হৃদয়হরণী পর্ব ১১

0
629

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১১

-সবাই খুব ব‍্যস্ত,,, এই বাড়ির জিনিস সব বাংলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য,,, দেবেন্দ্র বাবু বৌ-ভাতের অনুষ্টানের জন্য একটা বাংলো ভাড়া করেছেন,,তাই সকাল থেকেই জিনিস পত্র আনা নেওয়া করতে হচ্ছে পুলকদের,,,

-এইদিকে ভাত-কাপরের অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত রয়েছে,,,মনোরমা সব নিয়ম বলে দিচ্ছে,,, সেই মতো সব পালন করতে হবে,,, পুলকের বন্ধুরা সব ক‍্যামেরা নিয়ে হাজির,,, অদ্বিতীয়া কে একটা গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি পড়ানো হয়েছে,,,আর পুলক একটা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে।এইদিকে পেখম আর ওর বন্ধুরা সবাই টিয়া কালারের চুড়িদার আর জামা পড়েছে,,,,,

-নে পুলক এবার বল(মাসিমনি)

-পুলক অদ্বিতীয়ার হাতে ভাত-কাপড়ের থালা দিয়ে বলে”আজ থেকে তোমার ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব এমনকি তোমার ভালো থাকার দায়িত্ব নিলাম।

-পুলকের হাত থেকে ভাত কাপড়ের থালা অদ্বিতীয়া নিজের হাতে নিয়ে বলে”আর আজ থেকে আমি এই পরিবারের সবার ভালো রাখার দায়িত্ব নিলাম” তারপর পুলককে প্রণাম করে। মনোরমা অদ্বিতীয়ার কপালে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়।আর এই সব মুহূর্ত গুলো ঋষি ওর ক‍্যামেরায় বন্দি করে নেয়। আর তার ফাঁকেও পেখমের কিছু ভালো ছবি ও ক‍্যান্ডিড ছবিও ক‍্যাপচার করে নেয়,,,আবার সেই গুলো দেখে আনমনে হেসেও দেয়,,

____________________________________________
– parlour থেকে বাড়ির মেয়ে বৌরা সবাই সেজে একেবারে বাংলোতে চলে যাবে। সেই মতো সবাই গুছিয়ে নিয়েছে।

-অদ্বিতীয়া আজ নীল কালারের ল‍্যাহেঙ্গা পড়েছে। তারসাথে ম‍্যাচিং করে ডায়মন্ডের সেট পড়েছে। চুল গুলো স্টাইলে খোঁপা করে তার উপর নীল অর্কিড ফুল দেওয়া,, পুরো ব্রাইডাল সাজে সজ্জিত।

-পুলক আজকে রয়‍্যাল ব্লু কালারের ব্লেজার-প‍্যান্ট পড়েছে,,,আর তার সাথে ম‍্যাচিং করে ব্ল‍্যাক হান্ড ওয়াচ ও ব্ল‍্যাক সু পড়েছে।

-পেখমের বান্ধবীরা আজকে সবাই গোলাপি ও সবুজ মিশ্রিত ল‍্যাহেঙ্গা পড়েছে,,আর তার সাথে পার্টি মেকআপ করেছে।পেখমের বন্ধুরা আজ সব ফরমাল পড়েছে।

-পেখম আজকে গোল্ডেন পাড়ের গোলাপি রঙের ল‍্যাহেঙ্গা পড়েছে,,,আর তার সাথে পার্টি মেকআপ করেছে,, কানে দুটো ভারী দুল পড়েছে, যেটা ও পড়তে চাইনি ওবুও parlour মেয়েগুলো ওকে জোর করে পড়িয়ে দিয়েছে,, এই কানের দুল না পড়লে নাকি সাজের সাথে ভালো লাগবে না,,, আবার তার উপর চুল গুলো খোঁপা করে দিয়েছে উঁচু হয়ে,,, যেটাতে ওর অসস্তি হচ্ছে,,,হাত ভর্তি গোলাপি আর গোল্ডেন রং মিশ্রিত চুড়ি পড়েছে,,,আর তার সাথে ম‍্যাচিং করে গোল্ডেন স্টোনের নেকলেস আর নুপুর পড়েছে।

-আর এইদিকে পুলকের বন্ধুরা সবাই ফরমাল পড়েছে,, কিন্তু তার আগে বেচারা গুলো ভীষণ খেটেছে,কারণ পুলকের ঘর সাজানোর দায়িত্ব তাদের উপর পড়েছিল আজকে।ওরা ঘর সাজিয়ে তারপর নিজেরা রেডি হয়ে বাংলোতে যাবে‌।
__________________________________________

