#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৯
– বাইরে প্রখর রোদ,,,আর সেই রোদের প্রতাপে সবকিছু যেন ঝলসে যাচ্ছে,,,,এইমত অবস্থায় সবার আশা শুধু একটাই ,যেন হঠাৎ করে ওই দীপ্তমান সূর্যকে মেঘরাজ ঢেকে নিক নিজের চাদরে আর কোমল বৃষ্টির জল যেন এই ধরণীর উপর আঁচড়ে পড়ুক,,, ঝলসে যাওয়া প্রকৃতিকে নিজের জল দ্বারা স্নান করিয়ে স্নিগ্ধ করে তুলুক,,,কিন্তু সেই মেঘরাজের দেখা মেলে না এই কদিন,,,বাইরে সূর্যের প্রখরতায় যেমন প্রকৃতি পুড়ছে ঠিক তেমনই নিজের করা ভুল গুলোর জন্যে অনুতাপের আগুনে পুড়ছে পেখমের মন,,,,
– পেখম স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,, চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে,,,, তীয়া বাঁধা দিচ্ছে না,,, কাঁদুক আজ মেয়েটা,,, কেঁদে যদি একটু হালকা হয়,,,
– আমি এত বড় একটা ভুল কি করে করতে পারলাম বৌমনি?? আমি উনার ভালোবাসাকে কি করে অপমান করতে পারলাম??( অঝোরে কাঁদছে)
– এখন চুপ কর,,,পাশের ঘরে মা আছে,,,আমি চাইনা তোদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার কথা আর কেউ জানুক। ভুল যখন করেছিস সেই মানুষটার সাথে,,তখন ক্ষমা চাইবি তার কাছে,,, আমার বিশ্বাস দাদাভাই তোকে ক্ষমা করে দেবে,,,,এতটাও পাষাণ আমার দাদাভাই নয়,,
– আমি তার কাছে ক্ষমা চাইবো কি করে বৌমনি?? সেতো আমার ফোন রিসিভ করছে না,,টেক্সটের রিপ্লাই করছে না,,,
– করবে করবে,,,আচ্ছা সোহিনীর বিয়েতে আসছে না দাদাভাই??
– হ্যাঁ কেন??
– আরে বোকা মেয়ে,,তখন স্বামীর মান ভাঙাবি ,,,এবার যেন বলিস না কি করে ভাঙ্গাবি,,,(মুখ টিপে হেসে)
– হ্যাঁ তাই তো কি করে উনার রাগ মানে অভিমান ভাঙাবো বৌমনি??( চোখের জল মুছে)
– উফফফ ভগবান এই মেয়ের ঘটে কিছু নেই,, ঠিকই আছে দাদাভাই তোর উপরে রাগ করে আছে,,,
– ও বৌমনি বলো না,,, আচ্ছা আমি তোমার জন্যে কালকে ফুচকা আর চটপটি এনে দেবো ঝাল ঝাল করে,,,প্লিজ বলো,,,নাহলে কিন্তু আবার কাঁদবো,,,,(ঠোঁট ফুলিয়ে)
– ঠিক আছে এই দিকে আয়,,,তারপর তীয়া পেখমের কানে কানে বলে ****** যা শুনে পেখম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে বলে,,,
– এসব কি বলছো বৌমনি?? আমার ভাবলেই লজ্জা করছে,,,তার সামনে দাঁড়াবো কি করে?? না না আমি এসব পারবো না,,, ইশশশশ,,,,
– ইশশশ করছিস কেন,,,ঠিক আছে যা আমার কথা শুনতে হবে না,,, তুই যা পারিস তাই কর,,,তোদের সম্পর্কটাকে আরো জটিল কর,,,( রাগ করে বলে)
– তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?? আচ্ছা ঠিক আছে,,, তুমি যা বলবে তাই হবে,,,এখন চলো খাবে,,,,
– ঠিক আছে ধর আমাকে,,,তোদের চ্যাম্প এখন বেশ কষ্ট দেয় আমাকে,,, এক এক সময় এমন লাথি মারে,,জীবন চলে যাওয়ার মতো,,,,
– চ্যাম্প মাম্মা কে বেশি কষ্ট দিও না,,, আর শোনো তোমার এই পিপি+মিমি খুব ভালোবাসে তোমাকে,,,, তুমি শুধু একবার মার পেট থেকে বেরিয়ে এসো,,,তারপর দেখো এই পিপি+মিমি সব সময় তোমাকে নিয়ে রাখবে,,,আর শোনো পিসো+মামাই কে বকে দেবে আসলে ,,,সে আমাকে ভীষণ জ্বালায়,,,,( তীয়ার পেটে চুমু খেয়ে)
– এইই পেখু ও লাথি মেরেছে,,, দেখ পেখমের হাতটা পেটের মাঝে দিয়ে,,,
– এইই চ্যাম্প যেই মামার কথা বললাম ওমনি লাথি মারলি,,,আমার বোঝা হয়ে গেছে,, তুমি চাঁদু মামাই এর ভক্ত হবা,,,
-পেখমের কথা শুনে তীয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে,,,
