#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২
হায়াতি যদি এখন বাবাকে বলে দেয় আমি ক্লাসে ছিলাম না তখন আমার কি হবে? এটা ভেবেই আমার গলা শুকিয়ে গেলো৷ আজকে রেস্টুরেন্টে যে বাঁ’শটা দিলো আমায়। এখন আবার ওর সামনে সুযোগ। ও তো এই সুযোগ কখনও হাতছাড়া করবেনা৷ আজকে আমার কপালে সত্যিই খারাপ কিছু আছে৷
ডা’ইনিটা আমার দিকে তাকিয়ে পে’ত্নির মত একটা হাসি দিলো৷ মন চাচ্ছে ওর চুলগুলো টেনে ছি’ড়ে ফেলি৷ ওর জন্য রুহাশা গেলো, আমার টাকা গেলো এখন বাবারও রাগ শুনতে হবে৷ মনে হচ্ছে যেনো কোনো মুভির ক্লাইম্যাক্স সিন চলছে৷ আমার সিচুয়েশনটাও এখন ওরকম হয়ে আছে৷
হায়াতি বললো, বড় চাচ্চু অর্ণ তো আজকে ক্লাসে…
এটা বলেই হায়াতি থেমে আমার দিকে তাকালো। এই মেয়ে নিশ্চিত আজকে আমার হার্ট অ্যা’টাক করাবে৷ মুভির মত এত সময় না নিয়ে তাড়াতাড়ি বলে দেনা যা বলার৷ হুদাই আমারে টেনশনে রাখিস।
‘ বড় চাচ্চু,অর্ণ আজকে ক্লাসেই ছিলো৷ ও আজকে একটা ক্লাসও মিস দেয়নি৷ আমার ক্লাস শেষ করে ওর ক্লাসে গিয়েছিলাম। অর্ণ ক্লাসে আছে কিনা সেটা চেক করতে। ওর ক্লাসে গিয়ে তো আমি অবাক! অর্ণ ক্লাস করছে৷ আমি যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷
হায়াতির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি নিশ্চিত এই ডা’ইনি অভিনয়ে সবাইকে হার মানাবে। কনফিডেন্সের সাথে কত সুন্দর গল্প বললো। আর আমি মিথ্যা কথা বললে তখন কি বলবো তা খুজে পাইনা৷ আমার বলার ধরন দেখলেই সবাই বুঝে যায় আমি সত্যি বলছি না মিথ্যা।
হায়াতি আমার দিকে তাকিয়ে আবার সেই ডে’ভিল মার্কা হাসি দিলো। আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি ওই ডা’ইনিটা এমনি এমনি আমাকে বাঁ’চিয়ে নেয়নি। আমি নিশ্চিত এর পিছনে ওর কোনো স্বার্থ আছে৷ তবে যাই থাকুক এখন তো বেঁ’চে গেলাম। তা না হলে বাবা আমার হাত খরচের টাকা বন্ধ করে দিতো৷
বাবা হায়াতিকে বললো, অনেকদিন পর তাইলে ও ক্লাস করলো। তোমার সাথে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে ওর উন্নতি হচ্ছে। ওকে আরও কিছু শিখাও৷
আমি মনে মনে বলছি এই ডা’ইনিটার কাছ থেকে আমার একটা জিনিসই শিখতে হবে তা হলো কিভাবে অভিনয় করা যায়। রেস্টুরেন্টের অভিনয়ের রেশ কাঁটতে না কাঁটতেই বাসায় এসে আবার ওর অভিনয়ের ঝলক দেখতে পেলাম। আমি ধন্য এরকম অভিনয় দেখে৷
হায়াতি বললো, তুমি একদম চিন্তা করবা না চাচ্চু। আমি ওকে ঠিক করে দিবো৷
বাবা আমাকে বললো, হায়াতির কাছ থেকে তো কিছু শিখতে পারিস। তোর ২ দিনের ছোট তাও সবকিছুতে তোর থেকে এগিয়ে আছে৷
কপাল আমার। আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। এমন ভাবে বললো মনে হয় যেনো দুই বছরের ছোট আমার৷ দুই দিনের ছোট এটা আবার এমন কি৷ মনের কথা মনেই রাখলাম। এটা বলে বিপদ সংকেত বাড়াতে চাইনা আর৷ এমনিতেই আজকে আমার উপর দিয়ে ঝ’ড়,তু’ফান যাচ্ছে।
বাবা হায়াতিকে বললো, তোমার হাতে ওটা কিসের প্যাকেট?
