হৃদহরিনী পর্ব ৫

0
337

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৫
রুহাশা হায়াতিকে বললো, আপনি রেস্টুরেন্টের ওই আপুটা না? সাথে আবার ওই ব’দমাশ ছেলেটাও আছে! আবার সুযোগ দিচ্ছেন ওকে। যে আপনাকে ঠকিয়েছিলো তাকে সুযোগ দিয়ে অনেক বড় ভুল করছেন৷ সামনে হয়তো আবার কোনো মেয়ের পিছু যাবে৷

‘ কি আর করবো আপু! এত বছরের রিলেশন চাইলেই তো আর সবকিছু শেষ করা যায়না৷ ও আমার প্রতি সিরিয়াস না হলেও আমি তো ওকে ভুলতে পারবোনা৷ অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি ওকে৷ তাইতো সবসময় ওর পিছু পড়ে থাকি। ও কোথায় যায় কি করে সবসময় খোজ- খবর রাখি

‘ আপনার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছি আপু৷ একবার কাউকে ভালোবাসলে সে যতই ইগনোর করুক না কেনো তাকে ভুলে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ তা এখন কি ওই ব’দমাশ ছেলেটাকে সবসময় আপনার সাথে রাখেন

‘ হ্যা আপু! বলা তো যায়না আবার যদি অন্য মেয়ের পিছনে পড়ে৷ তাই আমি কোথাও গেলে ওকেও সাথে করে নিয়ে যাই।

‘ এটা ভালো আইডিয়া আপু

অর্ণ ভাবতে লাগলো, ডা’ইনিটা আর রুহাশা একে অপরের সাথে কি কথা বলছে? আমাকে নিয়েই কিছু একটা বলেছে তা বুঝতো পারছি। না এভাবে ওদের দিকে তাকানো যাবেনা৷ আমি বরং আশপাশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করি।

রুহাশা হায়াতিকে বললো, দেখছেন আপু আপনি সাথে আছেন তারপরও কিরকম মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে। ওরে আপনি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারেন আপু! আপনি সাথে আছেন তাতেই এই অবস্থা। যখন আপনি থাকেন না তখন ওই ব’দশাশটা কি করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

‘ কি আর করবো আপু! আস্তে আস্তে ওকে ঠিক করতে হবে৷ একদিন ও আমার ভালোবাসা বুঝবে৷ তখন আমার মূল্য ও বুঝবে। আচ্ছা তোমার সাথে কে?

‘ আমার ফ্রেন্ড আপু৷ আচ্ছা আপু গেলাম আমরা। আপনি ওই ব’দমাশ ছেলেটার উপর একটু নজর রাখুন৷

রুহাশা যাওয়ার আগে অর্ণর কাছে আসলো। অর্ণ ওর দু-গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ থা’প্প’ড় মা’রলে সেইফটি হিসেবে থাকবে৷ রুহাশা অর্ণকে বললো, তোর মত ছ্যা’চড়া ছেলে আমার জীবনে আর কখনও দেখিনি৷ একটা মেয়ে তোকে এতটা ভালোবাসে আর তুই কিনা তাকে রেখে অন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়াস।

‘ কপাল আমার! এরকম কোনো মেয়ে আমাকে ভালোবাসলে আমি তো ধন্য হয়ে যেতাম।

‘ থা’প্প’ড় মে’রে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো৷

এজন্যই তো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ রুহাশা চলে যাওয়ার পর আমি গভীর ভাবনায় পড়ে গেলাম। কোন মেয়ে আমাকে ভালোবাসে? রুহাশা কার কথা বলে গেলো৷ যেখানে আমি অন্য মেয়ের পিছনে দৌড়াই সেখানে একটা মেয়ে আমাকে এতটা ভালোবাসে আর আমি জানিই না! হায়াতির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও হাসতে লাগলো। এবার পুরো ঘটনা বুঝতে পারলাম। হায়াতি উল্টা- পাল্টা বলেছে রুহাশাকে৷ যে ১% সুযোগ ছিলো এখন তাও নেই৷ হায়াতির বা’চ্চা এটা তুই কি করলি। আচ্ছা রুহাশার সাথে ওই ছেলেটা কে হতে পারে?

হায়াতিকে বললাম, হায়াতির বা’চ্চা তুই রুহাশাকে কি বলেছিস? ও আমাকে কত কি শুনিয়ে গেলো!

ডা’ইনিটা হাসতে হাসতে বললো, ওর পিছনে থেকে লাভ নেই৷ ওই যে ছেলেটাকে দেখলিনা ওটা তোর বিএফ

‘ কপাল আমার! আমি বিশ্বাস করিনা!

‘ তুই বিশ্বাস না করলেই বা কি! তোর সাথে হুদাই ডেট করতে গেলো। ভেবেছিলো লান্চ করে চলে আসবে

‘ আমার রুহাশা এমন না। সব হয়েছে তোর জন্য। তুই ওকে উল্টা- পাল্টা বলেছিস।

‘ এক কাজ কর তুই ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাক তারপর হঠাৎ একদিন দেখবি রুহাশার বেবি তোকে মামা ডাকবে

‘ কপাল!

আরিয়া এসে বললো, তোমরা এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে আছো। আর ওই আপুটা কে?

