#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-২১
#Nishi_khatun
সকালের ঘটনা সারাদিনেও রিমশা ভুলে যায়নি। রাতে দাইয়ান যখন রিমশা’র রুমে আসে ঘুমানোর জন্য তখন রিমশা দাইয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে, “কাল সারা রাত কিন্তু আপনি বাড়িতে ছিলেন না। তাহলে কী ধরে নিবে খুনটা আপনি করেছেন? ”
দাইয়ান তখন নির্বাক দৃষ্টিতে রিমশা’র দিকে তাকিয়ে বলে,” তোমার কি মনে হয়?”
রিমশা মজার ছলে বলে, “আমার মনে হয় খুনটা আপনি করেছেন।”
দাইয়ান তখন বলে,” আমার প্রতি তোমার এই বিশ্বাস নিয়ে সংসার করতে এসেছো। কী দরকার এই ঠুনকো বিশ্বাস নিয়ে সারাজীবন থাকার। ”
রিমশা বলে,”বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা এখানে আসছে কেনো? খুন হয়েছে আর আঙ্গুল আপনার দিকে তুলছে সবাই। সেখানে সহজ একটা প্রশ্ন করেছি মাত্র। ”
দাইয়ান সহজেই বলে,” একটা খুনির সাথে রুম শেয়ার করতে তোমার রুচিতে বাধবে। বাবা কে বলে খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে এ সম্পর্ক থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবো।”
বলেই সে রুম থেকে হনহন করে বেড়িয়ে সোজা তার রুমে চলে যায়। ঐ যে রিমশা’র থেকে মুখ ফিরিয়ে রুম ছেড়ে চলে গেলো।
এরপর আর কখনো রিমশা’র সাথে কথা বলতো না। এমনকি সব সময় রিমশা কে এড়িয়ে চলত। দাইয়ানের রুমে রিমশা’র প্রবেশ করার অনুমতি ছিলো না।
এরপর রিমশা বহুত বার চেষ্টা করেছে দাইয়ানের সাথে কথা বলার তবে দাইয়ান তাকে বারংবার ইগনোর করেছে।
এভাবে চলছিল তাদের দুজনের মনোমালিন্যের সংসারটা। রিমশা বিয়েরপর কখনো বাবার বাড়িতে যেত না। রিমশা যেতে চাইলেও তার বাবা বারবার নিষেধ করে দিত। তার কথা এ গ্রামটা তোমার জন্য অভিশাপের মত। এখানে আসলে তোমার সাথে খারাপ কিছুই হবে। কী দরকার এখানে এসে নিজের অশান্তি বাড়ানোর?
তা-ই বাবার বাড়িতে যাবার চিন্তা বাদ দিয়ে রিমশা চেয়ারম্যান বাড়ির সবাইকে আপন করে নিতে শুরু করে। ইলমা আর ঝর্ণা কে লেখাপড়া তে সাহায্য করে।
তা দেখে রেহেনা বেগম রিমশা কে বলে,”দেখো মা ওদের প্রাইভেট পড়তে বহুদূরে যেতে হয়। তুমি যদি ওদের প্রাইভেটের ম্যাডাম হতে তাহলে ভাল হতো। দূরে যেতে হয় বলে ওদের লেখাপড়া বন্ধের দশা। ”
রিমশা শাশুড়ি মা কে আশ্বাস দান করে সে ওদের দুজনকে নিজের বোনের চোখে দেখবে।
রেহেনা বেগম কখনো তার দুই ছেলের বউকে পরের বাড়ির মেয়ে ভাবত না। নিজের মেয়ে ভাবত।
ইদানীং রাইসার শরীরটা খুব খারাপ থাকে। শরীর খারাপ থাকার জন্য সারাদিন সে শুয়ে বসে থাকে তবু মনে শান্তি পায়না।
রিমশা শাশুড়ি মা কে বলে রাইসা কে জোড় করে গ্রামের স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান রাইসার চেকআপের পর ডাক্তার বলে রাইসা গর্ভবতী।
রিমশা সে কথা শুনে খুব খুশি হয়। তবে রাইসার চেহারা দেখে সে কোন কিছুই বুঝতে পারছিল না। সে খুশি না দুঃখী।
