হৃদয়হরণী পর্ব ১০

0
666

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১০

-বিদায় পর্ব চলার সময় কাঁদতে কাঁদতে অশোক বাবু ,দেবেন্দ্রবাবুর হাত দুটো ধরে বলে ওঠে,,

-আমি আমার মাকে কিন্তু তোর ঘরে পাঠাচ্ছি ওর খেয়াল রাখিস,,কোনো ভুল করলে মানিয়ে নিস,,একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিস।

-চুপ কর অশোক,, অদ্বিতীয়া আমার মেয়ে,,ওকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না,,ঐ বাড়িতে পেখু যেমন থাকবে ,অদ্বিতীয়া সেই ভাবে থাকবে।

-অনুপমার তো অবস্থা খারাপ কাঁদতে কাঁদতে,,, অদ্বিতীয়া আবিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,,, আবির আর নিজেকে সামলাতে পারেনি,,, তারপর পুলকের হাতে অদ্বিতীয়ার হাত তুলে দিয়ে বলে আমি আমার জীবনের মূল্যবান সম্পদ তোর কাছে দিচ্ছি তার যত্ন নিস,,পুলক আশ্বাস দেয় আবিরকে,,,এদের সবার কান্না দেখে পেখম কেঁদে ফেলে,,তারপর দৌড়ে অনুপমার কাছে যায়,,,গিয়ে বলে”তোমরা কেন কাঁদছো কাকিমা ,,বৌমনি আমাদের বাড়িতে খুব ভালো থাকবে তুমি দেখো,,,আর যেখানে আমি আছি তাহলে কেন চিন্তা করছো??

-না রে মা চিন্তা করছি না,,, আমি জানি আমার মেয়ে ওখানে ভালো থাকবে।(তারপর বিদায় পর্ব শেষ হলে ওরা বেরিয়ে যায়,,,)
___________________________________________

-তাড়াতাড়ি কর ওরা এসে গেছে,,,তোরা সব কোথায়??উলু দে ,শাঁখ বাজা,,বলেই বরণ ডালা হাতে নিয়ে দরজার সামনে গেল মনোরমা,,তারপর সবাই মিলে ওদের বরণ করে ঘরে আনলো,,,পুলক আর অদ্বিতীয়া কে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে স্ত্রী-আচার যা আছে সব পালন করানো হল,,,

-পেখম যা তীয়াকে পুলকের ঘরে নিয়ে যা,,,,তীয়া যা তুই স্নান করে একটা শাড়ি পড়ে ড্রয়িংরুমে চলে আয়,,,(মনোরমা)

-তারপর পেখম অদ্বিতীয়া কে পুলকের ঘরে রেখে নিজেও চলে যায় ফ্রেশ হতে। অদ্বিতীয়া পুলকের ঘরটা ভালো করে দেখছে,একদম ওর মন মতো সাজানো ঘরটা। দেওয়ালে পুলকের ছবি দেখে ও বলে ওঠে”আমি ভাবতেই পারছি না যে, আপনাকে আমি সারা জীবনের জন্য পেয়েছি। এটা আমার সৌভাগ্য আপনার মতো স্বামী পেয়েছি বলে পুলক‌।

-আর আমিও খুব ভাগ‍্যবান যে তোমার মতো স্ত্রী আমি পেয়েছি তীয়া(ঘরে ঢোকার সময় অদ্বিতীয়ার কথা গুলো শুনে পুলক বলে ওঠে)

-পুলকের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে অদ্বিতীয়া,,, আর হাত দিয়ে শাড়িটা শক্ত করে ধরে,, এই মানুষটা তার স্বামী ভাবলেই মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরণ জাগে। অদ্বিতীয়া কে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে পুলক তার হাত দিয়ে আজলা করে ধরে অদ্বিতীয়ার মুখ,,তারপর একটু উচু করে তাকিয়ে থাকে ওর চোখের দিকে,,, দু-জোড়া চোখ একত্রিত হলে অদ্বিতীয়া লজ্জায় আবারো মুখ নিচু করে নেয়,,আজ ও ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে,,

-তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে তীয়া??

-তীয়া মাথা নেড়ে না জানায়।

-তাহলে যাও ফ্রেস হয়ে নাও,,,আমি আসছি,,,

-কোথায় যাচ্ছেন??

