#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১৬
অর্ণর কথা শুনে আরিয়া বললো, আগে বললে আমরাও যেতাম ভাইয়া। শহর থেকে দূরে ভু’তুড়ে বাড়ি শুনতেই কেমন লাগছে। দারুন অভিজ্ঞতা হত। কিন্তু তুমি একাই গেলে।
অর্ণ বললো, তোদের নিয়ে গিয়ে কি বিপদে পরবো নাকি। ওইটা শহর থেকে অনেক দূরে৷ আশেপাশে কোনো বাড়িঘর ও নেই। খাবারের দোকানও নেই। বিশাল বন-জঙ্গলের একদম মাঝখানে। বাড়িটা ১০০ বছরের পুরোনো। বিশাল জমিদার বাড়ি। লোকমুখে শোনা যায় ওইখানে নাকি এক জমিদার থাকতো। তার মেয়ে এক ছেলেকে ভালোবাসতো৷ কিন্তু ওই ছেলেকে জমিদার মেনে নেয়নি। অন্য এক জমিদার ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়। আর বিয়ের দিন রাতেই ওই মেয়ে আ’ত্ন’হ’ত্যা করে। মেয়েটার আ’ত্ন’হ’ত্যার কথা শুনে ওই ছেলেটাও আ’ত্ন’হ’ত্যা করে। তারপর থেকেই ওই বাড়িতে নাকি অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে৷ মাঝরাতে নাকি ওই মেয়েটার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। তারপর আস্তে আস্তে ওই বাড়ির সব সদস্যরা অদ্ভুত ভাবে মা’রা যেতে থাকে৷ শেষে নাকি ওই জমিদার নিজেও আ’ত্ন’হ’ত্যা করে৷ তারপর থেকেই ওইটা নাকি ভু’তুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিত। লোকজন নাকি রাতে ওই বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে মেয়েটার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। তারপর আস্তে আস্তে আশেপাশের লোকজন সেখান থেকে চলে যেতে থাকে৷ এখন তো তা বিশাল বন-জঙ্গলে পরিনত হয়েছে।
হৃদিতা বললো, ভ’য়ং’ক’র কাহিনী। কিন্তু তোমরা যে গেলে ভয় করেনি?
‘ আমরা সন্ধ্যার আগেই ওই বাড়ি থেকে চলে আসছি৷
নির্ঝর বললো, আমরাও একদিন সবাই মিলে যাইনা ভাইয়া। সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো।
‘ আমি এত রিস্ক নিয়ে যেতে পারবোনা। তোদের নিয়ে গেলে অনেক সমস্যা আছে। ওইখানে তোদের একমুহূর্তও ভালো লাগবেনা। না আছে মানুষজন আর না আছে কোনো দোকান।
হায়াতি বললো, যেরকম করে বলছিস ওতটাও ভয়ংকর না। এটা তো সত্যি নাও হতে পারে। আগেকার লোকজন তো কতকিছুই বলে। তার অধিকাংশই মিথ্যা। বাড়িটা থাকতে পারে৷ কিন্তু যা বলছিস তা হয়তো সত্যি না৷ হিন্দুদের হলে তো তারা সবাই ইন্ডিয়া চলে গেছে তাই বাড়িটা পরিত্যক্ত
অর্ণ বললো, তা হলে এত বছরেও কেও খোজ নিতে আসলো না কেন? কোনো কিছু না ঘটলে মানুষ এমনি এমনি আর কিছু বলেনা৷
নুশান বললো, এর জন্যই তো আমাদের সেখানে গিয়ে রিসার্চ করা উচিত। এটা আমাদের নতুন এক অভিজ্ঞতা হবে৷ সবাই মিলে এরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবো৷ তার উপর সেই জায়গা নিয়ে এরকম ভ’য়ং’কর স্টোরি। অসাধারণ এডভেঞ্চার হবে আমাদের৷