-সবাই বাংলো তে পৌঁছনোর পর একটা স্টেজের উপর সিংহাসন টাইপ সোফা রাখা আছে যেটার উপর অদ্বিতীয়াকে বসানো হয়েছে,,,গার্ডেন এরিয়ার দিকে মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে আর তার পাশে খাওয়া দাওয়ার ব‍্যবস্থা করা হয়েছে।সব গেস্টরা ইতি মধ্যে আসতে শুরু করে দিয়েছে।

-পেখম আর ওর বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে,, কিছুক্ষণ বাদে পুলকের বন্ধুরা ও অফিসের কলিগ রা চলে আসে,পুলক তাদের সাথে অদ্বিতীয়ার পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে অদ্বিতীয়ার বাপের বাড়ি থেকে কন‍্যাযাত্রীরা চলে আসে,,চারপাশে লোকজন গম গম করছে।বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে,,পুলকের বন্ধুরা খাওয়ার দিক টা দেখছে,,এইসব কিছুর মধ‍্যেও পেখমের চোখ বারবার একটা মানুষকে দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে,,,

-পেখম চল না একটু কফি খেয়ে আসি (বন্ধুরা সবাই)

-হমম চল,,তারপর আবার বৌমনির কাছে যেতে হবে ছবি তুলতে,,(পেখম)

-আমি তো কি কি পোস দেবো ভেবে রেখেছি( মাথার চুল ঠিক করতে করতে অর্নব বললো)

-ঐ দিকে স্টেজে দেখেছিস কন‍্যাযাত্রীদের টাইট দেওয়ার জন্য তোর দাদার বন্ধুরা সবার সামনে এক এক জনের নাম ধরে ডাকছে আর তাকে দিয়ে গান, নাচ,কবিতা, জোকস এইসব বলাচ্ছে,,,বেচারা গুলো,,(বলেই হেসে ফেলল রুশা)

-ও ভগবান বলিস কি ,,(পেখম)

-আচ্ছা তোরা যাবি নাকি কথা বলবি,,,(অর্নব)

-না না চল চল,,বলে ওরা পুল সাইডে চলে গেল,,সেখানে গিয়ে অর্নব, দিপু আর আকাশ কফি নিলো,,পেখম নিতে গেলে বাঁধ সাধলো প্রিয়া,,,বলল ওই দেখ কত রকমের ফুচকা,, চল আমরা ফুচকা খেয়ে আসি,,,পেখু বেবি তোমার পছন্দের দই ফুচকা আর চকোলেট ফুচকাও আছে,,,

-ঠিক আছে চল,,,(পেখম)

-তার পর ওরা ফুচকার স্টলে গিয়ে ফুচকা দিতে বললো,,যেই একটা ফুচকা পেখম মুখের ভিতর দিতে যাবে ওমনি কোথা থেকে একটা শক্তপোক্ত হাত এসে ওর হাতকে ধরে থামিয়ে দেয়,,,পেখম বিরক্তি সহকারে পাশে ফিরে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে চোখমুখ শক্ত করে,,, পেখম ভয়তে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললো,,,তার পর মিনমিনে গলায় বলে উঠলো,,

-“কি হয়েছে আবির দা?? আপনি এইভাবে হাত ধরলেন”?

-লাইক সিরিয়াসলি পাখি এই প্রশ্নটা তুই আমাকে করছিস?? এইসব কি খাচ্ছিলি তুই??

-কেন আবির দা,,ফুচকা তো,,

-ও রেইলি আমি তো জানতাম না এটা ফুচকা ইডিয়ট,,, এখন এই ফুচকা খাবি আর রাতে পেটের ব‍্যাথায় কাতরাবি,,,(ধমক দিয়ে)আর শেষে কি হবে আমার ঘুমটাই হবে না,,(শেষের কথাটা আস্তে করে বলে)

-কিছু হবে না আমার,, একটা খাই,,

-একদম না ,,সোজা এখান থেকে তীয়ার কাছে চলে যা,,,আমি যেন তোকে এক মিনিটও না দেখি এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে,,(হাত দুটো পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে কথাটা বলে আবির)