এদিকে বাড়িতে এসে খুশির খবর সবাইকে জানাতে সবাই কেমন যেনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। রাইসা সোজা তার শাশুড়ি মা কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
রাইসা চোখেরজল দেখে সেখানে উপস্থিত সকলের চোখ থেকে জল ঝরতে শুরু করে।
রিমশা কোন কিছুই বুঝতে পারছে না! এখানে হচ্ছে টা কি? কিছু জিজ্ঞাস করতে যাবে তার আগে রাইসা কান্নারত অবস্থায় বলে ওঠে,”ও আম্মা আমার রিদি ফিরে আসবে তো? আমার রিদি কে দরকার! ও মা আমার রিদিকে যেনো ফিরে পাই। ”
এবার রিমশা’র মাথায় টনক নড়েছে আরে হ্যা দাইয়ান রিদির কথা বলেছিল। একটা বাচ্চার জন্য এতো কান্নার কী আছে? দুনিয়াতে তার হায়াত ফুরিয়ে গেছে তা-ই সে চলে গেছে।
এভাবে গুমোট পরিবেশের মধ্যে সেদিন টা পাড় হয়ে যায়।
এদিকে তিন কন্যা বিকালে পুকুরপাড়ে এসেছে গল্প করতে।
তখন রিমশা তাদের দু জনকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা রিদির কী হয়েছিল? সে মারা গেছে কিভাবে? ”
দুজনে কিছু সময় চুপচাপ থাকার পর ইলমা বলতে শুরু করে। বাবা বড় ভাইয়ার লেখাপড়া করা অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দেয়। তার বিয়ের একবছর পর আমাদের বাড়ি আলোকিত করে রিদির জন্ম হয়। আমাদের বাড়িতে মেয়েদের প্রতি আলাদাভাবে কেয়ার নেওয়া হয়। মেয়েদের অতিরিক্ত ভালবাসা হয়। রিদিও সবার ভালোবাসাতে সিক্ত ছিলো। মেয়েটা দেখতে দেখতে কখন যে বড় হয়ে গেলো কেউ বুঝতেই পারি নাই। মেয়েটা আমাদের প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে হাই স্কুলে ভর্তি হলে সেবার। সবাই তো অবাক! এই পিচ্চি হুট করে এতো বড় হয়ে গেছে? রিদি দেখতে একদম পরীর মত সুন্দর ছিলো। হঠাৎ করে মেয়েটাকে দেখে কেউ বলতে পারবে না এগারো বছর বয়সী মেয়ে সে। তাকে দেখে বয়স বোঝা যেতো না। শরীর স্বাস্থ্য মাশাআল্লাহ।
একদিন সকালে মেয়েটা স্কুলে গেলো তবে বিকালে রোজকার মতো আর বাড়িতে ফিরে আসল না। সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। চারিদিকে তাকে খুঁজতে শুরু করে সকলে তবে পাওয়া যায় না। হঠাৎ করে মেয়েটা হাওয়া হয়ে গেলো? খবর নিয়ে জানা গেলো রিদির সাথে আরো দুটো বাচ্চাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বাড়িতে কান্নাকাটি করে সবার অবস্থা খারাপ। দাদাভাই রিদির চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভাবীর ও একি অবস্থা। এভাবে একটা দিন কেটে যায়। পরের দিন সকালে আমাদের বাড়িতে পুলিশ আসে। তাদের সাথে আমাদের যেতে বলে। আমরা তাদের সাথে চুপচাপ যেতে শুরু করি। রুপসী খালের পাড়ে এসে দেখি বহু মানুষের ভীড়। আমাদের মতো আরো দুই মেয়ের পরিবারের সদস্য সেখানে উপস্থিত।
কিছু সময়পর ভীর ঠেলে সকলে সামনে দিকে অগ্রসর হতে শুরু করি। খালের পাড়ে দেখি সাদা চাদরে ঢাকা তিনটে দেহ। একজন মহিলা পুলিশ একে একে তিনটা লাশের মুখ থেকে চাদর সরাতেই আমরা স্তব্ধ।