অর্ণ বললো, তোরা কর এডভেঞ্চার। আমি এসবের মধ্যে নাই। তোরা ৪ জনে যা৷ দেখ আব্বু পারমিশন দেয় নাকি৷ পিচ্চি পোলাপান আবার এডভেঞ্চার করবে। জীবনে গিয়েছিস এরকম জাগায় কখনও। যাওয়ার পর যখন দেখবি আশেপাশে কোনো লোকজন, বাড়িঘর,দোকান কিছু নেই তখন তো বলবি ভালো লাগছেনা। পরে তোদের সবার প্যাড়া আমাকে নিতে হবে৷
হায়াতি বললো, তুই তো গিয়েছিস তাই তোর আর ইচ্ছে নেই। কিন্তু তোর কথা শুনে তো আমাদের আগ্রহ হচ্ছে। আমাদের যখন নিয়ে যেতে পারবিনা তখন এসব বললি কেন? এখন যখন বলেছিস তাহলে আমাদের নিয়ে যেতে হবে।
” কি এক ঝামেলায় পরলাম রে বাবা৷ এদের সাথে বলেও ভুল করেছি৷ যাওয়ার পর এদের সব ঝামেলা আমার উপর এসে পরবে। তার উপর ওদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি কেও দিবেনা৷ আমি ওদেরকে বললাম, তোরা ওইরকম জাগায় যাওয়ার জন্য এখনও প্রস্তুত না। বুঝতে পারছিস না কতটা কঠিন এডভেঞ্চার হবে। এই আরিয়া,হৃদিতার তো একমুহূর্তও ভালো লাগবে৷ তাছাড়া আব্বু যাওয়ার অনুমতিও দিবেনা৷
আরিয়া বললো, তুমি জানো আমাদের ভালোলাগবেনা। আন্দাজে বলো কেন৷
হৃদিতা বললো, তুমি নিয়ে গেলেই আমাদের ভালো লাগবে। আর বড় আব্বুকে আমরা বলবো৷ তোমার কিছু বলতে হবেনা। আমরা সবাই গিয়ে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসবো৷
অর্ণ বললো, আচ্ছা নিয়ে আসিস
*****
অর্ণ ভার্সিটিতে আসার পর রাফসান ওকে বললো, তাসফিয়া আমাকে কল দিয়ে অনেক রাগারাগি করেছে। তোর উপর অনেক রেগে আছে৷
অর্ণ অবাক হয়ে রাফসানকে জিজ্ঞেস করলো, আমার উপর রেগে থাকবে কেন? আমি কি করেছি?
‘ আমিও এটা জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু বলেনি।
কিছুখন পর তাসফিয়া এসে অর্ণকে বললো, তোমাকে আমি ভালো ভাবতাম। রাফসানের বেস্টফ্রেন্ড তুমি তাই আমিও তোমাকে অনেক ভালো একটা ফ্রেন্ড ভাবতাম। কিন্তু তুমি হায়াতির কাছে আমাকে উল্টো ভাবে উপস্থাপন করেছো। আমি তোমার জিএফ না যে তুমি এভাবে বলবা। আর রাফসান যদি আমাকে ওর জিএফ হিসেবে সবার কাছে পরিচয় দিতে সমস্যা মনে করে তাহলে আমার সাথে রিলেশন না রাখুক৷ তুমি আমাকে অপমান করেছো অর্ণ৷ আমি কি তোমাকে গতকাল বলেছিলাম আমাকে বাসায় পৌছে দিতে৷ তুমি আমাকে মিথ্যা বলে হায়াতিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলে তারপর সেলফি তুললে নাকি আমাকে পাঠানোর জন্য। আবার বিকালে নাকি তুমি আমার সাথে ঘুরতে বের হইছো। হায়াতি আমাকে এসব বললো৷ ও আমাকে কি ভাবছে বলতো। রাফসানের সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছে তাই তোমাকে কল দেওয়া৷ তাই বলে তুমি অন্যকারও সাথে আমাকে এভাবে উপস্থাপন করাতে পারোনা।
