হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব ১৬+১৭

0
656

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৬
#Nishi_khatun

কোন এক দরকারি কাজের জন্য বদুরুদ্দিন চেয়ারম্যান রিমশাদের গ্রামে আসে। বাড়িতে ফিরে যাবার পথে তার শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছিল। তখন সে পথ দিয়ে রিমশা’র বাবা যাচ্ছিল। তিনি চেয়ারম্যান সাহবের অস্বস্তিকর অবস্থা দেখে দ্রুত তার বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যান সাহেব এবং তার কিছু কর্মচারী ছিলো। তারা কেউ কোন রকম বারণ না করে রিমশা’র বাবার সাথে তার বাড়িতে যেতে রাজি হয়।

বদুরুদ্দিন সাহেব কে সাথে করে বাড়ির অন্দরমহলের ভেতরে নিয়ে প্রবেশ করেন রিমশা’র বাবা শাওন শেখ।
শাওন শেখ সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসার জন্য অনুরোধ করেন। রান্নাঘরের ভেতরে যেয়ে বউ আর মেয়েকে দ্রুত নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে। বাবার মুখে শুনেছে কেউ একজন অসুস্থ! রিমশা ড্রয়িংরুমে অসুস্থ ব্যক্তিকে একপলক দেখতে ডু মেরে চলে যায়।

রিমশা বুঝতে পারে অতিরিক্ত গরমের জন্য তার শরীরটা খারাপ করেছে। করবে না কেন? বাহিরে সূর্যমামা যে অ্যাটিটিউড নিয়ে তার উত্তাপ ছড়াচ্ছে!
তাতে যে কোন প্রাণীর বারোটা বেজে যাচ্ছে।
তা-ই দ্রুত রান্নাঘরে যেয়ে শরবত, গ্লুকোজ, আর ডাবের পানি নিয়ে সোজাভাবে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির।

উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করে বদুরুদ্দিন সাহেবের সামনে শরবতের ট্রে এগিয়ে দিয়ে বলে,” এখানে তিন রকমের পানিও আছে আপনার যেটা পছন্দ ওটা নিয়ে খেতে পারেন।”

বদুরুদ্দিন সাহেব রিমশা’র এমন কান্ড দেখে মুচকি হাসি দিয়ে শাওন শেখ কে উদ্দেশ্য করে বলে,” আমার মেয়েটাও একদম আপনার মেয়ের মতো! আমার শরীরটা একটু খারাপ হলে এমন ভাবে সামনে চার পাঁচটা আইটেম নিয়ে হাজির হয়।
তখন এতো আইটেম দেখে নিজেই কনফিউজড হয়ে বসে থাকি। কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবো তা ভেবে।”

রিমশা বলে,”আপনি প্রথমে ডাবের পানি পান করুণ।
এত শরীরটা দ্রুত এনার্জি পাবে। এর কিছুটা সময়পর গ্লুকোজের পানি পান করবেন তার কিছু সময়পর শরবত সিম্পল।”

শাওন এবার একটু মেয়ের এমন গাধামি দেখে বিরক্তিবোধ করে বলে ওঠে,”রিমশা! এই দুপুরবেলা বাসায় মেহমান আসলে তাদরে শুধু শরবত পান করিয়ে পেট ভরাতে হয় বুঝি? তাদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করতে হয় না?”

রিমশা এবার নিজের জিব্বাহ তে কামড় দিয়ে বলে,”দুঃখীত বাবা! আমার ভুল হয়েগেছে, দাঁড়াও আমি এখুনি তাদের খারাবের ব্যবস্থা করছি।”

এরপর বদুরুদ্দিন সাহেব শাওন শেখের বাড়িতে দুপুরবেলার খাবার খেয়ে একটু আরাম করছিল। তখন শাওন শেখের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে বলে,”তা আপনার মেয়ের বিয়ের বেপারে কিছু চিন্তা ভাবনা করেছেন?”