-একটু ড্রয়িংরুমে যাচ্ছি, কাজ আছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি পেখু কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
____________________________________________

-পেখম আর বান্ধবীরা সবাই মিলে অদ্বিতীয়া কে শাড়ি পড়িয়ে একটু সাজিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেল,,অদ্বিতীয়া ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখলো যে সেখানে অনেক লোকজন,, সবাই প্রায় অচেনা,,, ওর মনে মনে ভয় হতে লাগলো,,,,পেখমের সাথে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল,,,ওদের আসতে দেখে মনোরমা বলে উঠল
তীয়াকে,”আয়তো আমার পাশে বস”,,,মনোরমার কথা মতো তীয়া তার পাশে গিয়ে বসলো,,,অদ্বিতীয়া দেখছে মনোরমা একটা প্লেটে গরম ভাতটাকে, গরম গরম খাশির মাংসের ঝোল দিয়ে মাখছে,,তারপর ভাতের এক লোকমা নিয়ে তীয়ার মুখের সামনে এগিয়ে বললো”হা করতে” তীয়া শুধু অবাক হয়ে দেখছে,,,

-কি হলো তীয়া হা কর,,(তীয়া হা করলে মনোরমা ভাত খাওয়াতে লাগলেন, )

-কাকিমা আর খাবো না,,(তীয়া কথাটা বলে উঠলে মনোরমা একটু ধমকে উঠে বলেন)

-এই কে তোর কাকিমা?? এখানে কোথায় তোর কাকিমা,,,, এখানে এখন কোনো কাকিমা নেই,,,যে আছে সে হল তোর মা,,,বল মা বল,,তীয়া মনোরমার কথায় কাঁদতে কাঁদতে মনোরমার কোমড় জড়িয়ে মুখ গুজে দেয়,,,,আর মনোরমা পরম স্নেহে তীয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে” আমি তোর মা তীয়া,, আজ থেকে আমাকে মা বলেই ডাকবি। শুনলাম ঐ বাড়িতে ভীষণ কান্নাকাটি করেছিস,,,শরীর দুর্বল তোর এই ভাত গুলো খেতেই হবে না হলে আমি কিন্তু খুব বকবো,,,তখন যেন আবার বলিস না প্রথম দিন বাড়িতে এসে শাশুড়ির কাছে বকা খেয়েছি”।

– মনোরমার কথায় তীয়া হেসে ফেলল,,,তারপর বলে ওঠে” দোষ করলে অবশ্যই বকবে তুমি মা,,এখন দাও খাইয়ে দাও”

-বৌমনি মা আগে শুধু আমাকে আর দাভাই কে খাইয়ে দিতো,,এখন দল ভারী হয়ে গেছে তুমি এসেছো বলে,,,ও মা শুধু কি বৌমনিকে একা খাইয়ে দেবে আর আমি বাদ??,,,(ঠোঁট উল্টিয়ে পেখম বলে)

-অদ্বিতীয়া পেখমকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে বলে” ও মা ওকেও খাইয়ে দাও ,নাহলে দেখছো তো কেমন বলছে,,,

-হ‍্যাঁ খাইয়ে দি,নাহলে তোর এই রায়বাঘিনী ননদীনী আবার তোর পিছনে লেগে থাকবে। ননদ হইতে সাবধান তীয়া,,,

-ওদের কথায় ড্রয়িংরুমে সবাই হেসে উঠলো,,,

-আর পেখম মুখ গোমড়া করে বলে”আমি মোটেও সেই টাইপের ননদ না মা,,,বৌমনি আমি কিন্তু ভালো ননদ,,,

-পেখমের কথায় আর একবার হাসির রোল পড়ে গেল সারা ঘরে,,আর এই দৃশ্য গুলো অনেকক্ষণ ধরে পুলক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে,,এবার ও ড্রয়িংরুমে মার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো,, তারপর মনোরমার উদ্দেশ্যে বলে

-” মা আমি কি দোষ করলাম”???

