#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৯
জামিয়া পারভীন তানি
সজীব বাসায় ফিরে সাইমা কে চিল্লিয়ে ডাকতে থাকে। সাইমা বের হয়ে আসতেই সাইমা হাত ধরে মুচড়ে দেয়। সাইমা ব্যথায় ককিয়ে উঠে। সজীব রাগী গলায় বললো,
• “ সবার সামনে আজ আমাকে হাসির পাত্র বানিয়েছো তাইনা! খুব মজা নিলে তুমি আমার। সবার সামনে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেছে আমার। ”
• “ লাগছে আমার, ছাড়ো তুমি। ”
• “ অনেক মজা নিয়েছো আমার, কিছু বলিনা বলে মাথায় উঠে বসেছো। সময় এসে গেছে মাথা থেকে ফেলে দেবার। কথাটা মাথায় থাকে যেনো! ” বলে সাইমার মাথায় একটা জোরে টোকা দিয়ে চলে আসে সজীব।
সাইমা সজীব কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
• “ পিশাচ একটা, নেক্সট টাইম ক্ষতি করতে চাইলে তোমার বারোটা বাজিয়ে দিবো।”
ভালোবাসা একটা মায়া, যে মায়া কাটানো সহজ না। মায়ার টানে বারবার প্রিয় মানুষ টার কাছে যেতে ইচ্ছে হয়। প্রিয় মানুষ টার ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে। প্রিয় মানুষ টার নিঃশ্বাস টাও মনে ঝড় তুলতে সক্ষম ।
সাইমা, আমি তোমার চেহেরা কে ভালোবাসি নি। তোমার সাথে অনেক গল্প করতাম ফেসবুকে। যে গল্পের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। একটা দিন কথা না বললে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যেতো। আর তোমার কষ্টের গল্প গুলো আমার জন্য ছিলো পীড়াদায়ক। একটা মেয়ে কিভাবে এতো কিছু সহ্য করতে পারে বুঝেছিলাম না! আমি ভেবেছিলাম তোমার প্রেমিক মারা গিয়েছে। নইলে তোমাকে কখনো ই জোর করে বিয়ে করতাম না। যখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম তখন তোমার চেহেরার মাদকতায় ডুবে গিয়েছিলাম। নেশা কাটানো সহজ নয়, তাই নিজের করে নিয়েছিলাম। জানতাম না আমার জোরাজোরি তে একে অপরকে এতো টা কষ্ট দিবো। নইলে এমন করতাম না আমি কখনোই। আবারো ভুল করেছিলাম আলিফের কাছে তোমাকে ছেড়ে এসে। কিন্তু আর নয় সাইমা, আমি পারমানেন্ট নিজের করে নিবো তোমাকে , আমার ভালোবাসা দিয়ে।
ডায়েরি বন্ধ করে সাইমার চোখে পানি চলে আসে, এরকম প্রতিটি পাতায় সাইমার কথা লিখে রেখেছে সজীব। এতো ভালবাসো তো এমন কেনো করলে? কেনো আমাকে কাঁদাও তুমি। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, হটাৎ বাইরে সুপ্তির চেচামেচি শুনে। বাইরে বের হয়ে এসে সজীবের কাজ দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ।
°°°
শিম্মি ঘরের দরজা অফ করে বসে আছে। বাইরে থেকে আলিফ অনেক ডেকেও সাড়া দেয়নি মেয়েটা। বাধ্য হয়ে আলিফ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে। শিম্মি ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে, মাথা ফেটে গেছে, ব্লাড বের হয়েছে অনেক। পুরো রুম রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আফিয়া ভয় পেয়ে পেছনে সরে যায়। আলিফ দৌড়ে গিয়ে শিম্মিকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আলিফের হাত পা কাঁপতে শুরু করে। তাড়াহুড়ো করে শিম্মি কে কোলে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটে যায়।
আফিয়া বুঝতেই পারেনি এমন কিছু হতে পারে। আলিফের দিকে তাকিয়ে ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে গাড়িতে। গাড়ি হসপিটালের সামনে থামার সাথে সাথে আলিফ শিম্মিকে দ্রুত এডমিট করিয়ে দেয়।
আইসিইউর সামনে আলিফ মাথায় হাত দিয়ে বসে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
• “ কি প্রব্লেম হয়েছিলো আপু? শিম্মি কেনো এমন করেছে? ”
• “ তুই কি ওকে ভালোবাসিস?”
• “ এটা ভালোবাসাবাসির সময় না! কেনো এমন করেছে বলো সেটা।”
• “ দেখ ভাই, আমি এমন কিছুই করিনি যে শিম্মি মরতে যাবে। হয়তো পা পিছলে পড়েও যেতে পারে। ”
• “ তুমি কিভাবে জানলে সে পা পিছলে পড়বে? ও তো হুইলচেয়ার ইউজ করে। ”
• “ আমি কিছুই জানি না। সব আন্দাজে বলছি। ”
একজন নার্স এসে বললেন,
• “ পেশেন্ট এর ইন্টারনাল ব্লিডিং ও হচ্ছে অনেক। তিন ব্যাগ O+ ব্লাড জোগাড় করুন তাড়াতাড়ি। ”
আলিফ আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ব্লাড ব্যাংকের দিকে দৌড় দেয়। আফিয়া নার্স কে জিজ্ঞেস করে,
• “ পেশেন্ট বাঁচবে তো! আর ওর বাচ্চা? ”
• “ বুঝা যাচ্ছেনা কিছুই, দোয়া করেন শুধু। ”
আফিয়া মনে মনে চিন্তা করে, মেয়েটা মরে গেলেই বোধ হয় ভালো হবে। কারণ ভাইয়ের বউ হিসেবে এমন মেয়েকে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
°°°
সাইমার চোখে মুখে সুপ্তি পানি দেয়, এতে সাইমা উঠে বসলেও আসেপাশে সজীব কে না দেখে চিল্লিয়ে সজীব কে ডাকে। সজীবের খোঁজ না পেয়ে সাইমা দৌড়ে সজীবের রুমে যায়। সজীব হটাৎ সাইমা কে দেখে চমকে উঠে। পাশে থাকা মেয়েটা কে বউ বেশে দেখে সরে দাঁড়ায় সাইমা। সজীবের দিকে তাকিয়ে বললো,
• “ তুই একটা চিটার সজীব। তোর উপর আল্লাহর গজব পড়ুক। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আজই চলে যাবো। তুই থাক তোর নতুন বউ কে নিয়ে। ”
সজীব মুচকি মুচকি হেসে বলে,
• “ স্নেহা আমার মেয়ে, আমার কাছেই থাকবে। যেতে হলে তুমি একাই চলে যেও। কেমম! এতো দিন তো আমার অফিসেই ছিলে! নতুন জব পাওয়া টাও সহজ না। তাই তোমার ভরসায় আমার মেয়েকে ও আমি দিবোনা কখনো। ”
সুপ্তি তখন এসে সজীবের মুখের উপর এসে বলে,
• “ যদি তাই হয়, অন্য মেয়ে নিয়ে ঘর করতে পারিস। তাহলে ভাবী কে নিয়ে আমরাই এই বাসা থেকে চলে যাবো। তুই কর তোর নতুন সংসার। আর বাচ্চাকেও তোর মতো অপদার্থ এর কাছে রাখবো না!”
চলবে…..