শাওন শেখ বলে,”জি, ভালো পাত্রের সম্বন্ধ আসলে ইনশাআল্লাহ কন্যার বিবাহ দিয়ে দিবো।”

তখন বদুরুদ্দিন সাহেব বলে,”আমি আমার ছোট পুত্রের জন্য পাত্রী খুঁজছিলাম। আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমার ছোট ছেলের জন্য আপনার মেয়ের হাত চাইছি।
আমি চেয়ারম্যান বলে ভাববেন না ছেলে মেয়েদের মানুষের মত মানুষ করতে পারি নাই। আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমার সন্তানদের সঠিক ভাবে মানুষ করেছি। তবুও আপনার ইচ্ছা হলে খোঁজ খবর নিয়ে না হয় আপনার মতামত প্রকাশ করবেন।”

শাওন শেখ একগাল হেসে বলেন,” ভাই সাহেব আপনি কী যে বলেন না। আমার রিমশা আম্মাজান আপনার বাড়িতে গেলে যে রাজরানি হয়ে থাকবে এটা আমি জানি। আপনার পরিবার সম্পর্ক আশেপাশের সকল গ্রামের লোকদের মুখে সুনামের সাথে উচ্চারিত হয়। সেখানে আপনি আমার মেয়ের হাত চাইছেন, আর আমি সেখানে মতামত দিতে দেড়ি করতে পারি না। আমি আপনার কনিষ্ঠ পুত্রের সাথে আমার কন্যার বিবাহ দিতে রাজি।”

বদুরুদ্দিন সাহেব আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে ওঠেন। তারপর তিনি আবারো বললেন- দেখুন সারাজীবন সংসারটা আপনার মেয়ে করবে। আমি চাইছি আপনি আপনার কন্যার থেকে এ বিষয়ে মতামত জানুন। তারপর না হয় বিয়ের কথাবার্তা আমরা সামনে আগাবো।

শাওন শেখ তখন তার স্ত্রী আর কন্যাকে বসার ঘরে ডেকে ওঠেন। মা মেয়ে দুজনে কিছু সময়পর সেখানে এসে উপস্থিত হয়।

রিমশা এসে দেখে তার বাবার চোখ মুখ আনন্দময়। ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তিজনক হাসি লেগে আছে। বাবার চেহারাতে এতো আনন্দের আভা দেখে রিমশা মনে মনে খুশি হয়।

শাওন শেখ রিমশা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আম্মাজান, তোমার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্রের বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমার এ সম্বন্ধে কোন আপত্তি নাই। তা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব তোমার মতামত জানতে চেয়েছেন। আমি জানি আমার মেয়ের মতামত হ্যা হবে। তবুও তোমার মুখ থেকে কথাটা জানতে চাইছি মা।”

বাবার এমন কথা শুনে রিমশা’র কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে। রিমশার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সে কাজ করার সাহস তার হচ্ছে না। তার মনের ভেতরে চলা যুদ্ধের খবর তো বাবা- মা জানে না। তাহলে অযথা তাদের উপর রাগারাগি করার মানে হয় না। আবার এমন কোন রিলেশনে সে আবদ্ধ না যার জন্য বিয়েতে সে অমত করতে পারে। এখন তার সামনে একটাই পথ খোঁলা আছে বাবা-মা’র পছন্দমত ছেলেকে বিয়ে করে জীবনটা কে নতুন করে সাজানোর। এসব কিছু এতো সহজ হবে না। তবে মানুষ ইচ্ছা করলেই যে কোন কাজ করতে পারে। তাহলে বিয়েতে সমস্যা কোথায়?

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিমশা বলল- বাবা তোমার যা ইচ্ছা হয় তা-ই করতে পারো। এই বিয়েতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। বলে সে স্থান ত্যাগ করে।

রিমশা’র মা বলে,”এতো মানুষের সামনের মতামত জানতে চেয়েছ একটু লজ্জা পেয়ে উল্টাপাল্টা ভাবে হলেও মতামত কিন্তু সে দিয়েছে।”

সে যেভাবে কথা বলুক তাতে সমস্যা নাই। আমরা সবাই বুঝি মেয়ে লজ্জায় এভাবে কথা বলেছে। এতে সমস্যা নাই।

এরপর চেয়ারম্যান সাহেব সহ তার কিছু কর্মচারীরা মিলে রিমশাদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন সম্পন্ন করে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার বাড়িতে চলে যায়।

চেয়ারম্যান সাহবে তার বাড়িতে যেয়ে বিবাহের কথা স্ত্রী কে বলেন। তার স্ত্রী কোন কিছুই বলে না, শুধু বলে,”ছেলেটা বিয়ের জন্য রাজী হবে মনে হয় না!”

