#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৬
অর্ণকে দৌড়ে বাসার ভিতরে আসতে দেখে সবাই ভাবলো কি না কি হয়েছে। তার উপর আবার অর্ণের সাথে ওরা নেই৷ সবাই ভয় পেয়ে গেলো৷ অর্ণের বাবা ওকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে? এভাবে দৌড়ে আসলি কেন? ওরা কোথায়?
” এই রে! এখন পড়লাম আবার ঝামেলায়। আবার আব্বুর ঝাড়ি শুনতে হবে৷ বাসায় যে সবাই আছে তার তো খেয়ালও ছিলোনা। হায়াতিরাও এখনও আসছেনা৷ হায়াতি ইচ্ছে করেই আসছেনা যাতে আব্বু আমাকে কিছু বলে৷ আমি আব্বুকে বললাম, ওরাও আসছে। কিছু হয় নাই
‘ তুই তাহলে দৌড়ে আসলি কেন?
‘ এই মন চাইলো।
‘ পড়াশোনা ছাড়া সবকিছুর মন চায়৷ শুধু পড়তে মন চায়না
” কপাল আমার! এখানেও পড়াশোনা নিয়ে কথা। এর ভিতরে ওরাও চলে আসলো। হায়াতি আমার দিকে রাগিভাবে তাকিয়ে আছে। যাক আজকের দিনের আমার একমাত্র বিজয়। এখন কিছুটা শান্তি লাগছে।
আব্বু হায়াতিকে জিজ্ঞেস করলো, কোনো সমস্যা হয়নি তো?
‘ না বড় আব্বু।
‘ আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে নাও
আমিও আমার রুমে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে। আজকে সারাদিন যা প্যাড়ার উপর ছিলাম। এরকম যদি প্রতিদিন হয় তাহলে নিশ্চিত আমার প্রেশার লো হয়ে যাবে৷ এখন থেকে হায়াতির সব প্ল্যানের জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ তা না হলে প্রতিদিন এরকম বাঁ’শ খেতে হবে।
গ্রুপে কল দেই একটা। আজকে সারাদিন কারও সাথে কথা হয়নি। গ্রুপে কল দিতেই রিসিভ করলো সবাই।
ইশান বললো, তুই একটা বে’ইমান। রুহাশার সাথে ডেট করলি সারাদিন আমাদের বললিও না। রিলেশন শুরু হতে না হতেই ফ্রেন্ডদের ভুলে গেলি
আয়ান বললো, মামা ট্রিট দিতে হবে কিন্তু।
ওদের কথা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা৷ ওই হায়াতির বা’চ্চা না হলে আজকের দিনটা কত সুন্দর হত৷ রুহাশাকে কত কষ্ট করে পটিয়েছিলাম৷ আর ও ডা’ইনিটা ঝড়ের মত এসে সব ধংস করে দিলো৷ আমি ওদেরকে বললাম, সবই কপাল আমার! কতই না খুশিতে ছিলাম এটা ভেবে যে, অবশেষে রুহাশাকে রাজি করালাম। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো হঠাৎ একটা ডা’ইনির আগমন৷ তারপর ইতিহাসই বদলে গেলো।
রাফসান বললো, ডা’ইনি মানে? কি বলছিস? কি হয়েছে?
‘ আরে ওই হা’য়াতির বা’চ্চা কিভাবে যেনো জানতে পেরেছে আমি রুহাশাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আছি৷ ঠিক সময়ে হাজির। তারপর এমন অভিনয় করলো যা দেখে আমারই অস্কার দেওয়ার ইচ্ছে করছিলো। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলোনা৷ প্রথমেই এমনভাবে শুরুটা করলো তাতে আশেপাশের লোকজন সবাই অবাক। কপাল ভালো রুহাশা আমাকে থা’প্প’ড় মা’রেনি। তা হলে রেস্টুরেন্টে সবার সামনে আমার মানসম্মান আর বাকি থাকতো না।
ইশান বললো, কি করেছিলো হায়াতি?
