#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১৩
-তুই ভিজেছিস কেন??
-আর বোলো না মা,,,পাখিকে ডাকতে গিয়ে দেখি ও ভিজছে বৃষ্টিতে,, ওকে টেনে আনতে গিয়ে আমিও ভিজে গেলাম।
-ওওও ওই জন্যে একটু আগে পেখমকে দেখলাম ভিজে দৌড়ে চলে গেল চেঞ্জ করতে,,,ওর একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়,,,এক কাজ কর কফিটা নিয়ে যা ,,,দুজনে খেয়ে নিস,,ওর কিন্তু পরীক্ষা চলছে,,এই সময় ঠান্ডা লেগে জ্বর আসলে আর এক কান্ড হবে,,,(বলেই অনুপমা আবিরকে দুকাপ কফি দিয়ে বললেন,,)
-শোন তুই আগে গিয়ে চেঞ্জ করবি,,এই অসময়ে ভেজার জন্যে কিন্তু আবার মাথা ব্যথা করবে,,,যা এখন,,
-ঠিক আছে মা,,,এত চিন্তা করতে হবে না। (বলেই কফির ট্রে টা নিয়ে নিজের ঘরের দিকে গেল)
________________________________________
-পুরো ভিজে যাওয়ার ফলে পেখম বাধ্য হয়েই আবিরের ওয়াশরুমে যায় চেঞ্জ করতে কেননা ওর জামাকাপড় সব আবিরের ঘরেই ছিল,,, ও ভেবেছিল বৌমনির ঘরে যাবে কিন্তু তাতে আবার চারিদিকে জল জল হয়ে যাবে,,,বেশ অনেকক্ষণ শাওয়ার নেওয়ার পর একটা নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে বের হয় পেখম,,,
-ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে ,হাত দুটো পকেটে গুজে,,,ও কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই, আবির ওর হাত ধরে ফেলে,,,তারপর পেখমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,,
-“পাখি কোথায় যাচ্ছিস”??
-,,,,,,,(নিশ্চুপ)
-কি হল আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি তো?? আমাকে এভয়েড করার কারণ কি??(গম্ভীর হয়ে )
-আবিরের এই গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে পেখম মনে মনে খুব ভয় পেল,কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ না করে বলল” আমি আপনাকে এভয়েড কেন করতে যাবো আবির দা”??
-আমার প্রশ্নের পিঠে কেউ পাল্টা প্রশ্ন করুক সেটা আমি পছন্দ করি না,,,
-তাতে আমার কি?? আমারও তো অনেক কিছু পছন্দ হয় না, তবুও তো সহ্য করি,,সব কিছু মেনে নি,,,
-কি সহ্য করো ,,,আর এই রকম ব্যবহারের কারণ কি??
-সেটা আপনাকে আমি বলতে বাধ্য নই,,হাত ছাড়ুন আবির দা,,(হাতের দিকে তাকিয়ে)
-এবার আর সহ্য করতে পারলো না আবির,,বেশ জোড়েই চিৎকার করে বলে ওঠে” আলবাদ উত্তর দিতে বাধ্য তুমি পাখি,,,আমাকে বেশি উত্তেজিত করে তুলো না,,আমার প্রশ্নের উত্তর দাও,,,
-কে আপনি??
-মানে??(প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে পেখমের দিকে)
-মানে টা খুব পরিষ্কার আবির দা,,কে আপনি?? আমি কেন আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো?? আপনিও বা কেন এত প্রশ্ন করবেন আমাকে?? আমার কে হন আপনি?? বা আমি আপনার কে??(আবিরের চোখে চোখ রেখে কথা গুলো বলে পেখম,, তারপর চোখের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিয়ে যায়)
-পেখমের প্রশ্ন গুলো শুনে আবির মনে মনে ব্যথিত হয়,,মেয়েটা কি এখনো বোঝে না আবির কে ওর,,বা ও আবিরের কে,,,এইসব ভেবে আবির অন্তত গম্ভীর হয়ে পেখমের হাত ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে চলে যাওয়ার জন্য উদ্দত হয়,,,ঠিক দরজা পর্যন্ত গিয়ে পিছন ফিরে পেখমের দিকে তাকিয়ে বলে,,
-“তাকে আমি কখনোই বলবো না আমি তার কে? বা সে আমার কে? এই প্রশ্নের উত্তর তাকেই উপলব্ধি করতে হবে,,, আর যেদিন সে উপলব্ধি করতে পারবে,সেইদিন সে আমাকে কখনোই আর প্রশ্ন করবে না আমি তার কে? বা সে আমার কে”??