বদুরুদ্দিন সাহেব বলেন,”ছেলে বিয়ে না করলে ওর ঘাড়ে বিয়ে করবে।”

রেহেনা বেগম বলে,”সে ছেলের ঘাড় বিয়ে করবে তাতেই খুশি।”

বদুরুদ্দিন সাহেব বলে,”সে সব পরে দেখা যাবে। এখন এ বেপারে কারো সাথে কোন আলাপ করবে না। পরে সময় হলে আমি নিজে সবাইকে এ বিষয়ে অবগত করবো।”

রেহেনা বেগম- দু দিকে মাথা নাড়িয়ে সম্মিত প্রকাশ করে।
*
*
নিজের রুমে এসে জানালার পাশে বসে দূরের ঐ আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঐ নীল আকাশের নিচে কতো মানুষের বসবাস। তাদের মাঝে আমিও একজন যার জীবনটা কেমন যেনো তিক্ত হয়ে গেছে। তবুও আমি আমার পরিবারের জন্য সুখে থাকতে চেষ্টা করবো।

এদিকে নিলুফা বেগম এসে তার কন্যার কাছে নিজের খুশি প্রকাশিত করতে বলে ওঠে,”জানিস রিমশা বিয়ের আলোচনা চলছে শেখ বাড়িতে।”

ইফা ভ্রু কুঁচকে বলে,”ঐ চরিত্রদোষ আলা মেয়ের জন্য সম্বন্ধ আনলো কোন হালায়?”

নিলুফা নিজের মেয়েকে হাতের কনই দিয়ে গুতা দিয়ে বলে,”বেয়াদব মেয়ে, মুখ খুললেই খারাপ কথা বলতে হয় তোর? জানিস কোন বাড়ির সম্বন্ধ এসেছে?”

ইফা তাচ্ছল্যের সাথে বলে,”মেম্বার সাহেবের পোলা ছোট। আর তাছাড়া ঐ মেয়ের জন্য কোন ফকিন্নি বাড়ির সম্বন্ধ আসবে। এতে ডাকঢোল পিটানোর কি আছে?”

নিলুফার বলে,”চেয়ারম্যান সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্রের জন্য সম্বন্ধ এসেছে রিমশা’র।”

ইফা দ্রুত মায়ের কাছ থেকে কিছুটা দূরে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”ঐ শহরে নানান পুরুষের সাথে মেলামেশা করা মেয়ে না কি চেয়ারম্যান বাড়ির বউ হবে? ওমা কোন ভাবে বিয়েরদিন বউ বদল করে আমাকে ঐ বাড়ির বউ করে দিতে পারবে? তাহলে ঐ মেম্বারের সাথে আমার পরকিয়ার সম্পর্কের ইতি টানবো। ”

নিলুফার নিজের মেয়ের গালে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে ওঠে,”বেয়াদ মেয়ে! যাদের নুন খাচ্ছিস তাদের সাথে বেইমানি করতে বলছিস? একদম বাপের রক্ত তোর শরীরে, এখন আফসোস হয় এতো কষ্ট করেও তোকে মানুষের মতো মানুষ করতে পাড়লাম না। নয়তো তুই মেয়ে হয়ে মায়ের কষ্ট বুঝবি না?”

ইফা বিরক্তির সাথে বলে,”তোমার কষ্ট বুঝি বলেই তো অন্যদের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক করে নিজের সকল চাহিদা পূরণ করি। আমি কখনো কোন কিছুর জন্য তোমার কাছে আবদার করি না। জানি তো পরের বাড়িতে কাজ করে তুমি কখনো আমার চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।”

নিলুফার কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,”হারাম সম্পর্ক গড়ে তুই যে বাহাদুরি করছিস তা দু দিনের। মনে রাখিস বেশি বারা ভালো না! একদিন ঝড়ে ভেঙে পড়বি। তখন একূল ওকূল দু কূল হারিয়ে কান্নায় হবে তোর শেষ সম্বল। ”

মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ইফা নিলুফা কে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলেদিয়ে বলে,”তোর মতো মা বেঁচে থাকলে আমাকে সারাজীবন কাঁদতে হবে। ধুর তোর কাছে কিছু আশা করার থেকে নিজেই কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করি তাহলে হবে।”

বলে হনহন করে সে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে যায়।

(গল্পটা লেখার মনে কোন আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না। মাঝপথে অসমাপ্ত রাখতে পারবো না বলে মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে গল্পটা লিখছি।)