__________________________________________
– সেইদিনের পর থেকে পেখম রোজ দিনে তিন থেকে চার করে আবিরকে ফোন করে,, কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা যে ওপাশের ফোন কেউ রিসিভ করে না,,,
– আজ সোহিনীর বিয়ে,,,পেখম সেই সন্ধ্যেবেলার থেকে সাজতে বসেছে,,, আজ ও আবিরের মনের মতো করে সাজবে,,,কচি কলাপাতা রঙের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সোনার চুড়ি,হার আর কানের দুল পড়েছে যেগুলো অনুপমা দিয়ে গিয়েছিল। শাশুড়ি আর বৌমাকে একি সাজে দেখে তো অশোক বাবু অনেকটা সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন ওদের দিকে তাকিয়ে,,,
– কি হলো কি??? এই ভাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছো কেন?? আগে আমাদের দেখোনি??(অনুপমা)
– না সত্যিই তো আগে তোমাদের দুজনকে এইভাবে দেখা হয়নি,,, দুজনেই একই ভাবে সেজেছো,,,তোমাদের দেখে কেউ বলবে না যে তোমরা শাশুড়ি বৌমা,,,বরং লোকে এটা বলবে এটা তোমার ছোট মেয়ে,,,,এসো তো তোমাদের দুজনের একটা ছবি তুলে দেয়,,,ফেসবুকে দেবো,,,(অশোক বাবু)
– শ্বশুরের কথা শুনে পেখম হেসে বলল,,পাপা তুমিও না পারো,,,চলো ছবি তুলি,,,তবে শুধু মা আর আমি না,,,আমাদের সাথে তোমাকেও তুলতে হবে,,,
– তোদের পাশে কি আমাকে মানাবে?? বলবে দেখ দেখ বুড়ো মানুষের দু পাশে দুটো যুবতী,,,(বলেই হেসে উঠলো আর তার সাথে যোগ দিলো অনুপমা আর পেখম)
_________________________________________
– কোনো কিছুর প্রতি বেশি প্রত্যাশা করলে সেই জিনিস টা হয়না,,,তখন সেই পরিস্থিতিতে মানুষের মনের মধ্যে কি চলে সেটা কেবল সেই মানুষটিই জানে,,পেখমেরো হয়েছে এখন তাই,কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,,
-সকাল থেকে বেশি এক্সাইটেড ছিল ও সোহিনীর বিয়েতে আসার জন্য। সোহিনীকে ভুল বুঝেছে সেই জন্যেও কিছুটা অপরাধবোধ কাজ করছিল ওর মনের মধ্যে,,, তাই তো এখানে এসেই আগে ও সোহিনীর কাছে যায়,,,তারপর সোহিনীকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে বলল,,
– তোমাকে খুব মিস করবো,,,তুমি করে বলছি বলে কিছু মনে করো না,,,,
– এমা ম্যাম আমি কিছু মনে করবো কেন,,আমি বরং এতে আনন্দ পেলাম যে আপনি আমাকে তুমি করে বলে নিজের কাছের মানুষের তালিকায় স্থান দিলেন,,,
– আমি তোমার থেকে অনেক ছোট,,, আমাকে ম্যাম বলে ডাকার দরকার নেই আর আপনি বলেও সম্বোধন করতে হবে না,,,নাম ধরে ডাকবে,,,
– ঠিক আছে পেখম,,,
– আচ্ছা সোহিনী তোমাদের স্যার আসেননি??
– না,,,রাজিব বললো যে স্যার আসতে পারবেন না,,,ওখানে কি সমস্যা হয়েছে তাই,,,আমি সকালে ফোন করে ছিলাম স্যারকে,,তখন তিনি রিসিভ করতে পারেননি,,, পরে অবশ্য ভিডিও কল করেছিলেন আমাকে,,,আর সরিও বলেছেন,,,,
– সোহিনীর কাছ থেকে এইসব শুনে পেখমের মনটা বিষাদে ভরে গেল,,, এখানে আর এক মুহূর্তের জন্যে ওর থাকতে ইচ্ছা করছে না,, কিন্তু সেটা মামনি আর পাপাকেও বলতে পারছে না,,,অগত্যা ওদের সাথেই থাকতে হলো।
– পেখমরা বেশ অনেক রাত করেই বাড়ি ফিরেছে,,,,মামনি আর পাপার সাথে কথা বলে পেখম নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়,,,তারপর ফোনটা নিয়ে একটা টেক্সট করে আবিরকে,,, তারপর ফোনটা থেকে আবিরের একটা ছবি বার করে বুকের মধ্যে নিয়ে খুব কাঁদে,,, এতটা কষ্ট ও আর সহ্য করতে পারছে না,,,,
– কবে আসবেন আপনি আমার কাছে?? কবে নেবেন আমাকে আপন করে,, কবে এই শাস্তির মেয়াদ শেষ হবে??? প্লিজ আপনি ফিরে আসুন,,,আমি যে এই বিরহ সহ্য করতে পারছি না,,,,
