#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- (অন্তিমপাতার শেষাংশ)
– আজ প্রায় এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে আবিরকে ছুটি দিলো,,সেইদিনের পর আজ একসপ্তাহ ধরে আবিরকে হাসপাতালে রাখা হয়েছিল,,,যখনই জ্ঞান ফিরছিলো তখনই পাখি পাখি বলে চিৎকার করছিলো আর তার সাথে জিনিসপত্র ভাঙচুর করছিলো,,,কখনো ঘর ছেড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো পাখিকে আনতে,,,নাওয়া খাওয়া তো ভুলেই গিয়েছিলো,,,এক কথায় আবির পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিল পেখমের শোকে,,,তাই বাধ্য হয়েই ডাক্তার ওকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়,,,এইকদিন ডাক্তার ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েই রেখেছিলো,,,কালকে থেকে পাগলামো কমায় আজকে একটু স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে ডাক্তার ওকে ডিসচার্জ করে দেয়,,,,
– আবিরের এই অবস্থার জন্যে অশোক বাবু আর অনুপমা দেবী ব্যাঙ্গালোরে চলে আসেন,,মনোরমার শরীরের অবস্থা ভালো না,,, বারবার চেতনা হারাচ্ছেন,,, দেবেন্দ্র বাবুর একই অবস্থা,,, তীয়াকে দেখার জন্য বাধ্য হয়ে লোক রাখতে হয়েছে,,আর পুলকের মাসিরাও এসেছে,,,বোনের শোকে পুলক ভেঙে পড়েছে,,, নিজের সদ্যজাত সন্তান আর বৌকে সময় দিতে পারছে না,,, সারাদিন পেখমের ঘরে থাকে,,,
– নরেন্দ্র বাবুকে কিছুই জানানো হয়নি,,, উনার শরীরের যা অবস্থা,, কিন্তু বিমলা দেবী সব জানেন তাই তো নরেন্দ্র বাবুর অগোচরে কাঁদেন,,,, আর তীয়া সেতো ভালো করে কাঁদতে পযর্ন্ত পারছে না,, একদিকে সিজার তার উপরে বাচ্চা আর এইরকম পরিস্থিতি,, ওর উপর দিয়ে কি যাচ্ছে সেটা এক মাত্র ওই জানে,,,
– আবিরকে অশোক বাবু কলকাতাতে নিয়ে চলে আসেন,,,ওর দেখভাল এখন অনুপমায় করছে,,,সারাদিন শুধু পেখমের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে,,, তারপর অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে,,,
________________________________________
– অনুপমা আজ সকাল বেলায় আবিরের ঘরে গিয়ে দেখে যে আবির ল্যাপটপে পাখির ছবি গুলো দেখছে,,আর ফোনে কার সাথে কথা বলছে,,,
– আমি ওসব কিছুই জানতে চাই না,,, ৩০ মিনিট সময় দিলাম তার মধ্যে ইনফরমেশন আমার চাই,,,যে কোনো কিছুর মূল্যে,,,,( কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিলো আবির তারপর পেখমের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,,)
– কোথায় আছো তুমি??? কেন আমি আমার সর্ব চেষ্টা করেও তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না??? সবাই মেনে নিয়েছে যে তুমি আর নেই কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি,,, তুমি আছো,,,যতদিন আমার অস্তিত্ব থাকবে ততদিন তুমি আমার সাথেই থাকবে,,,আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে দেখো,,,কেনো ফিরে আসছো না,,,এই দেখো নিঃশ্বাস পযর্ন্ত নিতে কষ্ট হচ্ছে,,,,( বলেই কেঁদে ফেললো,,,কথায় আছে অতি কষ্টেও পুরুষ মানুষের চোখ দিয়ে জল গড়ায় না,,,কিন্তু আজ সে কষ্টের সীমা মনে হয় লঙ্ঘন হয়েছে,,, অনুপমা দূর থেকে ছেলের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে নিরবে কাঁদতে থাকেন,,,ভগবান তো এমনটা না করতেও পারতো,,,কেন এত নিষ্টুর হলো ওদের দুজনের উপর)
