হৃদহরিনী পর্ব ১০

0
290

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১০
অর্ণ হায়াতিকে বললো, হাতটা একটু ছাড়। এভাবে হাত ধরে হাঁটছিস সবাই কী ভাবছে বলতো।

‘ যার যা ইচ্ছে ভাবুক৷ আমি হাত ছাড়বো না৷

‘ আমি পালিয়ে যাবোনা৷ একটু শান্তিমত হাঁটতে দে আমায়৷

‘ তোকে বিশ্বাস নেই। হাত ছাড়লেই দৌড়ে পালাবি৷

‘ কপাল আমার! এই হাত ছাড়িস না। সারাজীবন এভাবে ধরে রাখ৷ দরকার হলে হাতটা কেঁ’টে তোর কাছে নিয়ে রাখ৷ তারপরও এই হাত কখনও ছাড়বিনা।

অর্ণের কথা শুনে হায়াতি হাসতে লাগলো। অর্ণকে এখন একদম বো’কাসোকা লাগছে৷ সবার সাথে অর্ণ যেরকম রাগি থাকে পরিবারের সাথে থাকলে একদম তার বিপরীত চরিত্রের অর্ণকে দেখা যায়। হায়াতির সাথে কথা বললে তো বো’কা’সো’কা অর্ণকে পাওয়া যায়।

হায়াতির হাত ধরার কারনে অর্ণ ঠিকভাবে হাঁটতেও পারছেনা। অর্ণ মনে মনে হায়াতিকে ডা’ইনি,শাঁ’ক’চু’ন্নি এসব বলছে। পাবলিক প্লেসে বলে কিছু বলতে পারছেনা৷ হায়াতি এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে অর্ণকে জলাচ্ছে। অর্ণ বললো, তুই বাসায় যা এখন। আমি রাস্তার পাশে টং দোকানে বসে চা খাবো।

‘ তো আমি বাসায় যাবো কেন? আমিও চা খাবো

কেমনডা লাগে! হায়াতির বাচ্চা এটা কোনো রেস্টুরেন্ট না। রাস্তার পাশের দোকান৷ ওখানের মানুষের কথাবার্তার ঠিক নেই। তুই মেয়ে হয়ে ওখানে যাবি কেন। তোর যেতে হবেনা। তুই বাসায় যা আমি একটু পর আসছি৷

‘ তুই টং দোকানে বসে চা খেতে পারলে আমিও পারবো। এরকম রাস্তার পাশে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা।

‘ ওই এমন ভাবে বলছিস মনে হয় যেনো এর আগেও অনেকবার চা খেয়েছিস এখানে৷ তোরা সবসময় রেস্টুরেন্টে যাস। এসব দোকান তোদের জন্য না। আমরা গরিব মানুষ এসব দোকান আমাদের জন্য পারফেক্ট

‘ আগে যাইনি তো কি হয়েছে। এখন যাবো। ভালো লাগলে আমার যাবো।

‘ ধুরো! এখন কিন্তু ভালোলাগছেনা। বললাম না টংয়ের দোকানে মানুষ ভেবেচিন্তে কথা বলেনা। ওইখানে কি আর কোনো মেয়ে মানুষ দেখছিস। কেও আসেনা। তোরও যেতে হবেনা। তাছাড়া সবাই ওখানে চা খায় সাথে সি’গা’রে’ট ও খায়। তুই তো আবার সি’গা’রে’টের ধোঁ’য়া সহ্য করতে পারিস না। তোর ভালোর জন্যই বলছি বাসায় যা।

‘ তুই আমার ভালোর চিন্তা করছিস! তাহলে অবশ্যই এর পিছনে কোনো কারন লুকিয়ে আছে। হয়তো তুইও সি’গা’রে’ট খাবি তাই আমাকে তোর সাথে নিচ্ছিস না।

‘ কপাল আমার!

অর্ণ দোকান থেকে একটু পাশে হায়াতিকে দাঁড় করিয়ে চা আনতে গেলো। একটু পর চা নিয়ে আসলো। হায়াতি বললো, কাপ গুলো এরকম কেনো? রেস্টুরেন্টে তো কত সুন্দর থাকে।

‘ তোর চা খাওয়া লাগবেনা। এইটা কি তোর রেস্টুরেন্ট যে ওইরকম হবে। আগেই তো বলছিলাম আসা লাগবে না। তারপরও জোর করে আসলি। এখন এরকম বলছিস

‘ আমার ইচ্ছে বলেছি তাই বলে তুই রাগ করবি কেন? আমরা সবার থেকে এত দূরে কেন? চল তাদের ওখানে যাই।

‘ এখানেই দাঁড়িয়ে থাক। বললাম না, এখানে মানুষের কথাবার্তার ঠিক নেই।

চা শেষ হলে অর্ণ হায়াতিকে বললো, এখন টাকা দে

হায়াতি অবাক হয়ে অর্ণকে জিজ্ঞেস করলো, আমি টাকা দিবো মানে?

