#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০৭
#Nishi_khatun
দাইয়ান কে যে পুলিশেরা ধরে নিয়ে গেছে তা নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির কারো কোন মাথা ব্যাথা হচ্ছে না। তাদের সবার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা জানতো এমন কিছু হবে।
ইফা এদিকে সেই সকাল থেকে বিলাপের সুরে কান্না করে যাচ্ছে। তার কান্না করা দেখে কারো মনে সহানুভূতির সৃষ্টি না হলেও এহেন কান্ডে বিরক্তিবোধ করছিল সকলে।
বদুরুদ্দিন সাহবের কোথায় যেনো মিটিং আছে!
তিনি সে মিটিং এটেন্ড করতে যাবে। রেহেনা বেগম তা-ই স্বামীর সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে দিচ্ছেন।
বাড়ির পরিবেশ দেখে মনেই হচ্ছে না,
এ বাড়ির ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
বদুরুদ্দিন সাহেব বাড়ির সদরদরজার সামনে এসে গলার আওয়াজ জোড়ে করে বলেন,” আমার জরুরী মিটিং আছে, আমি সেখানে যাচ্ছি। আমার বাড়িতে ফিরতে দুই তিনদিন দেড়ি হতে পারে। সবাই সাবধানে থাকবে। যদি কারো কোন সমস্যা হয় তারা তাদের সমস্যার সমাধান নিজেই করে। আমি কারো সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবোনা। ”
ইফা সদরদরজার কাছে-ই উপস্থিত ছিলো। তা-ই সে তার শ্বশুরের বলা সব কথা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে।
এসব কথা শুনে আরও জোড়ে কান্নাকাটি করতে শুরু করে।
বদুরুদ্দিন সাহেব চলে যাবার পর রেহেনা বেগম বিরক্তিবোধ করছিল। তা-ই তিনি ইফার সামনে যেয়ে বলে,
-“শোনো মেয়ে! আমার বাড়ির উঠানের কোণায় বসে এভাবে বিলাপ করার দরকার নেই। তোমার যদি খুব কান্নাকাটি করার ইচ্ছা হয় বাবার বাড়িতে যেয়ে কান্নাকাটি করো। এখানে এভাবে কান্না করে আমার বাড়ির পরিবেশ দূষিত করবে না।”
ইফা ঝাঁঝালো কন্ঠে প্রতিবাদ করে ওঠে,
“এই আপনি কেমন মা! যার ছেলেকে সকালে পুলিশে ধরে নিয়ে গেলো, সে মা এমন গা ছাড়া স্বভাবের হয় কি করে?”
রেহেনা বেগম গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে,
“ছেলে যখন আমার চিন্তাও আমার। আমি আমার অনুভূতি কী ভাবে প্রকাশ করবো তা আমার ব্যাক্তিগত বেপার। আমি কেমন স্বভাবের তা আমাকে বুঝতে দাও।”
ইফা নেকামির সুরে বলে,”হ্যা, আপনাদের সবার যে, আমার স্বামীর প্রতি কেমন অনুভূতি তা দেখতেই পাচ্ছি। সাত সকালে ছেলেকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে, সেই ছেলের বাবা দুই তিনদিনের জন্য মিটিং এ চলে গেলো। বলছি যে, তার ছেলেকে কী থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে কেউ যাবে না?”
রেহেনা বেগম তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“ছেলে আমার নিজেই উকিল! সে নিজেই খুব ভালে করে জানে, প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতি তে অথবা তাকে তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের শাস্তি কি। সে জেনে বুঝে তো দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। কিছুদিনের জন্য তোমার সাথে দাম্পত্যজীবন যাপন করবে, তারপর জেলে সাত বছর থাকবে। তুমি এখন এবাড়িতে সাত বছর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবে।”
ইফা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,”কীহহহহ! বিয়ে করে কয়েকবছর ভালোমতো সংসার করলাম না। তার জন্য সাত বছর এ বাড়িতে অপেক্ষা করবো? সাত বছর এ বাড়িতে স্বামী বিনা দাশী হয়ে থাকবো?”
রেহেনা বেগম বলল- হ্যা! ইচ্ছা হলে অপেক্ষ করবে নয়তো বাড়ি থেকে চলে যাবে। এখন তো মনে হয় তোমার এমনিতে এবাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।
ইফা বলে,”আমি কেন এবাড়ি থেকে চলে যাবো? কই কেউ তো রিমশা কে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছেন না?”