-অগত্যা আবিরকে মনে মনে ইচ্ছা খুশি মতো বকে চলে গেল ওরা স্টেজের কাছে,,,পেখম সেখানে গিয়ে সবার সাথে কথা বলায় ব‍্যস্ত থাকলেও তার বেহায়া চোখ বারবার আবিরকে দেখছে,,,আবিরকে দেখে পেখম মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে গতকালের ঘটনা মনে করে,,, এই মানুষটা যে ওকে ভালোবাসে সেটা ভাবলেই ওর লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে বারবার। আবির আজ ফরমাল পড়েছে,,ব্ল‍্যাক শার্ট তার বুকের দিকে দুটো বোতাম খোলা,, হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটানো,, ডেনিম কালারের প‍্যান্ট পড়া,,আর সিলভার কালারের হ‍্যান্ড ওয়াচ,,ছোটছোট চুল গুলো হালকা চোখের উপড়ে পড়ছে,,,হাতে একটা জুসের গ্লাস নিয়ে বন্ধুদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে,,পেখম আজ যতবারই আবিরের দিকে তাকাচ্ছে ততবারই চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ছে ওর,,আবার পরক্ষণেই আবিরকে বকাবকি করতে লাগলো মনে মনে,, কি দরকার ছিল এই ব্ল‍্যাক কালারের শার্ট পড়ে আসার? সে কি জানে না এখানে অধিকাংশ মেয়েই তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে,, দূর ভালো লাগে না,,,

-হঠাৎ মাইকে নিজের নাম শুনে চমকে যায় পেখম,,দেখে কুশল মাইক হাতে স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে আছে,তার দিকে তাকিয়ে,,, পেখম প্রশ্নবোধক ভাবে তাকিয়ে থাকলে কুশল বলে” এখন আমাদের সামনে নৃত্য পরিবেশন করবেন বরের বোন মানে অদ্বিতীয়ার ননদ। সবাই জোড়ে হাত তালি দাও”।

-পেখম তো পুরো থ হয়ে গেছে,,, নাচ করবে ও ,,,পুলকের দিকে একবার তাকালো ও,,পুলক চোখের পলক ফেলে অনুমতি দিলো,,

-তারপর পেখম স্টেজে গেল,,,আর যাওয়ার সাথে সাথে লাইট বন্ধ হয়ে গেল,,,আস্তে আস্তে গানের মিউজিক শুরু হয়ে গেল আর পুরো ফোকাস লাইট পেখমের উপর পড়লো,,পেখম নিজের মন,আবেগ, সবকিছু দিয়ে নাচ শুরু করলো,,আর ঐ দিকে গান বাজতে থাকলো-
Hulcul hui, zara shor hua
Dil chor hua, teri aor hua

Hulcul hui [Hulcul hui]
Zara shor hua [Zara shor hua]

Dil chor hua [Dil chor hua]
Teri aor hua [Teri aor hua]

Aisi chale jab hawa
Ishq hua hi hua
Aisi chale jab hawa
Ishq hua hi hua

Hulcul hui, zara shor hua
Dil chor hua, teri aor hua

Hulcul hui, zara shor hua
Dil chor hua, teri aor hua

Aisi chale jab hawa
Ishq hua hi hua
Aisi chale jab hawa
Ishq hua hi hua

Ishq hua aa… haaye..
Ishq hua haaye..

Palkon se hoton tak jo raah nikalti hai
Gujare na wahan se yeh teri galti hai
O.. Palkon se hoton tak jo raah nikalti hai
Ho.. rehte hain ab hum wahan

Ishq hua hi hua
Ho.. Aisi chale jab hawa
Ishq hua hi hua

[Hulcul hui, zara shor hua
Dil chor hua, teri aor hua]

Ishq hua.. aa..

Kadmon ko sambhalein
Nazron ka kya karein
Nazron ko sambhalein
To dil ka kya karein

O.. Kadmon ko sambhalein
Nazron ka kya karein
Dil ko sambhale zubaan
Ishq hua hi hua

Aisi chale jab hawa…
Ishq hua hi hua

Hulcul hui, zara shor hua
Dil chor hua, teri aor hua
Hulcul hui [Hulcul hui]
Zara shor hua

Dil chor hua [Dil chor hua]
Teri aor hua
Ishq hua…
Ishq hua..

-নাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে,,আর সাথে সাথে সব আলো জ্বলে ওঠে। তখনো দু জোড়া চোখ পেখমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,, একজনের চোখে হয়তো ভালোবাসার নেশা ,,আর জনের চোখে হয়তো ভালোলাগার নেশা।
__________________________________________

-অদ্বিতীয়ার পাশে দাঁড়িয়ে এখন সবাই ছবি তুলতে ব‍্যস্ত। পেখম ,আবির, পুলক ও অদ্বিতীয়া এরা চারজন যখন ছবি তুলতে ব‍্যস্ত, ঠিক সেই সময় মনোরমা আসে ওদের কাছে,,

-আমার একটু দরকার ছিল,,,(মনোরমা)

-কি হয়েছে মা?(পুলক)

-আসলে আমি তোর বাবার টাকার ব‍্যাগ টা বাড়িতে ফেলে এসেছি পুলক। এখন তোর বাবা ব‍্যাগ টা চাইছে,,একটু কষ্ট করে আনতে হবে ঐ বাড়ি থেকে,,

-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি,(পুলক)

-না না তুই গেলে হবে না,, তোকে এখন অদ্বিতীয়ার পাশে থাকতে হবে,, চারপাশে সব আত্মীয় স্বজন,,পেখম যাক আমি ড্রাইভার কে বলে এসেছি,,,

-ঠিক আছে মা আমি যাচ্ছি,,,(বলেই যাওয়ার জন্য এগিয়ে গেল পেখম)

-পেখু তুই এই ভাবে হাঁটছিস কেন??(অদ্বিতীয়া)

-ও কিছু না বৌমনি,, আগের দিন ব‍্যাথা পেয়ে ছিলাম,, আজ আবার নাচলাম,,এই কদিন তো তেমন রেস্ট নেওয়া হয়নি তাই(পেখম)

-কাকিমনি যদি কিছু না মনে করেন তো পাখিকে আমি নিয়ে যায় ওর পায়ের অবস্থা তো ভালো টেকছে না আমার কাছে,,(আবির)

-হ‍্যাঁ তাই কর আবির,, তুই বরং ওকে নিয়ে যা,,তাহলে আমি চিন্তা মুক্ত ভাবে থাকতে পারবো,,,(মনোরমা)
____________________________________________

-রাস্তায় জ‍্যাম থাকার দরুন অনেকক্ষণ যাবদ গাড়িতে বসে আছে আবির আর পেখম,,,সেই গাড়িতে ওঠার সময় আবির পেখমকে বলে সাবধানে উঠতে ব‍্যাশ সেখান থেকে একটাও কথা বলেনি আবির পেখমের সাথে,এমনকি তার পছন্দ করে কিনে দেওয়া ল‍্যাহেঙ্গা পড়েছে পেখম সেদিকেও তার নজর নেয়,,,কেমন যেন চোখ মুখ শক্ত করে স্টারিং হাত দিয়ে বসে আছে,,, পেখম খুব বিরক্ত হলো আবিরের এইরূপ আচরণে,, মনে মনে তার পাহাড় সমান অভিমান জমে গেছে,,,হঠাৎ নিরাবতা ভেঙে পেখম বলে ওঠে-

-কি হয়েছে আবির দা?? আপনি চুপচাপ বসে আছেন,, জ‍্যাম তো ছেড়ে দিয়েছে কখন,,,

– লিসেন পাখি আর একটাও কথা তুই বলবি না,,

-পাখি ছল ছল চোখে তাকিয়ে থাকে আবিরের দিকে,,

(আবির ধমক দিয়ে কথাটা বলে বার কয়েক গাল ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে এবার কিছুটা শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,)

-কাউকে impressed করার জন্য নিজের ক্ষতি করা অত্যন্ত বোকামোর কাজ পাখি। তুমি যখন জানতে তোমার পায়ের অবস্থা তেমন ভালো না,তাহলে কি দরকার ছিল নাচ করার সবার সামনে??মুখের উপর না বলে দিতে, এতে তো আবার নতুন করে ব‍্যাথা লাগতো না।নিজের ভালো তো নিজেকেই বুঝতে হবে তাইনা বলো??

-আবিরের কথা গুলো শুনে পেখমের তখন খুব করে বলতে ইচ্ছে হলো ” আমার ভালো বোঝার দরকার নেই,,, কারণ আমার জন্যে তো আপনি আছেন আবির”। কিন্তু বলা হল না, সারা রাস্তা প্রায় চুপচাপ এল ওরা,,,

-ফ্ল্যাটে গিয়ে পেখম আগে ওর মার রুমে গেল ,তারপর আলমারির লক খুলে ব‍্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আবির ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করছিল,, পেখমকে আসতে দেখে ও সাথে সাথে পেখমের কাছে যায়, তারপর হাত ধরে টেনে আনে পেখমের রুমে,,,পেখম প্রশ্ন করে

-কি হয়েছে আবির দা এইভাবে ঘরে টেনে আনলেন??