-কথা গুলো বলেই আবির ফিরে ব্যালকনিতে চলে যায়,, পেখম কিছুক্ষণ ঐ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে,,তারপর নীচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখে টেবিলের উপর দুটো কফির মগ ঢাকা দেওয়া আছে,,ও মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে কফি মগটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়,,,
-ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে আবির রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। আর বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে ওকে,, ও ব্যালকনির সেন্টার টেবিলের ওপর কফির মগটা সশব্দে রেখে দিল। তারপর কিছুক্ষণ ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো,,,আবির ওর উপস্থিতি টের পেয়ে বলল,,
-কিছু বলবি? এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস,,,
-আসলে সরি আবির দা তখন কথা গুলো ওই ভাবে বলতে চাইনি।
-ঠিক আছে এখন যা,,
-আপনি একটু আগেও ভিজেছেন,,এখন আবার ভিজছেন,,,ঠান্ডা লেগে যাবে,, গিয়ে চেঞ্জ করে আসুন, কফি ঢাকা আছে,,ঠান্ডা হবে না।তারপর খেয়ে নেবেন,,, আসছি আমি(বলেই বেরিয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে ভরাট পুরুষালী কন্ঠস্বরে আবির বলে ওঠে,,)
-“ব্যাঙ্গালোরে থাকি বলে এই না যে আমার কাছে অঢেল সময় পাখি। কখনো কখনো বাড়ি ফিরে খাবার গরম করতে ইচ্ছে করে না, তখন জল বিস্কুট বা কেক খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি এতটা ক্লান্ত থাকি আমি। ঐ খানে সব কিছু একা আমাকেই সামলাতে হয়। চব্বিশ ঘন্টা মেড কে ভরসা করা যায় না কারণ আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন বন্ধু হয় অনেকে,ঠিক তেমনই নিজেদের অজান্তেই অনেক শত্রু হয়ে যায়।রান্নার লোকটা রান্না করে দিয়ে গেলেও উঠে গরম করতে ইচ্ছা করে না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, না এইবার যখন এসেছি, তখন আর একা ফিরে যাবো না,, প্রায় প্রায় কেক,বিস্কুট খেয়ে আর থাকা যাবে না,,, সঙ্গে করে পার্মানেন্ট একজনকে নিয়েই যেতে হবে”।
-আবিরের কথা শুনে খুশি হলেও পেখমের কোথায় যেন খুব কষ্ট হয়,,, মানুষ টা এত পরিশ্রম করে ওখানে,, আর ও কি না উল্টো পাল্টা ভাবে তাকে নিয়ে,,, ও দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গিজার টা অন করে, তারপর আবিরের একসেট জামা বিছানায় রেখে নীচে চলে যায়।
________________________________________
-রাতে খাওয়ার সময় অনুপমা বলেন”আবির এ-কদিন তো পেখম তোর ঘরে শুয়ে ছিল,, তা আজকে কোথায় থাকবে,,,আমি ওকে গেস্টরুমে শুতে দিতে চাইছি না,,আর এদিকে তীয়ার ঘরের এসি টাও খারাপ হয়ে গেছে,,
-কোনো ব্যাপার না মা পাখি আমার ঘরেই থাকুক,,আমি গেস্টরুমে চলে যাচ্ছি,,,
-না না আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। কাকিমনি বৃষ্টিতে ভিজে এমনিতেই ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে,,আমি বরং বৌমনির ঘরেই থাকবো,,,উনি উনার ঘরেই থাকুক।
-ঠিক আছে,,, আবির তোকে আর স্টু দেবো,,
-হ্যাঁ মা একটু দাও,,বাটার আর মিষ্টি টা আজকে একটু বেশি দিয়েছে রেখা দি,,,
-আজকে রেখা রান্না করে নি,,,পেখম করেছে,,,
-ওও তাই তো ভাবি আজকের রান্নার টেস্ট অন্যরকম কেন??