-পুলকের কথার মানে বুঝতে না পেরে সবাই প্রায় তাকিয়ে পড়ে পুলকের দিকে।

-তখন পুলক বলে”আমি কি দোষ করলাম মানে হলো,তুমি পেখু আর তীয়াকে খাইয়ে দিচ্ছো,,কই একবার আমার কথাতো বললে না,,,

-ওরে আমার বদমাইশ ছেলে,,,এই ব‍্যাপার ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চেয়ারে বসে পর,,,লতা আমার প্লেটে আর একটু ভাত দিয়ে যা আর মাংসের পাত্রটা এখানেই নিয়ে আয়।তারপর মনোরমা ওদের তিন জনকেই একসাথে খাইয়ে দিলো।
__________________________________________

-সন্ধ্যার পরে পেখমের ঘরে আড্ডার আসর বসেছে,,,মনোরমা আজকে বলেছে তীয়াকে ও যেন পেখমের কাছে থাকে আজ রাতে,,,আজ কালরাত্রি ও যেন পুলকের মুখ না দেখে,,,তাই সন্ধ‍্যে থেকেই তীয়া পেখমের ঘরে আছে,,,

-পেখু আমার একটা জিনিস ঐ বাড়ি থেকে এনে দিবি,,,

-কি জিনিস বৌমনি??

-আমার মেডিসিন, কিছু টুকটাক জিনিস একটা ব‍্যাগে গুছিয়ে রেখেছিলাম ঘরে,,,এখন দেখছি ওরা সব পাঠিয়েছে শুধু ঐ ব‍্যাগটা পাঠাইনি,,,

-আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না,,আমি যাচ্ছি,,

-শোন তুই তোর বন্ধুদের নিয়ে যেতে পারিস সাথে,,,

-ঠিক আছে,, প্রিয়া ,রুশা চল তাহলে,,,

-এই আমরা দুজন চলে গেলে বৌমনির কাছে কে থাকবে(রুশা)

-আচ্ছা তাহলে তোরা দুজন থাক,,আমি তিতাস কে নিয়ে যাচ্ছি,,,

-পেখম ওর মাকে বলে তিতাস কে নিয়ে অদ্বিতীয়া দের বাড়ি গেল,,,,
___________________________________________
– রেখা দেখতো কে এল??

-ও কাকিমা আমাদের পেখম রানী আর তিতাস বাবু এসেছে,,,(রেখা)

-পেখু আয় বস,,,তুই এই সময়,,ঐ বাড়িতে সব ঠিক আছে তো??(অনুপমা)

-হ‍্যাঁ সব কিছু ঠিক আছে,,আমি শুধু বৌমনির ব‍্যাগ নিতে এলাম,,যেটা তোমরা ভুল করে দাওনি,,

-ওও ওটাতো আবিরের ঘরে,ও একটু পরেই দিয়ে আসতো,,আসলে তখন এসব মাথায় ছিল না,, তুই এসেছিস ভালো হয়েছে একটু বস আমি কফি করেছি খেয়ে যা,,,তিতাস আইসক্রিম খাবে সোনা??

-হ‍্যাঁ খাবো মাসিমনি,,,(তিতাস)

-আচ্ছা পেখম তুই এক কাজ কর দুকাপ কফি দিচ্ছি ,একেবারে আবিরের রুমে যা গিয়ে ওকে কফি দিয়ে তুইও খেয়ে নে,,তারপর ব‍্যাগটা নিয়ে আয়,,আমি আবিরকে বলছি তোদের কে ও এগিয়ে দেবে ,,,তিতাস চলো আমার সাথে ঐ ঘরে সবাই তত্ত্ব সাজাচ্ছে দেখবে,,,(অনুপমা)

-পেখম অনুপমার কাছ থেকে কফি নিয়ে আবিরের ঘরের দিকে গেল,,
___________________________________________

-ঘরের দরজা টা ভেজানো ছিল,, দরজা টা খুলে দেখে ঘরের সব লাইট অফ ,শুধু মাত্র নীল মৃদু আলোটা জ্বলছে আর তাতেই ঘর যেন আলোময় হয়ে আছে,,,পেখম সেন্টার টেবিলের উপর কফির ট্রে টা রাখলো,,তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে আবির ঘুমিয়ে আছে,,, ঘুমন্ত মুখ টা কি নিষ্পাপ লাগছে ওর কাছে। এই ঘুমন্ত মুখটা দেখে ও শতবার প্রেমে পড়তে রাজী,,শুধু ও কেন যে কোন মেয়েই প্রেমে পড়ে যাবে,,,পেখম হঠাৎ অনুভব করলো ওর ভীষণ হিংসা হচ্ছে,,একটা মানুষ ঘুমিয়ে থাকলে তাকে এত সুন্দর দেখতে কেন লাগবে,,,

