#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৮
#Nishi_khatun
আমার সামনে কয়েকটা অপরিচিত ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যাদের মুখটা কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা। শুধু মাত্র তাদের চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। আমি তাদের এভাবে দেখে একটু ভয় পেয়েছি।
আমি মনে মনে ভাবছি,” আজকে ইফাকে বিশ্বাস করে এমন পরিস্থিতিতেপড়বো কখনো কল্পনা করি নাই। তবে এখন আফসোস হচ্ছে! তখন কেনো যে বাবার কথায় সম্মতি জানায়নি। এখন এতো গুলো পুরুষেরা কি আমাকে ছেড়ে দিবে? উঁহু কখনোই না! এরা আমাকে খুবলে খাবে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে খারাপ কোন কাজ হয়।
আল্লাহ আজ বুঝি আমার মানসম্মানের শেষ রক্ষা হবে না।”
তখন আমার সামনে উপস্থিত থাকা ছেলেদের মধ্যে একজন কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে,
-“এই মেয়ে কে তুমি? আর এখানে কার সাথে এসেছো? ”
রিমশা কান্না মাখা কন্ঠে বলে,
-“আমি রিমশা! ইফার সাথে ওর বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। তবে সে আমাকে ভেতরে আসতে বলে বাড়ির অনেকটা দূরে অবস্থান করে। কিন্তু আমি ভেতরে প্রবেশ করে বুঝতে পারছি আমি খুব বড় ভুল করেছি।”
তখন ঐপাশের রুম থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলল- আমি আগেই বলেছিলাম ঐ ইফা চালাক মেয়ে। ডায়নী সহজে অন্যের জালে আটকা পড়বে না। তবে অন্যদের ঠিকি তার পাতা ফাঁদে আটক করতে জানে। ”
ঐ লোকটাকে আশ্বস্ত করতে আরেকজন নমনী কন্ঠে বলে,
“চিন্তা করতে হবে না। আজ না হয় কাল ইফা কে একদিন ওর মরণ ফাঁদে আটকা পড়তেই হবে। আমি দরকার হলে ওর জন্য মরণফাঁদ তৈরি করবো।”
তখন প্রথম ব্যক্তি বলে,
“ইফা যে আমাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে ঐ মেয়েটাকে পাঠিয়ে তার কি হবে?”
দ্বিতীয় জন বলল-,” তোমাদের খবর কেউ জানে না আমি ব্যতীত। এখানে মাঝেমধ্যে আমার আসা হয়। তা-ই তোমরা সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করো। আমি দেখছি ঐ মেয়েটার সাথে কি করা যায়।”
প্রথম ব্যক্তি বলে,” যা ইচ্ছা হয় করো! তবে খারাপ কিছু করবে না। কারণ আমরা এখানে খারাপ উদ্দেশ্যে কেউ একত্রিত হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য সৎ এবং সঠিক।”
তখন আমার সামনে থাকা একটা ছেলে বলে ওঠে,”আরে ভাই এই মেয়েটাকে আগে কখনো গ্রামে দেখি নাই। তবে কিছুদিন যাবৎ মেয়েটাকে শাওন শেখের বাড়িতে দেখা যাচ্ছে। ”
রিমশা নিজ থেকে বলে ওঠে,”আমি শাওন শেখের কন্যা।”
তখন ছেলেটার পেছনে থেকে একজন মহিলা বলে,
“ওহ তুমি সেই মেয়ে যে রতন স্যারের মাথা ফাঁটিয়ে গ্রাম ছাড়া হয়েছিলে?”