চলবে…

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৭
#Nishi_khatun

এদিকে চেয়ারম্যান বাড়িতে থমথমে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। বদুরুদ্দিন সাহেব আজ রাতে খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করে বসার ঘরে সবাইকে ডেকে পাঠান।

কিছু সময়পর সেখানে সবাই উপস্থিত হয়। তখন বদুরুদ্দিন সাহেব তার কনিষ্ঠ পুত্রের দিকে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে- আমি বহুবছর পূর্বে আমার বড় ছেলের জন্য রাইসা কে পছন্দ করে আমার বড় পুত্রবধূ করে এনেছিলাম। আমার বড় ছেলে আর রাইসা মা’র দাম্পত্যজীবন আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালোই যাচ্ছে। সেই হিসাবে আমি আমার কনিষ্ঠ পুত্রের জন্য একটা ভালো গুণবতী মেয়েকে পছন্দ করেছি। এখন তোমাকে সেই কন্যাকে বিয়ে করতে হবে।”

দাইয়ান এবার খেঁকিয়ে ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলে ওঠে,” আমি দিরহাম ভাই না! যে আমার উপর তোমার সিদ্ধান্ত চাঁপিয়ে দিলেই আমি তা মেনে নিতে বাধ্য হবো।”

বদুরুদ্দিন সাহেব বলল- আমি জানিত তুমি আমার বাধ্য সন্তান না। তুমি স্বাধীন চিন্তাধারার একজন সুপুরুষ। জানো আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল কি ছিলো? তোমাকে জোড় করে ব্যারিস্টারি পড়ানো। ওটা পড়াতে যেয়ে আমি আমার নম্র-ভদ্র স্বভাবের ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলেছি। তবে তোমাকে লেখাপড়া করিয়ে কোন ভুল কাজ করি নাই আমি। প্রতিটা বাবা- মা’র স্বপ্ন থাকে তার সন্তানদের নিয়ে। আমারো কিছু স্বপ্ন ছিলো যা তোমার বড় ভাই পূরণের ব্যর্থ হয়েছিল। সেই স্বপ্ন আমি তোমাকে দিয়ে পূরণ করেছি। তাতে একটু স্বার্থপর হয়েছি এতে কি এমন করেছি? রাজনীতি করতে হলে একটু ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়। এছাড়া তোমাকে ব্যারিস্টার রুপে দেখার ইচ্ছা ছিলো আমার বাবার।”

দাইয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল- ওটা তোমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। আমি আমার স্বপ্নের গলাটা তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য হত্যা করেছিলাম। তার মানে এই না যে, তোমার কথামত যে কোন মেয়েকে বিবাহ করে সারাজীবনের জন্য আমার ঘাঁড়ে চাপাতে যাব। মেয়েটা আমার কোয়ালিটির নাও হতে পারে বুঝতে পারলে বাবা।”

বদুরুদ্দিন সাহেব আহত কন্ঠে বলে,”বাবা মেয়েটা শিক্ষিত। শহরে থেকে লেখাপড়া করেছে। তাছাড়া অনেক নম্রস্বভাবের। ছোট থেকে মেয়েটা অনেক সাহসী, কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করে না।”

দাইয়ান এবার কাঠকাঠ গলায় বলল,” আমার পক্ষে কোন মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি সারাজীবন সিঙ্গেল থাকতে চাই। তাছাড়া কোন মেয়েকে আমি জীবনেও স্বামীর সুখ দিতে পারবোনা। কারণ আমার জীবনে মনেও কোন নারীর স্থান হবে না।”

বদুরুদ্দিন সাহেব চিৎকার দিয়ে বলে,”এ বিয়ে করতে তুমি বাধ্য। তুমি যদি এই বিয়েটা না করো তাহলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্যহবো। তুমি যদি তোমার মায়ের বৃদ্ধ বয়সে কান্নার কারণ হতে চাও এতে আমার কোন আপত্তি কেন থাকবে বলো?”

