিয়া পরেছে আকাশি কুর্তি সাথে সাদা টাইস ও ওড়না। জারিফ আকাশি শার্ট ও সাদা জিন্স। খোলাচুলে কানে ফুল গুঁজা প্রিয়াকে সমুদ্রকন্যাই মনে হচ্ছে।

সুন্দর সময়গুলা জলদি চলে যায়। প্রবালদ্বীপ থেকে ফিরে ওদের সেন্টমার্টিনকে বিদায় দেওয়ার সময়ও চলে এসেছে। প্রিয়ার মন খারাপ। মুখ ভাড় করে সে জাহাজে বসে আছে। জারিফ কিছু শুকনো খাবার এনে প্রিয়ার পাশে বসে বলে,

“এবার আক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছ। পরেরবার দ্বিগুন উৎসাহ পাবে। কিছু না কিছু আক্ষেপ জীবনে থাকতে হয়। আংশিক হলেও।”

“হুম। খুব মিস করব পুরো ট্যুরের সময়টাকে। আপনি খেয়াল করেছেন? আমি কিন্তু ছবি ও পোস্ট করা ছাড়া ফোন খুব একটা ব্যাবহার করিনি।”

জারিফ সন্দেহের সাথে বলে,
“তাই তো। তবে কি তুমি আরও ভুলোমনা হয়ে গেলে? এমনেতিই তোমাকে ফোন করে আমার অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো।”

প্রিয়া কপট রা*গ দেখিয়ে জারিফের বাহুতে মে**রে বলে,
“কথা কই থেকে কই নিয়ে গেলেন! সময়টা সুন্দর কেটেছে তাই ফোন ইউজের ফুসরত ছিল না। আর আপনি!…..”

জারিফ হেসে বলে,
“ওকে ওকে। খিদে পেলে খেও। ভাবীদের সাথে গল্প করো। আমি উপরে গেলাম।”

পরেরদিন,,
সকালে ঢাকা এসে পৌঁছে। প্রিয়াকে বাড়িতে দিয়ে জারিফ ওরিয়েন্টেশনের জন্য চলে যায় ভার্সিটিতে। এগারোটার দিকে শুরু হয়েছে। এদিকে প্রিয়া আজকে মেসেঞ্জার ইন্সটল করে তারপর ব্যাচ গ্রুপে কিছু মেয়ের প্রিয়া ও জারিফে নিয়ে বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা দেখে মন বি**ষিয়ে যায় তার। রেজাল্ট ভালো হওয়ার কারণ নাকি জারিফের দু*চো*খা নীতি! সাথে বিয়ের আগে খা*রাপ স*ম্পর্কের ই*ঙ্গিত! অবশ্য সেসবে প্রিয়ার বন্ধুরা চরম বি*রোধীতা করেছে কিন্তু কিছু মেয়ে সেগুলোকে খোঁ*চাতে বড্ড পছন্দ করে কী-না!

প্রিয়া দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ কাঁদে অতঃপর মেসেঞ্জার ডিলেট করে তামান্না ভাবীর কাছে গিয়ে তুতুলকে নিয়ে বসে থাকে।

“ছোটোআম্মু, তোমার মন খারাপ?”

তুতুল বাচ্চাটার আধোবুলিতে প্রিয়া হালকা হাসে।
“না বাবা। টায়ার্ড তো ছোটোআম্মু তাই। তুমি নাকি আম্মুকে অনেক জ্বা*লিয়েছ?”

“একটুও না। সত্যি। আমি তো ভালো ছেলে।”

“হুম হুম।”

তামান্না কাপড় ভাজ করছিল আর ওদের কথা শুনছিল। সেও ভেবেছিল প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করবে তার আগে তার পা*ক*না ছেলেই করে ফেলেছে। তামান্না বলে,

“ওর কথা শুনো না একদম। চঞ্চল ছেলে আমাকে হাঁপিয়ে তুলেছে। তোমাকে এখন জ্বা*লাবে দেখো। কতোটা জার্নি করলে রেস্ট করো গিয়ে নাহয়। বিকেলে শাশুড়ি-বউয়েরা মিলে জম্পেশ আড্ডা হবে। মা একটু কাল তার বাবার বাড়ি গেছেন। বিকেলেই ফিরে আসবেন।”

“না সমস্যা নাই ভাবী। তুতুলের সাথে ভালোই লাগছে।”

তামান্না প্রিয়ার প্রত্যুত্তরে হেসে কাজে মনোযোগ দেয়।

__________
মুন্নিদের ড্রয়িংরুমে মুন্নির বাবা-মা, রাদিফ বসে আছে। রাদিফ নিজেই সাহস করে এসেছে। মুন্নিকে তার পছন্দ সেটাও জানিয়েছে। মুন্নির বাবা চুপ করে থাকায় ঘরের পরিবেশ গম্ভীর। মুন্নি অবশ্য বাড়িতে নেই। বান্ধুবীদের সাথে ঘুরতে গেছে। চলে আসবে। মুন্নির বাবা চশমা খুলে বলেন,

“দেখো রাদিফ, তুমি ভালো ছেলে আমি মানি কিন্তু আমার মেয়ের জীবনে যে ঝড়টা একবার বয়ে গেছে সেই ঝড়টা আমি দ্বিতীয়বার চাইনা। তাই তুমি নিজে আগে সিওর হও সব ব্যাপারে তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিও। সময় নাও। ছেলে হিসেবে তোমাকে আমার খারাপ মনে হয় না। আমার মেয়ের সাথে সারাজীবন থাকতে পারবে কিনা সেটা ভেবে নাও। সে হয়তো তোমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারবে না।”

রাদিফ লম্বাশ্বাস নিয়ে বিনয়ের সাথে বলে,
“আমি সব ভেবেই এসেছি। তার অতীত না জানলেও বর্তমানে আমি সন্তুষ্ট। আপনি রাজি থাকলে আমি আমার বাবা-মাকে আসতে বলব। মায়ের মুন্নিকে পছন্দ হয়েছে।”

“আমি মুন্নির থেকে জেনে নিই। জানাব তোমাকে।”

রাদিফের মন শান্ত হলো কিছুটা। মুন্নি মানা করবে বলে তার মনে হয় না। সে বিদায় নিয়ে চলে আসে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here