রাফসান তাসফিয়াকে বললো, কি বলছো এসব! হায়াতি সবসময় ফান করে আমাদের সাথে । ও তোমার ব্যাপারে জানেনা তাই এরকম বলেছে৷
‘ সেটা তোমাদের ব্যাপার৷ মাঝখান থেকে আমি কেনো অন্য কারও কাছে এভাবে উপস্থাপন হবো৷
তাসফিয়া চলে গেলে অর্ণ বললো, কি একটা ঝামেলা হলো রে ভাই। এই মেয়ে আমাকে সবসময় বাঁ’শ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে৷ নিজে থেকে সব ভেবে নিবে তারপর নিজেই আবার সবকিছু করে নিবে৷ তোকে বলেছিলাম তাসফিয়ার কথা হায়াতিকে বলে দে
‘ মাত্র তো রিলেশন শুরু হলো৷ আর হায়াতির ব্লাকমেইলের ভয়েই তো বলা হয়নি৷ তারপরও ভেবেছি বলবো ওকে। কিন্তু তার আগেই তো এসব হয়ে গেলো।
‘ আজকে আসুক ডা’ইনিটা।
*****
হায়াতি ওর ফ্রেন্ডদের অর্ণর বলা ভু’তুড়ে বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলো। ফিহা বললো, এরকমটা তো শুনিনি৷ অর্ণর বলা কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তো এটা খুবই ভ’য়ংকর। দারুন এডভেঞ্চার হবে৷ চলনা একদিন সবাই যাই।
‘ হৃদিতা,আরিয়াও এটা বলছে৷ কিন্তু ওই অর্ণ চাচ্ছেনা আমরা সেখানে যাই। আমাদের নিয়ে গেলে নাকি ও প্যাড়ায় পরবে। তারপরও রাজি হয়েছে কিন্তু বড় আব্বুর থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ তোরা গেলে আরও ভালো হবে।
হায়াতি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিলো তখন আদ্রিব আসলো। এই ছেলেটাকে হায়াতি একদমই সহ্য করতে পারেনা। ক্লাসে সবসময় ওকে ফলো করে৷ এখনতো ক্লাসের বাহিরেও ফলো করা শুরু করে দিয়েছে৷
হায়াতি আদ্রিবকে বললো, তোমার সমস্যাটা কোথায় বলতো? একি ডিপার্টমেন্টের বলে কি সবসময় বিরক্ত করবে। আমি লক্ষ্য করেছি তুমি ক্লাসেও সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকো৷ এখন আমরা ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিচ্ছি সেখানেও চলে আসলে৷
আদ্রিব বললো, রাতে তোমাকে কল দিলাম কতবার। রিসিভ করলে না কেন?
হায়াতি অবাক হয়ে আদ্রিবের দিকে তাকিয়ে আছে। রাতে যে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছিলো সেটা এর কাজ৷ হায়াতির প্রচন্ড রাগ হলো আদ্রিবের উপর৷ ওকে বললো, তোমার সমস্যাটা কি? আমার নাম্বার পেলে কোথা থেকে? এভাবে বিরক্ত করার কোনো মানেই হয়না৷ আমি স্যারকে বলতে বাধ্য হব
আদ্রিব বললো, যেভাবেই হউক তোমার নাম্বার পেয়েছি। এখন থেকে কল রিসিভ করবা।
হায়াতির আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। আদ্রিবকে বললো, ওই কে রে তুই যে তোর কল আমাকে রিসিভ করতে হবে! অপরিচিত কেও আমার নাম্বার জানেনা আর আমি রিসিভও করিনি। তোর নাম্বারটা এখনই ব্লক করছি। আর কখনও আমাকে বিরক্ত করবিনা।
চলবে—