রিদির ঘুমন্ত মুখটা আমরা দেখতে পাই। রিদি বলে চিৎকার করে ভাবী মেয়ের লাশটা কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। ভাই সেখান পাথরের মত স্তব্ধ। ভাবী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কপালে হাজারো চুমো দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে। সে বলে তার মেয়ের কিছুই হয়নি জলদি ডাক্তার ডাক দাও। মেয়েকে আমার ডাক্তার দেখাতে হবে। আমার মেয়ের শরীরটা এমন ঠাণ্ডা বরফ হয়ে আছে কেন? আর এমন সাদা চাদরে ঢাকা কেন? ভাবী একটানে চাদর সরিয়ে দিতেই সেখানে উপস্থিত সকালের চোখ লজ্জায় নিচু হয়ে যায়। মেয়েটার শরীরের কাপড়ে একটুকরাও নাই। সারা শরীরের রক্তে ভরা। লাশটা দেখে মনে হচ্ছে কোন হিংস্র জন্তু জানোয়ার মেয়েটার খুবলে খেয়েছে। এমন নিষ্ঠুর হৃদয়হৃীন দের মতো কাজ কোন মানুষ করতে পারে না। ভাই দ্রুত মেয়ের শরীরটা কে ঢেকে দেয়। যে মেয়েকে মাথায় তুলে রাখত সে মেয়েকে আজ এভাবে জনসম্মুখে বেপর্দা হতে দেখতে হবে ভাবতেও পারে নাই।
তিন মেয়ে হারানো পরিবারের কান্নায় সেদিন রুপসী খালপাড়ের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে গেছিলো। কেউ কোনদিন ভাবতেও পারে নাই এমন ঘটনার স্বাক্ষি হবে তারা। পুলিশেরা রিদির লাশটা কে নিয়ে যায়। তারপর তারা আমাদের কলিজার ঐ ক্ষতবিক্ষত দেহটাকে আবারো কেটেকুটে সেলাই করে বাড়িতে দিয়ে গেছিলো। এরপর ভাবী নিজেই মেয়েকে শেষ গোছল করিয়ে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে চিরোদিনের মতো বিদায় দিয়ে দেয়। এরপর রিদির শোকে দাদাভাই কিছুদিন পর আমাদের ছেড়ে সারাজীবনের মতো চলে যায়। এরপর আমাদের সব কিছু বদলে যায়।”
এসব কথা বলে ইলমা নিজেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। জানো ভাবী মেয়েটা আমাকে ফুপুমনি ডেকে সারাদিন অস্তির করে রাখত। আজ দুই বছর আর এই ডাকটা শুনতে পারি না।
রিমশা’র আর কোন প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছিল না। বুঝতেই পারছে রিদির কথা মনে পড়াতে এদের কতোটা কষ্ট হচ্ছে।
রিমশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ বসে ভাবে তাহলে ভাইয়ার বিয়ের দিনের দূর্ঘটনায় এই পরিবার তাদের মেয়ে হারিয়ে ছিল।
এক মায়ের কোল খালি হয়েছে। তাহলে সে বাড়ির পুরুষের বদলে যাওয়াটা স্বাভাবিক!
(আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার করা হচ্ছে)
চলবে….
#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-২২
#Nishi_khatun
রিদির কাহিনী শুনে রিমশা’র বুঝতে বাকি থাকলো না কেনো দাইয়ান তাকে ইগনোর করছে। দাইয়ান হয়তো রিদির হত্যার প্রতিশোধ নিতে খারাপ পথের পথিক হয়েছে।
তবে কথা হচ্ছে! দাইয়ান নিজে একজন ব্যারিস্টার। সে ইচ্ছা করলেই আসামিদের আইনের অন্তর্ভুক্ত করে শাস্তিদান করতে পারে। তবে সেসব কেনো করছে না?