রিমশা প্রতিবাদী কন্ঠো বলে,” আমি একজন দুশ্চরিত্র লোককে তার পাপের শাস্তি দিয়েছিলাম। যদি যে ভালো চরিত্রের লোক হতো তাহলে কখনোই তাকে আঘাত করার দরকার হতো না। তাছাড়া প্রতিটা নারীর কাছে তার সম্মান খুব মূল্যবান। আর আমি কেনো এই মূল্যবান সম্পদ ঐ লম্পট লোকের কাছে বিষর্জন দিতাম? আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কোন ভুল কিছু করি নাই। যতবার দরকার হবে আমি ততবার নিজের সম্মান বাঁচাতে লড়াই করবো।”
মেয়েটা বলে,”আজকে এরা যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করে তখন তুমি কি করবে? ”
রিমশা বলে,”নিজের সর্বচ্চ শক্তি দিয়ে আব্রু রক্ষার চেষ্টা করবো। তবুও ওদের সামনে সহজেই মাথা নত করবো না।”
তখন পাশের রুম থেকে দুজন পুরুষ বেড়িয়ে এসে বলল-, “সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করো। ঐ ইফাকে বিশ্বাস নেই।”
মহিলা বলে ওঠে,”এই মেয়ের কি হবে?”
রিমশা’র দিকে না তাকিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে যাবার সময় বলে,
“এই মেয়ের চিন্তা তোমাদের না করলেও চলবে। আশাকরি মেয়েটা আমাদের জন্য সমস্যা হবে না। তবুও বাকিটা না হয় সে এসে সমাধান করবে।”
এরপর সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আমাকে রুমের ভেতরে রেখে বাহিরে থেকে লক করে তারা চলে যায়। আমি অনেকটা সময় ধরে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি শুরু করি তবে সাহায্যের জন্য আশেপাশে কেউ এগিয়ে সে না।
এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর কেউ একজন দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে জোড়ে চিৎকার করে বললাম -,”আমার সাথে খারাপ কিছু করার চিন্তা যদি করেন তাহলে ভালো হবে না। ভালোই ভালোই আমাকে এখানে থেকে যেতে দিন বলছি।”
-আপনার হাতে পায়ে কেউ শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে? তাহলে এইভাবে কথা বলার মানেটা কি?
এই শীতল কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই আমি তার দিকে ফিরতেই চমকে উঠি। আমার অতি পরিচিত আপন মানুষটা সামনে দাঁড়িয়ে। এটা কী আমার দেখার ভুল? না কি বিপদে পড়েছি বলেই তাকে কল্পনা করছি? আমি কোন কিছু বলার পূর্বে সামনের ব্যক্তি বলল- “রিমশা তুমি এখানে আসলে কি করে?”
আমি আর কোন কথা না বলে সোজা তার বুকের উপর কিল দিতে শুরু করি। তারপর বলি,’ আপনি না মারা গেছেন?
তাহলে এখানে জীবন্ত আমার সামনে কীভাবে?’
আহীদ আমার হাত দুটো তার বলিষ্ঠ হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে বলল- “আমি মারা গেছি একথা কে বলেছে? এই জলজ্যান্ত মানুষটা কে মৃত বানিয়ে দিলে? ”
রিমশা বলে,”আমি নিজের কানে শুনেছি! মামা বলেছে পাশের বাড়ির ছেলেটা মারা গেছে। এরপরে মামা আমাকে একা যাতায়াত করতেও বলেছেন।”
আহীদ বলে,”আমি কি কোনদিন বলেছি ঐ বাড়ির ছেলে আমি? ঐ বাড়িটা আমার বন্ধুর বাড়ি ছিলো। দুজনে একসাথে লেখাপড়া করতাম। আমি ব্যারিস্টারি পড়ছিলাম আর ও ইঞ্জিনিয়ারিং। দুজনের যাত্রা পথও আলাদা হয়ে যায়। তবুও ওর পরিবার আমাকে ভালোবেসে তাদের বাড়ির ঐ রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ করে দিয়েছিল। তবে তুমি যেদিন চলে যাও সেদিন রাতে আমার বন্ধু এক্সিডেন্টে মারা যায়। ওহ মারা যাবার পর আর আমার পক্ষে ওর বাড়িতে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না।
আমি একটা ভালো কোর্টে জবের পাশাপাশি প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেয়ে যাই। তাই দ্রুত সেখানে সেটেল হই। এরপর তোমার সাথে যোগাযোগ করার বহুত চেষ্টা করেছি। ”
রিমশা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলে,”আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছিলো। তা-ই ভাইয়া নতুন ফোন আর সিম কিনে দিয়েছিল। আপনি মারা গেছেন দেখে আপনার নাম্বারে কখনো ট্রাই করি নাই।”
আহীদ বলে,”খুব ভালো কাজ করেছ। আমি তো মারা গেছি, এখন আমার আত্মা তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ”
রিমশা আহীদ কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলে,
“আমি দুঃখীত। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি এখন আর আপনাকে ছাড়া কোথাও যেতে চাই না।”
আহীদ হঠাৎ করে বলে,”তা তুমি এখানে আসলে কি করে?”