দাইয়ান প্রচুর পরিমাণে রেগে বলে,”তুমি আমাকে বিয়ের জন্য থ্রেড দিচ্ছ? জানো আমার বিয়ে ছাড়া জীবনে অন্যকোন লক্ষ আছে। যা পূরণের জন্য আমি সংসার করতে চাইছি না।”

বদুরুদ্দিন সাহেব বলে,” বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনবার পর তোমার যে লক্ষ ইচ্ছা পূরণ করিও সমস্যা হবে না।”

দাইয়ান এবার রেগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। বদুরুদ্দিন সাহেব জানে আজ সারারাত আর তার ছেলে বাড়িতে আসবে না। দাইয়ান কোথায় যেয়ে বসে থাকবে তা সকলের খুব ভালে করে জানা আছে। তা-ই কেউ তাকে নিয়ে কোনরকম আগ্রহ প্রকাশ না করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেদের রুমের দিকে প্রস্থান করে।
*
*
পরেরদিন শাওন শেখ রিমশা আর ইফা কে সঙ্গে করে শহরে নিয়ে যায়। শহরে এসে বড় একটা সোনার দোকানে তারা প্রবেশ করে। এটা শাওন শেখের পূর্ব পরিচিত একটা দোকান। ছেলের বউয়ের সকল গহনাদি এখানে থেকে তারা বানিয়েছে।

সামনে কন্যার বিবাহ! তা-ই মেয়েকে সাথে করে এনেছে তার পছন্দমত ডিজাইনের গলার হার বানাবে বলে।

এদিকে দোকানি এতোশত হারের ডিজাইন দেখাচ্ছে রিমশা’র কোন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। তার তো বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই। শুধুমাত্র বাবা- মা’র খুশির জন্য বিয়েতে রাজি হয়েছে। এখন এসব সোনার গহনা কার জন্য পরবে সে? আসলে আহীদ ছাড়া অন্যকারো জন্য সাজার ইচ্ছা তার মধ্যে জীবিত নেই।

এদিকে ইফার চোখে লোখ চকচক করছে। আল্লাহ এতো কিছু তার মেয়ের জন্য করছে আমার জন্য তারা কিছু করবে না? এতো না কি ভালোবাসে আমাকে? এখানে আসার পর থেকে তার মেয়ের জন্য গহনাগাঁটি দেখছে। কই আমাকে তো কিছু জিজ্ঞাস করছে না? হুহ! এসব কিছু এদের ঢং। লোকদের সামনে বড় বড় বুলি আওড়াতে জানে। কাজের বেলায় ঠংঠং।

শাওন শেখ যখন দেখলেন তার মেয়ের এসব কিছুতে আগ্রহ হচ্ছে না তখন তিনি নিজের পছন্দমত গহনা বানিয়ে দেওয়ার জন্য অর্ডার দিলেন। আর সিম্পল ডিজাইন করা সোনার চেইন ইফার জন্য ক্রয় করে। রিমশা’র হাতে সোনার চেইন টা দিয়ে বলে,”এটা তুমি নিজের হাতে ইফার গলাতে পড়িয়ে দাও। ইফা তোমার ছোট বোনের মত। ইফার বিয়ের সময় আমি মোটা সোনার হার গড়িয়ে দিবো। এখন রিমশা’র বিয়েতে পড়ার জন্য সিম্পল সোনার চেইন উপহার দিলাম।”

রিমশা খুশি মনে ইফার গলাতে সোনার চেইন পড়িয়ে দিলো। ইফার মুখটা হাসিখুশিতে ভরপুর থাকলেও মনে ছিলো বিষ।
“নিজের মেয়ের জন্য কতো দামী জিনিশ কিনেছে আর আমার জন্য এই ফকিন্নি মার্কা চেইন! এটা দিয়েছে বলে এমন ভাব করছে আমার মাথায় চড়ে বসবে। থামো তোমাদের মজা আমি দেখাচ্ছি। ”

এদিকের সকল কেনাকাটার পাঠ চুকিয়ে গ্রামে ফিরতে আসরের আজান দিয়েছে। ইফা তখন আহ্লাদিত কন্ঠে বলল- মামাজান আমি রিমশাপু কে সাথে করে একটু আমার বান্ধবীর বাড়িতে যাব?’

শাওন শেখ বলে,”সারাদিন শহর থেকে সবাই ক্লান্ত। বাড়িতে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে আজ বিশ্রাম নিও। কাল সকালে না হয় তুমি তোমার আপুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।”

ইফা বলে,”আসলে মামাজান আমার বান্ধবীর বিয়ে হয়েগেছে। কয়েকদিন হলো সে বাবার বাড়িতে এসেছে আজ রাতে-ই হয়তো ফিরে যাবে। আমি তাকে বলেছিলাম সে যাবার আগে আমি তার সাথে দেখা করতে যাবো। কিন্তু কাল সকালে তার বাবা- মা’র সাথে দেখা করে আমি কি করবো?”

