হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১

0
896

#হৃদস্পর্শ ( সিজন ২), পর্ব ১
#লিখা: #জামিয়া_পারভীন_তানি

• “ আচ্ছা আপনার ভালোবাসার মানুষ যদি আপনার এক্সিডেন্ট হবার পর অন্য কাউকে বিয়ে করে তাহলে কি করবেন? ”
কথাটা অচেনা মেয়ের কাছে শুনে খুব খারাপ লাগে আলিফের। ওর ভালোবাসার মানুষ টাও তো অন্যের বউ, সন্তানের মা। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। সাইমার স্মৃতি ভেসে উঠতেই চোখে পানি চলে আসে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটার প্রশ্নের উত্তর দেয়,
• “ মানে? কি বুঝাতে চাইছেন?”
মেয়েটা বলতে শুরু করে,
• “যখন থেকে হুইলচেয়ার জীবনের সাথী হলো তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আমার স্বামী বদলে যাচ্ছে। সব চেয়ে বড় সারপ্রাইজ পেলাম প্রথম বিবাহ বার্ষিকী তে! আমার স্বামী বিয়ে করে নতুন বউ এনেছে বাসায়। ভালোবেসে বিয়ে করার এই শাস্তি, আগে জানতাম না! বিয়েতে মা খুশী ছিলো না, তাই অভিশাপ দিয়েছিলো, তুই কখনো সুখী হবি না! হ্যাঁ তাইতো! নিজের মায়ের অমতে বিয়ে করার জন্যই হয়তো বিয়ের ১১ মাসের মাথায় এক্সিডেন্ট করি। এক্সিডেন্ট এ পা দুটোর সাথে ভালোবাসার মানুষ টাও হারিয়ে ফেললাম! হয়তো সে আমায় কখনোই ভালোবাসে নি! নইলে কিভাবে সে আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আরেকজন মেয়ে বিয়ে করতে পারে! ”

শিম্মি কাঁদছে আর কথাগুলো বলছে। আলিফ মনোযোগ সহকারে কথা গুলো শুনে। এরপর বললো,
• “ এইজন্যই আপনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন? ”
• “ না! আমি আত্মহত্যা করতে চাইনি! কখনো ভুলেও সুইসাইড করতে পারবোনা! কারণ আমি একা নই, আমার মাঝে বেড়ে উঠছে আরেকটা প্রাণ। ”
• “ হায় আল্লাহ! আপনি প্রেগন্যান্ট? তবুও আপনার স্বামী বিশ্বাসঘাতকতা করলো! ”
• “ হুমম। ”

শিম্মি মাথা নীচু করে বসে থাকে। আলিফ বেরিয়ে আসে রুম থেকে। মেয়েটাকে একটু সময় দেওয়া উচিৎ। আস্তেধীরে না হয় সব টা শুনবে।

১২ টা মাস কেটে গেছে, ১২ মাসে বদলে গেছে অনেক কিছুই। আলিফ একটা কোম্পানি তে জব পেয়েছে। আজ অফিসে যাবার সময় একটা মেয়ে টলমল ভাবে চলছে দেখে একটু সন্দেহ হয়। গাড়িটা স্লো করার সাথে সাথে ই মেয়েটা গাড়ির উপর পড়ে যায়। আলিফের ভাগ্য ভালো যে স্লো করেছিলো, নইলে বড় রকম এক্সিডেন্ট এর কেস এ ফেঁসে যেতো। আলিফ গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে মেয়ে টাকে বেশ কিছুক্ষণ ডাকে। সাড়া না পেয়ে মেয়েটার মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরায়। অপরূপ সুন্দরী একটা মেয়ে। ফরসা নয়, উজ্জ্বল শ্যামলা, লম্বা চুল কোমড় পর্যন্ত। কিন্তু এই মেয়ে কে নিয়ে এখন কি করবে ভেবে না পেয়ে কোলে তুলে নেয়। গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দেয় । অফিসে ফোন করে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। হসপিটালে নিলে পুলিশ কেস হতো, যা উটকো ঝামেলা। মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে ওর ঠিকানা জেনে ওকে পৌঁছে দেওয়া ই বেটার হবে এটাই ভাবে আলিফ। গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটাকে কোলে করে ড্রইং রুমে শুইয়ে দেয়। মুখে হালকা পানি ছিটা দেয়। জ্ঞান ফিরে না মেয়েটার। আলিফ তবুও ঘন্টাখানিক অপেক্ষা করে জ্ঞান ফিরে কিনা দেখার জন্য। ৫০ মিনিট পরে এমনিতেই সে উঠে বসে। আলিফ ওর পরিচয় জিজ্ঞেস করলে ওই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে মেয়েটা।