রিমশা তখন ইফার সাথে এখানে আসার পুরো কাহিনী ক্লিয়ার করে বলে। তারপর এখানে যারা ছিলো তাদের কথাও বলে।
রিমশা’র কথা শোনার পর আহীদ বলে,”এখানে থাকা যাবে না সমস্যা হতে পারে। চলো তোমাকে তোমার বাড়িরে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
রিমশা বাচ্চাদের মতো জিদ করে আহীদ কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাবো না।”
আহীদ বলে,”যেতে কে বলছে? তুমি তোমার বাড়িতে যাবে। নয়তো খুব বড় বিপদে পড়তে পারি আমরা।”
ঠিক সে সময় সেখানে গ্রামের অনেক লোকজন এসে উপস্থিত হয়। তারা রিমশা কে পরপুরুষের এতোটা কাছে দেখে নানারকম খারাপ মন্তব্য করতে শুরু করে।
এতো মানুষকে হঠাৎ করে দেখে ভয়ে লজ্জায় আহীদের পেছনে লুকিয়ে পড়ে।
এতো মানুষকে এভাবে এখানে একসাথে দেখে বুঝতে পারে আজ কপালে খুব খারাপ কিছু আছে। তাদের এখন যা বোঝাতে যাব তার বিপরীত কিছু বুঝবে সবাই।”
সেখানে উপস্থিত কিছু লোকজন বলে ওঠে,”ছিঃ ছিঃ ছিঃ চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের চরিত্র এতো খারাপ আগে জানা ছিলো না। গ্রাম থেকে দূরে নির্জন স্থানে এমন ঘরে তৈরি
করেছিল। এসব আকাম কুকাজ করার জন্য।
আমরা ভাবতাম ছেলেটা বুঝি আমাদের ভালোর জন্য এখানে আসতো। এখন দেখছি না নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে এখানে আসতো। তোমার থেকে আমরা কেউ এমন কিছু কোনদিন আশা করি নাই।”
একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলে,”এতোই যখন মেয়ে মানুষের দরকার পড়ে তোমার। তাহলে বিয়েটা কেন করো না?'”
আরেকজন কটূক্তির সাথে বলে,”আরে বড়লোকি বেপার বোঝনা? বিয়ে শাদী করলে কি রোজ রোজ এমন নতুন
পাখির দেখা পাবে?”
এভাবে বেশ কিছু সময় ধরে মানুষের বাজে মন্তব্য তারা দু জনে শুনছিল। এদের সামনে প্রতিবাদ করে কোন লাভ হবে না।
কিছু সময় পর সেখানে মেম্বার কাজী সাহেব কে সাথে নিয়ে আসে। আসার পর বলে,”এতো রাতে এখানে বিয়েটা কার?”