___________________________________________
– আবির ল্যাপটপে অফিসের কিছু ডকুমেন্ট চেক করছিল,, হঠাৎ ফোনে ম্যাসেজ টোন শুনে ফোনের দিকে তাকায়,,আর সাথে সাথে ফোনের আলোয় দেখতে পাই হৃদয়হরণী সেন্ড ইউ অ্যা ম্যাসেজ,,, আবির কিছুক্ষণ ওই ভাবেই তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে যতক্ষণ না ফোনের আলোটা নিভে যায়,,,আবির ল্যাপটপ টা বন্ধ করে রেখে দেয়,,,তারপর ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়,,,
– বাইরের আবহাওয়া ঠান্ডা,,, থেকে থেকে শীতল বাতাস বইছে,,, ব্যাঙ্গালোরের ওয়েদার সর্বদাই এইরকম,,, কখনো মেঘ,কখনো বৃষ্টি,,, আবার কখনো গরম তো কখনো ঠান্ডা,,, প্রায় প্রতি নিয়ত একবার করে হলেও বৃষ্টি হবেই হবে,,,পেখমের আবার এইরকম ওয়েদার খুব ভালো লাগে,,, আবিরের তো ইচ্ছা করে বৌটাকে এখানে এনে রাখতে,,,তারপর এইরকম ওয়েদারে রাতে একই ব্ল্যাকেটের মধ্যে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দৃষ্টি বিনিময় করা,,,কিন্তু সেসব যে এত সহজে হবে না,, সেটা সে জানে,,,,এইসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা অন করে ম্যাসেজটা ওপেন করলো,,,
– “খুব জানতে ইচ্ছে করছে সে কি করে এতটা নির্দয় হতে পারে?? এখন আর সে তার প্রেয়সীর চোখে জল এলেও মুছে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। এখন আর সে তার রাত-প্রেয়সীর মুখটা দেখার জন্য ছটফট করে না। একটিবারের জন্য হলেও সে এখন আর ব্যাঙ্গালোর থেকেই কলকাতায় ছুটে আসে না,,,, কিন্তু আমি চাই সে আসুক,,হ্যাঁ আসুক,,, এসে দেখে যাক তার জন্য এই অপেক্ষায় রত প্রিয়াকে,,,,হ্যাঁ তার প্রেয়সী অপেক্ষা করবে,,,,তাকে তো আসতে হবে,,,, আসতেই হবে তার প্রিয়তমার অপেক্ষার অবসান ঘটানোর জন্য হলেও তাকে আসতে হবে।সে তার প্রেয়সীকে ভালোবাসার আগুনে পুড়াতে চাইছে তো,,,ঠিক আছে সেই আগুনে পুড়ে দগ্ধ হতেও রাজি আছে সেই অপেক্ষারত প্রিয়া,,, কিন্তু সে এটা জানে না এই বিরহের আগুনে পুড়ে খাটি সোনার মতো ভালোবাসার পবিত্রতা গভীর হয়,,,,আর সেই পবিত্রতার গভীরতা এতটাই প্রখর হয় যে তার টানে তাকে আসতে বাধ্য হতেই হবে,, হমম হতেই হবে,,,এক পশলা বৃষ্টি হয়ে তাকে এই প্রিয়ার কাছে ধরা দিতেই হবে”।
– আবির ম্যাসেজের দিকে এখনো তাকিয়ে আছে,,, ঠিক মতো বোধগম্য না হওয়ার জন্যে সে আরও একবার ম্যাসেজ টা পড়ে বলে ওঠে” তবে কি সে সব জেনে গেছে,,,,জেনেই যদি যায় তাহলে তো এত সহজে তার কাছে আমি ধরা দেব না।এতদিন আমি পুড়েছি,, আজ থেকে নাহয় তুই একটু দহন সহ্য কর,,আমিও তো দেখতে চাই মিসেস আবির চৌধুরীর সহ্য ক্ষমতা কতটা?? আমার থেকে বেশি না কম,,,,,তারপর ফোন থেকে একটা পাখির ছবি বার করে তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
– “সে কি জানে দীর্ঘ নয় বছর আমি তার ভালোবাসার আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়েছি। তার ওই চোখে ল্যাপ্টানো কাজলে পুড়েছি বারংবার,,,, পুড়েছি তার ঝঙ্কার তোলা হাসিতে,,,আবার পুড়েছি তার ঘুমন্ত মায়াবী ওই মুখে,,,, তার সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে পবিত্র স্পর্শ পেয়ে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছি,,,,তার ভালোবাসার আগুনের দহন ক্রিয়ায় তো দগ্ধ হয়েছি আমি প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে,,, সে কি তার হিসেব রেখেছে???