-আপনার যদি পছন্দ না হয়,, আপনি তাহলে স্যুপ খেতে পারেন,ওটা কাকিমনি রান্না করেছে,,,
-হ্যাঁ দাঁড়া তোদেরকে এনে দিচ্ছি বলেই অনুপমা রান্নাঘরে গেল,,অনুপমা যেতেই আবির বলে,,
-“তার হাতের রান্নাকে কখনোই আমি খারাপ বলতে পারি না,, কারণ সেই রান্নার মধ্যে রয়েছে অনেকটা ভালোবাসা। আর আমি তো তাকে আগেই বলেছি সে যা রান্না করে তাতেই আমি মিষ্টতার স্বাদ পায় এমনকি ব্ল্যাক কফিতেও”।
-আবির এই নে স্যুপ,,
-মা আমার পেট ভর্তি, তবুও তুমি অল্প করে দাও। পাখির দাদু কেমন আছে এখন,,
-এখন একটু ভালো আছে,,মনোরমা সন্ধ্যের দিকে ফোন করেছিল ওরা কালকে বাড়ি ফিরছে আর পেখমের দাদুন আর ঠাম্মাম কেও সাথে করে নিয়ে আসছে,,আমি বলেছি ওরা যেন কাল কে আমাদের বাড়িতেই দুপুরের খাবার খায়,,,কাল থেকে আবার বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগবে,,পেখম তোকে কালকে বাড়ি যেতে হবে না।
-সেটা বললে হয় নাকি কাকিমনি,, তুমি বরং আমাদের বাড়ি গিয়ে কয়েকদিন থাকবে চলো,,,
-আমি গেলে আবিরের কি হবে পাগলী,,
-মা তোমরা কথা বলো ,আমি উঠছি আমার কিছু মেইল চেক করতে হবে।
-আবির চলে গেলে আবার গল্পে মেতে ওঠে অনুপমা ও পেখম। আবির উপরে উঠতে উঠতে এইসব দেখে আনমনে বলে”তাকে এবার আমার কাছেই রাখার ব্যবস্থা করতে হবে”।
________________________________________
-এখন গভীর রাত,প্রায় একটা বাজে,,পেখম খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে,,রাতে আর আবিরের সাথে ওর দেখা হয়নি ,অথচ মানুষটি তার পাশের ঘরেই বিচরণ করছে,,,
-পড়তে পড়তে পেখমের হঠাৎ খেয়াল হয় ভূগোলের প্যাক্টিক্যাল খাতাটা আবিরের ঘরে রয়েছে,, এবং সেটা এখুনি ওর দরকার,,, কিন্তু এত রাতে ঐ ঘরে যাওয়া ঠিক হবে কি না ভেবে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে,,তারপর আবার উঠে আবিরের ঘরের সামনে যায়,,দরজার সামনে গিয়ে ও ভাবে হয়তো ভিতর থেকে লক করে রাখা।কিন্তু দরজায় একটু হাত দিয়ে বুঝতে পারে ,দরজা খোলা আছে,হালকা করে ভেজিয়ে রাখা। তবে কি আবির দা ঘুমান নি,,এইসব ভেবে অনেক অস্বস্তি নিয়ে ঘরের ভিতরে যায়।
-ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখে মৃদু আলো টা জ্বলছে,আর আবির আধশোয়া হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে,, পেখম টেবিলের উপর থেকে ওর প্যাক্টিক্যাল খাতাটা নিয়ে বেরিয়েই যাচ্ছিলো ,কিন্তু আবার কি মনে করে ফিরে আসে,, তারপর খাতাটা রেখে এসির রিমোট টা নিয়ে তাপমাত্রা একটু কমিয়ে দিলো,,তারপর পাতলা একটা চাদর আবিরের গায়ের উপর দিতে গিয়ে দেখে মাথার বালিশটা নীচে পড়ে আছে,,, ও তাড়াতাড়ি চাদরটা গায়ে দিয়ে দিলো তারপর আবিরের মাথাটা আলতো করে তুলে বালিশ টা রাখলো,তারপর আস্তে করে শুইয়ে দিলো,,আর তখনই আবির বলে ওঠে,,
-পাখি কেন ঘুমাতে দিচ্ছিস না?? আমি তোকে বলেছি মাথার নীচে বালিশ দিতে??(চোখ না খুলেই)
-না আসলে আমি ভাবলাম আপনার সমস্যা হবে বালিশ ছাড়া শুতে,,,আপনি ঘুমান নি??
