#হৃদস্পর্শ ( সিজন ২) পর্ব ৩
জামিয়া পারভীন তানি
সাইমা ঘুমের মাঝে বুঝতে পারে ওর ঘরে কেউ আছে। উঠে খেয়াল করে সজীব ওর হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
“ আশ্চর্য তো! ঘরের দরজা তো লক ছিলো। ও আসলো এই ঘরে।” পরক্ষণেই মনে পড়ে বাড়ি টাই তো ওর। সব কিছুই ওর হাতের নাগালে। রাগ হয় খুব সাইমার। সজীব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হাত টেনে নেয়। সজীব ঢুলুঢুলু ভাবে উঠে বসে। সাইমা ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে,
• “ আপনি এই ঘরে কি করছেন। এক্ষুনি বেরিয়ে যান। ”
সজীব মুখে আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে ।আরেক হাত দিয়ে ইশারা করে স্নেহা ওর পাশে দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। সাইমা মেয়ের ঘুমানো দেখে চুপ হয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে,
• “ মেয়ের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। যাও সামনে থেকে। ”
• “ যেমন মা তেমন মেয়ে। মেয়েকে এতো কষ্ট করে ঘুম পাড়িয়ে আনলাম। তাও মহারাণীর রাগ কতো। একটা ধন্যবাদ ও দিলো না!”
• “ মেয়েকে একদিন ঘুম পাড়িয়ে যেনো আমায় উদ্ধার করে দিয়েছেন হুহহ।”
• “ বাব্বাহ! ”
বলেই সজীব বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে আসতে শুরু করে। সাইমা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। হটাৎ সাইমা বুঝতে পারে সজীব ওর কপালে চুমু দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সাইমা কপালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
“ এতো ই যখন ভালোবাসো! তখন ছেড়ে চলে এসেছিলে কেনো? এতো সহজে ক্ষমা করবোনা তোমাকে। তুমি যেভাবে আমার ভালোবাসা কে অপমান করেছিলে সেভাবেই তোমাকে কষ্ট দিবো আমি ।”
°°°
শিম্মি চুলগুলো সামনের দিকে রেখে ভুতের মতো বসে আছে। আলিফ হটাৎ করে রুমে ঢুকে শিম্মি কে এভাবে দেখে প্রথমে ভয়ে চিৎকার করে। শিম্মি বুঝতে পারে না আলিফ কেনো চিৎকার দিয়েছে। মুখ থেকে চুল গুলো হালকা করে সরিয়ে জিজ্ঞেস করে,
• “ আপনার কি হলো? ভয় পেলেন কেনো?”
• “ আরে আপনি এইভাবে ভুতনীর মতো বসে আছেন কেনো? ভয় পাবো না তো কি নাচবো!”
• “ ছেলে মানুষ ও এতো ভয় পায়! জানা ছিলো না! ”
• “ চুপ ফাজিল মাইয়া, সত্যিই খুব ভয় পেয়েছি আমি। ”
• “ সরি, আসলে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এমন করিনি।”
• “ তো মাথায় কোন পোকা উঠেছিলো যে এমন করতে হবে!”
• “ ওড়না নেই তাই!”
আলিফ খুব রাগ করে এবার।
• “আরে গাধী ওড়না নেই, তাই বলে ওখানে শার্ট আরেকটা ছিলো না! ওটা গায়ে জড়ালেও তো পারতে! বোকা মেয়ে।”
শিম্মি নিজেই বোকা বনে যায়। আলিফ নিজেই আরেকটা শার্ট ওর দিকে ছুড়ে দেয়। আলিফ চাইলেই ওর ক্ষতি করতে পারতো! কিন্তু যেভাবে সাহায্য করছে তাতে শ্রদ্ধা বোধ ও চলে আসে।
• “ আমি বাইরে যাচ্ছি, তালা দিয়ে যাবো। ভয় পাবেন না কিন্তু। ”
শিম্মি এবার একটু মজা করে বলে,
• “ আমি কিন্তু আপনার মতো ভিতু নই।”
আলিফ রাগ করে বাইরে চলে আসে। এতো বড় অপমান! আমি ভিতু তাইনা! তোমাকে আমি দেখে নিবো। এসব ভাবতে ভাবতে রুমে তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
°°°
• “ আপনি হটাৎ ফিরে এলেন যে!” রেহানের গলায় সাইমা পিছনে ফিরে তাকায়। আস্তে করে জবাব দেয়,
• “ আমি আমার মেয়ের জন্য একাই যথেষ্ট না! বাবার ও দরকার আছে। সারভেন্ট রা সব দায়িত্ব নিতে পারে না! ওর হাত উঠিয়ে দিয়েছিলো।”
• “ তাহলে ভাবী আপনি আর চাকরি করবেন না। কারণ স্নেহাকে সময় দেয়া আপনার প্রয়োজন। ”
• “ প্রয়োজন হলে ওর বাপ চাকরি ছাড়বে। আমি না!”
