গার্লফ্রেন্ডের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছি এমন সময় আমার চাচাতো বোন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, জান আমি সরি! সামান্য একটা কি’স দেওয়ার জন্য তোমার সাথে আমার রাগ করাটা ঠিক হয়নি। তুমি তোমার বোনের সাথে এখানে রেস্টুরেন্টে বসে আছো আর আমি তোমাকে ক্যাম্পাসে খুজে বেড়াচ্ছি।
আমি হায়াতিকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই হায়াতি বললো, বুঝতে পেরেছি বোনের সামনে লজ্জা পাচ্ছো। তোমার বোনের সাথে আমাকে আগে পরিচয় করিয়ে দিবেনা৷
হায়াতির কথা শুনে রুহাশা আমাকে বললো, তুই আসলেই একটা ছ্যা’চ’ড়া। তোর গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমাকে ডেট করতে নিয়ে আসিস।
হায়াতি বললো, আপু ভাইয়ের সাথে এরকম রাগ করতে নেই।
রুহাশা এবার আরও রেগে গেলো। হায়াতিকে বললো, আমি ওর বোন নই। আপনার বয়ফ্রেন্ড ১০ দিন ধরে আমাকে পটানোর চেষ্টা করে আজকে প্রথম ডেট ছিলো আমাদের। আর এখন জানতে পারি ওর আগে থেকেই জিএফ আছে। আপনার বয়ফ্রেন্ডের চরিত্রের সমস্যা আছে৷ এরকম বিএফ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো৷ জিএফ থাকার পরও যার অন্য মেয়ে দরকার তার সাথে ব্রেকআপ করাই আপনার জন্য ভালো হবে।
‘ আপনি ঠিক বলেছেন আপু৷ ও আমার সাথে চিট করেছে। আজকের পর আর ওর সাথে কোনো সম্পর্ক নাই।
রুহাশা আমাকে বললো, তোর মত খা’রাপ ছেলে আমি জিবনে দেখি নাই
‘ ওই আমি খা’রাপের কি করছি। কিছু না জেনে শুনে আমাকে এতকিছু বলে যাচ্ছো। ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই৷ ও মিথ্যা বলছে তোমায়। ও আমাদের ব্রেকআপ করাতে চায় তুমি বুঝতে পারছো না কেন
‘ ওই তোর সাথে আমার রিলেশন ছিলোই বা কবে যে ব্রেকআপ হবে৷ কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা বলছে তা নিজের চোখকেই তো দেখছি। তোর জন্য সবার সামনে আমি অপমানিত হয়েছি৷ আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই খা’রাপ ভাবছে আমায়। আর একটাও যদি কথা বলিস তাহলে এখানেই তোকে থা’প্পর দিবো।
কপাল আমার!
রুহাশার কথা শুনে আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। পরিস্থতি আমার অনুকূলে না। এখানে সবাই আমার বিরোধী পক্ষ। তাই এখানে চুপ করে থাকাই আমার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সম্মান যেটুকু বাকি আছে থা’প্প’ড় খেলে তাও থাকবেনা৷
হায়াতি কান্নার অভিনয় করে রুহাশাকে বললো, দেখছেন আপু ও আমাকে চিনেই না এখন। ২ বছরের রিলেশন আমাদের। এত সহজে ও ভুলে গেলো। আমি ওকে কতটা ভালোবাসি আর ও আমাকে এভাবে ঠকালো৷ একটু রাগ করেছি বলে সারাদিন আমার সাথে কথা না বলে থেকেছে৷ এখন তো আমাকে চিনতেই পারছেনা৷
রুহাশা বললো, কান্না করে লাভ নেই আপু। এখনও যদি শিক্ষা না নেন তাহলে পরে আরও পস্তাতে হবে৷ যে একবার ঠকায় সে বারবার ঠকাবে।
‘ ২ বছরের রিলেশন এত সহজেই কি ভুলতে পারবো আপু!