-বালিশ টা আমি ইচ্ছা করেই সরিয়ে দিয়েছি। ঘুম আজ আর আমার আসবে না,,
-কেন?? আপনার শরীর ঠিক আছে তো??
-“না আমি একদম ঠিক নেয়,,সে কি জানে না এই কয়েকদিন ,এই ঘরেতেই তার বিচরণ ছিল,,,, এই ঘরের প্রতিটি জায়গায়, জিনিসে তার শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণ বিরাজমান সর্বক্ষণ। আর সেই মাতাল করা ঘ্রাণ আমাকে ধীরে ধীরে নেশাক্ত করে তুলছে,,আমি তার সেই ঘ্রাণ নিতেই ব্যস্ত এখন। আজকের মত ঘুম আমার গেল”।
-পেখম আর কোনো কথা না বলে টেবিলের উপর থেকে খাতাটা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো,,আর তখনই আবির পিছন থেকে বলে ওঠে,,
-“বিছানার পাশের ক্যাবিনেট টা একটু খুলে দেখো ,ওখানে তোমার একটা প্রিয় জিনিস আছে, যাওয়ার সময় সেটা নিয়ে যাও আর হ্যাঁ দরজা টা লক করে দেবে”(বলেই চাদর মুরি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো)
-পেখম আস্তে আস্তে ক্যাবিনেটের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, সেটা খুলে যা দেখলো তাতেই ওর মুখে হাসি ফুটলো,,ক্যাবিনেটের মধ্যে রয়েছে দুটো কদম ফুল আর একটি বেলী ফুলের মালা।হঠাৎ সেই চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠস্বরে কেউ বলে উঠলো,
-“আমি তার মুখে সর্বক্ষণ এই হাসিটাই দেখতে চাই। এবার নিশ্চয়ই সে আমার উপর আর অভিমান করে নেই। এবার নিশ্চয়ই তার ঐ মায়াবী চোখের জল ঝড়িয়ে সে আমার হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণের কারণ হবে না”।
চলবে,,,,
#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১৪
-বাবা আপনি একটু কম কথা বলুন।ডাক্তার আপনাকে বেশি কথা বলতে বারণ করেছে,,,এই পেখু একটু চুপ থাক,,(মনোরমা)
-হ্যাঁ মেসোমশায় আপনার একটু বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন(অনুপমা)
-হ্যাঁ মা ঘুম ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু কতদিন পর আমি আমার নাতনীর মুখটা দেখলাম,,, তাই আর যেতে ইচ্ছা করছে না(নরেন্দ্র বাবু)
-না না দাদুন এবার তুমি চলো ঘুমাবে,,,(পেখম)
-আচ্ছা অনু মা আবিরকে দেখলাম না তো??
-মেসোমশায় ও তো অফিসে গিয়েছে আর মনে হয় অফিস থেকে একবারে এয়ারপোর্টে গিয়ে পুলকদের রিসিভ করে তারপর বাড়ি আসবে,,,(অনুপমা)
-আমার ঐ নাতি টাও তো বড়ো হয়ে গিয়েছে,,, কত দিন দেখিনা,,,পুলকের বিয়েতে আসার ইচ্ছা ছিল খুব কিন্তু পারলাম না,শরীরের যা অবস্থা বেঁচে থাকতে থাকতে সব দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই,,, পুলকের বিয়ে দিয়েছি এবার দিদিভাই কে বিয়ে দিয়ে নাত জামাই দেখে যেতে পারলেই আমার শান্তি।( নরেন্দ্র বাবু)
-দাদুন আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি না,,,এখন এসব কথা বাদ তুমি চলো ঘুমাবে ,,ঐ দিকে দেখো ঠাম্মাম সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে,,(পেখম)
-পেখম ওর দাদুন কে ধরে ধরে নিয়ে গেল ওদের জন্যে বরাদ্দ কৃত ঘরে।দুপুরে আবিরদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেই তারপর এই বাড়িতে এসেছে ওরা,আর অনুপমা ওদের সাথে এসেছে, যদি কোনো সাহায্যের দরকার হয়।
__________________________________________
-সন্ধ্যার দিকে পুলক ও আবির ওরা সবাই চলে আসে, নরেন্দ্র বাবু তখন ড্রয়িংরুমে টিভি দেখছিলেন।
-কেমন আছো দাদুন??
