#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১২
জামিয়া পারভীন তানি
সবুজ কালো মিশ্রিত শাড়ির সাথে সাইমা কে দেখতে দারুণ লাগছে। মেয়েটা ছাদের এক কোণে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। সজীব সাইমার পেছনে দাঁড়িয়ে সাইমার কানে ফুঁ দেয়। সাইমা হটাৎ ভয় পেয়ে যায়, যেটা সজীব ভালো করেই বুঝতে পারে। সাইমা সজীবের দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসতে শুরু করে। সজীব সাইমা কে থামিয়ে দেয়,
• “ কিছু কথা থেকে যায় গোপনে, হয়নি বলা।
ভালোবেসে তাই করতে চাই দুজনের পথচলা ।
হৃদয়ের গহীনে শুধু তোমার স্মৃতি ভাসে।
ছায়া হয়ে রবো দুজন , শুধু ভালোবেসে।
বিরহের আগুনে, অশ্রু ঝরে এই হৃদয়ে।
পোড়া মনকে দিওনা আরোও পুড়ায়ে।
হৃদয় দিয়ে করতে চাই তোমায় জয়।
যেওনা চলে, পথ চলতে চাই অকুতোভয়। ”
সাইমা হাত টা সরিয়ে নিয়ে নরম গলায় বললো,
• “ ছাড়ো এখন, সুপ্তির সাথে হসপিটালে যেতে হবে।”
• “ ওহহহ, তাহলে তুমি বাইরের লোক দেখানোর জন্য সেজেছো? আমার জন্য নয়!”
• “ বাজে কথা বলোনা , বাইরে যথেষ্ট পর্দা করে যাই। ”
• “ হসপিটালে কেনো যাবে?”
• “ সেটা তোমার না জানলেও চলবে। ”
• “ সব সময় রাফ বিহেভিয়ার করো কেনো?”
সাইমা মুখ ঘুরিয়ে নিচে নেমে যায়, সজীব সাইমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
°°°
আফিয়া কিছু ছবি আলিফের সামনে রাখে। আলিফ পুরোই চমকে যায় ছবিগুলো দেখে। সাথে সাথে বলে,
• “ ওই কালপিট এখন আছে কোথায়? ”
• “ ঠিকানা পেয়ে গেছি, ওদের সাথে সাথে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। ”
• “ এখুনি নিয়ে চলো ওই জানুয়ার এর কাছে। ”
• “ মাথা ঠান্ডা কর আলিফ, ওই জানুয়ার এর সাথে কাল দেখা করাবো। সাথে শিম্মি কেও নিয়ে যাস। ”
• “ কেনো? ওকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না।”
• “ উচিৎ হবে, কারণ ওই কালপিট ই শিম্মির হাজবেন্ড। ”
• “ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? কিভাবে শিম্মির হাসবেন্ড হয় ওই সুমন জানুয়ার টা।”
• “ শিম্মি কে ঠকানো হয়েছে রে।”
• “ মেয়েটা জানতে পারলে নিজের বড় রকম ক্ষতি করে ফেলবে। ”
• “ তুই তো আছিস ই।”
• “ আপু আমি ওকে ভালোবাসি না! তাছাড়া ওর সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক ও নেই। তা জানার পরও কেনো ওকে আমার সাথে জড়াও? ”
• “ কারণ তুই ওর প্রতি দুর্বল। একটা মেয়ে বুঝতে পারে কখন কোন ছেলে প্রেমে পড়ে। তাছাড়া শিম্মি হারিয়ে গেলে তুই ওকে খুঁজবি অনেক। ”
• “ না, এমন নয় আপু।”
• “ তুই ওকে অনেক গুরুত্ব দিস, ওর প্রতি মায়া জন্মে গেছে। ওকে তাড়িয়ে দিলে তুই নিজেই মানসিক কষ্ট পাবি।”
• “ প্লিজ আপু।”
আলিফের ধমকে আফিয়া চুল হয়ে যায়, আলিফের রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় শিম্মি কে দেখে কাঁদছে। আফিয়া এগিয়ে যায় শিম্মির দিকে।
• “ তুমি কি জানো? তোমার বর দ্বিতীয় বিয়ে করে নি। তুমিই তোমার বরের দ্বিতীয় স্ত্রী। ”
শিম্মি মাথা তুলে তাকায়, হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে। কি হলো কিছুই বুঝতে পারেনি এমন।
• “ কিবলেন? আমি কেনো দ্বিতীয় বউ হতে যাবো?”
• “ তোমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তোমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে সুমন। ওর দুই টা ছেলে মেয়ে ও আছে।”
• “ কি বলছেন এসব, মিথ্যা কথা কেনো বলেন আপনি?”
এমন সময় আলিফ এসে বলে,
• “ আপু তোমার রুমে যাও প্লিজ।”
• “ সত্য কথা সবার ই হজম হয়না!”
• “ আপু শিম্মিকে মানসিক শক দিও না আর। ”
• “ সত্যিই কথা গুলো ওর জানা দরকার। সুমন কে জেলে দিয়ে এসেছি, কাল গিয়ে দেখে আসিও।”
শিম্মির চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, সত্যিই কি ওকে ঠকানো হয়েছে!
আলিফ শিম্মির হাত দুটো ধরে বলে,
• “ কষ্ট পেয়ো না! সব ঠিক হয়ে যাবে।”
• “ কিছুই ঠিক হবার নয়। আমার বাচ্চা, কার পরিচয় এ বড় হবে?”
• “ মায়েদের প্রব্লেম ই একটা, নিজের কথা না ভেবে সন্তানের কথা বেশী চিন্তা করে। ”
• “ আমি মরে গেলেই ভালো হবে। বাচ্চাও মরবে, সাথে সব যন্ত্রণা। ”
আলিফ শিম্মির পেটে হাত দেয় হটাৎ করে, শিম্মি আলিফের এমন ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে। আলিফ বলে,
• “ কিভাবে পারবে নিষ্পাপ শিশু কে হত্যা করতে। ”
শিম্মি আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।
°°°
রাতে সাইমা ভালো বউয়ের মতো সজীবের বুকে শুয়ে পড়ে। সজীব একটু অবাক ই হয়, সাইমার আচরণে। সাইমা সজীবের দিকে তাকিয়ে বললো,
• “ থাকতে তো হবেই, ভালোভাবেই থাকি। প্রতিদিন জোরাজোরি আর ভালো লাগেনা। ”
• “ আমিও তো চাইনা রোজ ঝগড়া করতে, শুধু ভালোবাসতে চাই।”
সাইমা একটু মুচকি হেসে শুয়ে পড়ে, ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে ও যায় পরক্ষণেই।
চলবে….