-আবির কোনো কথার উত্তর না দিয়ে এক দৃষ্টিতে পেখমের দিকে তাকিয়ে থাকে,, তারপর ধীরে ধীরে পেখমের কাছে গিয়ে ওর কানের দুল দুটো খুলে দেয়,,দুল দুটো খোলার সাথে সাথেই একটু রক্ত আবিরের হাতে লেগে যায়,, সেটা দেখে আবির চোখমুখ শক্ত করে পেখমের দিকে তাকায়,,,

-আবিরকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পেখম বলে”আসলে আবির দা parlour মেয়ে গুলো জোড় করে পড়িয়ে দিয়েছে,,(বলেই মাথা নিচু করে নেয়)

-“ওদের কথা শুনে এইগুলো তোমার পড়া একদম উচিত হয়নি পাখি,,তুমি যেমন ঠিক তেমনটাই ভালো লাগে”,,তার পর পেখমের আরও কাছে এগিয়ে যায়,,আবিরকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে পেখমের হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়,,, ক্ষনিকের মধ্যেই একে অপরের নিশ্বাস মুখে এসে বারি খেতেই পেখম চোখ বন্ধ করে নেয়,,,কিছু সময় যেতেই পেখম বুঝতে পারে ওর চোখে মুখে আর নিশ্বাস পড়ছে না,, আর চুলের খোঁপাও খুলে দেওয়া হয়েছে,, ও তক্ষনাৎ চোখ খুলে দেখে আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, তার পর পেখমের কানের কাছে মুখটা এনে ঘোর লাগা কন্ঠ বলে ওঠে,,

-” তার শরীরের কিছু বিশেষ অঙ্গ আছে,,আর সেই অঙ্গের সৌন্দর্য বহন করে কিছু বিশেষ অংশ।আর সেই অংশের বহিঃপ্রকাশ হোক সেটা আমি কখনোই চাই না,,, সেটা কেবল একজনের সামনেই প্রকাশ পাবে ,,,তাই এই খোঁপা আমি খুলে দিলাম। টেবিলের সামনে একটা টিকলি আছে ,সেটা পড়া হোক। আমি গাড়ির সামনে অপেক্ষা করছি,সময় মাত্র পাঁচ মিনিট।(বলেই আবির ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,,,আর পেখম থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে,, কিছুক্ষণ পরে টনক নড়তেই তাড়াতাড়ি চুলটা ঠিক করে টিকলি টা পড়ে নিয়ে নীচে চলে যায়)

-তখন নাচের সময় আবির খেয়াল করে পেখমের পিঠের ও ঘাড়ের গাঢ় কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে,, যেটার কারণ হলো চুলের খোঁপা,,, বরাবরই নিজের রাগটা একটু বেশি সেটা আবির জানে,,তাই অনেকক্ষণ ধরে রাগটাকে কন্ট্রোল করে ছিল ও,,,
____________________________________________
-সব গেস্টরা চলে গেছে,, বাংলোতে নিজেদের জিনিস পত্র,,গিফট সব প‍্যাক করে পেখমের বাড়ির লোকরা গাড়িতে তুলছে,,,অদ্বিতীয়া আর পুলক একটা গাড়িতে চলে গেছে,,,মনোরমা আর উনার বোনেরা আগেই চলে গিয়েছে কি সব নিয়মের ব‍্যবস্থা করতে হবে তাই।

-এখানে আসার পর পেখমের পায়ের ব‍্যাথাটা বেশ ভালোই বেড়ে যায়,,,ঋষি ওর এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে নিয়ে যেতে চাইলে আবির ওকে বাঁধা দিয়ে বলে, আগের দিন যে ডাক্তার কে দেখিয়েছে ওরা ,ও সেখানে নিজের যাবে,,তারপর পাখিকে বাড়িতে পৌঁছে দেবে,,দেবেন্দ্র এতে আর মানা করেননি,, কারণ পা ততক্ষণে বেশ ভালোই ফুলে গিয়েছে পেখমের,,,

-ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে আসার সময় আবির দেখে পেখম ঘুমিয়ে পড়েছে, আর ওর মাথাটা বারবার সিটে বারি খাচ্ছে,,,ও এক হাত দিয়ে পেখমের মাথাটা আস্তে করে নিজের বুকে নিয়ে জড়িয়ে রাখে আর এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাই,,,,কখনো কখনো কপালে পড়া চুলগুলো কানের লতিতে গুজে দেয়।আবার কখনো ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয় মাথায়, কপালে,,।এক এক সময় ওর মনে হয় এই মেয়েটার জন‍্য ও সব কিছু করতে পারে,,,
___________________________________________

-এইদিকে সব নিয়ম-কানন পালন করে,পুলকের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে তবেই অদ্বিতীয়ার কাছে যেতে দেয় পুলক ও পেখমের বন্ধুরা,,,,

-অদ্বিতীয়া খাটে বসে দেখছিল ঘরটাকে,,,সারাঘর গোলাপ আর অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,,, হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দে পিছনে ফিরে দেখে পুলক এসেছে,,, ও উঠে গিয়ে পুলককে প্রণাম করতে যায়। আর সাথে সাথেই পুলক তীয়াকে থামিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়,,,কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর পুলক বলে”তোমার জায়গা সব সময় আমার এই বুকে তীয়া” তারপর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দেয়,,,তীয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

-তীয়া যাও ফ্রেশ হয়ে এসো,,,(পুলকের কথা মতো অদ্বিতীয়া ফ্রেশ হয়ে সব গহনার খুলে একটা লাল রঙের সুতির শাড়ি পড়ে আসে,,তারপর পুলক ফ্রেশ হতে চলে যায়)

-ওয়াশরুম থেকে পুলক বেরিয়ে দেখে তীয়া সব গহনা বাক্সে রেখে ,,চুল গুলো বেধে নেয়,,,পুলক সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ওর চুল খুলে দিয়ে তাতে মুখ ডোবায়। জোড়ে জোড়ে চুলের ঘ্রাণ নিয়ে বলে”তাহলে দীর্ঘ দশ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো তবে আজ তীয়া তাইনা”?

-হমম (লজ্জায় মাথা নিচু করে উত্তর দেয়)

-আজকে কিন্তু আমাকে তুমি করে বলার কথা ছিল,,, বলো তাহলে,,

-আজ না অন‍্যদিন,,

-না আজ,,,

-,,,,

-না বললে ছাড়ছি না( জড়িয়ে ধরে)

-ছাড়ুন না প্লিজ,,,

-হ‍্যাঁ এই কথাটাই তুমি করে বলো i promise ছেড়ে দেবো,,,

-অনেকক্ষণ ধরে চুপ থাকার পরে তীয়া বলে” প্লিজ ছাড়ো পুলক”

-এবার তো আর মোটেই ছাড়বো না তীয়া(বলেই কোলে তুলে নেয়,,তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর পাশে আধশোয়া হয়ে শুয়ে থাকে পুলক,,,)

-কি দেখছো,,

-তোমাকে,,

-আগে দেখোনি,,

-এই রকম বউ রুপে দেখিনি তীয়া,,,

-আমার লজ্জা করছে(চোখের উপর হাত দিয়ে)

-আজ তো তোমাকে আরও লজ্জা দেবো তীয়া,,, লজ্জায় তোমাকে মেরেই ফেলবো লজ্জাবতী,,, বলেই তীয়ার অনামিকা আঙুলে একটা ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দেয়, যেটা ওরা পছন্দ করে এসেছিল।

-পুলকের মাথায় চুমু খেয়ে তীয়া বলে”ভালোবাসি পুলক”

-আমিও খুব ভালোবাসি আমার লজ্জাবতী কে,,,তীয়া কখনো আমাকে ভুল বুঝবে না,,, সংসারে অশান্তি হবেই কিন্তু তুমি কখনো মুখ ফিরিয়ে নেবে না,,, আমাকে বোঝার চেষ্টা করবে। আমার মা,বাবা আর বোনকে ভালোবাসবে,দেখবে ওরা তোমাকে মাথায় করে রাখবে।

-ঠিক আছে,, আমাকেও একটু সামলে নেবে তুমি,,যদি কখনো ভুল করি শুধরে দেবে তুমি।আমি যে তোমাকে ছাড়া অচল,,

-আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো তীয়া,,,, আজ থেকে শুরু হোক আমাদের নতুন জীবনে নতুন ভাবে পথ চলা,,,

তারপর দুজনেই ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দেয়,,,,

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here