#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২৩ ( শেষ)
হায়াতির থা’প্প’ড় খেয়ে অর্ণ গালে হাত দিয়ে বসে আছে। হায়াতিকে বললো, আমাকে কি তোর তবলা মনে হয় যে যখন ইচ্ছে বাজিয়ে যাবি৷ এখন আবার থা’প্প’ড় মা,’রলি কেন?
‘ আরিয়া তোকে ডেকে গেলো তুই গেলি না কেন?
‘ আমার ভালো লাগছিলোনা৷ আমি এখন ঘুমাবো৷
‘ দেখাচ্ছি তোর ঘুম। এখনই ছাদে যাবি৷ ওরা তোর সাথে কথা বলবে
অর্ণ ভাবলো, গেলেই তো বাঁ’শ রেডি আমার জন্য। বলবে রিলেশনের জন্য ট্রিট দিতে৷ আর হায়াতিও তখন ওদের হয়ে কথা বলবে৷ এজন্যই যেতে যাচ্ছিলাম না৷ কিন্তু এই ডা’ইনিটা চলে আসলো। এখন তো না যেয়ে কোনো উপায় নেই।
হায়াতি অর্ণকে জোর করে ছাদে নিয়ে গেলো। অর্ণ যেই ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো। ওরা সবাই ট্রিট দিতে বলছে অর্ণকে৷ হায়াতিও ওদের সাথে হাত মিলালো। অর্ণ বললো, আমি একা কেন দিবো। হায়াতিও ট্রিট দিবে৷
হায়াতি বললো, কখনও দেখেছিস রিলেশনে গেলে মেয়েটা ট্রিট দেয়। এসব ছেলেদের কাজ।
‘ সবাই যা করুক। আমি অর্ধেক দিবো আর তুই অর্ধেক। না হলে নাই।
‘ আমার সব খরচ তোর। লজ্জা করেনা তোর আমার কাছে টাকা চাচ্ছিস
‘ আমার এত লজ্জা নাই। টাকা- পয়সার ব্যাপারে একদমই লজ্জা নাই। তবে আমার থেকে লজ্জাহীন তুই। সবার সামনে কত সহজ ভাবে বলে দিলি রিলেশনের কথা৷ লজ্জা করলো না।
‘ তোর মত কি ভীতু নাকি সবাই। তারা আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলো অথচ আমার এক হা’দারাম বয়ফ্রেন্ড যে সাহস করে রিলেশনের কথা বলতে পারলো না।
‘ আব্বু না থাকলে অবশ্যই বলতাম। এখন তো সবার সামনে যেতেও আমার লজ্জা লাগছে৷
‘ আচ্ছা আমি তাইলে নিচে গিয়ে সবাইকে বলে দিচ্ছি আমাদের কোনো রিলেশন নেই
অর্ণ হায়াতির হাত ধরে বললো, সবসময় এমন রেগে যাও কেন। রেগে গেলে তোমাকে ডা’ইনির মত লাগে তা জানোনা।
আরিয়া বললো, আমরা এখানে তোমাদের প্রেম দেখতে আসিনি। তোমরা ট্রিট হিসেবে আমাদের ওই ভূ’তুড়ে বাড়িতে নিয়ে যাবে।
অর্ণ বললো, ভূ’তুড়ে বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ তোদের আশেপাশে কোথাও নিয়ে যাবো৷
নির্জন বললো, কি ভাইয়া তুমি। সামান্য এটুকু ট্রিট দিতে চাইছো না।
হায়াতি বললো, অর্ণ তোদের অবশ্যই ভু’তুড়ে বাড়িতে নিয়ে যাবে৷ আমি সবার থেকে অনুমতি নিয়ে আসবো৷ আর সব খরচও অর্ণ দিবে৷
অর্ণ বললো, আমার মনে হয় মা’থা ঘুরাচ্ছে। আমি রুমে যাই। তোরা আড্ডা দে
হায়াতি অর্ণর মা’থায় হাত দিলো। অর্ণকে বললো, সত্যি মা’থা ঘুরাচ্ছে।
অর্ণ দেখতে পেলো হায়াতি খুবিই সিরিয়াস তাই সত্যিটা বলে দিলো৷ এরকম ফাইজলামি করার জন্য হায়াতি রেগে আছ ওর উপর। অর্ণ হায়াতির রাগ ভাঙাতে সবাই ভূ’তুড়ে বাড়িতর নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো। তবে শর্ত দিলো, বাসা থেকে অনুমতি নেওয়ার সময় অর্ণ যেতে পারবেনা। সবাই রাজি হয়ে গেলো অর্ণর কথায়৷