উপস্থিত সকলে রুমের ভেতরে ইশারা করে। মেম্বার সাহেবের তাদের দেখে চিন্তিত কন্ঠে বলে,”আরে এতো আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে দাইয়ান। দাইয়ান বাবা তুমি এমন অপকর্ম করতে যেয়ে হাতে নাতে ধরা পড়বে তা কখনোই ভাবতে পারি নাই।”
মেম্বর সাহেব দ্রুত চেয়ারম্যান সাহবের সাথে যোগাযোগ করে তাকে সবকিছু বলে।
এর কিছুসময় পর চেয়ারম্যান সাহেব এবং তার বড় ছেলে দিরহাম সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তখন দাইয়ানের পাশে মাথা নিচু করে রিমশা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি চমকে ওঠেন।
চেয়ারম্যান সাহেব একটু নিরব থেকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ঐ মেয়েটার সাথে আমার ছেলের বিয়ে বহুপূর্বে ঠিকঠাক।
হয়তো কিছুদিন পর আপনাদের সবাইকে জানিয়ে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতাম। যেহেতু আপনারা সকলে না জেনে বুঝে একটা খারাপ পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। সেই জন্য আমার ছেলের কিছুদিন পর হওয়া বিয়েটা আজকে সম্পন্ন করে দিচ্ছি। ”
এরপর রিমশা আর দাইয়ানের বিবাহের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তবে বিয়েটা দাইয়ান করতে নারাজ ছিলো। তার বাবা একপ্রকার মানসম্মানের দোহাই দিয়ে বিয়ে করতে রাজী করে।
(কালকে বাসায় মেহমান আসবে। তা-ই দয়া করে কেউ গল্পের অপেক্ষা করবেন না। ইন শা আল্লাহ শুক্রবার সময়মত গল্প পোষ্ট করবো।)
”
”
”
চলবে…..
#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৯
#Nishi_khatun
বিয়েরপর শ্বশুর মশাই আমাদের দু’জন কে সঙ্গে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে আসেন। আমি সেখানে এসে দেখি অবাক কান্ড।
ইফা আমার বাবার পায়ের কাছে বসে কুমিরের কান্না করে বলছে,”মামাজান আমার ভুল হয়েছে। আমি রাস্তা ভুল করে ভুল দিকে চলে গেছিলাম। তারপর আমি রিমশা আপুকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই বাড়িতে একাই ফিরে এসেছি। আমাকে মাফ করে দেন আপনারা।”
আমি ইফার এমন নাটক দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
তাদের দৃষ্টি সদর দরজার সামনের পড়তেই তারা আমাকে দেখে ছুটে চলে আসে। বাবা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
তার বুকে মাথা রাখতেই আমিও কান্নায় ভেঙ্গে পরেছি।
এরপর সকলে একসাথে বাড়ির অন্দরমহলের ভেতরে গমন করি। তারা সকলে ভেতরে প্রবেশ করে সোফাতে বসে।
এরপর বদুরুদ্দিন সাহেব আব্বুর কাছে আমাদের দু জনের বিয়ের কথাটা ব্যক্ত করে। আর সাথে এটাও বলে গ্রামের লোকজন ওদের দুজন কে একসাথে দেখে নানারকম খারাপ মন্তব্য করছিল। যেহেতু ওদের বিয়ে ঠিকঠাক করে রাখা ছিল তা-ই সেই স্থানে আমি দুজনের চার হাত এক করে দিয়েছি। আপনার যদি এভাবে বিয়ে হওয়াতে আপত্তি থাকে তাহলে আবার ওদের অনুষ্ঠান করে বিয়ের আয়োজন করতে পারেন।
শাওন শেখ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“গ্রামটা আমার মেয়ের জন্য শুভ না। মেয়েটা যখন বসবাস করতে এই গ্রামে আসে! ঠিক সে সময় তার চরিত্রের দিকে সবাই আঙ্গুল তুলতে পিছপা হয় না। দেখুন না, যার বিয়ের জন্য আমি এতো আয়োজন করছি। হুট করে তার এভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো। যাক এক দিক দিয়ে ভালো-ই হলো মেয়েটার সাথে এর থেকেও বেশি খারাপ কিছু হতে পারতো তা তেমন কিছু হয়নি। ”
বদুরুদ্দিন সাহেব জি বলে সম্মতি প্রকাশ করে।
শাওন শেখ আবার বলতে শুরু করে,
“বিয়েটা যেহেতু হয়েগেছে আপনি দয়া করে আমার মেয়েটাকে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান। আমি চাইছি না মেয়েটা আমার এই অভিশপ্ত গ্রামে আর কিছু মূহুত্ব থাক।”
এরপর সে রাতে শাওন শেখ দাইয়ানের হাতে তার কন্যার সারাজীবনের সুখ-দুঃখের দায়িত্ব তুলে দিয়ে কন্যার বিদায় পর্বের সমাপ্তি ঘটায়।
*
*