-ভালো দাদুভাই, তোমরা কেমন আছো?
-আমরা ভালো আছি,,
-যা পুলক তুই আর তীয়া ফ্রেশ হয়ে আয়। আবির বোস আমি তোর জন্য কফি আনছি,,(মনোরমা বলাতেই পুলকরা ঘরে চলে যায়)
-তা আবির অফিস, কাজ কেমন চলছে??
-ভালো দাদু,,,তোমার শরীর এখন ঠিক আছে তো??
-হ্যাঁ আর শরীর,,, যে কটা দিন আছি,,(নরেন্দ্র বাবুর কথা শেষ করতে না দিয়ে বিমলা দেবী আসেন,,)
-রাখো তো তোমার শরীর,,, একদম ঠিক আছো তুমি,, আরে আবির দাদুভাই যে ,,,কেমন আছো,,,কতো বড়ো হয়ে গেছো,,,মনু এবার তো অনুকে বলতে হয় আবিরের জন্যে একটা রাঙা নাতবৌয়ের দরকার,,,(হেসে হেসে)
-কি যে বলো না তুমি ঠাম্মাম,, তুমি থাকতে আমার আবার বৌয়ের দরকার হয় নাকি,,,(আবির)
-(এরই মধ্যে পুলকরা চলে আসে,,, আর এসেই বলে ওঠে)
-বাঃ আবিরকে পেয়ে আমাকে তো ভুলে গেলে ঠাম্মাম,,,(পুলক)
– ভুলে তো যাবোই দাদুভাই,,, তোমার এখন নতুন বৌ এসেছে,,, আমি তো পুরোনো,,,(ঠাম্মাম)
-আর নাতবৌমা এইদিকে এসো তো,,,(দাদুন)
-তীয়া ধীরে ধীরে ওদের কাছে গিয়ে দুজনকে প্রণাম করে,আর তখনি বিমলা দেবী তার হাতের থেকে দুটো বালা খুলে তীয়াকে পড়িয়ে দিলেন আর কপালে একটা চুমু দিলেন।
-নাতবৌয়ের তো দেখছি বিয়ের পরে বেশি রুপ ফিরেছে,,আমার দাদুভাই কি ভালোবাসা একটু বেশিই দিচ্ছে নাকি??(তীয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,, আর তা শুনে তীয়া লজ্জায় ঠাম্মামকে জড়িয়ে মুখ লুকালো)
-কাকিমনি পাখি কোথায়?? দেখছি নাতো(অনেকটা সংকোচ নিয়ে আবির জিজ্ঞাসা করলো)
-আবির পেখু তো পড়তে গিয়েছে,, এই আসার মত সময় হলো,,,(মনোরমা)
-চলে এসেছি আমি,, সদর দরজা খোলা কেন?? বৌমনি দেখো তোমার সাথে কারা দেখা করতে এসেছে,,, আপনারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?? ভিতরে আসুন,,,(পেখম)
-আরে তোরা,,কেমন আছিস,,, by the way পেখুর সাথে তোদের দেখা হলো কি করে??(তীয়া)
– আরে আমরা তো আসছিলাম আমার গাড়িতে,, মাঝ রাস্তায় দেখি তোর ননদ দাঁড়িয়ে আছে,, ভাবলাম আমার গাড়িটার মনে হয় ভাগ্য খুলে গেল তাই তোর ননদকে রাস্তার মাঝে থেকেই তুলে এনেছি,,(চোখ মেরে কথাটা বলল তুর্য)
-আরে বাদ দে তো ,জানিস তো ও ঐ রকম আড্ডা মারে,,,পেখমের কোচিং সেন্টারের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম আমরা, দেখি ও গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছে তাই ওকে লিফট দিলাম,,(মৌ)
-তুর্যের কোনো সেন্স নেই,, দেখতে পারছিস না সামনে বড়োরা আছে,,(মিতা)
-তোমরা সবাই বসো আমি তোমাদের জন্যে হালকা স্নাকস নিয়ে আসছি(মনোরমা)