অর্ণ ওর রুমে গেলো। আর বাকিরা অনুমতি নেওয়ার জন্য গেলো।
*****
কিছুদিন পর
অর্ণ সবাইকে নিয়ে সেই ভু’তুড়ে বাড়িটায় গেলো। অর্ণর সাথে রাফসান,ইশান,আয়ান,তাসফিয়া আর হিয়াও আছে। অর্ণ ওর ফ্রেন্ডদের আগে থেকেই সতর্ক করে রেখেছিলো৷ ঝামেলা হলে ওরা কি করবে সবকিছু ওর ফ্রেন্ডের বলে রেখেছে। ওরা ৬ টা বাইক নিলো। একটা বাইকে একজন যাচ্ছে আয়ান৷ অর্ণ হায়াতিকে নিয়ে সবার প্রথমে৷
কিছুদূর যাওয়ার পর অর্ণ বাইক থামালো। বাকিরাও বাইক থামিয়ে অর্ণর কাছে আসলো। অর্ণ ওর ফ্রেন্ডদের ইশারা করলো যাতে ওদের সাথে আলাদা কথা বলতে পারে।
ওরা বুঝতে পেরে কিছু একটা বাহানা বানিয়ে আলাদা হলো। অর্ণকে রাফসান বললো, কি হয়েছে?
অর্ণ বললো, লাস্ট কিছুদিন থেকে মনে হচ্ছে কেও যেনো আমাদের ফলো করছে। এখনও মনে হচ্ছে কেও ফলো করছে।
রাফসান বললো, এমন মনে হওয়ার কারন কি?
ইশান বললো, আমরা তো প্রায় চলে এসেছি। এখন কি তাহলে ফিরে যাবি৷
আয়ান বললো, কে এরকমটা করতে পারে? ওই পু’চকে নিহান না তো আবার
অর্ণ বললো, হতে পারে। কিন্তু এখন পিছু হবো না আমরা৷ ও আমাদের ব্যাপারে কিছু জানেনা তাই অযথাই ফলো করছে৷ অনেকদিন থেকে ওকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শহরে থাকা অবস্থায় তো হায়াতির জন্য তা সম্ভব না। ও আমাদের ফলো করে নিজেই সেই সুযোগটা করে দিলো। আমাদের গ্রুপের সবাইকে কল দিয়ে জানিয়ে দে৷ যতখন না আমাদের সাথে নিহানের মোকাবেলা না হয় ততখন যেনো সামনে না আসে৷ আর কাউকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবেনা। এখন এমন রিয়্যাক্ট কর যেনো কিছুই হয়নি। আমরা সি’গারেট খেয়ে যাবো। তাহলে সবাই বুঝবে আমরা সি’গারেট খাওয়ার জন্য আলাদা হয়েছি৷
অর্ণ আর ওর ফ্রেন্ডরা সি’গা’রে’ট খেয়ে বাকিদের কাছে আসলো৷ হায়াতি অর্ণর কাছে এসেই বুঝতে পারলো অর্ণ সি’গা’রে’ট খেয়েছে। হায়াতি রাগি চোখে অর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে। তাসফিয়া আর হিয়াও রাফসান আর ইশানের উপর রাগ করলো। হায়াতি অর্ণকে বললো, আগে বাসায় ফিরে আসি তখন তোর ব্যবস্থা নিবো৷
কিছুখন পর ওরা সেই ভু’তুড়ে বাড়িতে চলে আসলো। অর্ণ সবাইকে বললো, কেও যাতে আলাদা না থাকে। অর্ণ সবাইকে এই বাড়িটার ইতিহাস বলতে লাগলো। হঠাৎ সবাই খেয়াল করলো, আরিয়া ওদের সাথে নেই। অর্ণ অনেক রেগে গেলো। ওরা কেন আরিয়াকে দেখে রাখতে পারলো না। সবাই আরিয়াকে খুজতে লাগলো। হঠাৎ নিহান আরিয়াকে সাথে নিয়ে বের হলো। অর্ণ রাফসান,আয়ান,ইশানকে কিছু বলতে নিষেধ করলো। নিহান আরিয়ার গ’লায় ছু’ড়ি ধরে রেখেছে। নিহানের সাথে আরও অনেকে আছে।
অর্ণ ওর সাথে থাকা মেয়েদের, নির্ঝর,নুশানকে যেতে বললো৷ নিহান তখন বললো, সবাই যাবে শুধু হৃদিতা আর তোরা থাকবি৷ বাকিদের সাথে আমরা কোনো ঝামেলা নেই৷
অর্ণ বললো, আচ্ছা হৃদিতাকে দিচ্ছি নিয়ে যা৷
অর্ণর কথা শুনে হায়াতি থমকে গেলো। অর্ণকে বললো, পাগল হয়ে গেছো নাকি৷ কি বলছো এসব।