___________________________________________
– দুপুরের অবসর সময়ে অনুপমা ব্যস্ত তার সিরিয়াল গুলো দেখার জন্য,,, এমন সময় পাখি এসে অনুপমার কোলে মাথা রেখে সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে,,,তারপর একপাশ ফিরে অনুপমার কোমড় জড়িয়ে কোলের মধ্যে মুখ গুজে দেয়,,,পেখমের এইরূপ কান্ডে অনুপমা হেসে টিভি অফ করে দেয় তারপর পেখমের মাথায় হাত রাখে,,,,
– কি হয়েছে?? এইভাবে সোফায় এসে আমাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লি,,,শরীর ঠিক আছে তো?? নাকি আবার আমার গুণধর ছেলের সাথে ঝগড়া করেছিস??( মাথায় বিলি কাটতে কাটতে কথাটা বললো অনুপমা)
– হমমম ঝগড়া,,,,সেইদিনের পর থেকে আজ প্রায় একমাস হয়ে গেল আমি তার সাথে যোগাযোগ করিনি আর না সেও করেছে,,,,(মনে মনে)
– কি হলো চুপ করে আছিস কেন??? বল,,,,
– মামনি এমনি কিছু ভালো লাগছে না তাই,,,,
– এখুনি তোর মন ভালো হয়ে যাবে,,, আবির তোর পছন্দের মিষ্টি দই অর্ডার করেছে, যে দোকান থেকে তুই খাস,সেখান থেকে তাও আবার দশ কেজি,,,, তুই ভাব ছেলেটা কত পাগল তোর জন্য,,,
– মামনি আজ সন্ধ্যের ফ্লাইটে আমি ব্যাঙ্গালোরে যেতে চাই তার ব্যবস্থা করে দেবে প্লিজ
– এই কি হয়েছে রে?? দুজনের মধ্যে মান- অভিমান চলছে নাকি,,,সেটা ফোন করে আজকাল বাবা- মার খোঁঝ না নিয়ে বৌ এর খোঁজ নেয়,,,
– কি বলছো কি মামনি?? কি বলে তোমার ছেলে?? ও মামনি বলো,,,
– এই তো তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিস কিনা,,,কোচিং সেন্টারে নিয়মিত যাচ্ছিস কিনা,,,ঠিক মতো ঘুমাচ্ছিস কিনা,,,আমি যেন একটু তোর খেয়াল রাখি,,,
– ও তাহলে উনি তলে তলে আমার খোঁজ নেয়,আবার আমার পছন্দের দই পাঠায়,,(মনে মনে)
– ওই আবার কি ভাবছিস,,, আচ্ছা ব্যাঙ্গালোরে একা কেন যাবি??আবিরের মান ভাঙ্গাতে নাকি কালকে ওর জন্মদিন তাই যাবি??
– দুটোই মামনি,,,,
– ভালো কথা আবিরের জন্মদিনের ঠিক কুড়িদিনের মাথায় তোর জন্মদিন না,,,তুই এক কাজ কর ******
___________________________________________
– আবিরের অফিস থেকে আজকে আসতে একটু বেশি দেরি হয়েছে,,,কারণ এখানকার যে সমস্যা গুলো ছিল ও আর রাজিব মিলে তা সমাধান করে দিয়েছে,,,, প্রজেক্ট গুলোও হাতে পেয়েছে,,,, তাই ও ঠিক করেছিলো ওর জীবনের বিশেষ দিনটা মা আর পাখির সাথে কাটাবে,,,তবে পাখির সামনে গম্ভীর হয়ে থাকবে,,,,যেহেতু কালকে চলে যাবে কলকাতায় সেহেতু আজ সব কিছু ম্যানেজার কে বোঝাতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল,,,,
– চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে আবার দরজা লক করে আবির। তারপর সোফার উপর অফিসের ব্যাগটা রেখে হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকে,,,,কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবির ফ্রেশ হওয়ার জন্য বেডরুমে চলে গেল,, তারপর ঘরের মৃদু আলো জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,,,,
– প্রায় এক ঘন্টা মত শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় আবির। আর বেরিয়ে ও অবাক হয়ে চারদিকে তাকায়,,, দেখে ঘরের মৃদু আলোর বদলে রয়েছে ছোট ছোট লাল নীল মোমবাতি আর মরিচ বাতি,,,,বিছানার উপর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো,,,, ঘরের সেন্টার টেবিলের উপর একটা কেক রাখা আছে,,,আর তার উপর জ্বলজ্বল করছে একটি লেখা ,,,,আর তা হল- শুভ জন্মদিন মিস্টার চৌধুরী,,,,
– আবির কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,,তারপর ও ভাবতে থাকে ওর ফ্ল্যাটের চাবি কেবল মাত্র ওর কাছেই থাকে,,, তাহলে এত কিছু করলো কে?? আর ফ্ল্যাটেই বা কি করে ঢুকলো,,,এইসব কিছু ভেবেই চলেছে আবির,,,আর ঠিক সেই সময় ওর কানে ভেসে আসে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর,,,
-Chaahe kuchh na kehna
Bhale chup tu rehna
Mujhe hai pata
Tere pyaar ka
Khamosh chehra
Aankhon pe pehra
Khud hai gawah
Tere pyar ka
Chaahe kuchh na kehna
Bhale chup tu rehna
Mujhe hai pata
Tere pyaar ka
Khamosh chehra
Aankhon pe pehra
Khud hai gawah
Tere pyar ka
চলবে,,,,,,,,
( #হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ৩০
– সারা ঘরময় জুড়ে মৃদু আলো আর গোলাপের গন্ধে ভরপুর,,, থেকে থেকে শীতল বাতাস ব্যালকনির পর্দা গুলোকে উড়িয়ে দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছে,,,যা ওই মৃদু আলো গুলোকে নিভু নিভু করতে প্রস্তুত,, আবার বাতাসের বেগ কমে এলে আলোর শিখা গুলো বড়ো হয়ে ওঠে,,,,বাইরে শীতল বাতাসের সাথে সঙ্গ দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দেখাও মেলে,,,সেই সাথে মেয়েলি কন্ঠস্বরও আবিরের হৃদয়ের গহীনে গিয়ে আঘাত করে,,,
– কন্ঠস্বর টা যে ব্যালকনির দিক থেকে আসছে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না আবিরের। মুহূর্তেই সেই মায়াবী কন্ঠস্বরের অধিকারিণী কে দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগে ওঠে আবিরের,,,হাতের তোয়ালে টা ওয়াশরুমের স্ট্যান্ডে রেখে বেরিয়ে এসে,দ্রুত পায়েই ব্যালকনির দিকে যায় ও,,,ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে পঞ্চাশ,,আবির ব্যালকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অবাক হয়ে চেয়ে থাকে,,,,
