#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১৩
জামিয়া পারভীন তানি
সজীবের কাছে সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে, এই কি সেইই সাইমা যে কিনা নিজ থেকে সজীবের কাছে এসেছে। এই মেয়ের এতো রাগ পানির মতো চলে গেছে, ভাবতেই অবাক লাগছে। সাইমার দিকে এক দৃষ্টিতে দেখছে আর সাইমার পুরনো স্মৃতি মনে করছে। হটাৎ মনে হয়, সাইমা এমন ভালো বিহেভ করছে, তার মানে কি সে আবার দূরে সরে যেতে চাচ্ছে নাকি!
মন টা বিষন্ন হয়ে যায় সজীবের, তখন নিজের কপালে চুমু অনুভব করে সজীব। সাইমার দিকে তাকিয়ে দেখে সাইমা আগের মতো ই ঘুমিয়ে আছে। তাহলে চুমু দিলো কে! কি আশ্চর্য বিষয়! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি সাইমা মজা নিচ্ছে!
নিজের মাথায় একটা আঘাত করে সজীব উঠে পড়ে। আর ভাবে, যা হবার হোক, তাতে আমার কি?
°°°
বেলা ১১ টা,
শিম্মি কে সাথে নিয়ে আফিয়া আর আলিফ যায় থানায়, অপরাধী আলিফ কে দেখে চমকে উঠে। আলিফ বলে,
• “ তোকে দীর্ঘদিন সাইমা আর সজীব খুঁজছে, আজ নিজেই নিজের ফাঁদে পা দিয়ে আমাদের কাছে এসেছিস। তোর জন্য এবার উচিৎ শাস্তি অপেক্ষা করছে। ”
• “ কি ভেবেছিস কি? আমাকে জেলে পচিয়ে মারবি? তার আগেই বের হয়ে তোকে দেখে নিবো আলিফ।” সুমন জোর গলায় বললো আলিফ কে।
হটাৎ শিম্মি হুইলচেয়ার এ করে সামনে আসাতে সুমন আরোও অবাক হয়ে যায়। আরোও বেশী রেগে বললো,
• “ তাহলে মা…. তুই এদের সাথে যোগাযোগ করে আমার ক্ষতি করতে চাচ্ছিস। এই স্বপ্ন তুই ভুলে যা। তোকে মারতে পারিনি তো কি হয়েছে আবার মারবো তোকে।”
শিম্মি সব শুনেও চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আলিফ শিম্মির উদ্দেশ্যে বললো,
• “ তুমি কি পাথর হয়ে গেছো?”
• “ হ্যাঁ, কোনো প্রতারক স্বামীর সাথে কথা বলিনা আমি। ভাবতেও ঘৃণা লাগে এই জানুয়ারের বাচ্চা পেটে ধরেছি আমি। মাঝে মাঝে মনে হয় বাচ্চা টাও বড় হয়ে ওর মতো হবে, তখন বাচ্চা টাকেও খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
সুমনের মাথায় যেনো বড় একটা বাজ পড়ে,
• “ বাচ্চা মানে? তুই কখন কনসিভ করলি আবার? ”
• “ সেটা তোর মতো প্রতারক এর না জানলেও চলবে। ”
• “ বাচ্চা কি আদৌ আমার নাকি যার সাথে এতদিন ছিলিস তার। ”
শিম্মি আলিফের দিকে তাকায়, আলিফ তখন বলে,
• “ তোর মন নোংরা বলেই তোর কল্পনা ও নোংরা। ”
এমন সময় সজীব সাইমার হাত ধরে থানায় আসে, সাথে রেহান সুপ্তি আর সাইমার মেয়ে স্নেহা। আলিফ সাইমা কে দেখে চমকে উঠে, সজীব সাইমার ফিরে আসার কথা লুকিয়ে গেছে ভেবে মনে মনে কষ্ট ও পায়। সাইমা আলিফ কে দেখে জিজ্ঞেস করে,
• “ কেমন আছো? আর তোমার বউ বাচ্চা ই বা কেমন আছে?”