-আবিরের ঘুমন্ত মুখটাই কেমন মায়া কাজ করছে,, পেখমের আর ইচ্ছে হলো না মানুষটাকে ডাকার,,,একটু ঘুমাক,,এই কদিন ভীষণ পরিশ্রম গিয়েছে মানুষটার উপর দিয়ে,,, হঠাৎ পেখমের খুব মায়া হল আবিরের প্রতি,,,ওর ইচ্ছা করছে আবিরের কপালে একটা উষ্ণ স্পর্শ করতে, তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। নিজের মনের সাথে পেরে না উঠে ও আস্তে আস্তে আবিরের বিছানার সামনে গেল,,তারপর খুব ধীরে ওর পাশে বসলো।

-নিজের মনের ইচ্ছা টা আর দমিয়ে রাখতে পারলো না,,, খুবই সন্তপর্ণে আবিরের কপালে ও মাথায় নিজের অধরের উষ্ণ স্পর্শ দিলো। ক্ষনিকের জন্য ও স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল, যে ওর দ্বারাই এটা কি হল,,,তারপর খুবই সাবধানে আস্তে করে সরে আসতে চাইলে হঠাৎ আবির ওর হাত ধরে ফেলে। ভয়তে পেখম কেঁপে ওঠে,, এই বুঝি ও ধরা পড়ে গেল এই ভয়তে রীতিমতো কাঁপছে ও,,কিন্তু ওর ভয়টা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না,ও দেখে আবির ওর হাতটাকে ঘুমের মধ্যেই বুকে জড়িয়ে রেখেছে,,,, পেখম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আর তখনই আবির ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে ওঠে”রাত প্রেয়সী হাতটা ছাড়িয়ে নিচ্ছো কেন?? আজকাল তুমি বড্ড বেশি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো,সেটা কি তুমি জানো??

-পেখম চুপচাপ বসে থাকে,,,হঠাৎ ও অনুভব করে ও হৃদয়ের গতিবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে,,, নিজেকে খুব কষ্টে সামলে ও ধীর গলায় বলে”আবির দা”,,,

-ওর কথা পুরো করতে না দিয়ে আবির বলে ওঠে”স্বপ্নেও তো তুমি কখনো আমাকে আবির দা বলে ডাকো না পাখি,,তবে আজ কেন?? আজকাল স্বপ্নেও আমার কথার অবাধ্য হও তুমি। এত বেশি অবাধ্য হলে কিন্তু আমি আদর দিয়ে তোমাকে বাধ্য করে তুলবো”।শেষের কথাটা বেশ ধমকের সুরেই বলে ওঠে আবির।

-পেখম মনে মনে ভাবছে মানুষটা তাকে স্বপ্নে ভাবছে,,,আবার স্বপ্নের মধ‍্যেও ধমক দিচ্ছে,,, এখন আমি এখান থেকে কি করে বের হবো?? যেভাবে উনি আমার হাত ধরে রেখেছেন ,তাতে আমি একটুও নড়তে পারবো না,,, কেন যে উপরে এলাম?? এলাম তো এলাম কি দরকার ছিল আদর করার?? এখন কি হবে,,,,ও ভগবান,,,এইসব চিন্তার মধ্যে আবির বলে ওঠে”সে কি জানে আমার এই বুকটা মাঝে মাঝে চিনচিন করে ওঠে?? সে কি জানে এই বুকটা মাঝে মাঝেই ফাঁকা লাগে,,তখন মন চাই তার মাথাটা এনে এই বুকের মাঝে চেপে ধরে তাকে শোনায়, এই বুকের মাঝে হৃদয়ের প্রত‍্যেকটি হৃদস্পন্দন তার নামের,,,শুধু তার নামের,,, সে আমার হৃদয়হরণী”।

-আবিরের কথা শুনে পেখম কেঁদে ফেলে,,,মানুষটা তাকে এত ভালোবাসে জেনে ও আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না,, আবিরের বুকের উপর মাথা রেখে দিলো,,,আবির মুচকি হেসে পেখমকে আরও ভালো করে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো,,,এইভাবে কিছু সময় যাওয়ার পর পেখম আবিরের বুকে নিজের অধর দুটি ছুঁইয়ে দিলো,,,আবির পেখমের ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারে নি,, ও পেখমের সারা মুখে ,ঘাড়ে, ঠোঁটে ,মাথায় অসংখ্য বার চুমু খেল,,তারপর পেখমের কোমল পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটির মাঝে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো,,আর পেখম ভালোবাসার মানুষটির দেওয়া আদর গুলো উপলব্ধি করতে লাগলো,,,,