‘ এই চা,বিস্কুট এর দাম দিবে কে? আমি তো বাসা থেকে টাকা নিয়ে বের হয়নি৷ তোর প্যাড়ার জন্য বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হতে হয়েছে। এখন টাকা দিতে না পারলে কিন্তু দোকানদার বেঁ’ধে রাখবে। এসব দোকানদাররা কিন্তু অনেক ভ’য়ং’ক’র হয়। সবার সামনে উল্টা- পাল্টা বলে অপমান করে। আমি তো ছেলে তাই যেভাবেই হউক সহ্য করে থাকতে পারবো৷ কিন্তু তুই কি করবি।

অর্ণর কথায় হায়াতি অনেক ভয় পেয়ে গেলো। এখানে তো বিকাশ, নগদ বা রকেটেও পেমেন্ট করা যাবেনা। ওর সাথে তো ক্যাশ টাকা নেই। এখন কী হবে। হায়াতি নরম সুরে অর্ণকে বললো, অর্ণ আমার কাছে তো ক্যাশ টাকা নেই। এখানে বিকাশ,নগদ,রকেটে পেমেন্ট করা যায়না।

‘ এটা কি রেস্টুরেন্ট পেয়েছিস। টাকা নাই তো আসলি কেন? আমি বার বার বলেছি একা বের হয়েই চলে আসবো। তারপরও নাচতে নাচতে আমার সাথে চলে আসলি। আবার চা পান করা লাগবে তোমার৷ টাকা নেই আগে মনে ছিলোনা।

অর্ণর কথা শুনে হায়াতির অনেক মন খা’রাপ হয়ে গেলো। এরকম সিচুয়েশনে হায়াতি এর আগে কখনও পড়েনি। অর্ণকে বললো, আমার কাছে টাকা নেই৷ আমি পরে দিয়ে দিবো।

‘ দোকানদার তো আমার শ্বশুর লাগে তাই ওনি মানবে এটা। এসব দোকানে বাকি রাখা যায়না। এখন দিতে হবে৷ না দিতে পারলে তাদের অনেকরকম কথা শুনতে হবে৷

হায়াতি মা’থা নিচু করে আছে৷ অর্ণ বললো, আচ্ছা তুই থাক আমি দোকানদার গিয়ে অনুরোধ করে দেখি। রাজি হলেও হতে পারে।

মুহুর্তের মধ্যেই হায়াতির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অর্ণ কিছুখন পর ফিরে এসে বললো, দোকানদার রাজি হয়েছে। তবে অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমাকে।

‘ সরি আমি

‘ তোর জন্য তাড়াহুড়ো করে আমি মানিব্যাগ নিয়ে আসিনি। তাই এতগুলো কথা শুনতে হলো৷ শুধু সরিতে কাজ হবেনা।

‘ তাইলে?

‘ যদি তোর মনে হয় আমি এখন থেকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছি তাহলে ওইদিনের আমার সব খরচের টাকা তুই দিয়ে দিবি৷

‘ আচ্ছা দিবো। তারপরও অনেক অনেক ধন্যবাদ তোকে।

অর্ণ অবাক হয়ে হায়াতির দিকে তাকিয়ে আছে৷ এ কোন হায়াতিকে দেখছি। মনে হচ্ছে হায়াতি খুব ভয় পেয়েছে। যাক হঠাৎ প্ল্যানটা কাজে আসলো। হায়াতিকে বললাম, বাসায় গিয়েই দিতে হবে কিন্তু

‘ আচ্ছা দিবো।

****

বাসায় আসার পর নির্ঝর জিজ্ঞেস করলো, কোথায় গেছিলা তোমরা?

হায়াতি বললো, আর বলো না আজকে যা বিপদ থেকে বাঁচলাম। অর্ণের সাথে হাঁটতে বের হইছিলাম। তারপর চা নিলাম দুজনে। কিন্তু অর্ণ তো তাড়াহুড়োয় টাকা নেয়নি। ও ভেবেছিলো আমার কাছে আছে৷ কিন্তু আমার কাছেও টাকা ছিলোনা। পরে অর্ণ অনেক অনুরোধ করে দোকানদারের কাছ থেকে সময় নিলো।

হায়াতির কথা শুনে নির্ঝর আর নুশান হাসতে লাগলো। হায়াতি,হৃদিতা, আরিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওরা কেন হাসছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।

নির্ঝর বললো, অর্ণ ভাইয়া আজকে তোমাকে খুব বো’কা বানিয়েছে। প্রথমত ভাইয়ার কাছে টাকা ছিলো। তারপর ওই মামা আমাদের অনেক পরিচিতি। আর ভাইয়ার সাথে তো আরও ভালো পরিচয়। ভাইয়া শুধু শুধুই তোমাকে ভয় দেখালো।

হায়াতি বললো, এই উপকারের জন্য তো আমি আরও ওইদিনের ওর সব খরচের টাকা দিয়ে দিলাম।

নুশান বললো, ভাইয়া বো’কা বানিয়েছে তোমাকে।

‘ অর্ণ কোথায় এখন?

‘ ওয়াশরুমে

হায়াতি রেগে আছে অনেক৷ অর্ণর আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুখন পর অর্ণ আসলো। অনেক খুশি অর্ণ। ওইদিনের সব খরচের টাকা হায়াতির কাছ থেকে নিয়েছে৷ অর্ণ আসা মাত্রই হায়াতি বললো, ওই ব’দ’মা’শ পোলা আমার টাকা দে

‘ কিসের টাকা ডা’ইনি?

‘ তুই আমাকে বো’কা বানিয়ে টাকা নিয়েছিস। এখন সব টাকা আমাকে ফে’রত দিবি৷ আমার কতগুলো জমানো টাকা।

‘ হাহা, তুইতো এমনিতেই বো’কা তোকে আর কি বো’কা বানাবো

হায়াতি অর্ণকে মা’রতে লাগলো। অর্ণ দৌড়ে ওর রুমে গেলো। হায়াতিও অর্ণর পিছনে দৌড়াতে লাগলো। হঠাৎ হায়াতি কন্ট্রোল হারিয়ে অর্ণর উপর পরে গেলো। বিছনার উপর অর্ণ ওর উপর হায়াতি। অর্ণ বললো, ওই আঁটার বস্তা আমার উপর থেকে ওঠ তাড়াতাড়ি। হায়াতি অর্ণর উপর থেকে উঠে ওকে বললো, আমার টাকা দে

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here