‘ আচ্ছা আপনি ওর সাথে কথা বলে দেখেন আমি চললাম আপু
রুহাশা যাওয়ার আগে আমার দিকে রাগীভাবে তাকালো৷ আমি তখনও দু’গালে হাত দিয়েই বসে আছি৷ এই মেয়েরে বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে যাওয়ার আগে আমারে থা’প্প’ড় মা’রার মন চাইলো। তাই আগে থেকেই সেইফটির কথা ভাবতে হবে৷
রুহাশা চলে যাচ্ছে আর আমি ভাবছি এই মেয়ে বেঁ’চে থাকতে আমার কপালে জিএফ নাই। কত কষ্ট করে রুহাশাকে পটিয়েছিলাম। আর এই হায়াতির বা’চ্চা ধুমকেতুর মত এসে সুনামির মত সব ধং’স করে দিলো। আমাকে এরকম দেখে হায়াতি হাসতে লাগলো। ওর হাসি দেখে আমার রাগ আরও বেড়ে গেলো।
‘ হায়াতির বা’চ্চা এটা তুই কি করলি?
‘ কি হলো মিঃ অর্ণ? খুব মন- খারাপ মনে হচ্ছে
‘ শা’কচু’ন্নি,ডা’ইনি,পে’ত্নি, গোপাল ভাড়ের বউ, বি’ন্দু মাসী তুই এটা কি করলি! ১০ দিন কত কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ওকে পটিয়েছিলাম। আর তুই এক নিমিষেই সব শেষ করে দিলি। কত কিউট ছিলো মেয়েটা। কি ক্রা’শটাই না খেয়েছিলাম। তোর জন্য সব শেষ হয়ে গেলো।
‘ আহারে জানটা আমার৷ খুব কষ্ট হচ্ছে গো! আমার সাথে কি করেছিলি মনে নেই। তার প্রতিশোধ নিলাম। আমি আবার কারও কাছে কোনো কিছু বাকি রাখিনা
‘ তার প্রতিশোধ তুই এইভাবে নিবি৷ আমার ১০ দিনের মেহনত তুই পানি করে দিলি
‘ তোকে না এভাবে দেখে কি যে ভালো লাগছে আমার। ওয়েট একটা ছবি তুলে নেই তোর। তোর এই রুপটা আবার কখন দেখতে পাবো তা তো জানিনা৷ তাই এটা স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবো৷
‘ হ্যা তোল ছবি। সময় আমারও আসবে। তখন আমিও ছেড়ে কথা বলবোনা।
‘ আহারে! তাই নাকি বাবু। আচ্ছা দেখা যাবে।
ওয়েটার খাবার নিয়ে এসে বললো, স্যার আপনাদের খাবার।
‘ খাবার দিয়ে আর কি হবে৷ খাবারের মানুষই তো চলে গেছে৷ এখন এই খাবার আপনারাই নিয়ে যান৷
‘ সরি স্যার। আমাদের রেস্টুরেন্টে খাবার রিটার্ন নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আপনাকে এটার বিল পে করতে হবে
কপাল আমার! আমার বাঁ’শ খেলাম। ভেবেছিলাম বিল রুহাশাকে দিয়ে দেওয়াবো৷ কত সুন্দর প্ল্যান করে রেখেছিলাম। আমার কাছে তো টাকাও নেই। বাবা তো এই ডা’ইনিটার জন্য আমারে কোনো টাকা দেয়না। পুরো রেস্টুরেন্টে আমি এক অসহায় ব্যাক্তি৷ হায়াতি আমার অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো।
হায়াতি বললো, ভালোই করেছিস খাবার অর্ডার দিয়ে। অনেক খুদা পেয়েছিলো আমার। তুই ও খা। খাবার নষ্ট করা ঠিক হবেনা।
‘ আমার গলা দিয়ে এই খাবার নামবেনা। তুই সব শেষ কর ডাইনি।
‘ না খেলে কি আর করার৷ আমি যা পারি খাবো৷ বাকিগুলো বাসায় নিয়ে যাবো৷ তারপর রাতে খাবো৷