ইলমা তখন সেখানে এসে বলে,”কারণ রিমশা ভাবী ভাইয়ার প্রথম বউ। ভাইয়ার উপর তার অধিকার আপনার থেকে বেশি। ভাইয়ার যেমন এবাড়িতে অধিকার আছে, তেমন ভাবে রিমশা ভাবীর অধিকার আছে। এখন সে এবাড়িতে সাত বছর কেনো সারাজীবন থাকলেও কেউ কিছু বলবে না।”
ইফা তখন বলে,”আমি বুঝতে পেরেছি। আপনারা আমাকে মিথ্যা ভয় দেখাচ্ছেন। যাতে করে আমি আমার স্বামী কে ছেড়ে দিয়ে এবাড়ি থেকে চলে যায়। তখন দাইয়ান কে নিয়ে ঐ রিমশা ডায়নী সুখে সংসার করবে তা-ই না?”
সে সময় রিমশা ইফার সামনে এসে উঠানে থুঃথুঃ ফেলে বলে,
-“এটাকে কি বলে জানিস তো? যে স্বামী আমার মূল্যবোধ বুঝলো না, আমাকে বুঝার চেষ্টা করলো না! কিন্তু তোর দু দিনের মিথ্যা ভালোবাসার জ্বালে ফেঁসে গেলে। সে সাত বছর পর কেনো? চৌদ্দবছর পরে সাধু হয়ে ফিরে আসলেও তাকে আমি গ্রহণ করবো কিনা ভাবতে হবে না। তবে হ্যা তাকে অন্য কারো সাথে সুখো সংসার করতে দিবো না। কারণ সে শুধু আমার। আমি তাকে গ্রহণ করবো না, আমার ফেলে দিবো না। দুটোর মাঝে আজীবন ঝুলিয়ে রাখবো।”
ইফা বলে,”তুই এমন কিছুই করবি না। তোর দৌড়ানি কতদূর তা আমার জানা আছে।”
রিমশা ইফাকে ইগনোর করে ইলমার হাত ধরে বলে,
“এই তোমার না সামনে না এইচএসসি পরিক্ষা? তুমি এভাবে ঘুরাঘুরি করলে চলবে? চলো পড়তে বসবে, নাহলে ডাহা ফেল করবে। আর ঝর্ণা কই? ওর কয়েকদিন পর পরিক্ষা। পরিক্ষা দিবে না বললেই হবে? ওর ঘাড় সহ পরিক্ষা দিবে। আম্মা আপনি সংসারেে সব কাজ দেখেন। আমি মেয়ে দুটো কে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আর যার দরকার সে আমার দৌড়ানি দেখুক! ”
রেহেনা বেগম রিমশা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” যাও বউমা! মেয়ে দুটোর দায়িত্ব তোমার।
এদের ভালো করে পড়িয়ে পাশ করার ব্যবস্থা করো।
নয়তো ফেল করা মেয়েকে কেউ তার বাড়ির বউ করবে না। এযুগে উচ্চ শিক্ষিত ভালো পজিশনে থাকা ছেলের ঘাড়ে তো আর আমাদের বাড়ির অশিক্ষিত মেয়ে চাঁপিয়ে দিতে পারি না।”
ইফা ঝাঁঝিয়ে বলে,”আমাকে অশিক্ষিত বলে অপমান করা হচ্ছে? আমিও এইচএসসি পরিক্ষা দিয়েছি।”
রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”পরিক্ষা দিয়েছিস কিন্তু কয়েকবার পরিক্ষা দিয়েও পাস করিশ নাই।”
এরপর আর কেউ ইফার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে না। তারা যে যার কাজে চলে যায়।
রেহেনা বেগম ঝর্ণার মা কে বলে,”আজকে বাড়িতে এতো রান্নার চাপ নেই। বাড়ির পুরুষেরা বাড়িতে না থাকলে রান্নার জন্য এতো তাড়া থাকে না।”
ঝর্ণার মা -হ্যা ভাবী যা সত্যি বলেছেন।
*
*
দিরহাম সেই সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছিলো! সারাদিন আর বাড়িতে আসে নাই। যেহেতু বাড়িতে পুরুষ মানুষেরা ছিলো না। তা-ই আজ চেয়ারম্যান বাড়িতে বাহিরে মানুষদের আনাগোনা কম ছিলো।
দিরহাম বিকালবেলা বাড়িতে ফিরে এসে দেখে বাড়ির সব মহিলারা একসাথে বসে গল্পগুজব করছে। ইফা তাদের থেকে কিছুটা দূরে চুপচাপ মুখটা গোমড়া করে বসে আছে।
দিরহাম তখন তার মা’কে ডাক দিয়ে বলে,”আম্মা কাল রাতে কি হয়ছে কিছু শুনছো না কি?”