এরপর একদিন রাতে তাকে আমি নিজের আধিকার বোধ থেকে প্রশ্ন করেছিলাম। কেনো আপনার রিদি হত্যা কান্ডে আইনের পাওয়া কাজে লাগাচ্ছেন না?
দাইয়ান সেদিন বলেছিল, “এদেশে আইনের হাত বাঁধা।
প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুর বিচার হয়না। আমাদের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ ছিলো না। আর যে কয়জন সাক্ষী ছিলো তা দু মুখো সাপের মত ছিলো। তাদের জন্য আমার পরিবার এই লড়াই হেরে যায়। এরপর আর আইনের দরজাতে কড়াঘাত করার দরকার পড়েনি। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করেছি।”
রিমশা বলে,”এতো লেখাপড়া করে তাহলে কি লাভ হলো আপনার? যেখানে সামান্য প্রমাণের অভাবে অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারেন না।”
দাইয়ান কাঠকাঠ জবাব দেয়,”এটা কোন সিনেমা না! যখন যে ভাবে ইচ্ছা ডাইরেক্টর বলবে। এটা বাস্তব জীবন, এখানে বেঁচে থাকতে হলে কতশত যুদ্ধ করতে হয় তা তুমি বুঝবে না।'”
এভাবে বেশ কয়েকমাস কেটে যায়। তারপর আমি জানতে পারি ইফার সাথে দাইয়ানের বেশ মাখো মাখো সম্পর্কের গুঞ্জন চলছে। প্রথমে সকলে কথায় কান না দিলেও একদিন দাইয়ান নিজে এসে আমার নিকটে সব কিছু প্রকাশ করে।
দাইয়ান সোজাভাবে বলে,”আমি ইফাকে বিয়ে করতে চাইছি। ”
রিমশা তীব্র হুঙ্কার দিয়ে বলে,”আমার মাঝে কিসের কমতি আছে? যে আপনাকে ঐ পতিতা মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে? আপনাকে ছাড় দিয়েছি, ছেড়ে দেইনি কথাটা মনে রাখবেন। ”
দাইয়ান বলে,”আমি কোন দরকার ছাড়া ঐ টাইপের মেয়েকে কখনো বউ করতাম না।”
রিমশা – কী দরকার জানতে পারি?
দাইয়ান – ইফা ঐ মেয়ে যে রিদির হত্যার রহস্য জানে। তবে একবার ধোঁকা দিয়েছে আমার পরিবারকে। দ্বিতীয় বার তাকে সুযোগ দিতে চাইছি না।
রিমশা – তাই বলে বিয়ে করার কি দরকার? ইফা কে ধরে নিয়ে আমি। উরাধুরা মার দিলে সব কিছু গড়গড় করে বলে দিবে।
দাইয়ান – ইফা খুব ধুরিবাজ মেয়ে। ঐ সব মার দেখে সে ভয় করে না। তাকে বাঁচানোর জন্য বহুত লোক আছে। তা-ই ইফার করা পাপের শাস্তি বিয়ের পর প্রাপ্য।
রিমশা – বিয়েরপর কী এমন রাজ্যজয় করবেন শুনি? যার জন্য ঐ ডায়নিকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন?