আমি রাগী চোখে হায়াতির দিকে তাকিয়ে আছি। আর ও হাসতে লাগলো। হেসে নে সময় আমারও আসবে৷ এর দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিবো৷
হায়াতি খাওয়ার পর বাকি গুলো পার্সেল দিতে বললো। ওয়েটার পার্সেল আর সাথে বিল কার্ড দিয়ে গেলো। বিল দেখে তো আমি টাস্কি খেলাম। ওমা ২০০০ টাকা৷ বুঝলাম না আমি কি মিলাদ দিছি নাকি যে এত খাবার। আগে তো খেয়ালই ছিলোনা। মেয়েটা কি দূর্ভিক্ষে ছিলো নাকি যে এত খাবার অর্ডার করেছে। রুহাশাও মনে হয় হায়াতির মত পার্সেল নিয়ে রাতে খাওয়ার কথা ভেবেছে৷ কিন্তু ও তো আর জানতো না বিল আমি ওকে দিয়েই দেওয়াতাম।
হায়াতি বললো, বিল দিয়ে চল বাসায় যাই। অনেক খেয়েছি। রেস্ট নিতে হবে এখন।
আমি খুবই নরম সুরে বললাম, হায়ায়ায়াতি
হায়াতি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে এটা আমিই বলছি নাকি।
‘ হায়ায়ায়াতি
‘ তোর মতলব তো ভালোনা৷ কি বলবি বল
‘ বিলটা দিয়ে দে না বোন আমার। আমার কাছে এত টাকা নাই। আমি রুহাশাকে দিয়ে বিল দেওয়াবো ভেবেছিলাম৷
‘ এখন বুঝতে পারলাম তোর এত নরম সুরে আমাকে ডাকার কারন কি৷ তা অর্ণ ভাইয়ায়ায়া আমার কাছেও না টাকা নেই। আপনিই দিয়ে দেন। আর না দিলেও সমস্যা নেই। তাদের কাছে হয়তো বিকল্প কিছু আছে। ওইগুলা মানলে টাকা না দিলেও চলবে।
কি আর করার। বিলটা আমাকেই দিতে হলো৷ যা সহায় সম্ভল ছিলো সব শেষ। সামনে কি করবো সেটাই ভাবছি৷
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে বাইকের কাছে আসলাম। হায়াতিকে বললাম, টাকা দিলে আমি তোকে বাইকে নিবো তা না হলে না৷ এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি।
‘ অর্ণ ভাইয়া, আজকে মনে হয় আপনার মা’থাটা পুরোপুরি গেছে৷ আমার যে স্কুটি আছে তা কি ভুলে গেলেন৷
ধুর ছাই, আজকে দিনটাই আমার কেমন যানি যাচ্ছে। কি ভাবলাম আর কি হলো। এই মেয়েটা সব শেষ করে দিলো৷ আমিও সুযোগের অপেক্ষায় থাকবো৷
আমি সামনে যাচ্ছি আর হায়াতি আমার পিছন পিছন আসছে৷ কিছুখন পরই বাসায় চলে আসলাম। যৌথ পরিবার আমাদের। বাবা আর দুই চাচা সবাই একসাথে থাকি আমরা। হায়াতি আমার বড় চাচার মেয়ে। তাইতো এই মেয়েটা আমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিলো খুব সহজে। বাসায় আসার পরই বাবা বললো, কোথায় ছিলি সারাদিন। কল দিলাম তাও কেঁটে দিলি। কি এমন ব্যবসায়িক মিটিং করছিলেন আপনি শুনি।
‘ কপাল! এখন বাবাও শুরু করলো। বাবাকে বললাম, আমি ক্লাসে ছিলাম তাই কেঁ’টে দিছি।
‘ তোকে তো আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। আমি হায়াতিকে জিজ্ঞেস করছি
কপাল! হায়াতি তো এখন বলে দিবে আমি ক্লাসে ছিলাম না। কি বাঁ’শটাই না খাচ্ছি আজকে।
বাবা হায়াতিকে জিজ্ঞেস করলো, অর্ণ ক্লাসে ছিলো হায়াতি?
চলবে —-
#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১