-তারপর সবাই বেশ ঘন্টা খানেক দাদুন আর ঠাম্মামের সাথে আড্ডা দিয়ে চলে গেল,,আবির প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলেনি। ও লক্ষ্য করেছে তুর্য বেশ পাখির সাথে ফ্লাট করছিলো,,আর এই বোকা মেয়েটা বোঝেনি,,, সেটা দেখে আরও রাগ হলো ওর,,রাতে আবিরকে মনোরমা খেয়ে যেতে বললে ও মানা করে দেয় কাজের অজুহাত দেখিয়ে। পুলকের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আবির চলে যায়,,, আর যাওয়ার আগে পেখমের হাতে একটা গোলাপের চারা গাছ দিয়ে আসে,,,বলে এটা ব্যালকনিতে রাখতে,,,
__________________________________________
-রাতে পাখি ভাবছে সে কি এমন করলো যে আবির আজকে তার সাথে ভালো করেই কথা বললো না,, তার জানা মতে এমন কিছু তো সে করিনি এইসব কথা ভাবতে ভাবতে গোলাপের চারা গাছ টা নিয়ে ব্যালকনির একটা টবে ভালো করে রোপণ করলো। এখানে যা গাছ আছে তা প্রায় আবিরের কিনে দেওয়া।পেখমের হাতে পায়ে মাটি লেগে যাওয়ায় ও ওয়াশরুমে গেল। প্রায় এক ঘন্টা মতো শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এল।
-আলমারি খুলে সালোয়ার কামিজ নিতে গিয়ে পেখমের হাতে লেগে একটা কালো রঙের শাড়ি পড়ে গেল,,ও সেটা তুলে আনমনেই হেসে উঠলো,,,সেইবার পেখম যখন রাগ করে ছিল আবিরের উপর তখন আবির ওকে এই শাড়িটা দিয়ে ছিল আর তার সাথে ছিল একটা ছোট চিরকুট , তাতে লেখা ছিল-
-“এ মাসের স্যালারি দিয়ে প্রথমেই তার জন্যে জিনিস কিনলাম। আমি চাই সে এটা পড়ুক,, হমম হু সবার সামনে না,,,আমি তাকে এই শাড়িতে একান্তেই দেখতে চাই। তার ওই রূপের আগুনে পুড়তে চাই”।
-হঠাৎ লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো পেখমের মুখ। এই শাড়িটা কোনো দিন পড়া হয়নি ওর,,কার জন্যে পড়বে ,সে তো এখানে থাকেই না,,,হঠাৎ ওর মনে হলো এখন পড়লে কেমন হবে,,এখন রাত প্রায় ১ টা বাজে ,কেউ জেগেই নেই,,,যেই ভাবা সেই কাজ,,চট করে শাড়িটা পেখম পড়ে নিলো,,,শাওয়ার নেওয়ার জন্য চুল গুলো ভিজে, যার দরুন ও চুল গুলো ছারাই রেখে দিলো,,,তারপর নিজের জন্য এক কাপ কফি করে আনলো। ও ঠিক করেছে কফি খাবে আর বেলী ফুলের ঘ্রাণ নেবে।
____________________________________________
-আবির অফিসের ফাইল গুলো চেক করে তারপর ফ্রেশ হয়ে শুতে গেল,,,কিন্তু কি মনে করে ব্যালকনিতে গেল,,ব্যালকনিতে গিয়ে ও পুরো থমকে গেছে,,ওর সামনে কালো শাড়ি পড়ে কোনো এক মায়াবিনী দোল খাচ্ছে,,আর হাত দিয়ে সাদা বেলী ফুলের সুবাস নিচ্ছে,,আবির বুঝতে পারলো সেই মায়াবী নারী তার মায়ার জালে আস্তে আস্তে করে জড়িয়ে নিচ্ছে ওকে,,হঠাৎ ওর মনে হচ্ছে হার্টবিট যেন জোরে জোরে লাফাচ্ছে,, না এই মেয়ে ওকে একেবারে শেষ করেই ফেলবে,,ওর মনে হচ্ছে এখানে ও জ্ঞান হারাবে,,
-এইসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ খেয়াল করলো পেখম চুল গুলোতে একটা ক্লীপ দিয়ে, দোল্লা থেকে উঠে কোথায় যাচ্ছে,,, তারপর হাতে দেখলো গোলাপ গাছের টব।আবির আনমনে বলে ওঠে”পাখি কি এখন ছাদে যাচ্ছে,, তাও এত রাতে,,সত্যি এই মেয়ের কোনো আক্কেল নেয়,,,মুহূর্তেই আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো,,সন্ধ্যের কথাটা মাথায় আসতেই ও ছাদে চলে গেল,,,
____________________________________________
-পাখি ছাদে উঠতেই দেখলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে,,ও গোলাপের চারাটা ছাদের এক পাশে রেখে দিলো তারপর আনমনেই হেসে উঠলো,,, হঠাৎ এক গম্ভীর কন্ঠস্বর শ্রবণ হতেই ও চমকে উঠলো,,তারপর পিছনে ফিরে দেখে ওর ঠিক সামনে আবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে, ভ্রু দুটো কিঞ্চিত কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।ও আবিরকে দেখে ভয়তে কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,
-আপনি এখানে? মানে এত রাতে এই ছাদে কি করছেন আবির দা??
-সেটা তো আমারও প্রশ্ন পাখি তোর কাছে। এত রাতে তুই এখানে কি করছিস??( বেশ গম্ভীর হয়ে)
-জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিলো পেখম, তারপর রিনরিনে কন্ঠে বলল” আসলে বাইরে দেখলাম মেঘ করেছে আবির দা,তাই ভাবলাম এই গোলাপ গাছটা ছাদে এক ধারে রেখে আসি,,সারা রাত বৃষ্টির জল পেলে গাছটা সতেজ হয়ে উঠবে,,,
-তোর কি কোনো কমনসেন্স নেই পাখি??
-মানে?
-মানে আবার কি,,,এই বিল্ডিংয়ে নিশ্চয়ই তোরা শুধু একা থাকিস না,,আরও অনেকে থাকে,,,এখন রাত প্রায় ১ টা বাজে,এত রাতে যদি ছাদে অন্য কেউ থাকতো বা বখাটে ছেলে বিলে থাকতো,,,তখন কি করতিস??? আর তার উপরে এই শাড়ি উফফফফ( রাগে কপাল ঘসতে ঘসতে বলল আবির কথা গুলো)
-আসলে বুঝতে পারি নি আবির দা,,আর এত কিছু মাথাতেও আসেনি,,ভুল হয়ে গেছে,,
-ভুল টা কেন হবে?? ভুল হওয়ার জায়গা পর্যন্ত যাবে কেন জিনিসটা?? কেন গাছটা ব্যালকনিতে রাখা যেত না?? নাকি ওখানে বৃষ্টির ছাট যায় না কোনটা?? এতটা কেয়ারলেস কেন হবে তুমি?? এখন আমার মনে হচ্ছে গাছটা না দিলেই ভালো হতো,,(চেঁচিয়ে)
-বুঝতে পারিনি আমি,,(কান্না চেপে রেখে বলল)
-ও বুঝতে পারোনি তাই না,,,সত্যিই তুমি তো অনেক কিছু বুঝতেই পারো না,,,কেউ তোমার সাথে ফ্লাট করলেও তুমি বুঝতে পারো না,,, কেউ একটু হেসে কথা বললে তার সাথে তুমিও বেহেক যাও,,,অচেনা যে কারোর কাছে থেকে লিফট নাও,,,সবটাই না বুঝে করো তাই তো?? answer me dammit,,, (গম্ভীর হয়ে)
– অচেনা কারোর গাড়িতে তো উঠিনি আমি আবির দা,,(চোখের জল মুছে)
– তুর্য কে হয় তোমার?? সে কিভাবে কথা বলে বুঝতে পারো না নাকি বুঝতে চাও না কোনটা?? ওকি তোমার বন্ধু?? তোমাদের আত্মীয়??