রিমশা তখন তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আচ্ছা বাবা আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। মেয়েটা যখন যেতে চাইছে তখন আমি না হয় ওর সাথে ঘুরে আসি। নয়তো মেয়েটার মন খারাপ হবে।”

শাওন শেখ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আচ্ছা যেতে চাইছো যাও। তবে সন্ধ্যা লাগার আগে ফিরে এসো কিন্তু। ”

অনুমিত দেওয়ার সাথে সাথে ইফা রিমশা’র হাত ধরে গ্রামের উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে। শাওন শেখ প্রচুর ক্লান্ত ছিলো বিধায় তাদের যাওয়া পথে দৃষ্টিপাত করতে ভুলে গেছে।

রিমশা গ্রামের কোন রাস্তা ঠিকমতো চেনে না। তা-ই ইফা তাকে যে পথ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে পথ দিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে। গ্রামের পথ ছেড়ে লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে তারা চলে এসেছে। হঠাৎ করে রিমশা ইফাকে প্রশ্ন করে,”এই ইফা আর কতদূরে তোমার বান্ধবীর বাড়ি?”

ইফা বিরক্তির সাথে বলে,”এই জনশূন্য মাঠঘাট পেরিয়ে আর কিছুটা দূরে গেলেই আরেকটা গ্রাম। সে গ্রামের প্রথম বাড়ি তাদের।”

রিমশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”ওহ আচ্ছা! তাদের বাড়িতে যেতেই তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে। বাড়িতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে তো?”

ইফা বলে,”রাত হবে না। বেশি কথা না বলে তুমি দ্রুত পা চালিত করো।”

রিমশা বাধ্য মেয়ের মতো ইফার পেছনের ছুটতে থাকে। তাদের পথ চলতে চলতে মাঠের মধ্যে সন্ধ্যা হয়েগেছে। এদিকে রিমশা তার মোবাইল ফোনটা শপিং ব্যাগে রেখেছিল যা বাবা বাড়িতে নিয়ে গেছে। এই অন্ধকার পথে সে কীভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হবে?

হঠাৎ করে ইফা রিমশা’র হাত ধরে বলে,”আমার সাথে চলো তাহলে সমস্যা হবে না। আমার অন্ধকারে পথচলার অভ্যাস আছে।”

রিমশা কিছু বলবে তার পূর্বে দেখে কিছুটা দূরে হয়তো ওটা বাড়ি। সে বাড়িতে আলো জ্বলছে। ইফা আলোটা কে উদ্দেশ্য করে বলে,” ঐ যে ঘরে আলো জ্বলছে ওটা আমার বান্ধবীদের বাড়ি বুঝলে।”

বাড়ির কিছুটা কাছে এসে ইফা রিমশা কে বলে,”আপু তুমি বাড়ির ভেতরে যাও আমি তোমার পেছনে পেছনে আসছি। আসলে আমি একটু বাথরুমে যাবো। তাছাড়া তুমি তো জানো গ্রামের টয়লেট গুলো বাড়ি থেকে দূরে হয়। তুমি যাও আমি ওদের টয়লেট থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

রিমশা সরল মনে আলোয় উজ্জ্বল ঘরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সে ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়। দরজা খোলার সাথে সাথে রুমের আলোটা নিভে গেলো। অন্ধকারে ভেতরে অগ্রসর হতে যেয়ে দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে রিমশা ঘরের ভেতরে পড়ে যায়।

হুট করে ভেতর থেকে কেউ দরজা বন্ধ করে দিলো।
দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ শুনে রিমশা’র কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।

রুমের আলো জ্বলতেই রিমশা তার সামনে যা দেখলো তাতে তার চোখ কোঠর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।

(দেশে এমন অগ্নিকান্ডে মানুষের আর্তনাদ দেখে গল্প লেখার মানুষিকতা হচ্ছিল না। আর আমার এক আত্মীয় অসুস্থ ছিলো, মারা গেছে তার জন্য মনটা খারাপ ছিলো।)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here