‘ আজকে হঠাৎ রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে ইচ্ছে হলো৷ তাই নিয়ে আসলাম।
” কি মিথ্যা কথা রে ভাই! আমি কিনে দিয়েছি এটা বললেই তো পারিস।
বাবা হায়াতিকে টাকা দিলো৷ আমি খুব খুশি হলাম। এখন আমাকেও দিবে৷ কিন্তু বাবা যা বললো, তাতে আমার কান্না করতে ইচ্ছে করছে৷
বাবা বললো, তোর টাকা দিয়ে তো শুধু এদিক ওদিক আড্ডা দিয়ে বেড়াস। হায়াতিকে দেখ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে এসেছে৷ তুই নিয়ে আসলে তোকেও টাকা দিতাম।
কপাল আমার! এখন যদি বলি ওই ডা’ইনিটা আমার গ’লার উপর পা রেখে তারপর খাবার নিয়ে এসেছে তাহলে তো রুহাশার কথাও বের হয়ে যাবে৷ তার থেকে ভালো চুপ করেই থাকি৷ এখন আমার জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো অপশন।
হায়াতি আমাদের সব ভাই-বোনদের বললো, খাবার তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি৷ আমি রেস্টুরেন্ট থেকেই খেয়ে এসেছি৷
এটা শুনে সবাই হায়াতিকে কত ভালোবাসা দেখাচ্ছে। আরিয়া বললো, ভাইয়া জীবনে তো আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসলেনা। হায়াতি আপুর কাছ থেকে কিছু শিখো৷
” কপাল! কেও বি’ষ খাও আমি হাসপাতালে যাই। এই পিচ্চি মেয়েও আমাকে হায়াতির কাছ থেকে শিখতে বলে। পরিবারের বড় ছেলে হয়েও আমার কোনো গুরুত্ব নাই৷
নুশান বললো, আজকে হায়াতি আপু নিয়ে এসেছে৷ কালকে কিন্তু তোমার নিয়ে আসতে হবে ভাইয়া।
হৃদিতা বললো, কালকে কেন ভাইয়া আজকে বিকালেই আমাদের ট্রিট দিবে৷
ওদের কথা শুনে মনে হলো যেনো কারেন্টের ঝ’টকা খেয়েছি। যা টাকা ছিলো সব তো রেস্টুরেন্টেই দিলাম। এখন নাকি আবার এদের ট্রিট দিতে হবে। কপাল ভালো নির্ঝর ওর ফ্রেন্ডের বাসায় গেছে না হলে ও কিছু বলতো। মনে হচ্ছে যেনো আমি একটা তবলা যে যেরকম পারছে আমায় বাজিয়ে যাচ্ছে।
ওদের কথা শুনে হায়াতি বললো, অর্ণ আজকে অবশ্যই তোমাদের ট্রিট দিবে৷ আমরা সবাই ঘুরতে যাবো আজকে।
” আমার মা’থা ঘু’ড়াচ্ছে কেও পানি দাও আমায়। ছোট আম্মু ( ছোট কাকিকে আমি ছোট আম্মু ডাকি। আমার মত সবাই এরকম ডাকে) পানি নিয়ে আসলো। আমি কিছুটা খেয়ে তারপর মা’থায় ঢাললাম। এত চাপ আমি ছাড়া কেও সহ্য করতে পারবেনা।
হায়াতি আমার অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো। ডা’ইনিটা আজকে আমাকে যে বাঁ’শটা দিলো। সামনে আর কি কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য কে জানে। আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। কিছুখন পর এসে দেখি আরিয়া,নুশান,হৃদিতা খাবার খাচ্ছে। আমার টাকায় কেনা খাবার আমাকে রেখেই খাচ্ছে। আমি ওদেরকে বললাম, আমাকে রেখেই খাচ্ছিস? বড় ভাইয়ের প্রতি তোদের কোনো সম্মান নেই নাকি! তোদেরকে কি টিচাররা এই শিক্ষাই দিচ্ছে!
