#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১১
হায়াতি বললো, ওই ব’দমাশ ছেলে এখনই তুই আমার টাকা ফেরত দিবি। আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম তখন৷ তুই আমার সাথে এরকম কীভাবে করতে পারলি? আর একটু হলেই তো আমি কান্না করে দিতাম।
‘ তুই তো একটা ডা’ইনি। আর ডা’ইনিরা কান্না করেনা৷ সামান্য কিছু টাকার জন্য তুই আমার সাথে এরকম করছিস। একটা সময় তোর ইচ্ছে মত আমার কাছ থেকে টাকা নিস
‘ তা সেই সময়টা কখন হবে শুনি?
‘ যখন আমি জব করবো৷
‘ আমি ওত কিছু বুঝিনা৷ তুই আমার টাকা এখন দিবি। আর বাহিরে আমার সাথে যে ব্যবহার করেছিস তার জন্য সরি বলবি৷
‘ আচ্ছা ” সরি ” টাকার কথা ভুলে যা৷ টাকা দিবোনা তাই সরি বলছি।
‘ তোর সরি তোর কাছেই রাখ। টাকাও দিবি সরিও বলবি
‘ একসাথে দুটো সম্ভব না। তুই এত টাকা টাকা করিস কেন? তুই টাকা দিয়ে কী করবি। মনে কর তোর টাকা আমার কাছর জমা রাখছিস। হিসেব করে রাখবি একসময় সব পরিশোধ করে দিবো৷
নির্ঝর, নুশান,হৃদিতা, আরিয়া চলে আসলো। নির্ঝর বললে, ভাইয়া কী প্ল্যান করলা তুমি! হায়াতি আপু অনেক ভয় পেয়েছিলো। বাসায় আসার পরও আপুর মন খা’রাপ ছিলো। আর একটু হলে তো কান্নাই করে দিতো৷
অর্ণ বললো, সেটাই ঠিক ছিলো। পরে ভাবলাম,পাবলিক প্লেসে কান্না করলে সবাই আমাকে উল্টা- পাল্টা বলবে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলাম। ডা’ইনিটা আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পরিবর্তে আমাকে মা’রতে আসছে। এজন্যই সবাই বলে কারও উপকার করতে নেই।
হায়াতি বললো, তুই আমার কীসের উপকার করেছিস। আমার সাথে ওইরকম ব্যবহার করেছিস। তারপর আমার টাকা নিয়েছিস।
‘ আমি কী জোর করে তোর টাকা নিয়েছি নাকি। তুই নিজ ইচ্ছায় আমাকে দিয়েছিস
‘ তুই আমাকে বো’কা বানিয়ে টাকা নিয়েছিস
‘ তাহলে স্বীকার করছিস যে তুই বো’কা
‘ না, আমি বো’কা কেন হবো। তুই বো’কা
‘ তাহলে আমি তোর টাকা কীভাবে নিলাম।
‘ আমাকে বো’কা… ধ্যা’ত তুই আবার আমার সাথে চালাকি করছিস।
‘ তুই নিজেই ডিসাইড কর তুই বো’কা কী না
‘ না,বো’কা না
‘ তাহলে আমি তোর টাকাও নেইনি
নির্ঝর,নুশান,হৃদিতা,আরিয়া সবাই হাসতে লাগলো। হায়াতি ভাবনায় পড়ে গেলো। এখন যদি অর্ণন কাছে টাকা চায় তাহলে সবার সামনে বো’কা প্রমানিত হবে। আর বো’কা না হতে চাইলে টাকা পাবেনা। এই টাকার জন্য সবাই ওকে বো’কা বলে ট্রল করবে এটা হতে দেওয়া যাবেনা। অর্ণর বাচ্চা খুব ভালেই প্ল্যান বানিয়েছে। ওর যা খরচ হয়েছে তার থেকে বেশি আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো। হায়াতি অর্ণকে বললো, লাগবেনা টাকা। আমি তোর মত বো’কা না। সুযোগ আমারও আসবে ফা’জিল ছেলে। আজকে যে ভয়টা পেয়েছি এটা কোনদিন ভুলবো না।
‘ ভুলিস না ডা’ইনি। তুই রেস্টুরেন্টে আমার সাথে কী করেছিস ভুলে গেলি। তোর জন্য রুহাসা গেলো।
কথা বলেই অর্ণ নিজের পায়ে নিজে কুঁ’ড়াল মে’রেছে এটা পরক্ষণেই বুঝতে পারলো। এখানে যে নির্ঝর,নুশান, হৃদিতা , আরিয়া আছে তা অর্ণের খেয়ালই ছিলোনা৷ হায়াতি অর্ণের এরকম অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো। বাকিরা অবাক হয়ে অর্ণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ হৃদিতা বললো, রুহাসা কে ভাইয়া?
আরিয়া বললো, আমাদের ভাবি নাকি?
নির্ঝর বললো, তুমি রিলেশনে গেলা আর আমাদের একবারও বললা না ভাইয়া!