রেহেনা বেগম- না তো বাবা! কোন কিছু শুনব নাই তো। কেন কারো কোনো সমস্যা হইছে?”
দিরহাম বলে,” কাল রাতে না কি পাশের গ্রামের লতিকা বেগমের স্বামী ফাইম মিয়া কে বা কারা যেনো আক্রমণ করেছিল। বেচারার অবস্থা ভালে না। হাসপাতালে ভর্তি আল্লাহ জানে লোকটা বাঁচবে কি না।”
রিমশা দ্রুত বলে ওঠে,”ভাইয়া লোকটা কিছু বলেছে?
কে তার উপর আক্রমণ করেছিল? বা তাকে চিনতে পেরেছে? ”
দিরহাম – আরে ফাহিম মিয়ার তো এখনো জ্ঞান ফিরে নাই!
সে কেমনে বলবে?
ঝর্ণা ফট করে বলে ওঠে,”খারাপ মানুষদের সাথে সব সময় খারাপি হয়। যদি ভালো মানুষ হতো তাহলে কি তার সাথে এমন কিছু হতো?”
রেহেনা বেগম ঝর্ণা কে ধমকিয়ে বলে,”সাত গ্রামের খারাপ মানুষের খবর উনি নিয়ে রেখেছে এমন ভাবা। মেয়ে মানুষকে সব সময় কথা বলার আগে চিন্তা ভাবনা করে কথা বলা উচিৎ। মুখে সব সময় লাগামহীন কথাবার্তা মেয়ে গুলোর। যাও সবাই যে যার রুমে যাও।”
সবাই প্রস্থান করতেই রেহেনা বেগম দিরহাম কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আল্লাহ জানে, আমাদের গ্রাম সহ আশেপাশের গ্রামে এসব কি শুরু হল। কয়েকদিন যেতে না যেতেই খু-ন খারাপির খবর শোনা যাচ্ছে। ”
দিরহাম বলে,”মা যে লোকগুলো মারা গেছে একজন ও কি ভালে ছিলো? তাদের সামনে কেউ কিছু না বললেও আড়ালে ঠিকি তাদের লুচ্চা, লম্পট, চরিত্র হীন এসব বলে সম্বোধন করতো। যাক একদিক দিয়ে ভালোই হচ্ছে গ্রাম থেকে এসব বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ গুলো কমতে শুরু করেছে।”
রেহেনা বেগম বিরক্তির সাথে বলে,”হ্যা! যে বা যারা আগাছা নিধন করতে নেমেছে তারা যদি একবার ধরা পড়ে তাদের সোজা ফাঁশিকাঠে ঝুলতে হবে। তখন তার পরিবারের সদস্যদের কী হবে ভেবে দেখেছিস? ”
দিরহাম বলে,”মা, কেউ যদি সমাজের নোংরা পরিষ্কার করতে যায়, তাহলে তার গায়ে একটু আকটুনোংরা লাগবে এটা স্বাভাবিক। তার মানে এই না তারা খারাপ লোক বলে গণ্য হবে।”
রেহেনা বেগম- বাবা ঐ সব পড়ের বাড়ির ক্যাচাল বাদ দাও। নিজের বাড়িতেই কি হচ্ছে বুঝতেছি না। এক বউ বর কে জেলে ভরে দিলো তো আরেক বউ বাড়ি মাথায় তুলে রাখছে। আল্লাহ জানে আমার সংসারের কী হবে।
দিরহাম বলে,”মা তোমার ছেলে যদি বুড়া বয়সে এসে মানুষ চিনতে ভুল করে। সমাজের রক্ষক হয়ে যদি ভোক্ষকের মতো কাজ করে তাহলে তাকে শিক্ষা পেতে হবে। এখন তোমরা যদি নিজের ছেলেকে তার ভুলের জন্য উচিৎ শিক্ষা না দিতে পারো তাহলে তো অন্যকে সে দায়িত্ব নিতেই হবে। এখন রিমশা যখন সে দায়িত্ব নিয়েছে তখন তোমরা ওকে একটু সাপোর্ট করো তাহলে দেখবে ভালো কিছু হবে।”
রেহেনা বেগম বলে,”দেখা যাক আল্লাহ ভাগ্যে কি লিখে রাখছে আমার ছেলেটার। সে কাঁচ আর হীরার মধ্যে তফাৎ করতে পারে কি না।”
(দুঃখিত দুদিন গল্প দিতে পারি নাই বলে! আসলে গল্পটা লিখতেই পারি নাই। থিম সাজাতে সমস্যা হচ্ছে।)
”
”
”
চলবে….