#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১৭
জামিয়া পারভীন তানি
“ কার জীবনে কখন কি ঘটতে পারে কে ই বা বলতে পারে! তবুও জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো কে মেনে নিতে হয়।”
আলিফের সামনে দাঁড়িয়ে সাইমা কথাগুলো বলে।
আলিফ প্রতি উত্তরে বলে,
“ নতুনভাবে যখন সব কিছু শুরু করতে চাইলাম তখন এমন কেনো হলো বলোতো সাইমা? ”
“ আল্লাহ হয়তো এটাই তোমার ভাগ্যে লিখে রেখেছে। ”
“ এমন ভাগ্য তো চাইনি আমি, কিসের পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি?”
“ ধৈর্য ধরো, শিম্মি সুস্থ হয়ে যাবে। ”
“ ও যখন জেনেছে ওর বাচ্চা আর নেই তখন থেকেই ও পাগল হয়ে গেছে। ওকে ঠিক করা কিছুতেই সম্ভব না! ”
“ বাচ্চা দত্তক নাও, ও ঠিক হয়ে যাবে। আর পারলে ওকে শীঘ্রই বিয়ে করে নিও।”
“ হ্যাঁ করবো, ওকে বড় অনুষ্ঠান করে ই বিয়ে করবো। আর বাচ্চা দত্তক নিলে যদি ও সুস্থ হয়ে যায়, সেই আশায় সেটাও করতে প্রস্তুত আমি।”
“ আলিফ…”
“ বলো…”
“ মেয়েটা অনেক ভালো ছিলো, সব কিছু নষ্ট করে দিয়েছে সুমন। ওকে কখনো ক্ষমা করবেনা। ”
“ হু অবশ্যই। ”
°°°
সাইমা আলিফের সাথে দেখা করে রুমে আসা মাত্র সজীব ফোন করে জিজ্ঞেস করে,
“ কোথায় গিয়েছিলে?”
“ শিম্মি মেয়েটা হসপিটালে, তাই দেখে আসলাম। ”
“ কি হয়েছে?”
“ ওর বাচ্চা টা মারা গেছে, আমার ভাইয়ের পাপ দূর হয়ে গেছে। কিন্তু শিম্মির জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। যার জন্য মেয়েটা পাগলের মতো করছে। ডক্টর ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে, জেগে থাকলে ওর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ”
“ রেহান ও ভালো নেই । হয়তো বাঁচবেনা!”
“ কি বলো এইসব? একের পর এক দুঃসংবাদ! ”
“ সুপ্তি জানতে পারলে ও সহ্য করতে পারবেনা। ”
“ রেহান কে আগে সুস্থ করে নিয়ে এসো। পরেরটা পরে ভাবা যাবে। ”
“ সাইমা…”
“ বলো সজীব… ”
“ সুপ্তি কে কিছুই বলোনা! রেহান আর বেঁচে নেই। ”
“ কি বলো তুমি? বেঁচে নেই মানে?”
“ ও আজ দুই দিন আগে মারা গেছে। অনেক চেষ্টা করছে ডক্টর রা। কিন্তু আর পারেনি বাঁচাতে। ”
“ ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।”
“ সুপ্তি সহ্য করতে পারবেনা বলে লাশ দাফন দিয়ে দিয়েছি।”
“ সজীব…. ”
“ আমার বোন টা বিধবা হয়ে গেলো সাইমা…”
সজীব কাঁদছে সেটা বুঝতে পারে সাইমা, সাইমার নিজের চোখেও পানি। কি করবে আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। দুজনের চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে, আর একে অপরের চাঁপা কান্নার সাক্ষী একে অপরে ই হচ্ছে।
°°°
ভালোবাসা কখনো কেড়ে নেয় আপনজন,
প্রিয়জন হয়ে যায় সব চেয়ে বেশী পর।
সুখ পাখি কে কি আর বেঁধে রাখা যায়!
মাঝে মাঝে সেও খুঁজে নেয় অন্যের ঘর।
জীবন তো করে শুধু তামাশা,
বয়ে আনে বিড়ম্বনা আর হতাশা।
তবুও হায়! সব মেনে নিতে হয়,
হতাশা কাটিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়।
চলার পথ কঠিন হলেও চলতে শিখতে হয়।”
আলিফ কি করবে কিছুই বুঝছেনা, একে এই মেয়েটার প্রতি মায়া, অন্যদিকে জব। সব কিছু সামলানো আলিফের পক্ষেও সম্ভব না! কতদিন ই বা অফিস বাদ দেওয়া যায়! জব তো বেশিদিন থাকবেনা তাহলে । নিজের মাথায় নিজে কয়েকটি আঘাত করে আলিফ। শিম্মির পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওর বাচ্চা চাই, কিন্তু দুই একদিন এর বাচ্চাও দত্তক নিতে পারছেনা। আর কেইই বা একজন পাগল মা কে বাচ্চা দত্তক দিবে!
এমন সময় সাইমা ফোন করে আলিফ কে। আলিফ দোটানায় পড়ে যায় রিসিভ করবে কিনা ভেবে! কয়েকবার রিং হবার পর আলিফ ফোন রিসিভ করে।
সাইমার কান্না শুনে আলিফের ভিতর টা মোচড় দিলো আবার। হাজার হোক পুরনো অতীত তার।
“ কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো? ”
“ দেখা করতে চাই, না করবেনা প্লিজ। ”
“ কি হয়েছে সেটা বলবে তো!”
“ প্লিজ এখুনি এসো, খুব জরুরী দরকার ছিলো। ”
“ ওকে আসছি , কিন্তু কোথায়? ”
সাইমা ওদের বাসার কাছের পার্কে আসতে বলে। জানেনা সাইমা, আলিফ কি বলবে। তবুও আলিফের মতামত তার খুব দরকার।
আলিফ তাড়াতাড়ি করে শিম্মি কে নার্সের তদারকি তে রেখে বেরিয়ে পড়ে।
°°°
বিকেলে সামনাসামনি বসে আছে আলিফ আর সাইমা। আলিফ আসামাত্র বললো ,
“ যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। ”
“ তোমার সাহায্য চাই, না করতে পারবেনা তুমি।”
“ কি সেটা? না জেনে কথা দিতে পারবোনা।”
“ তুমি পারবে কাজ টা করতে। তাই তোমাকে করতেই হবে। ”
“ আগে শুনবো। বলো সেটা…..
চলবে….