নুশান বললো, আমাদের কিন্তু ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে ভাইয়া৷
” কপাল আমার! মুখ ফসকে ভুল সময়ে ভুল জাগায় ভুল কিছু বলে ফেলেছি৷ এখন এদের কীভাবে সামলাবো। কপাল খা’রাপ হলে যা হয় আরকি। হায়াতির বা’চ্চা তো এই সুযোগ হাতছাড়া করবেনা। ওদেরকে বললাম, রুহাশা হলো আমার ফ্রেন্ড।
আরিয়া বললো, মিথ্যা কথা বলো কেন ভাইয়া। তোমার সব ফ্রেন্ডদের আমরা চিনি। আর নতুন কোনো ফ্রেন্ড হলে অবশ্যই আমাদের বলতা। রুহাশার সম্পর্কে যখন বলোনি তখন হতে পারে এটাই আমাদের ভাবী।
” কেমনডা লাগে! রিলেশনই হলোনা ওই হায়াতির জন্য আর এরা ভাবী বানিয়ে দিয়েছে৷ এতজনের এত এত প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিবো আমি৷ যেভাবেই হউক অন্য টপিকে যেতে হবে। মনে পড়েছে হৃদিতাকে তো আর কিছু জিজ্ঞেস করা হয় নায়। এখনই সুযোগ এই সিরিয়াস টপিক নিয়ে আলোচনা করা৷ ওদেরকে বললাম, রুহাশার সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই। এখন এটা বাদ দাও। হৃদিতাকে তো কলেজের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করা হয় নায়৷ হৃদিতাকে বললাম, কী হয়েছিলো? ছেলেগুলো কারা?
হৃদিতা বললো, এরা কলেজের সবথেকে ব’খাটে ছেলে। প্রতিদিন কোন না কোন মেয়েকে বিরক্ত করবে। স্যারদের কাছে বলেও কোনো লাভ হয়না। আর কোনো মেয়েরা ভয়েও স্যারদের কাছে কিছু বলেনা৷ কিছুদিন থেকেই আমাকে বিরক্ত করছিলো৷ আমি ব্যাপারটাকে ইগনোর করছিলাম। কিন্তু আজকে ওরা আমাকে আর আমার ফ্রেন্ডদের অনেক বা’জে কথা বলছিলো তাই আর সহ্য করতে পারছিলাম না৷ তখন আমি গিয়ে ওদের থা’প্প’ড় মা’রি। তারপর ওই ছেলেটা আমার হাত ধরে৷ আমার ফ্রেন্ডরা আসলে ওদের সাথেও খা’রাপ ব্যবহার করে৷ তারপর ক্লাসে এসে হায়াতি আপুকে বলি৷ আপু বলে কলেজ ছুটি দিলে সবাই একসাথে বের হতে আমরা বাহিরে থাকবো৷ আমরা বুঝতে পারছিলাম ছেলেগুলো ছুটির পর কিছু একটা অঘটন ঘটাবে তাই সবাই ভয়ে ছিলাম। এরপরই তো তুমি চলে আসলো৷ আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে কে বললো?
হায়াতি বললো, আমি তো সবাইকে নিষেধ করেছিলাম তোকে না বলতে৷ তাহলে তুই জানলি কীভাবে? ছোট আব্বু, আমি হৃদিতা যদি না বলি তাহলে নির্ঝর বা নুশানের ভিতর কেও একজন বলে থাকবে।
নির্ঝর বললো, আমি বলিনি। জানি তো ভাইয়া কিরকম। বললে ওদের মা’রবে তাই বলিনি৷
নুশান বললো, আমিও বলিনি। ভাবলাম ভাইয়াকে বললে কলেজে গিয়ে ঝামেলা করবে তাই বলা হয়নি। কিন্তু ভাইয়া তো আমাদের আগে গিয়ে কলেজের ভিতর ঢুকে ছেলেগুলোকে মা’রলো। বুঝলাম না ভাইয়া কীভাবে খবর পেলো!
ওদের সবার কথা শুনে অর্ণ হাসতে লাগলো। অর্ণ ওদেরকে বললো, তোদের কেও বিরক্ত করবে আর আমি জানতে পারবোনা এটা অসম্ভব।
হায়াতি বললো, তুই কী আমাদের পিছনে ডিটেকটিভ রেখেছিস। তা না হলে তো তোর জানার কথা না
‘ তোরা যদি তাই মনে করিস তাহলে তাই করেছি৷
হৃদিতা বললো, ভাইয়া ওরা কিন্তু অনেক খা’রাপ। ওরা তোমাকে ছেড়ে কথা বলবেনা৷ তোমার সাবধানে থাকা উচিত। বাহিরে বের হলে সবাই একসাথে বের হবো৷
” হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা৷ এরা নাকি আমার সিকুরিটি দিবে। এখন এদের জন্য বাসা থেকেও বের হওয়া যাবেনা৷ হায়াতি তো আগেই আয়ান,ইশান, রাফসানকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে৷ একা একা আর বাহিরে গিয়ে কী করবো৷ তার থেকে বাসায় থাকাই ভালো৷
রাতে সবাই একসাথে খাওয়ার জন্য বসলাম। তখন আব্বু বললো, কালকে কলেজে যা হওয়ার হবে তারপর যেনো আমি কিছুদিনের জন্য অন্য শহরে চলে যাই
আমি কিছু বললাম। এখন বলেও কোনো লাভ হবেনা। যত যাই হউক আমি যাবোনা। কালতে আব্বুই বলবে যেতে হবেনা। তাই এখন অযথা আব্বুকে রাগিয়ে দিয়ে লাভ নেই।
*****
পরেদিন ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে হৃদিতার কলেজে যেতে লাগলাম। আমার সাথে শুধু ওরা তিনজন৷ আব্বু আগেই কলেজে আছে। সবাই আলোচনা করছে কীভাবে এটা সমাধান করা যায়। ওই ছেলেগুলো ক্যাম্পাসেই আছে। ওরা ১৫/২০ জনের মত হবে। আমরা মাত্র ৪ জন। ক্যাম্পাসে পুলিশও আছে। আমি নিশ্চিত এরা কোনো না কোনো ঝামেলা করবে তা যত পুলিশই থাকুক না কেন
চলবে—-