___________________________________________
– পেখমের অন্তক্রিয়ার কাজ হচ্ছে মনোরমাদের বাড়িতে,,,সবাই নিশ্চুপ ভাবে বসে আছে,,, পেখমের বন্ধুরাও এসেছে,,, ওদের চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পড়ছে,,,, ব্রাহ্মণের মন্ত্র উচ্চারণ আর থেকে থেকে পুলক আর অদ্বিতীয়ার ছেলে প্রিয়মের কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে,,, তীয়া ছেলেকে চুপ করাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে,,, ওইটুকু দুধের শিশুর দিকে তাকিয়ে মনোরমা হঠাৎ করে জোড়েই কেঁদে ফেললেন,,, তারপর তীয়ার কাছ থেকে প্রিয়মকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন,,, অমনি বাচ্চাটির কান্না বন্ধ হয়ে গেল,,,,
– পেখমের ঘরের দরজায় পাশে বসে আছে পুলক,,,চেয়েও নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না,,, কোথায় ওর দায়িত্ব সবাই কে সামলে রাখার কিন্তু পারছে না,,, দেবেন্দ্র বাবু ঘরে শুয়ে আছেন,,,আর উনার মাথার পাশে বসে আছেন বিমলা দেবী,,,স্বামীর অসুস্থতা, ছেলেকে এই ভাবে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে তারপর তার আদরের একমাত্র নাতনী যে আর নেই,,এই এক এক ধাক্কা সহ্য করে তিনি আজ শান্ত,,,,নরেন্দ্র বাবু পেখমের মৃত্যুর খবর শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন,,,আর সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত এখনো তিনি হসপিটালে রয়েছেন,,,, সংসার টা কেমন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে,,,,এতকিছুর মধ্যেও প্রিয়মের প্রতি কেউ অবহেলা করছে না,,, ওইটুকু দুধের শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই নিজেদের মনকে শক্ত করতে চেষ্টা করছে,,,কিন্তু যতবার আবিরকে দেখছে ততবারই সবাই আবার ভেঙ্গে পড়ছে,,,ছেলেটার দিকে তাকানো পযর্ন্ত যাচ্ছে না,,,
– অনুপমা অনেকটা জোড় করেই আবিরকে ঘর থেকে বের করে পেখমদের বাড়িতে এনেছে,,এইভেবে যে অন্তত পেখমের শেষ কাজে ওর পাশে থাকুক আবির ,,,কিন্তু এখানে এসে বাধলো এক বিপত্তি,,,আবির যখন দেখলো পেখমের ছবিতে মালা দেওয়া আর ওর অন্তিম কাজ চলছে,,তখন ওর মাথা মুহূর্তে গরম হয়ে গেল,, কপালের রগ ফুলে গেল,,,ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার বলে ওঠে,,,
– কার অনুমতি নিয়ে পেখমের অন্তিমক্রিয়া করা হচ্ছে???
– আবিরের চিৎকার শুনে সবাই ভয়তে সামনে তাকিয়ে আছে,,, আবির আবার বললো,,,
– আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি,,,কার অনুমতিতে এই সব করা হচ্ছে??? তোমরা কি সত্যিই ভেবে নিয়েছো যে পাখি মারা গেছে?? ওর ডেডবডি দেখেছো তোমরা?? বলো,,,,
– আবির তুই এসব কি বলছিস?? তুই একটু শান্ত হ বাবা,,(অনুপমা)
– এতক্ষণ প্রিয়ম চুপ করে থাকলেও আবিরের চিৎকার শুনে জোড়ে কেঁদে দিলো,,,তা দেখে সবাই ভড়কে গেল,,,তীয়া প্রিয়মকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়,, কারণ ও সবার আগে বারণ করেছিল পেখমের অন্তিমক্রিয়া করার,,,,ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পাখি বেঁচে আছে,,,,