দাইয়ান -বলছি তো প্রতিশোধ নেওয়ার আছে ইফার থেকে।
রিমশা – না কোন প্রতিশোধ পূরণের জন্য আপনাকে বিয়ের অনুমিত দিতে পারবোনা। আমি আমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারবো না। কেনো দিতে যাব? যেখানে এখন পর্যন্ত আমি নিজের স্ত্রী হাওয়ার অধিকার পায়নি।
দাইয়ান – তুমি অনুমিত না দিলেও আমি ইফাকে বিয়ে করবো।
রিমশা – আপনি আমার অনুমিত ব্যতীত ইফাকে বিয়ে করলে আপনাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। আপনাকে শাস্তি দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে একবারের জন্য পড়বো না।
দাইয়ান বলে,”আচ্ছা তুমি যে সিদ্ধান্ত নিবে, আমি কোন প্রতিবাদ না করে তা মেনে নিবো।”
সেদিনের পর কয়েকদিন সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন উনি ইফাকে বউয়ের সাজে চেয়ারম্যান বাড়ির সদরদরজার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে রাখে।
সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এটা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। তবে তার চোখের ভাষাতে ছিলো অন্য কথা।
আমি সেদিন রাতে তাকে কিছু বলি নাই! তবে পরেরদিন রাতে তার কাছে নিজের স্ত্রীর অধিকার দাবি করেছিলা। আমি উনার চোখে ভালোবাসা দেখেছি। সেখানে কখনো ছিলো না কামুকতা। তাহলে হুট করে উনি কিভাবে ইফার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারলেন? ইফা না কি এতো খারাপ তাহলে কেন উনি ঐ খারাপ মেয়েটা কে নিজের বিছানাতে স্থান দিলো?
সেদিন কেউ উনি বলেছিল আমার উপর বিশ্বাস রাখো আমি তোমার অধিকার কাউরে দেয়নি। না তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি। আমি যেমন নিজের কর্তব্য পালন করতে পারি ঠিক তেমন ভাবে আমি নিজের ভালোবাসাকে সম্মান করতে পারি। আমার স্ত্রী কে কখনো আমি তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো না।
উনি সেদিন রাতে আমাকে কিছু সময়ের জন্য আপন করে নিয়েছিল। কিছু মূহুত্বের জন্য আমি তার মাঝে বিলিন হয়েছিলা
তারপর! তারপর উনি আমার কাপালে চুমা দিয়ে বলেন,”আমার উপর বিশ্বাস যদি থাকে তাহলে সব কিছু চুপচাপ সহ্য করবে। সময় হলে আমি নিজে তোমাকে অবগত করবো। তোমাকে অনেকবড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেদিন কিন্তু একদম পিছপা হবে না? আমি যেমনটা করতে বলবো তুমি ঠিক তেমন ভাবে কাজ করবে!”
আমি সেদিন নিরব থাকি। উনি আমার নিরবতাকে তার কথার সম্মিত ভেবে চলে যান।
এরপর!
এরপর একদিন রাতে উনি আবার আসেন আমার রুমে।
এসে আমাকে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যায়।
কাজ হচ্ছে তাকে দ্বিতীয় বিয়ের অপরাধে পুলিশে ধরিয়ে দিতে হবে। তার কথা অনুযায়ী আমি তাকে পরেরদিন সকালে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলাম।
এরপর তার সাথে দেখা করে সব সত্যি জানতে চেয়েছি।
তবুও উনি নিরবতাকে অবলম্ব করে আমাকে এড়িয়ে গেছে।
আজকে তাকে আদালতে নিয়ে গেছে। আমিও সেখান এসেছি।
আদালত কক্ষে দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আজ আমার কোন কাজ নেই।
আমার থেকে কিছুটা দূরে ইফা বসে আছে। ইফাকে দেখে আমার বুকের মাঝে খুব চাপা কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে দুই পক্ষের আইনজীবী তাদের মতামত জর্জ সাহেবের সামনে তুলে ধরেছে।
আমি নির্বাক হয়ে সব যুক্তি তর্কের মার প্যাঁচ দেখছিলা। হঠাৎ করে দাইয়ানের পক্ষের উকিল বাবু বলে উঠলেন, “জর্জ সাহেব আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তার প্রমাণ কোথায়? আমাদের দেশে মুসলিমদের বিয়ে হলে কাবিন করে রেজিস্টারি করা হয়। কিন্তু দাইয়ান আর ইফার বিয়ের কোন কাবিন নামা নেই।”
