#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১৮
হায়াতি রাফসানকে বললো, কিভাবে ওর অভিমান ভাঙাবো? কিছু আইডিয়া দে না ভাই আমার
‘ আমি কিভাবে জানবো। তুই থাকিস ওর সাথে তুই ভালো করে জানবি কিভাবে অর্ণর অভিমান ভাঙানো যায়। তা না তুই আরও উল্টো আমাকে জিজ্ঞেস করছিস।
‘ আরে এর আগে তো অর্ণ কখনও আমার উপর অভিমান করেনি তাই বুঝতে পারছিনা কিভাবে কি করবো। তোরাও তো সবসময় অর্ণর সাথে থাকিস। তোরা ভালো বলতে পারবি।
‘ না বইন আমার কোনো ধারনা নেই এই বিষয়ে। আমাদের থেকে তুই ভালো জানবি। তা না হলে আয়ান,ইশানকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারিস।
‘ আচ্ছা ঠিক আছে।
হায়াতি আয়ানকে কল দিয়ে সরি বললো। তারপর ওকেও জিজ্ঞেস করলো। আয়ান বললো, আমার উপর কখনও কেও অভিমান করেনি। তাই আমি জানিনা কিভাবে কারও অভিমান ভাঙাতে হয়৷ আমাদের এসব জিজ্ঞেস করছিস কেন। সবসময় একসাথে থাকিস আমাদের থেকে তো তুই ভালো জানবি।
‘ আমি জানলে কি আর তোদের জিজ্ঞেস করতাম।
‘ তাইলে এক কাজ কর ইশানকে জিজ্ঞেস করে দেখ
হায়াতি তারপর ইশানকেও কল দিয়ে প্রথমে সরি বললো। তারপর ইশানকে জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু ইশানও অন্যদের মত ওকি কথা বললো৷ হায়াতি কল কেঁটে দিয়ে ভাবতে লাগলো কিভাবে অর্ণর অভিমান ভাঙানো যায়। এমন সময় হৃদিতা আসলো। হায়াতি বললো, ঘুমাসনি?
‘ ঘুমানোর আগে তো কিছু জানার ছিলো অর্ণ ভাইয়া তো কিছু বললো না৷ এখন দেখি তুমি বলো কিনা
‘ কি হয়েছে শুনি?
‘ না তেমন কিছুনা৷ তোমাকে আর অর্ণ ভাইয়াকে দেখে মনে হলো তোমাদের মাঝে কিছু হয়েছে। ভাইয়া তো তোমার সাথে ঠিকভাবে কথাও বললো না৷ আগের মত ফানও করলো না তোমার সাথে। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম বললো কিছু হয়নি।
‘ হ্যা কিছু হয়নি আবার হয়েছেও
‘ মানে বুঝলাম না
হায়াতি ভার্সিটির ঘটনা হৃদিতাকে বললো। সব শুনে হৃদিতা বললো, এই তাহলো সমস্যা। অর্ণ ভাইয়া অভিমান করেছে তোমার উপর। ওরকম বলেছো তাই হয়তো ভাইয়ার খারাপ লেগেছে৷
‘ হ্যা,আমার ওর সাথে তখন ওরকমটা করা ঠিক হয়নি। ওই ব’দমাশ ছেলেটার জন্যই এমন হয়েছে৷ অর্ণ যদি শুনে ছেলেটা আমাকে বিরক্ত করছে তাহলে ওকে মা’রতে পারে৷ তাই এ বিষয়ে অর্ণকে কিছু বলিস না। এখন বল কিভাবে অর্ণর অভিমান ভাঙানো যায়
‘ ভাইয়ার সাথে কথা বলো
‘ কথা তো বলেই আমার সাথে। কিন্তু সমস্যা হলো অর্ণ ভিতর ভিতর আমার উপর অভিমান চেপে রেখেছে৷ আমাকে সেটা দূর করতে হবে।
‘ সরি বলো ভাইয়াকে
‘ তা বলেছি। কিন্তু বলে ব্যাপার না৷ আমি তো বুঝতে পারছি ওর অভিমান আছে৷ এখন কিভাবে আমি সেটা ওর মন থেকে একেবারে দূর করতে পারি
‘ ভাবতে হবে। এখন তো কিছু মাথায় আসছে না।
‘ ভাবতে থাক।
****
অর্ণ ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলো৷ বিল দেওয়ার জন্য যখন ওর ওয়ালেট বের করলো তখন তো অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো অর্ণ। ওর ওয়ালেটে এত টাকা তো থাকার কথা ছিলোনা৷ তাহলে এই টাকা কিভাবে আসলো৷ অর্ণ ওর ফ্রেন্ডদের বললো, আমার ওয়ালেটে তো এত টাকা ছিলোনা। এগুলো কিভাবে আসলো?
রাফসান বললো, আমরা কিভাবে জানবো? হয়তো তুই রেখেছিস পরে ভুলে গেছিস৷
‘ আমি রাখলে অবশ্যই মনে থাকতো৷ এতগুলো টাকা তো থাকারই কথা না। হুট করে ওয়ালেটে এত টাকা আসলো কিভাবে বুঝতে পারছিনা৷
ইশান বললো, এত ভাবাভাবির কাজ নেই। তোর ওয়ালেটে টাকা তার মানে এই টাকা এখন তোর। বিল দে তারপর চল
অর্ণ আর কিছু না বলে বিল দিয়ে দিলো। অর্ণ ভাবছে কে আমার ওয়ালেটে টাকা রাখলো! আব্বু- আম্মু না ছোট আম্মু কেও একজন তো রাখছে। কিন্তু আমাকে বললো না কেন? আজকে বা কাল তো আমার জন্মদিনও না যে সারপ্রাইজ দিবে আমাকে। তাহলে আমাকে না বলার কারন কি হতে পারে?