– পুলক ,মামনি আর বাপির মাথা ঠিক নেই তাই ওরা মেনে নিয়েছে,, কিন্তু তুই?? তুই কি করে বিশ্বাস করছিস যে আমার পাখি মৃত??? আমি জানি ও বেঁচে আছে ভাই,,,আমি ওকে খুঁজে বের করবোই এইটুকু ভরসা রাখ,,,,আর এইযে আপনি(ব্রাহ্মণের উদ্দেশ্যে) হ্যাঁ আপনি এই মুহূর্তে বিদায় হবেন,,, এখানে কোনো কাজ হবে না,,, আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন,,আর তোমরা(পেখমের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে) তোমরাও কি মেনে নিয়েছো যে তোমাদের পেখু আর বেঁচে নেই??মারা গেছে,??(আবিরের মুখে এমন কথা শুনে ওরা কেঁদে দেয়,,তারপর বলে,,,)
– না আবির দা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে পেখু আমাদের মধ্যে নেই,,, তাই মেনে নিতেও পারছি না,,, কিন্তু কষ্ট হচ্ছে আমাদের খুব,,,,( সবাই চোখের জল মুছে)
– পুলক আমি আজকে আর এই মুহূর্তে ব্যাঙ্গালোরে যাচ্ছি,,তুই যাবি আমার সাথে,,,(আবিরের কথা শুনে পুলক ওর দিকে তাকায়,,পুলকের চাহনি দেখে আবির বলে,,)
– আমার মন বলছে পাখির খোঁজ আমরা ওখানেই পাবো,,,হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে ওঠে,,,ও দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে,,, ও ফোনটা রিসিভ করার কয়েক মুহূর্ত পর আপনাআপনি হাত থেকে ফোন পড়ে যায় ফ্লোরে ,,,,,,
__________________________________________
( পাঁচ বছর পর)
– টুকু টুকু কথা শুনবি কিন্তু,,, মা দেখেছো ও এই বাড়িতে আসলেই এমন করে,,,আমার কথা একদম শুনতেই চাই না,,,,
– আহ তীয়া তুই বেশি বকাবকি করিস তাই শুনতে চাই না,,, টুকু দাদুভাই এইদিকে এসোতো,,,,এই দেখো মা ভাত মেখেছে মাছ দিয়ে,, খেয়ে নাও,,একটু পরে ঠাম্মি ফোন করে যদি শোনে যে তুমি দুপুরে খাও নি তখন কিন্তু আমাকে আর মা কে বকা দেবে,,,,(অনুপমা)
– ও দিদুন আমি এই মাছ দিয়ে খাবো না,,,,প্লিজ জোড় করবে না,,,( প্রিয়ম)
– এইটুকু ছেলে আবার এটা খাবো না ওটা খাবো না করবে,,,মা তুমি ওর একটা কথাও শুনবে না,,,এইসব নাটক ও খাবে না বলে করছে,,,
– মা একদম এইটুকু এইটুকু ছেলে বলবে না,,, কাল আমার পাঁছ বছর পূর্ণ হবে,,,আর আমি এতটাই ভালো স্টুডেন্ট যে আমার তিন বছর বয়সে মামাই আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল,,, আর বাবা বলে আমি তার বোনের মতো মেধাবী,,, তাহলে হলাম না আমি বড়ো,,,,তাইনা দিদুন???(প্রিয়ম)
– হ্যাঁ প্রিয়ম একটু সবকিছুই আগে আগে শিখেছে,,,বাংলা উচ্চারণ, ইংরেজি উচ্চারণ খুব ভালো করে পড়তে পারে,,,এমনকি হিন্দ কথা বলতে পারে অল্প অল্প,,, বাড়ির সবাই ওকে পেখমের জেরক্স কপি বলে,,,,আবির সবার সামনে গম্ভীর হলেও একমাত্র ওর সাথে বন্ধুর মতো মেশে,,ওকে সঙ্গ দেয়,,,,
– হ্যাঁ তুমি একদম ঠিক কথায় বলেছো,,,তুমি আমার পেখমের পুরো জেরক্স কপি,,,এখন বলোতো কি খাবে??(অনুপমা)
– দিদুন তুমি আমাকে দই দিয়ে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দাও,,,( টুকুর কথা শুনে অনুপমা ওকে তাই খাইয়ে দেয়,,তারপর প্রিয়ম দৌড়ে আবিরের ঘরে চলে যায়)
– মা দই শুধু টুকু এই বাড়িতে আসলেই দাদাভাই কিনে আনে বলো??
