হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৬

0
680

#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৬
জামিয়া পারভীন তানি

• “ এখন কি স্বামীর অধিকার ফলাবে আমার উপর? জোর করে আদায় করে নিবে তো। নিতেই পারো! কাপুরুষের কাছে এর চেয়ে কি আশা করা যায়? ”

সজীব সাইমা কে ছেড়ে দেয়, দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে চলে আসে। প্রচণ্ড রাগ উঠছে নিজের উপর। একই ভুল আবার করতে বসেছে সে! নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে, শাওয়ার ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে।

রুমে এসে আলিফ কে একটা ফোন দেয়।

°°°

শিম্মি এখনও ভয়ে ভয়ে আছে, ওর হাজবেন্ড কে দেখেছে আজ। ওই লোকটা শিম্মি কে খুঁজে পেলে হয়তো মেরেই ফেলতো। বাসায় এসে আলিফ কে সব খুলে বলে, আলিফ শুধু শিম্মি কে কথা দেয়, “ সব ঝামেলা থেকে শিম্মি কে রক্ষা করবে! এরই মাঝে পরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসায় আলিফের বুকের ক্ষত বেড়ে যায়। সজীব আলিফ কে ফোন দিচ্ছে দেখে আলিফ ফোন রিসিভ করে। সজীব কথা শুরুর আগেই বলে,

• “ কনগ্রেচুলেশন আলিফ, বিয়ে দাওয়াত দিলেন না যে!”

আলিফ কিছু না বুঝে বললো,
• “ মানে! বিয়ে কখন করলাম!”
• “ গাড়িতে সুন্দরী বউ নিয়ে ঘুরছেন! আর অস্বীকার করছেন? ”
• “ আশ্চর্য তো! মেয়ে সাথে থাকলেই সে বউ হবে? ”
• “ হ্যাঁ তাইতো, সেইজন্যই তো আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।”
• “ মানে কি? সাইমা ফিরে এসেছে? ”
• “ হ্যাঁ এসেছে, তবে আপনার বিয়ের জন্য আমার সংসারে অশান্তি শুরু হয়ে গেছে। ”
• “ এমন ভালোবাসেন যে বউ কে সামলাতে পারেন না! বউ তো পুরোই বখে গেছে তাহলে! আর সাইমার চোখে আমার জন্য আর ভালোবাসা দেখতে পাইনি। সাইমা হিংসা করার মেয়েও না। সো প্লিজ, সাইমা কে নিয়ে ঝামেলা আমাকে না বলে আপনি নিজেই সলভ করুন। ”

আলিফ ফোন টা রেখে দেয়, সাইমার জন্য হৃদয়ে অনেক ভালোবাসা রয়ে গেছে। যা অন্য কেউ নিতে পারপারবে কিনা সে জানে না। আবার সজীব এর কথা শুনে ভাবলো, সত্যিই কি সাইমা কষ্ট পাচ্ছে! হয়তো না! তবুও সজীবের নাম্বারে একটা মেসেজ দেয়,

“ মেয়েটা একটা অনাথ পঙ্গু মেয়ে, শুধুমাত্র সাহায্য করছি। ”

আলিফ মেসেজ টা সেন্ড করে আপাতত ফোন অফ করে দেয়। শিম্মি পাশে হুইলচেয়ার এ বসে কথা গুলো শুনছিলো। হটাৎ আলিফের চোখ পড়াতে আলিফ সাইমার উপর পুষে রাখা রাগ শিম্মির উপর ঝাড়ে।
• “ লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনতে লজ্জা লাগে না! সাহায্য করছি তার মানে এই না যে আপনাকে আমি ভালোবাসি। বুঝেছেন আপনি? যান গিয়ে নিজের ঘরে যান। আর কখনো আমার কাজ কর্মে নজর দিয়েছেন তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। ”

শিম্মি কোনো কথা বলতে পারছেনা, কিছু না বুঝে উঠার আগেই এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলো লোকটা। শিম্মি বুঝতে পারে ওকে নিয়েই কিছু একটা হয়েছে, তাই শিম্মি পাশের রুমে চলে আসে। দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে কান্না শুরু করে। সে এমন হতভাগা যে সুখ তার সহে না।

°°°

সজীব আলিফের মেসেজ দেখে খুশি হয় নি! এই ছেলে টা বিয়ে করেনা কিসের আশায়। তবুও সাইমা কে কিছুই বলবেনা ঠিক করে সজীব। নিচে নেমে আসে , দরজা খুলে দেখে ভিতরে সাইমা চুপচাপ বসে আছে। সজীব সাইমার হাত দুটো ধরে বলে,
• “ ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়, মাফ করে কি দেওয়া যায় না!”
• “ যায় তো, তবে মানুষ কে মাফ করা যায়। অমানুষ কে নয়। ”
• “ আশ্চর্য তো! মেয়েদের হতে হয় নরম। আর তুমি তো আগুনের গোলা। ”

