হৃদহরিনী পর্ব ৩

0
437

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৩
আরিয়া হায়াতিকে বললো,এটা কি হলো আপু? ভাইয়া অসুস্থ হয়ে পড়লো নাকি? চলো সবাইকে গিয়ে বলি৷ হৃদিতা সবাইকে ডাকতে যাবে তখনই হায়াতি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আরে কাউরে ডাকা লাগবেনা। আমরা এখন ওর রুমে ডা’কাতি করবো৷ ওর ওয়ালেট খোজ করো সবাই

নির্ঝর বললো, অর্ণ ভাইয়ার কি হবে? ভাইয়া তো মা’থা ঘুরে পড়ে গেলো। ভাইয়াকে তো হাসপাতালে নিতে হবে।

” আমি ওদের কথা সব শুনছিলাম। আমার জন্য কত মায়া ওদের। শুধু ওই হায়াতির বা’চ্চা ছাড়া৷ আমি মা’থা ঘুরে পড়ে আছি আর ওই হায়াতির বা’চ্চা আমার ওয়ালেট খোজ করছে। ডা’ইনি একটা। ওর মনে কোনো মায়া মমতা নাই!

আরিয়া বললো, আপু আমার ভয় করছে! যদি অর্ণ ভাইয়ার কিছু হয়ে যায়। আপু চলো সবাইকে বলে অর্ণ ভাইয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।

” আহ! আমার বোনটা। কত চিন্তা আমার জন্য। ওর কথায় আমি মুগ্ধ বইনা। কিন্তু যত যাই হোক আমাকে তো মা’থা ঘুরেই পড়ে থাকতে হবে। আমি নিরুপায় বইনা। তোর এই অধম ভাইকে মাফ করে দিস।

হায়াতি বললো, বাসায় এত বড় একজন ডাক্তার থাকতে আবার অন্য ডাক্তার লাগবে কেন?

হৃদিতা বললো, কিন্তু আপু আমাদের বাসায় তো কেও ডাক্তার না। তুমি কার কথা বলছো?

‘ কে আবার আমি ছাড়া। অর্ণকে সুস্থ করতে একমাত্র আমিই পারবো। তোমরা একজন বালতি করে পানি নিয়ে এসো৷ আর একজন ওর ওয়ালেট খোজ করো৷

‘ পানি দিয়ে কি করবে আপু?

‘ অর্ণকে সুস্থ করবো৷ আমাকে একজন ডাক্তার বলেছিলো, কেও যদি ট্রিট দেওয়ার কথা শুনে এরকম মা’থা ঘুরে পড়ে যায় তাহলে তার মা’থায় পানি দিতে

‘ আচ্ছা আপু নিয়ে আসছি

” ওই ডা’ইনিটা এখন আমার মা’থায় পানি দেওয়ার প্ল্যান করছে। ডা’ইনিটা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি ঘুরতে যাবোনা বলে এই নাটক করেছি। কিন্তু বেডে পানি দিলে রাতে কই থাকবো আমি। তখন তো নিচে ঘুমাতে হবে। ওরা সবাই আমার বিরুদ্ধে থাকবে তাই বাবাও আমার উপর উল্টো রাগ করবে। আবার যদি সুস্থ হয়ে উঠে পড়ি তাহলেও তো বিপদ। এ তো দেখছি জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। হায়াতির বা’চ্চা সব হয়েছে তোর জন্য। আজকে সকাল থেকে আমাকে যে প্যাড়া দিছোস তুই। তোর জন্য আমার ক্রাশ রুহাশা গেলো। ওকে পটাতে আমার কতই না পরিশ্রম করতে হয়েছে৷ পকেটের টাকাও খরচ হয়েছে। এখন আবার তুই এদেরকে উসকে দিয়েছিস। আমি তোকে ছাড়বোনা হায়াতির বাচ্চা। আমি এক চোখ খুলে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছি৷ দেখলাম সবাই আমার ওয়ালেট খোজায় ব্যস্ত৷ কিন্তু ওয়ালেট এমন জাগায় আছে যা ওরা কল্পনাও করতে পারবেনা৷

” নুশান পানি নিয়ে আসলে হায়াতি বললো, আমার কাছে দাও। আমি ওর মা’থায় পানি দিচ্ছি

হৃদিতা বললো, আপু অনেক খুজলাম তাও ভাইয়ার ওয়ালেট পাচ্ছিনা। মনে হয় অর্ণ ভাইয়া কোথাও লুকিয়ে রেখেছে৷

” আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি, খুজতে থাক। এক যুগ হয়ে গেলেও তোরা আমার ওয়ালেট খুজে পাবিনা৷ কিন্তু হায়াতির বা’চ্চা তো আমার মা’থায় এখন পানি দিবে৷ এখন তো আমাকে জেগে উঠতেই হবে।

হায়াতি পুরো বালতির পানি আমার উপর দিবে তখনই আমি নিরুপায় হয়ে জেগে উঠলাম। এই কে? আমি কোথায়? তোমরা কারা?

আমার কথা শুনে হায়াতি ছাড়া সবাই অবাক হয়ে গেলো। আরিয়া বললো, আপু অর্ণ ভাইয়ার আবার কি হলো? জেগে উঠে কিরকম উল্টা- পাল্টা বলছে।

হৃদিতা বললো, আপু ভাইয়ার মনে হয় মেমোরি লস হয়ে গেছে৷ চল সবাইকে বলি গিয়ে।

” আমি আছিনা তোমরা এত চিন্তা করোনা। এরকম মেমোরি লস হলে একটাই উপায় আছে ঠিক করার।

‘ কি উপায় আপু?