– আবিরের মনে হচ্ছে পৃথিবী যেন থমকে গেছে,,,, ও যেন কোনো মায়াপুরী তে দাঁড়িয়ে আছে,,, আর ওর সামনে কোনো মায়াবী মানবী দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জল নিয়ে খেলছে,,,পড়নে তার সেই জর্জেটের কালো পারের লাল শাড়ি,,,, কালো স্লিভলেস ব্লাউজ,,,খোলা চুল গুলো বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে,,,,গাঢ় লাল লিপস্টিকের দ্বারা আবৃত অধরযুগলে লেগে আছে মৃদু হাসি,,,বৃষ্টির ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে হাতের লাল- কালো চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ চারেদিকে বারি খাচ্ছে,,,,মুহূর্তেই আবির প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্যের সাথে তাল মিলিয়ে আবিষ্কার করলো তার সামনে এক বাদল কন্যা দাঁড়িয়ে আছে।
– আর যখন সেই বাদল কন্যা ওর দিকে ফিরে এগিয়ে আসতে লাগলো তখন ,কানের ওই ঝুমকোর সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো গোল্ডেন স্টোনের সেই নুপূর জোড়া,,,,,গাঢ় কাজল দেওয়া চোখে যেন কত অভিমান আর একরাশ জল,,,পলক ফেললেই যেন ওই চোখ দিয়ে মুক্তধারা ঝড়ে পড়বে,,,,আবির হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে সেই মানবীর দিকে হঠাৎ ও উপলব্ধি করলো বুকের বাঁ পাশে থাকা হৃদয়ের গতিবেগ টা যেন মুহূর্তেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে,,,, চোখটাকে সংযত করার চেষ্টা চালালেও পাড়ছে না,,,,
-নিজের মনের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যস্ত যখন আবির,ঠিক তখনই ও উপলব্ধি করলো ওকে কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা দিয়ে আছে,,,কিছুক্ষণ বাদে এটাও আবিষ্কার করলো যে টিশার্ট টা ভিজে উঠেছে সেখানে,, ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ঘড়ির কাঁটা যখন ঠিক বারোটার ঘরে ছুঁই ছুঁই, তখন রিনরিনে কন্ঠস্বর আবিরের শ্রবণ যন্ত্রে গিয়ে ধাক্কা খায়,,,,মুহুর্তের মধ্যে শ্রবণশক্তি দৃঢ় হলো,,, মস্তিষ্কের নিউরন গুলো সজাগ হলো,,,কন্ঠস্বরটির অধিকারিণী আবার বলে ওঠে,,,
– “শুভ জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো আপনার জন্য,,,”
– আবির কোনো প্রত্যুত্তর করলো না,,, শুধু নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,,ওর এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে যে পেখম ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,, হমমম হুহুউউ শুধু সামনে নয় বরং ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে,,,,
– আমি আপনাকে খুব মিস করেছি,আপনি জানেন,,,, আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে এই কদিন,,, মানছি আমি, সেইদিন আপনার সাথে ওই রকম ব্যবহার করা উচিত হয়নি আমার,,,আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,,, কিন্তু আমি,,,
– পেখমের শেষের কথাটা শুনে আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে,,,পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে ও পেখমকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়,,,, আবিরের এইরূপ আচরণে পেখম কষ্ট পায়,,,তবুও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,,,
– আপনি এভাবে কেন,,,( পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে আবির বলে ওঠে,,)
– তুমি এখানে কেন?? কিভাবে এলে?? ( গম্ভীর হয়ে)
– পেখম আবিরের কন্ঠস্বর শুনেই ভয় পেয়ে যায়,,, তবুও নিজেকে সামলে ধিরে ধিরে বলে,,” বিকেলের ফ্লাইটে এসেছি”।
– তুমি বিকেলে এসেছো??,,,,কে দিয়ে গেল?? আর কলকাতা থেকে এখানে এলে কেন???
– আবিরের কথায় রাগ রয়েছে সেটা সম্পূর্ণ প্রকাশ পাচ্ছে,,,পেখম আমতা আমতা করে বলে,,,আমি একাই এসেছি,,,তারপর আপনার ড্রাইভার কে ফোন করতেই উনি আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয়,,,
– বাহ আজকাল আমার অগোচরে এত কিছু হচ্ছে আর আমি নিজেই জানতে পারছি না,,,, ভালো তবে তুমি এতটাও বড়ো হয়ে যাও নি যে কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে চলে আসবে আর আমি সেটা স্পেয়ার করবো,,এটা নিয়ে আমি মার সাথে পরে কথা বলে নেবো ,,, তা এত দিনে তো একবারের জন্যেও ব্যাঙ্গালোরে আসার প্রয়োজন পড়েনি,, তা আজ কেন প্রয়োজন হলো???( টাউজারের পকেটে হাত রেখে)
– আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেন আমার সাথে?? আমার কষ্ট হচ্ছে,,,, একটু ভালো করে কথা বলুন না,,(ছলছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে)
– তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে খারাপ ভাবে কথা বলছি??? আমার কিন্তু সেটা একবারের জন্য হলেও মনে হচ্ছে না,,,, আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি,, তাই তোমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করছি হঠাৎ করেই এত কি প্রয়োজন হল যে তুমি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে চলে এলে তাও আবার এই চরিত্রহীন মানুষটির কাছে???
