হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ২৩

0
858

#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ২৩
জামিয়া পারভীন তানি

সাইমা তড়িঘড়ি করে শুয়ে থাকা থেকে উঠে পড়ে , কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর বললো,
“ ও আলিফের স্ত্রী, কিভাবে ওকে নিয়ে আসবো বলো?”

শিম্মি সাইমার কথায় একটু রেগে যায়, আর বললো,
“ ওহহ তুমি, যাই হোক, ওকে আমি রাখতে চাইনা।”
“ তুমি রাখার কে? আলিফ রাখলেই হবে।”
“ তোমার ননদ থাকবেনা, এমনি তেই চলে যাবে। ”

সাইমা কথা না বাড়িয়ে ফোন অফ করে দেয়, সজীব কে কিছুই জানায় না সুপ্তির ব্যপারে।
সজীবের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

°°°
ভোর ৫ টার দিকে সুপ্তির ঘুম ভাঙে, নিজেকে আলিফের সাথে আবিষ্কার করে। অবশেষে মনে পড়ে যায়, গতরাতে কি কি হয়েছে। আলিফ কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় সুপ্তি, আলিফের ঘুম ভেঙে যায়। বুঝতে পারে সুপ্তি ওকে সরিয়ে দিয়েছে। আলিফ শান্ত গলায় বললো,
“ এখনো রাগ কমেনি? বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে যা হয়ে গেছে সেটা আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিও প্লিজ। ”
“ আপনি ক্ষমার অযোগ্য, লুচ্চা কোথাকার! একটা মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিতে আপনাদের মতো লুচ্চা দের কারোর লজ্জা করার কথা ও না।”

আলিফ আর কথা না বলে ড্রেস ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর সুপ্তি গায়ে চাদর জড়িয়ে কান্না শুরু করে। হটাৎ আলিফ আবার সুপ্তির কাছে আসে, সুপ্তি কে বেড থেকে টেনে নামিয়ে দেয়। ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। এরপর বলে,
“ একদম গোসল করে তারপর বের হবে। তোমাকে ভুলেও একা ছাড়া যাবেনা। ”
“ আপনি যান, আমাকে প্লিজ একা ছেড়ে দিন। ”
“ ছাড়া যাবে না, আবার পাগলামি করবে তুমি। আমি চোখ বন্ধ রাখছি, তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।”

আলিফ উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকলো, ততক্ষণে সুপ্তি বাধ্য মেয়ের মতো গোসল শেষ করে। ড্রেস চেঞ্জ করার পর আলিফ কে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসে, আলিফ মুচকি হাসি দিলে সুপ্তি আলিফ কে ওয়াশরুমের ভিতরে জোরে ধাক্কা দেয়। আলিফ স্লিপ কেটে পড়ে যায় মেঝেতে। বাথ টাবে লেগে কপাল কেটে যায়। আলিফ মাথায় হাত দিয়ে কোনোরকম উঠে আসে, সুপ্তি ওর করা অকাজের জন্য পস্তানো শুরু করে। এমন হবে ও ভাবতে পারেনি বলে আলিফের দিকে করুণ ভাবে তাকায়। আলিফ না দেখার ভান করে বেরিয়ে আসে সুপ্তির রুম থেকে।

°°°

আলিফ কে কপাল ড্রেসিং করে কাটা যায়গা টুকু তে ব্যান্ডেজ লাগায়। শিম্মি তখন ঘুম থেকে উঠে পড়ে, আলিফের কপাল দেখে তাড়াতাড়ি করে আলিফের দিকে এগিয়ে যায়,
“ কি হয়েছে তোমার? ”
“ ওয়াশরুমে পড়ে গেছিলাম। ”
“ কিভাবে? কতখানি কেটেছে দেখি?”
“ এতো দরদ না দেখিয়ে কিছু রান্না করে দিও, একটা ব্যথার ওষুধ খেতে হবে। ”
“ ঠিক আছে। ”

শিম্মি তাড়াতাড়ি কিচেনে ছুটে। গত দিনের ভাত ছিলো, ওভেনে নিয়ে গরম করে ফেলে। সাথে তরকারি ও গরম করে প্লেটে সাজিয়ে নিজের রুমে নিয়ে যায়। আলিফকে বলে,
“ ওষুধ খাবে তাই তাড়াহুড়ো করে এগুলো রেডি করলাম। একটু পরে আবার নাস্তা বানাবো সবার জন্য। ”
“ হুমম, দাও। ”