-পেখম মাথা নাড়িয়ে না বলে,,,
-তাহলে কেন ওর গাড়িতে উঠেছো??
-ওখানে মৌ দি ,মিতা দি ওরা বললো,,,(কান্নার জন্যে কথা বলতে পারছে না,,, এর আগে আবির ওর সাথে এই ভাবে কথা বলেনি,,,খুব কষ্ট হচ্ছে পেখমের)
-ওরা বললো বলেই কি তোমাকে শুনতে হবে,,,(শান্ত ভাবে বলল)
-আমি বুঝতে পারিনি আবির দা,,আমার ভুল হয়ে গিয়েছে,,(বলেই চোখের জল মুছে দৌড়ে চলে আসতে নিলেই হঠাৎ হাতে জোড়ে টান পড়ে,,,আর সেই টান সামলাতে না পেরে সোজা আবিরের বুকের উপর গিয়ে পড়ে পেখম,,আর আবির ও পেখমকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে,,,তারপর সরি বলে আলতো করে মাথায় চুমু খায়,,, কিছুক্ষণ ঐ ভাবেই থাকে,,তারপর স্বাভাবিক হয়ে পেখম দ্রুত সরে আসে,,,এবং মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে)
-আবির কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে,,মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে নিজের রাগটা কনট্রোল করে ,,তারপর আস্তে করে বলে ওঠে” সরি,,আমার কথায় খারাপ লাগলে তার জন্যে সরি”।
-আবিরের সরি বলাতে পেখম নিঃশব্দে আরও কাঁদে,,, আবির নিজের উপর রাগ করে পাশের দেওয়ালে জোড়ে একটা ঘুসি মারে,,আর তাই দেখে পেখম ভয়তে আঁতকে ওঠে,এবং তাড়াতাড়ি আবিরের হাত ধরতে যায়,,,
– আবির তখন বলে ধরা লাগবে না,,, কিছু হয়নি আমার,, তুমি কান্না থামাও,,
-পেখম তখন নিজের মনে মনে বলে ওঠে কোন কুলক্ষনে যে আমি এত রাতে ছাদে এসেছিলাম।
-“সে কি জানে না? নাকি ভুলে গেছে যে,এই শাড়িতে আমি তাকে একান্তেই দেখতে চেয়েছিলাম,,, “(অন্যদিকে ফিরে)
-আবিরের কথায় পেখম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
-আজ যদি ছাদে কেউ থাকতো,,তখন কি হতো,,,যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু হতো তাহলে তো আমি নিজে শেষ হয়ে যেতাম পাখি,,সবাই কিন্তু ভালো নয়,,আগলে রাখার মানুষের কিন্তু ভীষণ অভাব পাখি,,,বলেই পেখমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আবির,,তারপর পেখমের চোখের জল মুছে দিয়ে, কিছুটা সরে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,,
-“এই ঘন বাদল দিনে যদি সেই মায়াবী নারীর শরীরে পরিহিত থাকে কালো পাতলা শাড়ি আর লম্বা কেশ গুলো যদি হয় ছেড়ে রাখা,,আর সেই সাথে বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটা তার মুখের উপর পড়ে যদি হয় সে স্নিগ্ধ,,তাহলে এই পাগল প্রেমিক তার চোখেই দেখে নিজের সর্বনাশ”।
-কথাটা বলেই আবির আকাশের দিক থেকে নজর সরিয়ে সোজা পেখমের দিকে তাকায়, আর তাকিয়েই আবিষ্কার করে তার প্রেয়সীর লজ্জা মাখানো মুখ,,আর সেই মুখের উপর মুক্তোর দানা,,,আনমনেই আবার বলে ওঠে,,,
-” তার চোখের জল আমি সহ্য করতে পারি না,,, কিন্তু সেই জল যখন সামান্য আদরে ,সোহাগে লজ্জায় মুক্তোর দানার ন্যায় হয়ে ওঠে, তখন মন চাই তাকে আরও কাঁদায় আর কাঁদিয়ে ভালোবাসা ঢেলে দি তার কাছে,,,আর তখনই আবার আবিষ্কার হবে তার ওই লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাওয়া মুখ ও তার উপরে মুক্তোর দানা”
চলবে,,,