#হৃদস্পর্শ ( সিজন ২) পর্ব ১৮
জামিয়া পারভীন তানি
“ জীবনে কখন কি হয় তা তো কেউইই বলতে পারেনা। সুখের পর দুঃখ, আবার দুঃখের পর সুখ ও আসে।”
সাইমার কথা শেষ না করতেই আলিফ বলে,
“ ভনিতা না করে ক্লিয়ার করে বলো।”
“ রেহান কে তো চিনোই। তোমার বোন যাকে আমার জীবনে পাঠিয়েছিলো, তোমার চেহেরা দিয়ে। ”
“ হ্যাঁ, চোখ দুটো ছাড়া বাকি সব একই।”
“ রেহান মারা গেছে।”
“ ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন, কিভাবে কি হলো? ”
“ ওর ইনফেকশন হয়ে গেছিলো, হয়তো ওষুধ মিস করে ফেলেছিলো। ”
“ কি আর করবে বলো, এভাবেই আল্লাহ ওর মৃত্যু লিখে রেখেছিলেন।”
“ সুপ্তি শুনলে ও পাগল হয়ে যাবে। এখনই রেহানের জন্য প্রচুর পাগলামি করছে৷ ”
“ ধৈর্য ধরতে বলো।”
“ তোমার সাহায্য চাই, আমার ভুলে আমার শাশুড়ি মারা গেছে, এই অপরাধবোধ কখনো যাবেনা। আর এই ননদ টা কে আমি আমার বোনের মতো ভালোবাসি। ওর কিছু হলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। প্লিজ তুমি কিছুদিন ওর হাজবেন্ড এর অভিনয় করো। আস্তে আস্তে ওকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসবে। ”
“ তুমি খুব স্বার্থপর হয়ে গেছো সাইমা।”
“ বোঝার চেষ্টা করো আলিফ।”
“ আর শিম্মির কি হবে?”
“ শিম্মি তো এখন অসুস্থ, ওকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব আমাদের। তুমি তোমার জব করো, সুপ্তি কে সময় দিও। মাঝেমধ্যে শিম্মি কেও দেখে যেও। ”
“ শিম্মিকে ধোঁকা দেয়া হবে। ”
“ ও সুস্থ হয়ে গেলে, একটু শোক সহ্য করতে পারলে তুমি চলে যেও। অন্তত কিছুদিন এর জন্য অভিনয় হলেও করিও। পারলে ইগনোর করে চলে যেতে পারো। শুধু তোমাকে লেন্স লাগাতে হবে চোখে। ”
“ কাজ টা করতে পারবোনা সাইমা, তোমার ননদ এমনিতেই সব বুঝে যাবে।”
“ আলিফ, একবার চেষ্টা করে দেখো। ”
“ এখন উঠি, পরে কথা বলবো। ”
“ আলিফফফ….”
“ সরি…”
আলিফ উঠে চলে আসে, সাইমা থ মেরে বসে থাকে কিছুক্ষণ।
°°°
আজ সজীব একাই আসবে, রেহান কে আগেই কবর দিয়ে দিয়েছে। সজীব আসার খবরে সুপ্তি খুব আনন্দিত। ও তো আর জানেনা ওর প্রিয়জন আর আসবেনা।
“ ভালোবাসা শুধুই কাঁদায়, কারণে অকারণে কাঁদায়। সময় ধোঁকা দেয়, মানুষের অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়। আজ যাকে নিয়ে সুখের সাম্রাজ্য, কাল সে নাও থাকতে পারে। দুঃখ কাটিয়ে ওঠার অসীম ক্ষমতা সব মানুষের থাকে না। প্রিয়জনকে হারানোর সাথে সাথে নিজেও হারিয়ে যায় দূর অজানায়। ”
কতটা ভালো ছিলো তিন ভাইবোনের হাসিখুশির সংসার , কিন্তু আজ শুধু কান্নার জোয়ারে ভাসবে। কখনো সেই হাসি কেউ ফিরে পাবে কিনা কেউ জানেনা।