অর্ণ রাগিভাবে হায়াতিকে চিৎকার করে বললো, আমি যা বলছি বুঝে শুনে বলছি৷ সবাই এখন এখান থেকে চলে যাবে৷
হায়াতি অর্ণর এরকম রুপ দেখে অবাক হয়ে গেলো। ওইদিন ক্যাম্পাসে মা’রা’মা’রির সময় হায়াতি এই অর্ণকে দেখলো। তারপর আজ দেখলো।
হৃদিতা চোখের পানি মুছে বললো, ভাইয়া ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছে৷ আমার জন্য আরিয়ার কোনো ক্ষ’তি হউক তা আমি চাইনা। আমি গেলে আর কোনো ঝামেলাও থাকবেনা৷
হায়াতি বাঁ’ধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাকিরাও বা’ধা দিচ্ছে অর্ণকে৷ কিন্তু অর্ণ কারও কথা না শুনে হৃদিতাকে নিহানের কাছে দিয়ে দিলো৷ নিহান হৃদিতাকে পেয়ে অর্ণকে বললো, তোকে তো পরে দেখে নিবো।
ওরা চলে যাওয়ার পর অর্ণ সবাইকে যেতে বললো। শুধু ও একা থাকবে৷ রাফসান,আয়ান,ইশান কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু অর্ণ ওদের চুপ করিয়ে দিলো। অর্ণ কেমন অদ্ভুত আচরন করছে। এই অর্ন সবার কাছেই অচেনা৷ কেওই অর্ণকে রেখে যেতে চাইছেনা কিন্তু অর্ণ সবাইকে যাওয়ার জন্য বাধ্য করলো৷
সবাই চলে যাওয়ার পর অর্ণ কাউকে কল দিয়ে বললো, ফলো করতে।
কিছুখন পর
নিহান হৃদিতাকে একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে আসলো৷ হৃদিতাকে রুমের ভিতর নিয়ে আসলো। হৃদিতা কান্না করেই যাচ্ছে। নিহান হৃদিতাকে বললো, এখন ডাক তোর অর্ণ ভাইকে৷ ও তো নিজেই তোকে দিয়ে দিলো।
হঠাৎ সেখানে অর্ণ চলে আসলো। নিহানের কথা শুনে হাসতে লাগলো অর্ণ। নিহানের ফ্রেন্ডরা অর্ণকে কিছু বলতে যাবে তখনই ওদেরকে অন্যরা ঘিরে ফেললো। নিহান শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অর্ণ নিহানকে থা’প্প’ড় মে’রে বললো, তুই ছোট বলে কিছু বললাম না৷ তোকে যা বলার পুলিশ বলবে। এটা বলে অর্ণ হৃদিতাকে নিয়ে চলে আসলো।
****
বাসায় আসার পর অর্ণকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো৷ অর্ণ সবাইকে বললো, আমি বুঝতে পেরে পুলিশকে কল দিয়ে বলে রেখেছিলাম। তাই ওদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
সবাই অর্ণর কথায় বিশ্বাস করলো৷ নিহান এখন পুলিশের কাছে আছে। নিহানের জন্য ওর বাবারও অনেক ক্ষ’তি হয়েছে। ওর বাবা নির্বাচনে হেরে গেছে৷
অর্ণর বাসার সবাই সিদ্ধান্ত নিলো অর্ণ আর হায়াতির বিয়ে দিয়ে দিবে৷ অর্ণর মাঝে দায়িত্ববোধ আনতেই সবার এই সিদ্ধান্ত। অর্ণ যাতে আর কোনো ঝামেলায় না জড়াতে পারে। হায়াতিই একমাত্র অর্ণকে ঠিক করতে পারে।
৩ দিন পর
আজকে অর্ণ আর হায়াতির বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। অর্ণকে নিয়ে ওর ফ্রেন্ডরা ফান করতে লাগলো। অর্ণ ওর ফ্রেন্ডদের বললো, কপাল আমার! এই ডা’ইনি আমার কপালে জুটলো। জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে৷ এখন বাসর ঘরে গেলে কত যে শর্ত শুনতে হবে তার হিসেব নেই।
সমাপ্ত