• “ কি যে বলেন না আপনি। সজীব ভাই তো চাকরি করে না। নিজের বিজনেস। ঘরে বসেও সব কাজ চালিয়ে নিতে পারবে। ”
• “ তাহলে তাই করুক। আমার কি!”
রেহান হাসতে শুরু করে সাইমার কথা তে। সাইমা ইশারা করে বুঝায়, “ কি হয়েছে?” রেহান মাথা ঝাকিয়ে কিছু না বুঝিয়ে চলে যায়।
°°°
সুপ্তি রেহান কে জিজ্ঞেস করে,
• “তুমি আগে থেকে ই জানতে তাইনা ভাবীর খবর! ”
• “ এসব কি বলো তুমি। জানলে বলতাম না!”
• “ ভাবীর সাথে যখন কথা বলছিলে তখন শুনেছিলাম। ”
• “ তুমি তাহলে নজর ও রাখছো!”
• “ নজর রাখবো কেনো? শুনলাম তাই বলছি।”
রেহান সুপ্তির কানের কাছে এসে বললো,
• “যাই হোক এবার একটা বেবি চাই আমি। ”
• “ এখুনি এতো প্যারা নিতে পারবোনা প্লিজ। ”
• “ প্যারা বলছো কেনো? তাহলে তোমার ভাইয়ের মেয়েও বুঝি তোমার ভাইয়ের কাছে প্যারা!”
• “ আমি ওভাবে বলেছি নাকি! ”
রেহান সুপ্তির কানের লতি তে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলে,
• “ খুব ইচ্ছে করছে বাবা হতে। ”
সুপ্তি মুচকি হেসে চলে যায় রেহানের সামনে থেকে।
°°°
সন্ধ্যায় সাইমা স্নেহা কে নিচে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে দরজা খুলে গোসলে ঢুকে। যেনো মেয়ের খেয়াল ও রাখা যায়, আবার শাওয়ার ও নেয়া যায়। সাইমা তাড়াহুড়ো করে গোসল সেরে টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে আসে। রুমে এসে দেখে সজীব ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সাইমা না পারছে চিৎকার করতে, না পারছে চুপ থাকতে। তাড়াতাড়ি করে একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে নিলে সজীব সাইমার কোমর জড়িয়ে ধরে।
• “কতো দিন আমার ভালোবাসার সিক্ততা পাইনি। হৃদয় ব্যাকুল হয়ে থাকে তোমার ছোঁয়া পেতে। ”
• “ ছাড়ো বলছি, নইলে ভালো হবে না তোমার জন্য। ”
• “ না ছাড়লে কি করবে? ” হাত দুটো দিয়ে সাইমা কে আরোও আঁকড়ে ধরে। তখন সাইমার টাওয়েল এর গিট্টু খুলে যায় । সাইমা নিজের হাত দুটো দিয়ে টাওয়েল ঠিক করতে গেলে সাইমার হাত ধরে ফেলে।
• “ খুব ভালোবাসি তোমাকে। ভয় পেয়ো না! তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করবোনা। যা করেছিলাম আগে জেদের বশে। আর এখন শুধু ভালোবেসে তোমার মন জয় করবো। ”
• “ তো যাও না! নোংরা মন মানসিকতা তে আমাকে ধরেছো কেনো?”
• “ সরি। ”
সাইমা কে ছেড়ে দিয়ে সজীব মেয়েকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায় ।
সাইমা মেঝেতে বসে পড়ে। এ কেমন জীবন তার! না পারছে চলে যেতে, না পারছে কাছে টেনে নিতে। খুব ঘৃণা আসে আজকাল। কি করবে সে কিছুই বুঝে পায় না।
°°°
শিম্মি কে ৫ টা শাড়ি এনে দিয়েছে আলিফ। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ আর পেটিকোট। শিম্মি অবাক হয়ে আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মানুষ টা এতো ভালো কেনো? কেউ না হয়েও তার জন্য এতো কিছু করছে লোকটা!
• “ আপনি আমার মেহমান। তাই আপনার সব অসুবিধা দেখাও আমার দায়িত্ব। আর কাল আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবেন। ”
• “ কেনো?”
• “ বাচ্চাটা মেরে ফেলতে! ”
• “ কিহহহহ! কখনোই না!”
চলবে….