শিম্মি খাবার রেখে সুপ্তির রুমে ঢুকে। গিয়ে চমকে উঠে, সুপ্তি এই ভোরে গোসল করেছে দেখে। তাহলে কি আলিফ ওর কাছাকাছি গিয়েছে! নাহহ আলিফ এমন করতে পারেনা! ও আমাকে এভাবে ঠকাতে পারেনা! এসব ভেবে একা একা কষ্ট পেতে শুরু করে শিম্মি।

হটাৎ সুপ্তি কে বলে,
“ তুমি তোমার ভাইয়ের বাসায় চলে যাও। ”

সুপ্তি শিম্মির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ আমার ভাই নেই, এখানেই থাকবো। তুমি চাইলেও থাকবো, না চাইলেও থাকবো। ”
“ থাকলে থাকো, তবে শুয়ে বসে আর কতো কাল থাকবে? গিয়্র রান্না করে খাও। আমি রান্না করে রাখবো আর তুমি বসে শুয়ে খাবে তা তো হবেনা তাইনা! ”
“ আমার খেতে ইচ্ছে নেই, তুমি নিজের টা করে নাও। আমার চিন্তা করতে হবে না। ”

শিম্মি খুব রেগে যায়, আর বলে,
“ হাজার হোক আমি তোমার বড়। সম্মান দিয়ে কথা বলো।”
“ একা থাকতে দাও আমাকে, চলে যাও এখান থেকে। ” চিল্লিয়ে উঠে সুপ্তি।

আলিফ না পারতে সুপ্তির রুমে এসে দেখে দুজনের রাগী চেহেরা। আলিফ শিম্মির হাত ধরে বলে,
“ কি চাও? দুইজনে মিলে আমাকে খুন করবে? ” তারপর হাত থেকে চাকু টা এগিয়ে দেয় শিম্মির দিকে। আর বলে,
“ ধরো, যা খুশি করো। তবে হিংসা বিবাদ করোনা। ”
“ আমি আর এমন করবোনা। ” চাকুটা হাত থেকে ফেলে দেয় শিম্মি। আলিফ তখন বলে
“ সুপ্তি এখানেই থাকবে। দুজনে একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারলে থাকো, নইলে তোমাদের অত্যাচার এ আমাকে হারাবে।”

সুপ্তি তখন আলিফের উদ্দেশ্যে বলে,
“ একটা উপকার করবেন? ”
“ নাহ।”
“ কি চাইবো শুনলেন না?”
“ কি আবার চাইবে, আলাদা হয়ে যেতে চাইবে তাইতো! হতে দিবো না আলাদা।”
“ কেনো?”
“ আমার বিবেক বুদ্ধি যা বলে তাইই শুনি। ”
“ একটা জব খুঁজে দিবেন? ”
“ বড়লোক ভাইয়ের একমাত্র বোনের জব করা মানায় না।”
“ আমি সময় কাটাতে চাচ্ছি, প্লিজ অতীত ভুলতে হেল্প করেন।”
“ অতীত ভুলার দরকার নেই, অতীত থেকে শিক্ষা নাও তাহলেই হবে।”

সুপ্তি মাথা নামিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে, শিম্মি আলিফের পাশ কাটিয়ে চলে আসে ছাদে।

°°°

“ তুমি কি জানো সুপ্তি সুস্থ হয়ে গেছে! ” সাইমা সজীব কে জিজ্ঞেস করে।
“ হুম, তোমার বফ ফোন দিয়েছিলো।”
“ একদম বাজে কথা বলবেনা, আমার বফ ছিলো৷ এখন নেই সেটা জানোনা?”
“ থাকতেও পারে। ”

সাইমা রেগে গিয়ে সজীবের চুলের মুঠি ধরে টানতে শুরু করে। সজীব সাইমার কোমরে হাত দিয়ে সাইমা কে মাটি থেকে উঁচু তে উঠিয়ে গোল করে ঘুরাতে শুরু করে। সাইমার ঘুর্নি সহ্য হয় না বলে সজীব কে আরোও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।

“ এতো রেগে গেলে আজ, খুব ভালো লাগছিলো। ” সজীব সাইমা কে ঘুরাতে ঘুরাতেই হবে।
“ আগে কোল থেকে নামাও, মজা বের করে দিবো তোমার। হুহহহ…”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here