ইফা এমন কথা শুনে খেঁকিয়ে উঠে বলে,”আমার কাছে আছে বিয়ের কাগজপত্র! তা-ই বলে সামনে থাকা উকিকবাবুর নিকটে তার কাছে থাকা সকল কাগজপত্র তুলে দেয়।”
উকিকবাবু সে সব কাগজ পেশকারের কাছে দেন।
পেশকার জার্জের নিকটে পেশ করে।
জর্জ সাহেব কিছু সময় সে সব কাগজপত্র মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর রেগে জোড়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন,” আপনারা সকলে মিলে আদালতকক্ষ তামাশা শুরু করেছেন? এই কাগজপত্র বিয়ের না। এটা ইফা নামের মেয়ের স্বীকারপত্র।”
আদালতকক্ষে উপস্থিত সকলের মাঝে ফুসুরফাসুর শুরে হয়ে যায়।
জর্জ সাহেব সকল কে চুপ থাকতে বলে আবারো বলেন,” এখানে লেখা আছে, আমি ইফা আহমেদ গ্রামের নারী পাচারকারী চক্রের একজন সদস্য। গ্রামের সহজসরল মেয়েদের কাজের কথা বলে তাদের আমাদের এজেন্টের লোকেদের মাধ্যমে পাচার করে দেওয়া হয়। গ্রাম থেকে পাচার করা নারীদের মধ্যে কিছু জনের স্থান হয় পতিতালয়ে, আর কিছু জন কে বিদেশে পাঠানো হয়। এসব চক্রের কাজে সাহায্যদান করতে গ্রামের মানুষদের নানারকম ভাবে মন মানুষিক অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যেমন দু বছর আছে তিনটা বাচ্চা মেয়ে গ্যাং রেপ করে তাদের হত্যা করে রুপসী খালের পাড়ে ফেলে রেখে যায়। সে খুনের সাথে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত না থাকলেও জানতাম এমন কিছু হবে।
আমাকে এসব কাছে যারার সাহায্য করতো তাদের মধ্যে কয়েকজনের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে খুন হয়েছে। তবেঁ সে কথা সহ এই স্বীকারপত্রে আমি নিজের সকল গুনাহ স্বীকার করে নিচ্ছি। এখন আইন আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি তা-ই মাথা পেতে নিতে রাজী।”
জার্জের স্বীকারপত্র পড়া শেষ হতেই ইফা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,”এসব কিছু মিথ্যা কথা। আমার স্বামী আমাকে ফাঁশিয়ে দিয়েছে। কাগজে যে কোন কিছুই লেখা যায়। এসবের কোন প্রমাণ নেই আমার স্বামীর কাছে। তা-ই আমাকে মিথ্যাঅপবাদ দিয়ে আসামী বানাবেন না।”
এসব আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়াতে আদালতের কার্যক্রম পরেরদিনের জন্য স্থগিত করে রাখা হয়।
দাইয়ান কে পুলিন নিয়ে যাবার সময় ইফা পুলিশের সামনে দাইয়ান কে বলে,”এই ছিলো আপনার মনে? আমাকে বিয়ের রেজিস্টারির কাগজ বলে এমন মিথ্যা স্বীকারপত্রে সাইন নিতে একটু বিবেকে বাধল না আপনার?”
দাইয়ান অট্ট হাসি দিয়ে বলে,” মিথ্যাবাদী কে তা তুমি ভালো জানো। তবে তুমি আসামী না হলে আসামী কে? নিজের নির্দোষ হাওয়ার প্রমাণ নিয়ে আসিও নয়তো কাল থেকে গারদের ঐ পারে থাকবে।”
ইফা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,” আমি আসামী তার কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে? জানি নাই! আর আদালত কখনো শুধুমাত্র একটা কাগজের লেখার উপর ভরসা করে আমাকে আসামী ঘোষনা করবে না।”
এরপর দাইয়ান কে নিয়ে চলে যায়।
এই সমস্ত ঘটনা দেখে রিমশা’র মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। কী হচ্ছে এসব? সত্য কোনট?
এসব কিছু ভেবে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।
অতিরিক্ত টেনশনের জন্য এমনটা হয়। বদুরুদ্দিন আর দিরহাম মিলে রিমশা কে তুলে সুস্ত করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
(রিচেক করা হয়নি ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন)
”
”
”
চলবে……