আয়ান রাফসানকে বললো, তাসফিয়ার সাথে সবকিছু ঠিক হয়েছে? ওইদিন যা রাগ করলো
‘ আরে এটা কোনো সমস্যা না। গতকাল রাতেই কথা হচ্ছিলো এটা নিয়ে। তাসফিয়া অনুতপ্ত। অর্ণকে সরি বলবে কালকে৷ এখন শুধু হায়াতিকে সত্যিটা বলে দিতে হবে৷ সত্যিটা জানলে হায়াতি কি রিয়্যাক্ট করবে সেটা নিয়েই ভাবছি।
আয়ান বললো, এখন হায়াতি আর অর্ণের মাঝে যে অভিমান চলছে এখন যদি হায়াতি শুনে তুই তাসফিয়ার সাথে রিলেশনে আছিস তাইলে তো আবার ঝামেলা শুরু হয়ে যাবে।
অর্ণ বললো, ওই হায়াতির সাথে আবার আমার কি হয়েছে। উল্টা- পাল্টা বলিস কেন। তোদেরকে বলেছি আমি যে হায়াতির সাথে আমার কিছু হয়েছে
‘ না বলিসনি। তবে ভার্সিটিতে হায়াতির ওমন আচরনে তোর খারাপ লেগেছে৷ হায়াতির প্রতি অভিমান করে আছিস।
‘ আমি কারও প্রতি অভিমান করে নেই। ওর সাথে কথা তো বলছি। এমন না যে তারপর আর কথা বলিনি। তাহলে এরকমটা কেন মনে হলো তোদের
‘ কথা বলছিস ঠিক কিন্তু আগের মত না৷ বুঝাই যাচ্ছে তুই ওর উপর অভিমান করে আছিস
‘ হায়াতি তোদের এটা বলেছে?
‘ হ্যা,
‘ হুদাই বলেছে। ওর তো একেক সময় মুড একেক রকম থাকে। একসময় রাগি থাকে এক সময় কুল থাকে।
অর্ণর ফ্রেন্ডরা ওকে আর কিছু বললো না। ওরা আগেই এটা বুঝতে পেরেছিলো। যা করার হায়াতির নিজেকেই করতে হবে। অর্ণর ওয়ালেটে টাকা হায়াতিই রেখেছে। এখন অর্ণ শুনলে আবার কি ভাববে কে যানে। তাই ওরা কেও বললো না এটা
*****
রাতে হায়াতি, হৃদিতা,আরিয়া,নির্ঝর,নুশান ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো। হায়াতি সবাইকে বলে দিয়েছে অর্ণ ওর উপর অভিমান করে আছে। সবাই সেটা নিয়েই কথা বলছে কিভাবে অর্ণর অভিমান ভাঙানো যায়।
এমন সময় অর্ণ এসে হায়াতিকে টাকাগুলো দিলো। হায়াতি জিজ্ঞেস করলো, কিসের টাকা এগুলো? আমাকে কেন দিচ্ছিস?
‘ সেটা তুই ভালো জানিস তোকে কেন দিচ্ছি
আরিয়া বললো, ভাইয়া হঠাৎ হায়াতি আপুকে এতগুলো টাকা দিচ্ছো ব্যাপার কি। আপু না নিলে আমাদের দিয়ে দাও
অর্ণ বললো, এগুলো হায়াতির টাকা। ভুলে আমার ওয়ালেটে রেখে দিছিলো। এখন সেটা ফেরত দিচ্ছি। আমার টাকার দরকার নেই৷ কারও কাছ থেকে তো একদমই না৷ আগে ভুল ছিলাম তাই জোর করেও অনেক সময় নিয়েছি৷ এখন আর সেই ভুল করতে চাইনা৷
অর্ণর কথা শুনে হায়াতির চোখের কোনে পানি চলে আসলো। অর্ণর মনে এতটা অভিমান জমে আছে তা হায়াতি বুঝতে পারেনি৷ হায়াতি কান্নারত অবস্থায় অর্ণকে বললো, আমি সরি অর্ণ৷ আমার ওইরকম বলাটা উচিত হয় নায়৷ আমি জানিনা তখন আমার কি হয়েছিলো। ওই ছেলেটার উপর রাগ করেছিলাম আর সেটা তোর উপর দেখিয়েছি। সরি আমি
অর্ণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন ছেলেটা? কি হয়েছিলো?
হায়াতি অর্ণকে সবকিছু বললো সব শুনে অর্ণ বললো, ভালো তো। একটা ছেলে তোকে বিরক্ত করে আর তুই সেটা আমাকে বলারও প্রয়োজন মনে করলি না। ছেলেটাকে মনে হয় পছন্দ হয়েছে। একদিন হয়তো বলবি আমি ওর সাথে রিলেশনে আছি৷
অর্ণর কথা শুনে হায়াতির এতটাই রাগ হলো যে সাথে সাথেই অর্ণকে থা’প্প’ড় দিলো৷ থা’প্প’ড় খেয়ে অর্ণ ভূ’ত দেখার মত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হায়াতির দিকে।
চলবে—