-হ্যাঁ,, ছেলেটা আজও আমার উপর রেগে আছে,,,আমি বুঝতে পারি কিছু কিছু ক্ষেত্রে,,, দেখনা আজ পাঁচটা বছর নিজের জন্মদিনে আমাকে কিছু করতে দেয় না,,, পায়েসটা অবদি খাই না,,,(বলেই আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন)
– আমি দাদাভাই কে বললাম কাল তো টুকুর জন্মদিন,, তুই থাকবি তো?? তা সেই শুনে দাদাভাই বললো” টুকুর জন্মদিনে আমাকে পাবি,,,কিন্তু ভুলেও যেন আমার জন্মদিন পালন করতে যাবি না,,,তাহলে কিন্তু এই শেষবারের মতো টুকুর জন্মদিনে আমাকে পাবি,,,জানিস তো আমি এইসব পছন্দ করি না”।
– কেন যে সেইদিন পেখমের কথা মেনে নিয়ে ওকে যাওয়ার জন্য হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম?? আজ সেই থেকে ছেলেটা আমার,,(আর বলতে পারলেন না অনুপমা দেবী)
– পেখুকে খুব মিস করি মা,,,তোমার জামাই ,,মামনি পাপা সবাই খুব মিস করে,,,
– আমিও খুব মিস করি,,,মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে,,,আমি যে কোনদিকে যাবো,,,,
__________________________________________
– টুকু চল ঘুমাবি,,,বাবা এসেছে নিতে,,,চল,,
– না মা আমি আজ মামাই এর সাথে থাকবো,,(টুকু)
– না মামাই এখন রেস্ট নেবে,,,তুমি চলো,,,আমাদের যেতে হবে,,
– তীয়া ও থাকুক আমার সাথে,,,তুই চলে যা পুলকের সাথে,,,(আবির)
– কিন্তু দাদাভাই,,,
– আহ তীয়া এক কথা বলতে আমার ভালো লাগে না,,, এখন যা তুই,,,( তীয়া চলে যাওয়ার পর আবির ল্যাপটপে কাজ করতে বসে যায় আর টুকু সারা ঘর জুড়ে খেলতে শুরু করে দেয়,,,একসময় খেলতে খেলতে ক্যাবিনেট থেকে একটা ডাইরি পাই,,,তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,,)
– মামাই এটা কি?? ওয়েট এতে লেখা আছে হৃ দ ওয়েট ওয়েট হৃদয় হ্যাঁ #হৃদয়হরণী,,,,, মামাই হৃদয়হরণী কে??? আর এটা কি???
– টুকু ওটা যেখানে ছিল, সেখানে রেখে দাও,,,,আর এইদিকে এসো,,,অনেক রাত হয়েছে,, ঘুমাবে,,,তুমি তো জানো টাইম মেইনটেইন করি আমি,,,
– সরি মামাই,,(তারপর টুকুকে ঘুম পাড়িয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,)
– “যে আমার বুকের বাঁ পাশে অবস্থিত এই হৃদয় টা হরণ করে নিয়ে গেছে,সেই তো আমার #হৃদয়হরণী”।
– রাত বারোটার সময় আবিরের ফোনে দুটো কল আসে,,আবির সেটা দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে ব্যালকনির দিকে চলে যায়,, আজ সে ঘুমাবে না,,,
_________________________________________
– আজ দুই পরিবার ভীষণ ব্যস্ত,,, কারণ টুকুর পাঁচ বছরের জন্মদিন টা খুব বড়ো করেই সেলিব্রেট করছে ওরা,,আর একটা কারণ আছে আর তা হলো আবির ,,,অন্যবার এইদিনে ও বাড়িতে থাকে না,, কিন্তু আজ থাকবে টুকুর জন্যে,,,,
– সন্ধ্যের সময় সব গেস্টরা চলে এসেছে আবিরদের বিল্ডিংয়ের হলরুমে,,, অনুষ্ঠানটা এখানে করা হচ্ছে,,, টুকু আজকে একটা রয়্যাল ব্লু শার্ট আর ব্ল্যাক ফরমাল প্যান্ট পড়েছে,,,কারণ এটা ওর পিমি পছন্দ করে পাঠিয়েছে,,, চুল গুলোতে জেল দিয়েছে,,,হাতে মামাই এর মতো ওয়াচ পড়েছে,,,,আর ওর ইচ্ছাতেই আবির আর পুলককেও একই ড্রেস পড়তে হয়েছে,,
