#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১৭
আদ্রিব হায়াতিকে বললো, একটা নাম্বার ব্লক করলে আরও হাজারটা নাম্বার থেকে কল দেওয়া যায় তা তুমি ভালো করেই জানো৷ আমি তোমাকে বিরক্ত করছিনা৷ তোমার সাথে শুধু বন্ধুত্ব করতে চাই।
‘ আমার আর বন্ধুর প্রয়োজন নেই। যারা আমার বন্ধু আছে তাদের নিয়েই আমি অনেক খুশি আছি৷ নতুন করে আমার বন্ধু লাগবেনা৷
‘ পুরাতন বন্ধুদের সাথে তো প্রতিদিনই আড্ডা দাও৷ নতুন বন্ধুর সাথে আড্ডা দিলে নতুন অভিজ্ঞতা হবে৷ লাইফে সবসময় পুরাতন বন্ধুর প্রয়োজন এমনটা তো নয়৷ হতে পারে নতুন বন্ধুও তোমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসলো।
‘ হতে পারে৷ কিন্তু সেটা তুমি না। রাত ১২ টায় একটা মেয়েকে কারন ছাড়া কল দেওয়া কোনো ভালো মানুষের কাজ হতে পারে৷ তোমার সাথে বন্ধুত্বের আমার কোনো প্রয়োজন নেই৷
‘ অর্ণর জন্যই কি এমন বলছো৷ তুমি অর্ণর জন্য আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছোনা অন্যদিকে অর্ণর ঠিকই অনেক মেয়ে বন্ধু আছে৷
‘ তোমার মা’থায় কি সমস্যা আছে? কিসব বলছো উল্টা- পাল্টা৷ ভেবে বলছো তো নিজে? অর্ণর জন্য যদি তোমার সাথে বন্ধুত্ব নাও করি তাতে সমস্যা কি। অর্ণর সাথে তোমার নিজের কিভাবে তুলনা দিতে পারো৷ আজব পাবলিক৷ যাও তো আমার সামনে থেকে৷ রাগ হচ্ছে অনেক।
আদ্রিব আর কিছু না বলে হায়াতির কাছ থেকে চলে আসলো। আদ্রিবের কথা শুনে হায়াতির মুডটাই অফ হয়ে গেলো।
একটু পর অর্ণ আসলো। হায়াতি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে এমন সময় অর্ণ এসে বললো, তুই কি সবসময় ঝামেলা ছাড়া থাকতে পারিস না?
আদ্রিবের উপর রাগ এখন হায়াতি অর্ণর উপর ঝাড়বে৷ অর্ণর কথা শুনে হায়াতির অন্য সময়ে হয়তো রাগ হত না৷ কিন্তু এখন এই আদ্রিবের কারনে হায়াতির রাগ হলো। অর্ণকে বললো, তোর মা’থায় সমস্যা আছে। সবসময় আমার ফাইজলামি ভালো লাগেনা। তোর যদি অন্য কিছু বলার না থেকে তাহলে যা তো এখান থেকে৷ অসহ্যকর একটা
হায়াতির কথা শুনে ওর ফ্রেন্ডরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ অর্ণ হায়াতিকে সিরিয়াসলি কথাটা বলেনি৷ কিন্তু হায়াতি এরকম রিয়্যাক্ট করবে তা অর্ণ ভাবতে পারেনি। সবার সামনে অর্ণ নিজেকে অপমানিত বোধ করলো৷ অর্ণ হায়াতিকে বললো, সরি বিরক্ত করার জন্য। আর কিছু বলার নেই।
****
রাফসান অর্ণকে বললো, হায়াতি তো কখনও এরকম করে বলেনা। আর তোর সাথে তো একদমই না। হঠাৎ করে এতটা সিরিয়াস হয়ে গেলো কেন বুঝতে পারছিনা৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম আমাকেও এরকম বলে চুপ করিয়ে দিলো। ওদের দুজনের সাথেও এরকম করলো। ওর শরীর খারাপ নাতো। তা না হলে তো আমাদের সাথে এরকম করে কথা বলতো না৷ তোর সাথে এরকম করে কথা তো আজ পর্যন্ত হায়াতি বলেনি।
অর্ণ বললো, ও একদম ঠিকই আছে। শরীর খারাপ হলে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে পারতোনা৷ যাইহোক বাদ দে। আমার রাগ করার কথা৷ ও আরও উল্টো আমার সাথে এমন করলো। তুই বলছিলি তাসফিয়ার কথা নিয়ে যাতে হায়াতির উপর রাগ না করি। এখন দেখলি তো কে কার উপর রাগ করলো।
ইশান বললো, এরকমটা তো কখনও হয়নি৷ কিছু তো একটা হয়েছে হায়াতির। ওর সাথে কথা বলা দরকার।
আয়ান বললো, দেখলি না হায়াতি কেমন রেগে আছে৷ এখন আবার কথা বলতে যাবি! ওকে জিজ্ঞেস করলে উল্টো আরও রাগ করবে। তার থেকে ভালো কালকে এই বিষয়ে কথা বলি ওর সাথে।
ক্লাশ শেষে অর্ণ গেটের বাহিরে হায়াতির জন্য অপেক্ষা করছে। হায়াতি ওর স্কুটি নিয়ে আসে সবসময় আর অর্ণ বাইকে৷ তারপরও ওরা দুজন একসাথে বাসায় ফিরে৷ এখন যদি অর্ণ একা বাসায় যায় তখন সবাই ভাববে কিছু একটা হয়েছে৷ তাছাড়া কোনো বিপদও হতে পারে। হায়াতিকে একা রেখে অর্ণ যেতে চাইলোনা। তাই হায়াতির আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