সজীব কে দেখামাত্র সুপ্তি ভাইকে জড়িয়ে ধরে অভিমানী কণ্ঠে বলে,
“ আমার রেহান কোথায় ভাইয়া? ”
“ আছে, কিছুক্ষণের মাঝে চলে আসবে। ”
সাইমা চোখ নীচু করে তাকিয়ে থাকে। সজীব সুপ্তি কে বলে,
“ ভাই এতো দূর থেকে এসেছে, অথচ কিছুই খেতে দিবি না? ”
“ হ্যাঁ এসোনা, তোমার প্রিয় খাবার রান্না করেছি তো। পোলাও, চিকেন, কিমা চপ, টকমিষ্টি বেগুন ভাজা, চিংড়ি। পুডিং ও করেছি। ”
“ আগে দে দেখি, খেয়ে নিই। ”
সুপ্তি সব খাবার পরিবেশন করেই রেখেছে, ভাইকে পাশে বসিয়ে খেতে দেয়। সজীব খেতে না পারলেও বোনকে খুশী রাখতে জোর করে খেয়ে নেয়।
সাইমা গিয়ে সজীবের সামনে বসে, সজীব সাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ তুমিও খেয়ে নাও, তোমার তো না খেয়ে থাকলে চলবেনা এখন। ”
“ এখন মানে?”
“ তুমি কি ভাবছো, আমি কিছুই জানিনা? সব খবর রাখি আমি, সেদিন বলতে চেয়েছিলে কিন্তু পারোনি। তখনই বুঝেছিলাম নতুন অতিথি আসছে। ”
সুপ্তি সাইমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ সত্যিই ভাবী? ”
“ হু…”
“ আগে বলোনি কেনো? ”
“ কি আর বলবো, দোয়া করো যেনো সুস্থ হয়ে জন্ম নেয়। ”
“ ভাইয়া, আগেরবার ভাবীকে অনেক অবহেলা করেছো, এবার ও যদি এমন করো তাহলে তোমার খবর আছে। ”
সজীব সাইমার গালে হাত দিয়ে বলে,
“ আগের অবস্থা এখনকার চেয়ে আলাদা, সো আমার বউ কে মাথায় তুলে রাখবো। ”
“ আর তোমার মেয়েকে? ”
“ ওটা কে কোলে তুলে রাখবো। ”
“ আর নতুন যেটা হবে তাকে?”
“ ওটা কে ঘাড়ে নিবো। ”
“ আর আমাকে? ”
“ তোকে অন্য ঘাড়ে নিবো। ”
“ তাহলে তুমি হাটবে কিভাবে? ”
“ উঠে দেখ সবাই, হেটে দেখিয়ে দিবো। ”
সবাই একসাথে হেসে ফেলে এমন কথা শুনে। সাইমা তখন বলে,
“ তোমরা খাও, আমি উপর থেকে আসছি। ” বলে সাইমা চলে যায়। সাইমা বুঝতে পারছেনা কিভাবে সুপ্তি কে সব বলবে। তাই ওর থেকে দূরে সরে থাকতে চাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর সজীব ও উঠে চলে আসে নিজের ঘরে। সাইমা কে খুঁজতেই দেখে বেলকনিতে সাইমা দাঁড়িয়ে আছে। সজীব সাইমাকে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে। সাইমা একটু চমকে উঠে। বুঝতে পারে সজীব, তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
“ মন খারাপ খুব?” সজীব জিজ্ঞেস করে।
“ আমি খুব স্বার্থপর হয়ে গেছি তাইনা!”
“ কে বলেছে?”
“ আলিফ… ”
“ তা তো অবশ্যই, তুমি নিজের প্রয়োজনে কেনো গিয়েছিলে?”
“ সুপ্তির জন্য। ”
“ সুপ্তি কে বলে দিবো কিছুক্ষণ পর। ”
“ ও সহ্য করতে পারবেনা, এখন বলিও না।”
“ যা হবার কথা তাইই হবে, মিথ্যের উপর আর কতদিন বলো?”
সাইমা হটাৎ করে সজীব কে আঁকড়ে ধরে। সজীবের বুক টা কেঁদে ভাসিয়ে দেয়।
চলবে….