• “ ম্যাম আম্মুজান কাঁদছে, তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে পারবেন? ”
• “ কি হয়েছে আমার মেয়ের? কোথাও লাগিয়ে দিয়েছো নাকি?” রাগী গলায় বললো সাইমা।
• “ না ম্যাম, হটাৎ কাঁদতে শুরু করেছে। কিছুই বুঝতে পারছি না! ”
• “ হ্যাঁ আমি তাড়াতাড়ি আসছি, তুমি তাড়াতাড়ি শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসো। ”
• “ ওকে ম্যাম। ”

সাইমা অফিসে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি শিশু হাসপাতালে আসে। অফিস থেকে হাসপাতালে যেতে ২০ মিনিট লাগে। কিন্তু মেয়ের অসুখ শুনে এই ২০ মিনিট ২০ ঘন্টার মতো লাগছে সাইমার কাছে। হাসপাতালে সিরিয়াল নিতে নিতেই রত্না ওর মেয়ে কে নিয়ে আসে। রত্না মেয়েটার বয়স ১৫, এতিম মেয়ে। শুধুমাত্র সাইমার মেয়ের দেখাশোনা করার জন্যই রাখা হয়েছে ওকে।

১৫ মিনিট সিরিয়ালের পর সাইমা ডাক্তারের কাছে দেখায় মেয়েকে। ডাক্তার বললেন,
• “ বাচ্চার হাত ধরে জোরে করে টানাতে ওর হাতের পজিশন নড়ে গেছে। ”
এটা বলতে বলতেই ডাক্তার সাহেব সাইমার মেয়ের হাত ঘুরিয়ে ঠিক পজিশনে নিয়ে আসে। বাচ্চা টা জোরে করে কেঁদে ওঠে। সাইমার হৃদয় জেনো কেউ মুচড়ে দিয়েছে। ডাক্তার সাহেব কে রাগ দেখিয়ে বলে,
• “ আহহ ডাক্তার সাহেব, আস্তে করেন। ওর লাগছে তো!”
• “ ব্যথা না দিলে ও ঠিক হতো না! দেখুন ও চুপে গেছে এখন।”

সাইমা খেয়াল করলো ওর মেয়ে চুপে গেছে। এরপর ডাক্তার কে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসার জন্য উঠে দাঁড়ায়। তখন ডাক্তার সাহেব বললেন,
• “ আপনি নিশ্চয়ই চাকরি করেন? ”
• “ জ্বি, কেনো বলুন তো!”
• “চাকুরী করা মায়েদের সন্তানের বেশী অসুখ হয় তাই।”

সাইমার কথা টা শুনে খারাপ লাগে। ডাক্তার সাহেব কে সালাম দিয়ে চলে আসে। ট্যাক্সি তে বসে আছে আর সজীব এর কথা ভাবছে। ওর বাবা কতো ই না ধনী, অথচ ওকে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। নিজের ইগো কে ধরে না রেখে সজীব এর কাছে ফিরে গেলেই তো পারে! কিন্তু কেনো যাবে সে! সজীব তো ওকে ভালোবাসে না!

মন খারাপ করে প্রায়ই সময় বসে থাকে সজীব। একটা বছর মা মেয়েকে প্রচুর খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি সে। যে নিজে থেকে হারিয়ে যেতে চায় তাকে কি সহজে পাওয়া যায়?

• “ এতো ভালোবাসি তোমায়, কি করে আমি বুঝায়!
বিরহ যন্ত্রণা, প্রতিনিয়ত আমায় কুরে কুরে খায় ।
না পারি ভুলে যেতে! না পারি নিজেকে বোঝাতে!
তোমার ছবি ভাসে , এই হৃদয়ের আঙিনাতে।

প্রিয়া তোমার স্মৃতি গুলো আমাকে কাঁদায় ।
কেনো ভালোবেসে দূরে গিয়ে কাঁদালে আমায়!
তোমার হৃদস্পন্দন আজও হৃদয়ে বাজে।
ভালোবাসার ঝংকার তুলতে বড় ইচ্ছে জাগে।

আজও বসে থাকি তোমার ফেরার অপেক্ষায়।
থাকি আশায় আশায়, কবে ফিরবে খালি বুক টাই!”

প্রতিদিন বিভিন্ন ভাবে ডায়েরি তে সাইমা কে নিয়ে কবিতা লিখে সজীব। ওর বিশ্বাস সাইমা নিজে থেকে ই ওর কাছে ফিরে আসবে।

এমন সময় সজীব ওর বোনের চিৎকারে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসে।

চলবে…..

ভাবছিলাম ২৬ পর্ব থেকে দিবো। কিন্তু গল্প অন্যরকম করে সাজাবো তাই সিজন ২ হিসেবেই দিলাম। আশা করি সিজন ১ এর মতো সিজন ২ তেও আপনাদের সাড়া পাবো। আপনাদের অনেকের রিকুয়েষ্ট এ লিখা শুরু করেছি সিজন ২। খুব ব্যস্ত থাকি তাই ধীরে ধীরে শেষ করবো। কেমন লাগছে সিজন ২ অবশ্যই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here