‘ একটা ঝাড়ু নিয়ে এসো। ওর মা’থায় মা’রবো। তাইলেই ঠিক হয়ে যাবে। মুভিতে দেখোনা নায়ক কিরকম ঠিক হয়ে যায় ওরকম।

” হায়াতির বা’চ্চা তুই একটা ডা’ইনি, পে’ত্নি,শাঁ’ক’চূ’র্ণী, গোপাল ভাড়ের বউ,বিন্দুমাসী৷ তোকে একবার আমি নাগালে পাই।

হায়াতি ঝাু’ড়ু দিয়ে আমার মা’থায় মা’রতে যাবে তখনই আমি বললাম, এই মা’রতে হবেনা। আমার মেমোরি ফিরে এসেছে৷ আমি একদম সুস্থ

হায়াতি বললো, তা অর্ণ সাহেব আপনি তাহলে এখন পুরোপুরি সুস্থ! তাহলে এবার যাওয়া যাক

‘ যাবো মানে? কোথায় যাবো?

‘ তারমানে মেমোরি আবার গেছে। এই ঝাু’ড়ুটা দাও তো৷

‘ এই না! মনে পড়েছে৷ ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো।

‘ এই তো। সব মনে পড়েছে!

হায়াতির বা’চ্চা। তোর খবর আছে৷ তোকে এমন বাঁ’শ খাওয়াবো যা তুই কল্পনাও করতে পারবিনা। কিন্তু এখন তো আমাকে বাঁচতে হবে৷ আমার কান্না করতে ইচ্ছে করছে৷ রেস্টুরেন্টে এতগুলো টাকা গেলো এখন আবার এদের ট্রিট দিতে হবে৷ আমি পুরোপুরি ফকির হয়ে যাবো। বাবার কাছে টাকা চাইলে তো হাজারটা প্রশ্ন করবে। কি যে করি এখন! পেয়েছি উপায়৷ ছোট আম্মুর থেকে নিতে হবে৷ ওদেরকে বললাম, তোমরা রেডি হয়ে এসো। আমিও রেডি হয়ে নেই৷

আরিয়া বললো, আবার পালিয়ে যেও না।

” কপাল আমার! এই পিচ্চিও এখন আমায় বিশ্বাস করেনা।

ওদেরকে বললাম, তোরা বা’চ্চা মানুষ। ট্রিটের আবদার করেছিস। আমি বড় ভাই হয়ে যদি পূরন না করি তাইলে কেমন বড় ভাই আমি৷

হায়াতি বললো, হঠাৎ তোর কথার সুর এরকম পরিবর্তন হয়ে গেলো কি করে? কি প্ল্যান করে রেখেছিস৷

‘ তোর মত নাকি সবাই যে অভিনয়ে অস্কার নিবে৷ আমি কোনো প্ল্যান করতে পারিনা। এটা তোর কাজ।

‘ না করতে পারলেই ভালো মিঃঅর্ণ।

*****

ওরা চলে যাওয়ার পর আমি ছোট আম্মুর কাছে গেলাম। দেখলাম ছোট আম্মু সবার জন্য কফি বানাচ্ছে। আমি গিয়ে বললাম, ছোট আম্মু তুমি একা একা এত কষ্ট করছো কেন? আমায় ডাকলেই তো পারতে৷ দাও আমি তোমাকে সাহায্য করছি।

ছোট আম্মু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে এটা আমি বলছি নাকি। ছোট আম্মু বললো, তোমার মতলবটা কি শুনি?

‘ কপাল! ছোট আম্মুও বুঝে গেছে৷ আমি বললাম, না মানে তুমি তো জানোই আব্বু আমাকে টাকা দেয়না। এখন ওরা ট্রিট চাচ্ছে আমার কাছে। তাই তুমি যদি টাকা দিতে।

‘ তার জন্য তোমার কফি বানাতে হবেনা। আসো আমার সাথে।

‘ এই পরিবারে তুমিই একজন যার কাছে আমার মূল্য আছে।

‘ হইছে এখন তাড়াতাড়ি যাও৷ তা না হলে ওরা এসে পরবে।

আমি রুমে এসে রেডি হতে লাগলাম৷ ওয়াশরুম থেকে ওয়ালেট নিলাম আমার। ওদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ওয়াশরুমে রাখি৷ আমি নিশ্চিত ওই ডা’ইনিটা ওয়াশরুমে খুজতে আসবেনা।

কিছুখন পর ওরা আমার রুমে আসলো। আমি তখনও রেডি হতে পারিনি৷ ওদের সবার দিকে তাকিয়ে তো আমি অবাক হলাম। হায়াতি,হৃদিতা,আরিয়া শাঁড়ি পড়েছে৷ নির্ঝর আর নুশান পাঞ্জাবি। বুঝলাম না কারও বিয়েতে যাচ্ছি না ঘুরতে যাচ্ছি। আর এদিকে আমি টি- শার্ট পড়ে যাবো ভাবছিলাম। এখন তো ওদের মাঝে নিজেকে এ’লিয়েন মনে হবে। হায়াতির বা’চ্চা এমনিতেই একটা ডা’ইনি আরও পড়ছে শাঁড়ি এখন তো পে’ত্নির মত লাগে৷ ওরা জোর করে আমাকে পাঞ্জাবি পড়তে বাধ্য করলো৷ এই গরমে কার মনে চায় পাঞ্জাবি পড়তে। সব ওই ডা’ইনিটার প্ল্যান।

**** কিছুখন পর

বাহিরে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি৷ আমি আর নির্ঝর এক রিকশায় উঠতে গেলে হায়াতি বললো, অর্ণ আর আমি এক রিকশায় যাবো

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here