বাবার বাড়ি থেকে ভারাক্রান্ত হৃয়দে রিমশা শ্বশুর বাড়িতে আসে। যেহেতু অনেক রাত হয়েছিল তা-ই সে রাতে বাড়িতে কোন রকমের শোরগোল হয়নি। রেহেনা বেগম সদর দরজাতে এসে ছেলের বউকে বরণ করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে।
যেহেতু অনেক রাত হয়েছে তা-ই বাসরঘর সাজানো কোন ভাবে সম্ভব না। তাই রেহেনা বেগম রিমশা কে আলাদা একটা রুমে থাকতে বলে।
বদুরুদ্দিন সাহেব তার স্ত্রীর উপর রেগে বলে,
“বাসরঘর কালকেও সাজানো যাবে। ঐ বাসরঘরের জন্য তুমি স্বামী-স্ত্রী দুজনকে আলাদাভাবে থাকতে বলতে পারো না।”
রেহেনা বেগম আর কিছু না বলে রিমশা কে দাইয়ানের ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন পেছন থেকে দাইয়ান মা কে ডেকে বলে,
“মা যেদিন আমাদের বাসরঘর হবে! সেদিন না হয় রিমশা আমার রুমে যাবে। আজকের জন্য আর ঐ ঘরে যাবার দরকার নাই। পাশে ঐ রুমে আজকের রাত না হয় আমরা দু জন এক সাথে থাকবো।”
বাকিরা দাইয়ানের কথাতে সম্মতি প্রকাশ করে দ্রুত প্রস্থান করে।
দাইয়ান রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে রিমশা’র সামনে এসে বলে,
“দেখো আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাইছি।
সে সব কথা তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
কারণ আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কিন্তু অন্ধকার।
ভবিষ্যৎ আছে কি না তা আমি বলতে পারবো না।”
রিমশা দাইয়ানের চোখে চোখ রেখে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আপনার যা বলার আছে বলেন ,তবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”
দাইয়ান বলল-
আমাকে গ্রামের সবাই দাইয়ান নামে চেনে। বলতে পারো এটা আমার ডাক নাম। আমার দাদাভাই এর খুব ইচ্ছা ছিলো তার বংশের কেউ ব্যারিস্টার হবে। আমার বাবা লেখাপড়াতে এতো ভালো ছিলোনা। আর ভাইয়া নিজের জন্য আলাদা প্রফেশন বেঁছে নিয়ে ছিল। বাকি রইলাম আমি বাবা এক প্রকার বাধ্য করে আমাকে ব্যারিস্টারি পড়তে। তবে আমার ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হওয়া। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছার জন্য নিজের স্বপ্ন বিষর্জন দিয়েছি। শহরে থেকে ব্যারিস্টারি পড়েছি।
তবে হঠাৎ করে আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের কিছু গ্রামে হঠাৎ করে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রামের মহিলারা কাজের জন্য শহরে যাচ্ছিল তবে তারা কেউ আর বাড়িতে ফিরে আসছিল না। তারা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে কেউ বলতে পারে না। আর নয়তো কিছু মহিলাদের মৃতদেহ ঐ রুপসী খালে পাওয়া যাচ্ছিল।
আমি যেহেতু রাগ করে শহরে লেখাপড়া করছিলাম।
বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না আমার। তাই গ্রামের কোন খোঁজখবর রাখতাম না। ভাইয়া প্রতিমাসে আমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতেন এতেই আমার খরচ হয়ে যেত।
জানো আমার বড় ভাইয়ের একটা মেয়েটা ছিলো।
যে আমাদের বাড়ির প্রাণ ছিলো। তবে কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি চিরদিনের জন্য।
আমি এতোটা অভাগা যে মেয়েটার মৃত্যূর খবর একবছর পরে জেনেছি।
তখন আমার সব শেষ। রিদির শোকে দাদাভাই মারা গেছে। দাদাভাই এর শোকে দাদীমা! আমার পুরো দুনিয়া এক বছরে উজাড় হয়ে গেছে।
এরপর যখন সব কিছু জানতে পেরেছি এক মূহুত্ব দেড়ি না করে, শহরে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর ক্যারিয়ার ছেড়ে নিজের পরিবার আর গ্রামের মানুষদের জন্য চলে আসি। এখানে এসে এমন সব রহস্যজনক কাহিনী দেখে, আড়ালে তদন্ত করতে শুরু করি এবং এর ফলাফল কিছুটা আমার হাতে। আমি সমস্যার সমাধান করার জন্য এক অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়িয়েছি। সেখান থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সম্ভব না। আমি হয়তো তোমাকে স্বামীর সুখ দিতে পারবো না।
তোমার অনুমতি ব্যতীত হয়তো এমন সব কাজ করবো!