আরিয়া বললো, বড় ভাই হয়ে আরও বলবে তোরা খেয়ে নে আমি বাসার খাবার খাবো৷ তা না করে উল্টো আমাদের কাছে চাচ্ছো। তোমার লজ্জা করেনা।
” কপাল! সবকয়টা হায়াতির মত। হায়াতি সবগুলারে চালাক বানিয়ে দিয়েছে৷ কি আর আর করার আমি বাসার খাবার খেতে লাগলাম। হায়াতি আমার পাশের চেয়ারে বসে আছে। আমি হায়াতিকে বললাম, এত খাস তাও তো মোটা হসনা। একদিকে খাস দিনে ৪/৫ বার অন্যদিকে ডায়েট করিস। রেস্টুরেন্টে খেয়ে আসলি আবার এখন খাওয়া লাগে৷
‘ ওই রেস্টুরেন্টে খেয়েছি সেই কখন। এখন দুপুরের খাবার খেতে হবেনা৷ আমি ভালোই ডায়েট করি। তোর মত না। রেস্টুরেন্টে তো অল্প খেয়েছি।
‘ বাবাগো বাবা! ও নাকি রেস্টুরেন্টে অল্প খেয়েছে। একটা ছোট হাতি যা খায় তুই তার থেকেও বেশি খাস।
‘ বড় আম্মু দেখো না অর্ণ আমার সাথে কিরকম করছে।
আম্মু আমায় বললো, সবসময় ওর সাথে এরকম করিস কেন? মেয়েটাকে একটু ঠিকমত খেতেও দিবিনা৷ তুইতো ওর থেকেও বেশি খাস।
কপাল আমার! আমি এক বছরে ওর সাথে যা করেছি ওই ডা’ইনিটা আজকে একদিনে তার থেকে বেশি করেছে।
‘ কিছু বললি
‘ না তো
হায়াতি আবার আমার দিকে তাকিয়ে ওর সেই বিখ্যাত ডা’ইনি হাসি দিলো৷ সময় সবার একরকম থাকেনা৷ সময় আমারও আসবে হায়াতির বা’চ্চা।
*****
দুপুরের খাবার খেয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম। হঠাৎ স্বপ্নে দেখতে লাগলাম, কে যেনো আমার চুল ধরে টানছে আবার অন্য একজন আমার হাত ধরে টানছে। হঠাৎ দেখলাম হায়াতি আমাকে ডাকছে। আমিতো অবাক হয়ে গেলাম স্বপ্নের ভিতর হায়াতিকে দেখে৷ এই মেয়েটা আমাকে শান্তিতে স্বপ্নও দেখতে দিবেনা৷ স্বপ্নের ভিতরেও আমাকে বাঁ’শ দিতে চলে আসলো। হঠাৎ কেও আমার কানের কাছে এসে ” ভাইয়া” বলে চিৎকার দিলো৷ আমি ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম। বুকে ফুঁ দিলাম। দেখলাম হায়াতি,হৃদিতা,নুশান,আরিয়া,নির্ঝর সবাই আমার রুমে৷ তারমানে আমি এতখন স্বপ্ন দেখছিলাম না৷ ওরাই এমন করছিলো৷ আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলো। আমি কিছু বলার আগেই ওরা বললো, তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছি শুনছো না৷ ঘুরতে যাওয়ার কথা ভুলে গেলে!
কপাল! আমি ওদের কথা শুনে মা’থা ঘুরে আবার বিছানায় পড়ে গেলাম।
চলবে—-