– আবিরের প্রশ্নে পেখমের হৃদয় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,,,মানুষটাকে চরিত্রহীন কি করে বলেছিলো সেইদিন ও,,,কতটা কষ্ট পেয়েছিল সেইদিন এই মানুষটি,,, না না ওর শাস্তি প্রয়োজন,,,
– কি হল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও,,,আর তুমি যদি মনে কর এইভাবেই চুপ করে থাকবে,,,সুতরাং আমার কিছু বলার নেই,,, তুমি আমাকে মানুষ বলে গণ্য না করতেও পারো,,অযথা এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না,,,অনেক রাত হয়েছে আমি ঘুমাবো,,, চাইলে তুমি এই ঘরে শুতে পারো নয়তো,,
– নয়তো কি???( চোখের জল মুছে,,,)
– নয়তো পাশে আরো একটা বেডরুম আছে,,,ওখানে থাকতে পারো ( কথা গুলো বলেই ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়)
– পারলে আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,,,আমি অন্যায় করেছি,,,সেই দিন আপনার সাথে ,,,
– পাখিকে বলতে না দিয়ে আবির পিছন ফিরেই বলে,,,ক্ষমার কথা আসছে কোথা থেকে পাখি?? তারপর পাখির দিকে ফিরে, পাখির চোখে চোখ রেখে বলে,,তুমি তো ক্ষমা চাওয়ার মতো এমন কিছু করোনি,,,কি করেছো এমন কিছু???( শান্ত ভাবে কথাটা বলে)
– আবিরের কথা শুনে পেখম ওখানেই কেঁদে দেয়,,,,
– একদম কাঁদবে না,,,জানো তো আমি তোমার ওই চোখের জল পছন্দ করি না,,, এখন যাও অনেক রাত হয়েছে,, আমি ভীষণ ক্লান্ত,, ঘুমাবো আর তুমি তো জানো আমি সবকিছু সময় মতো করতে পছন্দ করি,,,( কথা গুলো বলেই আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ঘরে চলে আসে আবির)
_________________________________________
– মোমবাতির মোম গুলো গলে জমাট বেঁধে আছে,,,ছোট ছোট বাতি গুলো সেই কখন নিভে গেছে,,,ঘরে শুধু মরিচ বাতি গুলোই জ্বলছে আর তার সাথে জ্বলছে দুটি হৃদয়,,,,
– আমি তো চেয়েছিলাম তোমাকে জড়িয়ে ধরতে,,,কিন্তু এই হাত দুটো কিছুতেই তোমাকে জড়িয়ে ধরতে দেয় নি,, আমি তো চেয়েছিলাম তোমার ওই চোখের জল নিজের অধর দিয়ে মুছিয়ে দিতে কিন্তু আমি তা পারিনি,, হয়তো আজ ভালোবাসার থেকে অভিমান টা জিতে গেল আমার কাছে,,,আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি,,,কিন্তু এই মন বলছে তোমাকে বোঝাতে হবে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয়,,,,( চোখের উপর বাহু দিয়ে কথা গুলো আবির মনে মনে ভাব
– ঘড়ির কাটা যখন একটা ছুঁই ছুঁই তখন আবির দেখে পেখম ঘরে আসেনি,,, বাইরে তখন ধুম বৃষ্টি হচ্ছে,,, কিছু একটা ভেবে ও বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যালকনির দিকে যায়,, আর গিয়ে দেখে পেখম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চোখের জল মুছছে,,,
– না এই মেয়েটাকে আমি হাজার চাইলেও কষ্ট দিতে পারবো না,,, বরং তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পাবো,,এইসব কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে পেখমের খুব কাছে চলে যায় ও বুঝতে পারে না,,, তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে বলে,,,
– ” একান্তই যদি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করে,, তাহলে কলকাতাতে গিয়ে ভিজো,,,এখানে ভিজে অসুস্থ হলে কে সেবা করবে?? (রাশভারী গলায়)
– আবিরের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে পেখম ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,,,আর ভিজবো না,,চলে যাচ্ছি আমি,,,তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন প্লিজ,
– হমম বলো( গম্ভীর হয়ে)
– একবার কেকটা একটু কাটবেন,,, আমি অনেক কষ্ট করে এনেছি,,,নাহলে নষ্ট হয়ে যাবে,,,,একটু যদি সময় হয় আপনার প্লিজ,,,,
– পেখমের এইরকম আবদারে আবির না বলতে পারে নি,,, তাই মুখে কিছু না বলে ঘরের দিকে গেল,,,তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো,,,” কেকটা কি আমি একা একা কাটবো”??
– আবিরের কথা শুনেই পেখম দ্রুত ঘরে আসে,,,তারপর আবিরের উদ্দেশ্যে বলে আপনার ফোনটা একটু দেবেন???
– কেন ফোন নিয়ে কি করবে??
– আসলে আমার ফোনটা কিচেনে,,,মামনি বলেছিল আপনার কেক কাটার ছবি পাঠাতে,,,
– ও ঠিক আছে নাও,,,তারপর আবিরের কেক কাটার কয়েকটা ছবি ক্লিক করে পেখম,,,, ফোনটা আবিরের কাছে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে নিলে আবির জিজ্ঞাসা করে ,,,”কোথায় যাচ্ছো??