-বার্থডে পার্টিতে যখন সবাই উপস্থিত তখন তীয়া ওকে কেক কাটতে বলে,,,কিন্তু টুকু বলে একটু পর সে কাটবে,,অনেকটাসময় পর সবাই যখন ওকে কেক কাটতে বলছে,,তখন ও কেকটা কাটছে না,,,
– প্রিয়ম কেকটা কাটো,,,(আবির)
– মামাই আমার একজন গেস্ট আসবে,,,আমি তার অপেক্ষায় আছি,,,
– সে কখন আসবে,,,সবাই অপেক্ষা করছে তো,,,(পুলক)
– ওই তো এসে গেছে,,,সামনে তাকিয়ে দেখো,,( টুকুর কথা মতো সবাই সামনে তাকায় আর সাথে সাথে নীল আলোর ফোকাস টা আগন্তুকের মুখের উপর পড়ে,,সবাই সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়,,, আবিরের তো কয়েক মুহূর্তের জন্যে হৃদস্পন্দন থেমে যায়,,,
– কারণ আবিরের সামনে নীল শাড়ি পরিহিতা এক নারী দাঁড়িয়ে আছে,,, ঘন কালো চুল গুলো যার খোলা থাকার দরুন বাতাসে উড়ছে,,,সাদা স্টোনের হার কানের দুল গুলো যেন নীল আলোয় চকচক করছে,,, আর কপালে সাদা স্টোনের টিপটা জ্বলজ্বল করছে,,,অবাধ্য চুল গুলোকে কানের লতিতে গোজার কারণে হাতের চুড়ি গুলোর রিনিঝিনি শব্দ আবিরের কানে বাজছে,,,হঠাৎ প্রিয়মের কথায় ওর হুশ ফেরে,,,
– পিমি তুমি চলে এসেছো,,, আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি,,,কেকটাও কাটিনি,,,,
– এখনো কেক কাটোনি,,,চলো চলো কেক কাটবে,,,
– পেখু তুই সত্যিই এসেছিস?? কোথায় কালকে একবারো তো বললি না??( মনোরমা)
– ঠাম্মাম ওটাতো সারপ্রাইজ,,,,(টুকু)
– পেখু এটা কিন্তু খুব অন্যায়,,( অনুপমা)
– সরি মা আর মামনি,,, কিন্তু আমি কি করবো,,,তোমাদের এই বিচ্ছুটা আমাকে বলতে বারণ করেছে,,,(টুকুকে উদ্দেশ্য করে পেখম কথাগুলো বললো,,,তারপর কেক কাটা হলে পেখম নিজের হাতে প্রিয়মকে আর আবিরকে কেক খাইয়ে দেয়,,আর আবিরের কানে কানে বলে শুভ জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইলো আপনার জন্যে,,,সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাই না বলে আবির কেকটা খেয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে,,)
___________________________________________
(পাঁচ বছর আগের ঘটনা)
– সেইদিন রাজিব আবিরকে ফোন করে,, আর ফোন করে বলে,,পেখমের নাম বোডিং পাসে ছিল না,,, তারপর এয়ারপোর্টের সিসিটিভি চেক করে দেখে পেখম বোডিং পাস চেকিং করার সময় দ্রুত গতিতে দৌড়ে এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে চলে যায়,,, সেই কথাটা শুনে আবির আর পুলক তখনই এমারজেন্সি টিকিট কেটে ব্যাঙ্গালোরে চলে যায়,,,তারপর সেখানে গিয়ে থানায় ডাইরি করতে গিয়ে জানতে পারে ঐ দিন ঠিক ওই সময়ে এয়ারপোর্টের ব্যাকের রাস্তাতে গুরুতর ভাবে একটা এক্সিডেন্ট হয়,,দুজন স্পট ডেড আর দুজন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি,,, তাদের মধ্যে একজন মেয়ে আর একজন ছেলে,,,তাদের অবস্থা এখনো ক্রিটিক্যাল,,,,