‘ ওইগুলা আর মনে করাস না ভাই। মনে পড়লে এখনও আমার কান্না পায়। আমার সব প্ল্যান ওই হায়াতির বা’চ্চা মাটি করে দিছে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। আমি রুহাশার সাথে কথা বলছিলাম৷ হঠাৎ ডা’ইনিটা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বললো, আমি নাকি ওর বিএফ। ও কি’স করতে দেইনি বলে আমি নাকি মন খারাপ করে চলে এসেছি। ভাইরে ভাই তারপর রুহাশাকে আমার বোন বানিয়ে দিলো। আমাকে কিছু বলারই সুযোগ দিলোনা৷
অর্ণর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। বেচারা অর্ণ আজকে প্রথম ডেট করতে এসেই এরকম হলো৷ অর্ণ ওদেরকে বললো, তোরা হাসছিস আর আমার তখন কি অবস্থা হয়েছিলো ভাব একবার৷ রুহাশা আমাকে কত কি বলে চলে গেলো। তারপর ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো। সেগুলো হায়াতি খেয়ে বাকিগুলো বাসায় পার্সেল নিয়ে গেলো৷ বিল আমাকে দিতে হলো৷ অথচ আমি প্ল্যান করেছিলাম বিল রুহাশাকে দিয়ে দেওয়াবো।
আয়ান বললো, তাহলে আজকে ভালোই বাঁ’শ খেয়েছিস
‘ সে আর বলতে। আচ্ছা আমি যে রুহাশার সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছি তা হায়াতি জানলো কি করে? শুধু তোরা তিনজন জানতি৷ তারমানে তোরা বলেছিস। কালকে ভার্সিটিতে আসি আমার যা খরচ হয়েছে আজকে সব তোরা দিবি৷
রাফসান বললো, ভাই আমরা কিছু বলিনি৷ শুধু শুধু আমাদের দোষ দিসনা।
‘ আমি ঘুমোতে গেলাম৷ তোরা তিনজন ভাব হায়াতি কিভাবে জানলো৷ অনেক ক্লান্ত লাগছে আমি ঘুমাবো৷
অর্ণ যাওয়ার পর ইশান,আয়ান, রাফসান ভাবতে লাগলো হায়াতি কীভাবে জানলো। অর্ণ তো কাল ভার্সিটিতে এসে ওদের থেকে সব খরচ উঠাবে৷ অর্ণ রুহাশার সাথে রেস্টুরেন্টে যাবে এটাতো ওরা তিনজন ছাড়া আর কেও জানতো না৷ তাহলে হায়াতি জানলো কি করে? হতে পারে হায়াতি অর্ণকে রেস্টুরেন্টে যেতে দেখেছে৷
******
আজকে খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠলাম৷ হায়াতির আগেই ঘুম থেকে উঠেছি৷ রাতে ঘুমানোর সময় চমৎকার একটা প্ল্যান মাথায় আসছে। সেটা প্রয়োগ করার জন্যই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা৷ আমি ব্রাশ করতে করতে নিচে নামলাম। সবাই ভূ’ত দেখার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম, মনে হয় যেনো সবাই ভূ’ত দেখে ফেলছো
ছোট আম্মু বললো, ভাবছি আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠলো৷ তুমি আজকে এত সকালে ঘুম থেকে উঠলে। তাও আবার হায়াতিরও আগে৷
‘ বেশি ঘুমানো উচিত না। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা শরীরের জন্য ভালো৷ আমি তো আর হায়াতির মত না যে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করবোনা।
ছোট চাচ্চু বললো, এর আগে কোথায় ছিলো এই স্বাস্থ্য সচেতন৷ সবসময় তো অনেকবার ডাকলেও ঘুম থেকে উঠতিস না৷ তোর আগে তোর ছোট ভাই- বোনরাও উঠতো। আজকে হঠাৎ কি হলো? নাকি রাতে ঘুমাসনি
‘ রাতেই স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে একটু হাটাহাটি করে তারপর নাস্তা করতে হবে। থাকো তোমরা।
হায়াতির স্কুটির কাছে আসলাম৷ এখন কেও দেখার আগেই হায়াতির স্কুটির তার কেঁটে দিতে হবে। পকেট থেকে প্লাসটা নিয়েই কাজে লেগে পড়লাম৷ তারপর রুমে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেনো আমাকে ডাকাডাকি করছে৷ চোখ খুলে দেখলাম নির্ঝর৷ ওকে বললাম, কি হয়েছে? এত সকাল সকাল ডাকছিস কেন?
‘ তুমি নাকি আজকে অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছো তাহলে আবার ঘুমাচ্ছো কেন? অনেক বেলা হয়ে গেছে। ভার্সিটিতে যাবেনা?
যাবোনা মানে। আরও আগে ডাকতে পারলিনা৷
তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছোট আম্মু বললো, স্বাস্থ্য সচেতনের কথা বলে আবার ঘুমালে কেন
‘ আর বলো না বিছানায় যেতেই চোখ বন্ধ হয়ে গেলো৷
হায়াতি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে৷ ডা’ইনিটা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কারন ছাড়া এত সকালে ঘুম থেকে উঠার লোক না।
নাস্তা শেষ করে৷ টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম৷ একটু অপেক্ষা করলাম। কারন এখনই তো শুরু হবে হায়াতি অনেক চেষ্টা করেও স্কুটি স্টার্ট দিতে পারলোনা৷ আব্বু এসে বললো, কি হয়েছে?
হায়াতি বললো, স্কুটি স্টার্ট হচ্ছেনা৷ এদিকে ভার্সিটিরও দেঁড়ি হচ্ছে
আব্বু আমাকে বললো হায়াতিকে নিয়ে যেতে৷ এই সুযোগটাই তো খুজছিলাম৷ আমি আব্বুকে বললাম, তেল নাই বাইকের
আব্বু আরও কিছু টাকা দিলো৷ হায়াতি হয়তো আমার প্ল্যান বুঝতে পেরেছে। তাই রাগিভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি ডা’ইনিটাকে বললাম, তাড়াতাড়ি ওঠ বাইকে।
****
হায়াতি বললো, তুই আমার স্কুটির তার কেঁটেছিস তাইনা?
চলবে….
ঈদ মোবারক সবাইকে। আপনাদের সবার ঈদ আনন্দময় হউক ইনশাআল্লাহ।