– পাশের ঘরে,,,
– চাইলে এখানে শুয়ে পড়তে পারো,,,,
– সরি ,আমি চাইনা আমার জন্য আর কোনো অসুবিধা হোক আপনার,,,, এমনিতেই আমি বুঝতে পেরেছি এইভাবে এসে আপনাকে সারপ্রাইস দেওয়া আপনার সেটা ভালো লাগেনি,,,বরং বিরক্তির কারণ হয়েছি,,,সরি আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি আপনার মনে আমার জন্য কোনো ,,,আর বলতে পারে না কান্নার জন্যে,,, তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে ও,,তারপর দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে,,,,হঠাৎ কি মনে করে ওয়াশরুমে চলে যায় পেখম তারপর মাথার উপরে শাওয়ার টা ছেড়ে তার তলায় বসে পড়ে,,, কিছু সময় পরে চোখের জল শাওয়ারের জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়,,,,,
– এদিকে আবির নিজেও কষ্ট পাচ্ছে,,, শেষ পর্যন্ত না পেরে উঠে চলে যায় পাশের ঘরে,,, দরজা বন্ধ দেখে নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খোলে,,,,তারপর যখন দেখে ঘরে কোথাও পেখম নেয় তখন পাগল প্রায় হয়ে পাখি পাখি বলে চিৎকার করে ডাকে,,, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না,,, হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে জলের আওয়াজ কানে আসতেই আবির সেদিকে যায়,,,দরজা খোলা থাকার দরুন ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে দেখে পাখি অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে,,, ও সাথে সাথেই পাঁজাকোলা করে নিজের ঘরে নিয়ে আসে,,,তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পেখমকে ডাকতে থাকে,,,,
– পাখি প্লিজ চোখ খোলো,,,আমার ভুল হয়ে গেছে,,, সরি সোনা পাখি,,,চোখ খোলো,,,চোখে মুখে বারি দিয়ে,, তারপর জলের ছিটা দিয়ে নানান কথা বলতে থাকে,,,হঠাৎ পাখিকে চোখ পিটপিট করতে দেখে আবির ওর মুখটা আজলা করে ধরে বলে,,,
– সরি,,,প্লিজ চোখ খোলো,,,আর কোনোদিন এমন হবে না পাখি,,, প্লিজ চোখ খোলো,,,পাখি ধিরে ধিরে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকাতেই আবির ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,,, আর তাই দেখে পেখম আবিরের বুকে মাথা রেখে জোড়ে জোড়ে কেঁদে দেয়,,,কাঁদার এমন এক পর্যায়ে এসে তখন শুধু হেঁচকি তুলছে,,,আবির তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস জল এনে পাখিকে খাইয়ে দেয়,,,,তারপর বলে,,,
– আমি কিন্তু এইসব বাচ্চামো একদম পছন্দ করি না পাখি,,,কি হত এখন যদি আমি ওইঘরে না যেতাম,,, মানে আমি কিছু বললেই রাগ দেখাতে হবে???
– আমি তো রাগ দেখায়নি,,,
– তবে ওইভাবে কেন ছিলে??? কেন ভিজে জ্ঞান হারিয়ে ছিলে??
– নিজেকে শাস্তি দিতে,,,( মাথা নিচু করে)
– নিজেকে কেন শাস্তি দিতে চাও???বলো কেন??? তুমি জানো না তোমার একটু কিছু হলে আমার উপর দিয়ে কি যায়??? জানো না ??
– আমার কিছু হলে তাতে আপনার কি??
– তুমি সত্যিই নির্বোধ পাখি,,, নাহলে এতদিনে এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক জানতে,,,
– কখনো কখনো উত্তর জানা থাকলেও সেটা প্রিয় মানুষটির মুখে শুনতে ভালো লাগে,,,
– যদি বলি ভালোবাসি তোমাকে,, বিশ্বাস করবে ?? নাকি সেই দিনের বলা মুখের কথাকে বিশ্বাস করে আজকের বলা কথাগুলোকে অবিশ্বাস করবে????
– ওই একভুল আপনার এই রাত-প্রেয়সী আর করছে না,,, বলেই আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করে দেয়,,,তারপর বলে আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন,, আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি,,সন্দেহ করেছি,,আপনার ভালোবাসাকে অপমান করেছি,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি,,,,ভীষণ ভালোবাসি,,,আপনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয় আমার,,, দম বন্ধ হয়ে আসে,,,কেন আপনি এত গুলো দিন এখানে থাকলেন আমাকে ছেড়ে??? জানেন আমার কত কষ্ট হয়েছে???