সাইমা উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তখন সজীব আবার বলে,

• “ অফিস থেকে কয়েক দিন ছুটি নেওয়া যায় না! ”
• “ না, নিলে চাকরি থাকবে না!”
• “ চাকরি করতে বলেছে টা কে? ”
• “ আমি। ”
• “ উফফফফ! কয়েক টা দিন ম্যানেজ করো ছুটি। চলোনা! কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি।”
• “ যাবো না। ”
• “ মেয়ের জন্য, প্লিজ। ”
• “ মেয়ে তোমার, তুমি যাও মেয়েকে নিয়ে। ”
• “ মেয়ে আমার থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসে।”
• “ আমি কোথাও যাচ্ছি না! ”
• “ যাবে না তাহলে? ”
• “ না।”
• “ তাহলে আমি, স্নেহা আর নয়না ঘুরে আসি। তুমি চাকরি করো। ”
• “ নয়না কে?”
• “ জেলাস ফিল করছো নাকি? ”
• “ জেলাস ফিল করবো কেনো? চিনি না তাই জানতে চাইলাম। ”
• “ তুমি তো হটাৎ ফিরে এসেছো! আসার কথা তো ছিলো না। তাই নয়নার সাথে বিয়ের কথা চলছিলো আর কি! সুপ্তির বান্ধবী, খুব পছন্দ করে আমাকে। ”
সাইমার খুব রাগ চলে আসে এমন কথা শুনে। সজীবের মাথার চুল ধরে ইচ্ছে মতো টেনে বললো,

• “ বিয়ে করবি তো কর, আমার পিছে পড়ে আছিস কেন? ”

°°°

আলিফ কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে, শিম্মিকে যা বলেছে সব অন্যায় হয়ে গেছে। আলিফ পাশের রুমে গিয়ে দরজা নক করে। শিম্মি বলে কয়েকবার ডাকার পর দরজার ছিটকানি খুলে দেয় শিম্মি। আলিফ শিম্মির দিকে তাকিয়ে দেখে , চোখ দুটো পুরো লাল হয়ে আছে। অনেক কান্না করেছে বুঝতে পারে আলিফ। শিম্মির সামনে হাটু গেড়ে বসে আলিফ বলে,

• “ I’m sorry . please forgive me. ”
• “ হু”
• “ আমি ওভাবে বলতে চাইনি, বলা উচিৎ ও হয় নি। মাথাটা খুব গরম হয়ে গেছিলো। ক্ষমা করে দিও প্লিজ। সরি, মাফ করে দিয়েন প্লিজ। ”
• “ স্বাভাবিক বিষয়ে এতো পেরেশান হবেন না। আমি আরোও খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়েছি। এটা তো কিছুই না। ”
• “ আমার অতীত ও ভালো ছিলো না। কষ্ট আমাকে জীবন্ত লাশ করে রেখেছে । আপনি বুঝবেন না এসব। প্লিজ তখনকার কথা গুলো ভুলে যান। ”
• “ হু, ফ্রেশ হয়ে নিন এখন। ”
• “ এক মিনিট , আপনি কি তখন থেকে ভিজছিলেন? ”
• “ হ্যাঁ, কেনো?”

আলিফ খুব রেগে যায়, শিম্মির গালে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বসে।
• “ দিনরাত বাচ্চা বাচ্চা করিস, পেটের ভিতরে বাচ্চা টা মারবি নাকি তুই। একঘন্টা তুই ভিজিস কোন সাহসে? ”

শিম্মি নিজের কষ্ট কমাতে একঘন্টা ভিজেছে, কিন্তু কখনো ভাবেনি সে অসুখে পড়লে বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যাবে। তার ভালোবাসার স্মৃতি কে সে হারাতে চায় না। একবার এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে গেছে তার সন্তান। আর নিজের সন্তানের হত্যাকারী শিম্মি হতে চায় না। আলিফের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। এরপর বলে,
• “ আর এমন হবেনা। ”
• “ থাপ্পড় টা মনে থাকে যেনো। ”
শিম্মি অবাক চোখে আলিফের দিকে তাকায়।

চলবে…….

ঘুম থেকে উঠে রান্না করে হাসপাতালে যাওয়া, ফিরে আসা সন্ধ্যায়, আবার রান্না খাওয়া। আরোও কাজ শেষ করতে করতে রাত ১১ টা। নিয়মিত লিখতে পারছিনা বলে দুঃখিত। চেষ্টা করি একটু করে লিখার কিন্তু পারছিনা কিছুতেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here