আরিয়ার কথা শুনে ডা’ইনিটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে লাগলো৷ ডা’ইনিটা আমাকে বুঝাতে চাচ্ছে, এখন যদি আরিয়াকে বলে দেয় তাহলে কি হবে৷ ডা’ইনিটাকে বিশ্বাস নেই আমি ওকে ইশারায় আরিয়াকে বলতে নিষেধ করলাম। যাক অবশেষে একটা ভালো কাজ করলো। ডা’ইনিটা আরিয়াকে কিছু বললো না৷ ওরা ওদের মত চলে গেলো আর আমি ওদের অনুসরন করছি।

****
রাত হয়ে গেলো। আমি ওদেরকে বললাম, রাতের খাবার তো আমরা বাসায় গিয়েই খেতে পারি৷ সবাই তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা বাহির থেকে ডিনার করে গেলে তাদের হয়তো খা’রাপ লাগবে। আরও কিছুখন থেকে আমরা বাসায় গিয়ে খাবার খাবো। পরিবারের সবাই একসাথে খাওয়া মানে অন্যরকম তৃপ্তি!

হৃদিতা বললো, ভাইয়া তুমি এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কিভাবে। খরচ কমানোর ভালোই প্ল্যান করে রেখেছো।

হায়াতি বললো, আমরা বাসায় বলে এসেছি বাহিরে খাওয়ার কথা৷ তাই কেও আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেনা৷ তোর অযথা মন খা’রাপ করতে হবেনা সবার জন্য।

আরিয়া বললো, ভাইয়া আমাদের ট্রিট দিবে তাতেও এরকম করছো। তোমার জিএফ থাকলে তাকে তো ঠিকই ট্রিট দিতা

” কপাল আমার! দিতে আর কই পারলাম। এই ডা’ইনিটার জন্য তো সব গেলো। মনের কথা মনেই রাখলাম। নুশান আর নির্ঝরকে বললাম, তোরা কিছু বলবিনা। তোরা চুপ কেন

নির্ঝর বললো, আমাদের আর কিছু বলা লাগবেনা৷ বাকিরা যা বলেছে তাতেই হবে।

হঠাৎ হৃদিতার ফ্রেন্ড হিয়া আসলো। আমার কপাল আরও খা’রাপ হতে লাগলো। এখন যদি হৃদিতা ওরে ডিনার করতে বলে আমাদের সাথে তখন বিল আরও বাড়বে। কপাল আমার! আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা। যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হলো৷ হৃদিতা ওর ফ্রেন্ডকে আমাদের সাথে ডিনার করতে বললো। মেয়েটা রাজি হলোনা কিন্তু হায়াতি ওকে জোর করে আমাদের সাথে বসালো৷ ডা’ইনিটা আমাকে বাঁ’শ দেওয়ার জন্যই এটা করছে। হিয়া আমাকে বললো, ভাইয়া কেমন আছেন?

আমি বুকে কষ্টের পাহাড় চেপে রেখে বললাম, এইতো ভালো। তুমি কেমন আছো? বসো আমাদের সাথে আমি সবাইকে ট্রিট দিচ্ছি৷

‘ তাহলে তো বসতেই হয়। ট্রিট বলে কথা৷

আমি ভাবলাম ট্রিট যখন দিবোই তখন ক্রেডিট তো নিতেই হবে৷ তা না হলে ওই ডা’ইনিটা বলবে ও ট্রিট দিচ্ছে। তাই আমিই আগে বলে দিলাম৷

****

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিকশা নিলাম। হায়াতি বললো, আমি অর্নর সাথে যাবো৷ তা না হলে ও রিকশা ভাড়া না দিয়েই বাসায় যাবে।

‘ কপাল আমার! তাড়াতাড়ি উঠ রিকশায়। অনেক দূর্বল লাগতেছে৷ বাসায় গিয়ে ঘুম দিবো

‘ আমার হাত ধর।

‘ সবকিছু পারিস একা রিকশায় উঠতে পারিস না?

‘ আমি শাঁড়ি পড়া দেখতে পারছিস না। একা উঠতে পারবোনা।

‘ এমনিতেই তো পে’ত্নির মত লাগে শাঁড়ি পড়লে আরও পে’ত্নির মত লাগে

‘ তোর প্রশংসা আমার দরকার নেই

হইছে এখন হাত দে। ডা’ইনিটাকে হাত ধরে রিকশায় উঠালাম। রিকশা চলতে লাগলো হঠাৎ ভাঙার উপর রিকশার চাকা পড়ে ডা’ইনিটা আমায় উপরে এসে পড়লো৷

‘ ওই তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি কেন?

‘ আমি কি ইচ্ছে করে ধরেছি নাকি৷ রিকশার জন্যই তো হলো

‘ তুই ভালোভাবে বসবিনা৷

‘ ওই তোর মত ব’দমাশরে আমি জড়িয়ে ধরতে যাবো আমারে কি পা’গল মনে হয়

‘ তুই ডা’ইনি, পে’ত্নি

হায়াতি আমার মা’থার চুল টেনে বললো, আবার আমায় এসব বললে তোকে রিকশা থেকে ফেলে দিবো।

কিছুখন পরই বাসার কাছে এসে রিকশা থামলো। আমি হায়াতিকে রিকশা থেকে নামিয়ে সাথে সাথেই দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে গেলাম৷ হায়াতি আমাকে বলতে লাগলো, ফা’জিল,ব’দশাশ আজকে তোর কপালে ঘুম নাই

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here