– কষ্ট কি শুধুমাত্র তুমি পেয়েছো??আমি পাইনি?? তোমার থেকে দ্বিগুণ কষ্টে আমি ছিলাম পাখি,,,,খুব ভালোবাসি তোমায় আমি,,, আর কোনো দিন কষ্ট দেবো না তোমাকে,,, সরি,,(বুকের থেকে পাখিকে সরিয়ে আজলা করে মুখটা ধরে কপালে অধর ছোঁয়ালো আবির,,,তারপর চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,)
– জানোনা তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না,,, যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো,,,দেখো বিছানা ভিজে গেছে,,,,
– সরি আমি এক্ষুনি যাচ্ছি,,,( বলেই পাখি উঠে চলে যেতে নিলেই আবির ওর হাত ধরে বলে)
– এই দাঁড়াও দাঁড়াও ,,,তুমি এই শাড়িটা কোথায় পেলে??? তারপর কিছু একটা চিন্তা করে বললো ,,,তুমি আমার ডাইরি পড়েছো কেন পাখি??? জানো না কারোর অনুমতি না নিয়ে তার ব্যক্তিগত জিনিস স্পর্শ করতে নেই???(গম্ভীর হয়ে)
– হঠাৎ আবিরের এইরুপ কন্ঠস্বরে পেখম ভয় পেয়ে যায়,,, তারপর মাথা নিচু করে ফেলে,,,তাই দেখে আবির বলে ওঠে” কোনো ব্যাপার না ,,,তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী,, মানে আমার যা কিছু আছে তার উপরে আমার ঠিক যতটা অধিকার আছে,, ঠিক ততটাই তোমারো আছে,,,,বলেই পেখম কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,,,,আবিরের স্পর্শ পেয়ে পেখম কেঁপে ওঠে,,, তারপর খুব ধিরে বললো,,,
– আমার শরীর পুরো ভিজে,,,আপনি ভিজে যাবেন,,, আমাকে একটু সময় দিন,, আমি এই শাড়িটা পাল্টে আসছি,,,
– পাখি এই শাড়িটা আমি তোমাকে কখন পড়তে দিতাম বলোতো,,,যখন আমি তোমাকে নিজের ব্যক্তিগত ভাবে কাছে পেতাম,,,আর আজ তুমি কিন্তু এই শাড়িটা নিজে থেকে পড়েছো,,,(শান্ত স্বরে)
– আবিরের কথায় পেখম লজ্জায় লাল হয়ে যায়,,,হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ও কোনো মতে নিজেকে সামলে বলে আমাকে যেতে দিন,,,( কিন্তু আবির ছাড়ে না বরং আরো বেশি করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,,)
– আমার জন্মদিনের উপহার কোথায় পাখি?? আমি আমার এই জন্মদিনে সবথেকে সেরা উপহারটা চাইছি তোমার কাছে,,, (শাড়ির আঁচলের ফাঁক দিয়ে পাখির মেদহীন পেটে স্লাইড করতে থাকে,,,)
– পাখি কিছু না বলে শাড়ির আঁচল খামছে ধরে ,,,চোখ মুখ বন্ধ করে থাকে,,,,ওর এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে লজ্জায় মরে যাবে,,,মুখ কান গরম হয়ে যাচ্ছে আবিরের প্রত্যেকটা নিশ্বাসের বারিতে,,,,পেখমের এইরূপ অবস্থা দেখে আবির ঠোঁট কামড়ে হাসে,,,তারপর খুবই শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,,,
– ” সে কি দেবে অনুমতি তাকে নিজের করে কাছে পাওয়ার?? সে কি দেবে অনুমতি তাকে এই আবির চৌধুরীর অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার??? সে কি দেবে অনুমতি তাকে নিজের ভালোবাসার আদরে চাদরে মুড়িয়ে দেওয়ার??? সে কি দেবে অনুমতি তার ওই অধরযুগল যার দ্বারা আবৃত তাকে ঘেটে দেওয়ার??সে কি দেবে অনুমতি আমাদের শরীরে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেওয়ার?? সে কি দেবে অনুমতি তার ওই মুখশ্রীতে লজ্জার আবরণ আনার”???
– এতক্ষণ আবিরের কথা গুলো শ্রবণ হতেই পেখমের বলতে ইচ্ছে করছে এই মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর ও টুকুস করে মাটির মধ্যে ঢুকে যাক লজ্জা নিবারণ করার জন্য,,,আবার পরমুহূর্তেই আবিরের জন্য খুব গর্ববোধ হতে লাগলো,,,ওর মনে আবিরের জায়গাটা আরো বেশি সম্মানের লাগলো,,,মানুষ টা ওর কাছ থেকে এতদিনে জোড় করে হোক বা অন্য ভাবেই হোক ঠিক স্বামীর অধিকার আদায় করে নিতে পারতো,,,কিন্তু না তিনি তা করেননি,, বরং আজ এতগুলো দিন পর যখন দুজন দুজনকে ভালোবাসে জানে এবং সেটা জেনেও উনি এখন অনুমতি চাইছেন,,, কি করে ফিরিয়ে দেবে ও এমন মানুষকে,,, পেখম মুখে কিছু না বলে আবিরের দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,,,,বুকে মুখ গুজে দেয় লজ্জায়,,,
– আবির ওর উত্তর পেয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,,,” মৌনতা সম্মতির লক্ষণ”। তারপর পাখিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার শুইয়ে দেয়,,আস্তে আস্তে সব অলংকার খুলে দেয় পাখির,, তার শরীরে লেপ্টে থাকা ভিজে শাড়িটা খুলতেই পেখম ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, আবির পাশের বেডল্যাম্পটা বন্ধ করে দেয়,,,শুরু হয় ভালোবাসার নতুন অধ্যায়,,,,আর সেই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে আনন্দে ধরণীতে নৃত্য করে প্রকৃতির বারিধারা,,,,,
চলবে,,,,,,