#হৃদস্পর্শ ( সিজন ২) পর্ব ২০
জামিয়া পারভীন তানি
রক্তিম চোখে আলিফ সাইমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাইমা অবাক হয়ে জানতে চায়,
“ হটাৎ, দেখতে এসেছো কতটা ভালো আছি?”
“ ভালো তুমি থাকো অলওয়েজ, শুধু ভালো থাকতে দিচ্ছো না আমাকে ।”
“ কি করেছি?”
“ তোমার ননদ কে আমি কখনোই বিয়ে করবোনা, তবুও তুমি কিসের জন্য ওর সাথে বিয়ে দিতে চাইছো?”
“ আমি এই ব্যপারে কোন কথা বলিনি এখন। তবুও তুমি কেনো ক্ষেপে গেছো আমার উপর? ”
“ শিম্মি কে তুমি উস্কে দিয়ে এখন অস্বীকার করছো?”
“ আমি মিথ্যে বলিনা, মিথ্যা বলা পাপ। তোমার স্ত্রী কে দীর্ঘদিন দেখিনি আমি। কখন এসব বলবো?”
“ তোমার পাগল ননদ কোথায়? ”
“ ঘরে আছে, কেনো?”
আলিফ আর কথা না বাড়িয়ে সুপ্তির ঘরের দিকে ছুটে যায়। সুপ্তি কে কিছু বলবে কি সুপ্তির চেহেরা দেখে আলিফ ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়৷ বাম হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা, ফ্লোরে পা দুই দিকে ছড়িয়ে বসে আছে। গায়ের কাপড় ও ঠিক নেই দেখে আলিফ চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেয়েটা কতো সুন্দরী আর প্রাণবন্ত ছিলো, আর তার এই অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে আলিফের। দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরতেই সজীব কে দেখে থমকে দাঁড়ালো আলিফ। সজীব রাগান্বিত ভাবে জিজ্ঞেস করে,
“ অনুমতি ছাড়া আমার বোনের রুমে ঢুকার সাহস হয় কি ভাবে তোমার? ”
আলিফ মাথা নীচু করে বললো,
“ ভালোবাসা হারিয়ে মানুষ পাগল হয়ে যায়! এতো টা ভালো কেউ বাসতে পারে জানা ছিলো না। ”
“ তুমি একজনকে ভুলে আরেকজনকে ভালো বাসতে পারো, তাই বলে সবাই কি তোমার মতো নাকি! ”
“ তাহলে কি আমার উচিৎ হতো সাইমার বিরহে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া? ”
“ সেটাই বেটার হতো, বন্ধ্যা মেয়েকে বউ করে রাখার চেয়ে।”
সাইমা দূর থেকে সজীব বলে চিৎকার করে ডাকে, আর বলে,
“ তুমি পুরো বদলে গেছো সজীব, নইলে তুমি এই কথা বলতে পারতে না।”
“ তোমরা আমাকে বদলিয়ে দিয়েছো! তোমার জন্য আমার পরিবার টা তচনচ হয়ে গেছে। প্রথমে মা গেছে, পরে আলিফ হত্যার প্রতিশোধ নিতে রেহান আসে। আর এই রেহান কে বিয়ে করে আমার বোনের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ”
সাইমার চোখ দিয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। আলিফ বুঝতে পারে সজীব নিজেও মানসিক অশান্তি তে আছে।
তাই সজীব কে কিছু না বলে সাইমার দিকে তাকালো, দেখেই বুঝতে পারে সাইমা সুখে নেই। এবার সজীব কে বলে আলিফ,
“ আমার জন্যই আপনার পরিবার এর সুখ নষ্ট হয়েছে তাইতো! ”
“ এছাড়া! ”
“ কি করতে হবে এখন?”
“ বাসা চলে যাও, আর আমাদের সামনে এসোনা। ” সাইমা বললো।
আলিফ সাইমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ যদি মনে করো আমি দোষী, তাহলে আমি দোষী। তবে তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করা সজীবের ও উচিত হয়নি। সে জদি সাইমা কে জোর বিয়ে না করতো তাহলে কিছুই হতো না। ”
সজীব চুপ হয়ে যায়, নিজের দোষ কেউ দেখিয়ে দিলে গলা উঁচিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনা।
সাইমা তখন বলে,
“ আলিফ তুমি চলে যাও৷ ”
“ হ্যাঁ যাবো, তবে ন্যায়বিচার করে যাবো। তোমরা মনে করো সুপ্তি আমার কাছে থাকলে সুস্থ থাকবে! তাহলে ওকে নিয়ে যাবো। তবে তোমরা ভুলেও ওকে দেখতে আসতে পারবেনা। ”
সাইমা সজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ দরকার নেই, চলে যাও।”
সজীব সাইমাকে থামিয়ে দেয় ইশারায়, আর আলিফ কে বলে,
“ নিয়ে যাও ওকে। ”
°°°
শিম্মি হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে, হাজার হোক কোনো নারী তার স্বামীর সাথে অন্য নারী কে সহ্য করতে পারে না। আলিফ যে সত্যই সুপ্তি কে বিয়ে করে এনেছে সেটা বিশ্বাস করতেও পারছেনা। আলিফ তো চাইতো না বিয়ে করতে, কেনো বিয়ে করার জন্য ফোর্স করেছে সেটা নিয়ে আফসোস হচ্ছে।
পাগল সুপ্তি আলিফ কে রেহান ডাকা শুরু করে দিয়েছে, হয়তো ভুলে গেছে রেহান আর নেই। আলিফ কিছুতেই সুপ্তি কে ছাড়াতে পারছেনা। শিম্মির চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া লাগছে আলিফের। নিজের ভাগ্য খারাপ, তাই তার সাথে এসব হচ্ছে ভেবে মন খারাপ করে রাখে।
শিম্মি তখন এসে বলে,
“ কনগ্রেচুলেশন, তবে তুমি যাই করো, বাচ্চা হবার পর ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।”
আলিফ অবাক হয়ে যায়, শিম্মি কি বলে এসব! শুধু নিজের স্বার্থ বুঝছে আর একটা মেয়ে কে বাঁচাতে হবে সেটা বুঝছেনা!
°°°
সজীব মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, সাইমা বাচ্চা দুটো কে ঘুম পাড়িয়ে সজীবের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সজীব আকাশের দিকে চেয়ে বলে,
“ সত্যিই কি তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছি! নাকি জেদের বশে! ভালোই যদি বাসতাম তাহলে তোমাকে দূরে সরিয়ে দিলাম কিভাবে! যা কিছু হোক, সব কিছুর জন্য তোমাকে দোষী ভাবি। অথচ তুমি পুরোপুরি আমার। আমার জন্য তোমার অতীত ছেড়েছো, এমনকি তোমার সাজসজ্জা ও শুধুমাত্র আমার জন্য। তবুও তোমাকে কেনো কষ্ট দিই আমি?”
সাইমা মুচকি হেসে বলে,
“ মানসিক অশান্তি তে খারাপ বিহেভ করো। আমি তো জানি তুমি আমার, ঘুরে ফিরে আমার কাছেই ফিরে আসবে।”
চলবে….
।