-একসময় আবির থেমে যায়,,, আলগা হয়ে যায় হাতের বাঁধন,,,পেখম তখন আবিরের মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখে মানুষটি দিব্বি ঘুমাচ্ছে,,,,এইসব হয়তো মনে থাকবে না,হয়তো থাকবে স্বপ্ন ভেবে,,কিন্তু কোনোদিন জানতেও পারবে না আজ আমি সত‍্যিটা এসেছিলাম তার কাছে,,, এটা স্বপ্ন নয়,,, এই সব ভেবেই বিছানা থেকে নেমে অদ্বিতীয়ার ব‍্যাগটা সোফা থেকে নিয়ে আর কফিমগটা নিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে,,,,

-পেখম যাওয়ার পর আবির চোখ মেলে তাকায়, পেখম যখন এই ঘরে ঢোকে তার কিছুক্ষণ পরেই আবিরের ঘুমটা ভেঙে যায়। তারপর পেখমের কাছে থেকে পাওয়া প্রথম ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে আবির নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। কিন্তু যখন দুজনেই ধীরে ধীরে একে অপরের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল, ঠিক সেই সময় আবির নিজেকে সামলে নেয়,,ও চাইনা আবেগের বশে পড়ে কোনো ভুল করে ফেলুক,আর পরে তার জন্য পেখমের কোনো ক্ষতি হোক। ও চেয়েছিল ওদের প্রথম স্পর্শ হবে ভালোবাসার, ভালোলাগার,,, আর সেটা ও পেখমের স্পর্শে অনুভব করেছে,তাই ও সাড়া দিয়েছিল ক্ষনিকের জন্য,,,ওর ভাবতেও ভালো লাগছে ওর রাত-প্রেয়সী ওকে ভালোবাসে,,গভীর ভাবেই ভালো বাসে।
___________________________________________

-আজ আর আবিরের ঘুম আসছে না আনন্দে,,,এইদিকে সব কিছু গুছিয়ে,বাবা মার সাথে কথা বলে ঘরে আসে। তারপর লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ব‍্যালকনিতে চলে যায়।

-এইদিকে পেখম সেই তখন থেকে ব‍্যালকনির দোল্লায় বসে তখনকার কথা গুলো ভাবছে,আর যতবারই ভাবছে ততবারই লজ্জায় নুইয়ে পড়ছে।আবিরের দেওয়া আদরের কথা মনে পড়তেই ও বারবার শিহরিত হচ্ছে,, ওর ভাবনার মাঝেই সেই চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে এল কানে,,

-পাখি এত রাতে কি করছিস এখানে??

-পেখমের এখন আবিরের দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে,,,কোনো ক্রমে নিজেকে সামলে ও বলে” আসলে আবির দা ঘরে বৌমনি ফোনে দাভাই এর সাথে কথা বলছে তো ,,আর প্রিয়া, রুশা গান শুনছে,,,ঘুম আসছিল না বলে তাই দোল্লায় বসে আছি,,,

-এখনই ঘরে যাবে,,আর ঘুমিয়ে পড়বে,,,বেশি অসুবিধা হলে কানে হেডফোন দিয়ে একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ো।যাও অনেক রাত হয়েছে,,এর থেকে বেশি জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে পাখি।

-পেখম আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় ঘরে,,কিন্তু যাওয়ার আগে আবিরকে বলে যায় আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন আবির দা,,,কাল আবার আপনাকে সকাল সকাল উঠতে হবে। আবিরের তখন মন খুব করে চাইছিলো পেখমকে বলতে” আমি ঘুমিয়ে পড়লে তুমি কি আবার আসবে আমার কাছে রাত-প্রেয়সী”??

চলবে,,,,

(সবাই রিয়‍্যাক্ট ও পাঠ-প্রতিক্রিয়া দেবেন,,,কেমন লাগল আজকের পর্ব তা জানাবেন। কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here