কিছুখন পর হায়াতি গেটের কাছে এসে অর্ণকে দেখলো৷ হায়াতির অনেক খারাপ লাগলো। তখন অর্ণর সাথে ওর ওইরকম করা ঠিক হয়নি। সরিও বলতে পারলোনা৷ ওই পা’গল ছেলেটার জন্যই এমন হয়েছে। ওর উপর রাগ অর্ণকে দেখিয়েছি৷
হায়াতি অর্ণর কাছে এসে বললো, সরি আমি৷ আসলে তখন আমার মা’থা ঠিক ছিলোনা। অন্য কারও রাগ তোর উপর দেখিয়েছি৷ আমার এরকম করাটা একদমই ঠিক হয়নি৷
‘ না সমস্যা নাই৷ এখন তাড়াতাড়ি বাসায় চল৷
হায়াতি ভালোভাবেই বুঝতে পারলো তখন ওর আচরনে অর্ণর অনেক খারাপ লেগেছে৷ অর্ণ ওইরকম ব্যবহারের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলোনা৷ এখন কিভাবে ওর অভিমান ভাঙাবো৷ কখন যে কি করে বসি নিজেও জানিনা৷ ওই আজব ছেলেটার জন্য অর্ণর সাথে এমন করলাম৷ নিজের কাছেই এখন অনেক খারাপ লাগছে৷ সবার সামনে অর্ণর সাথে কিভাবে ওমন রিয়্যাক্ট করে ফেললাম আমি!
****
অর্ণ বাসায় আসার পরও হায়াতির সাথে প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলেনি৷ অন্য সময় হলে দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় হায়াতির সাথে ফান করতো৷ কিন্তু আজকে অর্ণ একদম চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো। অর্ণর এই পরিবর্তন হৃদিতা লক্ষ্য করলো। অর্ণ রুমে গেলে হৃদিতা অর্ণর সাথে কথা বলতে গেলো। অর্ণ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমন সময় হৃদিতা গিয়ে বললো, তোমার কি হয়েছে ভাইয়া? আজকে একদম চুপচাপ খাওয়া শেষ করলে। অন্য সময় হলে তো অনেক কথা বলতে৷ আজকে কি হলো?
‘ কিছুনা! সবসময় তো আর সবার সবকিছু ভালো লাগেনা তাইনা
‘ তা ঠিক। কিন্তু তোমাকে আজকের আগে এখনও এরকম দেখেনি তাই জিজ্ঞেস করলাম। হায়াতি আপুকেও কিছু বললে না। অন্য সময় হলে তো অনেক ফান করতে। হায়াতি আপুর সাথে কি কিছু হয়েছে তোমার?
‘ না, ওর সাথে আবার কি হবে। ওর সাথে কথা বলেনি তোকে কে বললো? দুজনে তো একসাথেই ভার্সিটি থেকে আসলাম। বাসায় এসেও তো কথা বলেছি৷
‘ প্রয়োজন ছাড়া বলোনি। অন্যদিন যেভাবে আপুর সাথে ঝগড়া করতে আজকে তার ব্যাতিক্রম। কিছু তো একটা হয়েছে তোমাদের সাথে। তুমি না বললে আপুকে জিজ্ঞেস করতে হবে৷
‘ আচ্ছা ভাই৷ তোদের আপুকেই জিজ্ঞেস করিস। আমি ঘুমাই এখন
*****
হায়াতি রুমে এসে ভাবতে লাগলো,কিভাবে অর্ণর অভিমান ভাঙানো যায়। সবসময় যে হাসি- খুশি থাকে সে যদি কোনো কারনে অভিমান করে বসে তখন সেটা ভাঙানো কিছুটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার৷ আমার জন্যই এমন হয়েছে। যা করার আমাকেই করতে হবে৷ আগে ওদেরকে কল দিয়ে সরি বলি৷ ওদের সাথেও তো ওইরকম ব্যবহার করেছি৷
হায়াতি প্রথমে রাফসানকে কল দিলো৷ রাফসান কল রিসিভ করেই বললো, আজকে কি হয়েছিলো তোর? মা’থা গেছিলো নাকি?
‘ তাই গেছে হয়তো। তা না হলে তো তোদের সাথে ওইরকম ব্যবহার করতাম না। আমি অন্য কারও উপর রেগে ছিলাম সেটা তোদের উপরে দেখালাম। শুধু শুধুই সবার সামনে অর্ণর সাথে ওইরকম করলাম। তারপর তোদের সাথে। সরি রে ভাই
‘ সরি বলতে হবেনা৷ তুই না রাগ করলে কে করবে। আমরাও বুঝতে পারছি তোর কিছু একটা হয়েছে৷ ভাবছিলাম কাল তোর সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।
‘ কিন্তু ওই ব’দমাশ অর্ণ তো আমার উপরে অভিমান করে আছে। কথাও বলছেনা৷
‘ ওইরকম রিয়্যাক্ট করছিস সবার সামনে অর্ণর খারাপ লাগছে। এটা তোদের বিষয়। তোর নিজেরই ওর অভিমান ভাঙাতে হবে৷ কিভাবে করবি তা তুই ভালো জানিস।
চলবে—-