• “ মানে? ”
আলিফ সজীবের দিকে তাকায়, সজীব চোখ নামিয়ে নেয়। আলিফ বলে,
• “ আমি বিয়ে করিনি কিন্তু শীঘ্রই করবো।”
• “ এটা তোমার হবু স্ত্রী বুঝি? ” শিম্মি কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে।
• “ না, জাস্ট ফ্রেন্ড। ”
শিম্মি এমন কথা শুনে একটু কষ্ট পায়, আলিফের সাথে থাকতে থাকতে আলিফের প্রতি মোহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু অবাস্তব কল্পনা করার চেয়ে দূরে যাওয়া ই ভালো ভেবে মাথা নীচু করে নেয়। আলিফ তখন থানার ওসির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
• “ প্রথমে সাইমা সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিবে এরপর শিম্মি। ”
সাইমা আলিফের দিকে অবাক হয়ে তাকায়, একদম আগের মতোই আছে। সাইমা বেশী কিছু চিন্তা না করে বলে,
• “ ওই লোক টা হচ্ছে সুমন, ও আমার পালিত ভাই ছিলো যে কিনা আমার বাবা মা কে হত্যা করে আমাকে এতিম করে দিয়েছে। আমার পৈতৃক সব সম্পত্তি নিজের বউএর নামে করে রেখেছে। আর একজন কনস্টেবল কে ঘুষ দিয়ে ওরা স্বামী স্ত্রী নিখোঁজ হয়ে যায়। ”
শিম্মি নিজের কানে হাত দিয়ে কেঁদে ওঠে, এভাবে বোকা বানিয়েছে তাকে? এই লোকটা কিনা একটা খুনী! শিম্মির কান্না শুনে সাইমা শিম্মি কে বলে,
• “আপনি কাঁদছেন কেনো?”
শিম্মি ওসির দিকে তাকিয়ে বললো,
• “ এই লোকটা প্রথমে আমাকে প্রেমের জালে ফাঁসায়। এরপর বিয়ে করি আমার ফ্যামিলির অমতে। আমার পরিবার কখনো ই মেনে নেয়নি এই বিয়ে। মায়ের অভিশাপ বাবার দীর্ঘশ্বাস আমার জীবন টাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে।
লোকটা প্রথমে আমার বাবা মা কে কৌশলে সরিয়ে দেয়, পরে আমাকেও খুন করার চেষ্টা করে। যার জন্য আমি সব ত্যাগ করতে চেয়েছিলাম, সে কিনা আমাকেই ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত ছিলো।
ওর সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম পাহাড়ে। একদম পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায় সে । কৌশলে ধাক্কা দেয় আমায়, আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমি মরে যাবো। কিন্তু না! আমি গাছের ডালে ধাক্কা খাই । পিঠের উপরে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। লোকটা যেনো আমায় প্রচণ্ড ভালোবাসে, প্রমাণ দেখাতে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
বুঝতে পারেনি আমি বেঁচে যাবো, হ্যাঁ বেঁচে গেছি কিন্তু পঙ্গু হয়ে। আর হসপিটালেই জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি, কিন্তু বলিনি ওই লোক কে যে আমি প্রেগন্যান্ট । ভয় পেয়েছিলাম, যদি আমার বাচ্চাকেও হত্যা করে।
সেদিন ও এসে বলেছিলো, হসপিটালের বিল দেওয়া লাগবে, তার জন্য একটা সাইন লাগবে। আমি তবুও বিশ্বাস করে সাইন করেছিলাম, আবার ঠকে গেলাম আমি। সেদিন সম্পত্তি গুলো হাতছাড়া হয়ে যায়। বিবাহ বার্ষিকী তে নতুন বউ নিয়ে এসে আরও সারপ্রাইজ দেয় আমাকে। আর এখন জানলাম আমি নাকি দ্বিতীয় স্ত্রী। ওই লোক টা আল্লাহ কেনো বাঁচিয়ে রেখেছে? আমি ওর বিচার চাই আল্লাহ আমি ওর বিচার চাই। ”
শিম্মি কেঁদে কেঁদে চোখের জল, নাকের জল এক করে দেয়।
চলবে…