– সেই কথা শুনে আবির আর পুলক তক্ষনাৎ হাসপাতালে যায়,,, আর গিয়ে জানতে পারে পেখম আই সি ইউ রুমে আছে,,,আবির এইভেবে শান্তি পাই যে পেখম বেঁচে আছে,,,গুরুতর জখম হওয়ার কারণে পেখমের এখনো জ্ঞান ফেরেনি,,,তারপর যখন পেখমের জ্ঞান ফেরে তখন জানতে পারে সেই দিন পেখম টিকিট টা আনেনি তাই দ্রুত বেরিয়ে এসে ফ্ল্যাটে যাচ্ছিলো ট্যাক্সি করে,, কিন্তু রাস্তার মাঝেই এক্সিডেন্ট হয় আর তারপর ওর কিছু মনে নেই,,আবির নিজের দায়িত্বে পেখমকে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট নার্সিংহোমে শিপট করে,,,দীর্ঘ একমাস পর পেখম সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে কলকাতায় ফেরে,,তারপরেও বাড়িতে ডাক্তার আর নার্সের অধীনে থাকতে হয় ওকে তিনমাস,,,, সেই তিনমাস বাড়ির সবাই আর তার সাথে আবিরো নিজের ভালোবাসা আর কেয়ার দিয়ে ওকে সুস্থ করে তোলে,,,
– তারপর সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো প্রিয়মের যখন এক বছর বয়স তখন পেখমের নামে একটা চিঠি আসে,,আর তাতে লেখা থাকে পেখম সিলেক্ট হয়েছে নেপালের কাঠমান্ডুর এক নামকরা ইউনিভার্সিটি তে ভূগোলে এম এস সি করার জন্য,,,, বাড়ির সবাই পেখমকে যেতে দিতে রাজি থাকলেও মনোরমা আর আবির রাজি ছিল না,,কিন্তু পেখমের জেদের কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে ওদের,,, অনুপমা সবার আগে রাজি হওয়ার দরুন আজও আবির ওর মায়ের উপরে রেগে আছে,,,আর পেখমের সাথে সেই দিনের পর থেকে নিজে থেকে কোনো যোগাযোগ করে নি,,পেখম ফোন করলেও রিসিভ হয়নি সেই কল,,,
_________________________________________
– অনুষ্ঠান শেষে পেখম ওর বাড়ির সবার সাথে কথা বলে তারপর মামনি আর পাপার সাথে বাড়ি চলে আসে,,
– আজ না জানি কি হবে,,,তোর তো আজকে আসার কথা ছিল না মা??( অশোক বাবু)
– পাপা পরীক্ষা শেষ,, আর রেজাল্ট তো ইমেইল দিয়ে দেবে,,তাই ভাবলাম ওখানে থেকে আর লাভ নেই,,,আর রইলো বাকি তোমাদের ছেলের কথা সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও মামনি,,,(ওদের সাথে টুকিটাকি কথা বলে পেখম নিজের ঘরের দিকে যায়)
– আজ কত গুলো দিন পর ও ওর ভালোবাসার ঘরে যাচ্ছে,,, ক্রমেই আবিষ্কার করলো যে ওর হাত পা কাঁপছে,,, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে,,,মুখ ফুলিয়ে একটা শ্বাস ছেড়ে ও ঘরে গেল,,,ঘরে এসে দেখে যে ঘরে নীল মৃদু আলোটা জ্বলছে আর আবির ব্যালকনির রকিং চেয়ারে বসে আছে,,, ও ধীর পায়ে সেখানে গেল,,,
– পেখমের উপস্থিতি আবির বুঝতে পেরেও চোখের উপর থেকে হাত সরায় নি,,আর তাই দেখে পেখম হঠাৎ করেই আবিরের কোলে বসে পড়ে,,,
– হঠাৎ করে কোলের উপর ভারী কিছু অনুভব হতেই আবির চোখ মেলে তাকায়,,,আর তাকিয়ে দেখে পেখম ওর দিকেই চেয়ে আছে,,,আবির উঠে যেতে চাইলেও পেখম বাঁধা দিয়ে বলে,,,
– উঠবেন না,,,আপনি আর কতদিন আমার উপর রেগে থাকবেন?? এবার তো ক্ষমা করে দিন,,,(পেখমের কথায় আবির কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নিয়ে চুপ করে থাকে,,,) প্লিজ চুপ করে থাকবেন না,, আমাকে বকুন ,,শাস্তি দিন তবুও চুপ করে থাকবেন না,,, আপনি তো জানতেন যে ওটা আমার স্বপ্ন ছিল,,, আর আপনি নিজেই তো বলেছিলেন আমার সব স্বপ্ন গুলো আপনি পূরণ করবেন তবে কেন আপনি এইরকম করছেন,,,
– আবির কিছু না বলে উঠে যেতে চাইলে পেখম আবিরকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে নিরবে চোখের জল ফেলে,,,বুকের উপর গরম তরল পদার্থ জাতীয় কিছু অনুভব হতেই আবির বলে ওঠে,,
– “সে কি জানে না তার ওই মায়াবী চোখের জল আমার সহ্য হয় না”??