আমার সে সব কাজের জন্য তোমার আত্মসম্মান নষ্ট হতে পারে। আর হ্যা প্লিজ আমার কাছ থেকে ভালোবাস অথবা সুখে সংসারের আশা করিও না। তুমি নিজের জন্য সুন্দর জীবনের দাবিদার। আমার কোন অধিকার নেই তেমার সে সুখের জীবনটাকে বিষাক্ত করার। তুমি অন্য কারো সাথে সারাজীবন সুখে সংসার করতে পারবে। কী দরকার এখানে পড়ে থেকে জীবনটাকে থমকে দেওয়ার তাও আবার আমার মতো একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য?
রিমশা দাইয়ানের হাত ধরে বলে,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি এই কথাটা হয়তো মুখে প্রকাশ করার দরকার হবে না। আজ থেকে আমি আপনার স্ত্রী। আপনার জীবনের একটা অংশ। আমিও আপনার সাথে সামাজের নোংরা পরিষ্কারে কাজ করবো। আপনি প্লিজ নিষেধ করবেন না। আপনার আশেপাশে থাকলে আমার হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটাতে পারবো। আমিও আপনার এই নতুন পথের সঙ্গী হতে চাইছি।”
দাইয়ান রিমশা’র থেকে দূরে এসে বলে,
“রিমশা পাগলামি করো না। তোমার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। তুমি অনেক সাহসী মেয়ে সাথে প্রতিবাদী এক নারী।
তুমি ইচ্ছা করলে নানারকম সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারবে। নারীদের জাগ্রত করে তাদের ইসলামের সঠিক জ্ঞান সহ সামাজিক জীবনে লড়াই করে টিকে থাকার মন্ত্র শেখাবে। আমি আমার অন্ধকার জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে পারবো না। প্লিজ তুমি আমাকে তোমার মোহ-মায়া তে জড়িয়ে পথভ্রষ্ট করো না দোহাই লাগে। ”
এসব বলে সে রাতে সবার চোখের আড়ালে দাইয়ান বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে চলে যায়।
রিমশা অন্ধকারে খোলা দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যাকে ভালবেসে দুনিয়া ভুলতে রাজী সে তাকে গ্রহণ করতে নারায। সে কেন বুঝতে চাইছে না আমিও তার দেখানো পথের পথিক হতে চাইছি। আমিও আপনার পিছু এতো সহজে ছাড়ছি না। আমি আপনাকে নিজের আদর্শ মনে করি।
আমার এখন যে আত্মসম্মান সবটা আপনার থেকে শেখা।
আপনার দেখানো পথে চলে আজ নিজেকে এতোটা শক্তপোক্ত করে গড়েছি। এভাবে আপনার সামান্য তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞাতে নিজেকে গুটিয়ে নিবে ভাবলেন কি করে?
আমি জীবনেও আপনাকে আমার থেকে আলাদা হতে দিব না।
( নিরামিষ টাইপের গল্প! এখানে রোমান্স খুঁজলেও পাবেন না। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত গল্পটা শেষ করে দিতে। ইন শা আল্লাহ ৩০ পর্বের হবে না গল্পটা আশা করি। )
”
”
”
”
চলবে…..