– অথচ এই জল ছিল আমার এতগুলো দিনের সঙ্গী,,,(পেখম)
– ওটা তোমার শাস্তি ছিল পাখি,,,আমার অবাধ্য হওয়ার শাস্তি, যা নিতান্তই খুব কম ছিল আমার মতে,,,
– আপনি একজন নিষ্টুর লোক,,,এতগুলো বছর যে আমার সাথে কথা বলেনি কিন্তু ঠিক আমার খোঁজখবর নিয়েছে,,,কিন্তু তার একবারের জন্যও দয়া হয়নি আমার উপর,,,ঐ জন্যে তো একটি বারের জন্য আমার ফোন রিসিভ করেননি,,, এমনকি জন্মদিনের দিন গুলোতেও না,,,
– নিষ্টুর কি তুমি ছিলে না?? নিষ্টুর না হলে পারলে কি করে আমাকে এখানে ফেলে নেপালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে, যেখানে আমি বারণ করেছি,,, আর রইলো বাকি খোঁজ খবর নেওয়া,,,সেটাতো তুমিও নিতে টুকুর থেকে,,,আমি তোমার নাড়ি নক্ষত্র সব জানি পাখি,,, টুকু টাকে পুরো নিজের মতো করেছো,,,,
– ঠিক আছে সব ভুল আমার,,, আমি কালকেই নেপালে চলে যাবো,,,আর আপনাকে ডিসটার্ব করবো না,,, আসছি( কথাটা বলেই চলে যেতে নিলে আবির একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে পেখমকে,, তার পর বলে,,,)
– নেপালে ফিরে যাওয়ার কথা বললে এবার সত্যি সত্যিই তোমার পা দুটো ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো,,,(বলেই বুকে জড়িয়ে নেয় পেখমকে)
– আপনি ক্ষমা করেছেন আমাকে??
– তোমাকে আর কতবার ক্ষমা করবো পাখি??
– যতবার আমি ভুল করবো,,
– ভুল তো না,,,তুমি জেদ করো,,,আর দেখো সেই জেদের কাছে আমি বারবার পরাজিত হয়ে যায়,,, তাই না হলে এই যে এখন তোমাকে এইভাবে আমার বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে রাখতাম না,,,
– ভালোবাসি খুব আপনাকে,,,,
– পেখমের মুখে কথাটা শুনে আবির তৃপ্তির হাসি হেসে বলে ওঠে,,,
– ” সে কি জানে তার মুখ থেকে আমি যতবারই ভালোবাসি শব্দটা শুনি ঠিক ততবারই আমার হৃদয়ের স্পন্দন কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও থেমে যায়”??
-“সে কি জানে, সে যদি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে তাহলে মৃত্যুর আগে পযর্ন্ত আমি তাকে আগলে রাখার ক্ষমতা রাখি”??
– “সে কি জানে , আমার হৃদয়ের প্রত্যেকটা স্পন্দনে শুধু মাত্র তার নামই প্রতিধ্বনিত হয়”??
– আবিরের মুখে কথাগুলো শুনে পেখম লজ্জায় মুখ গুজে রাখে আবিরের বুকে আর আবির তাই দেখে পরম স্নেহে পেখমের অবাধ্য চল গুলোকে কানের লতিতে গুজে দেয়, তারপরে কপালে অধরযুগল দ্বারা স্পর্শ করে বলে ওঠে ,,,
-” সে শুধু তার এই লজ্জা মাখানো মায়াবী মুখটা দেখিয়েই আমার হৃদয় হরণ করতে সার্থক হয়,,,আর তাই জন্যে আমি তাকে ভালোবেসে বলে ডাকি, সে আমার একান্তই আমার #হৃদয়হরণী” ।
(সমাপ্ত)
(বিঃদ্রঃ- গল্পটার পরিণতি আমি মর্মান্তিক রেখেছিলাম,, কিন্তু আপনাদের এত এত ম্যাসেজ আর কমেন্ট পড়ে শেষে আমি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলি,,,আর তার জন্যেই আমার দেরি হয় গল্পের প্লট সাজাতে,,,রিচেক করিনি,,,
– যারা গল্পটি পড়েছেন সবাই রিয়্যাক্ট ও কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন কেমন লাগলো আজকের পর্ব আপনাদের,,, কপি পেস্ট করবেন না,,আর গল্পটা পড়ে গল্পের স্পয়লার বলবেন না কমেন্টে,, ,)