হৃদস্পর্শ পর্ব ৮

0
912

#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ৮)
#লিখা: জামিয়া পারভীন তানি

সাইমা মাথা নীচু করে নেয়,
• “ যদি তাই কপালে থাকে তাহলে তাইই হবে, চলে যাবো এই বাসা থেকে। ”
• “ ওওও তাই বুঝি! তোমার চাকুরী টা তো চলে গেছে, তা বাসা ছেড়ে চলে গেলে কি খাবে, কোথায় থাকবে? তোমার অফিস ও জানেনা তুমি বেঁচে আছো নাকি মরে গেছো!”
• “ ভালোই হয়েছে! চাকুরী করা এই কয়েক মাস আমার পক্ষে সম্ভব ও না। যদি রাখতে না চাও! তোমার সন্তান তোমার কাছে দিয়ে চলে যাবো আমি ।”
• “ ভাঙবে তবু মচকাবে না! এতো ই অহংকারী তুমি যে নিজ সন্তান কেও ফেলে চলে যেতে চাইছো!”
• “ যেতে চাইনা আমি! ”
• “ ভালো তো! ” সজীব চলে যায় সাইমার কাছ থেকে।

°°°

দেড় বছর পর

সাইমার ঘর আলো করে পিচ্চি স্নেহার আগমন হয়েছে ৮ মাস আগেই। পিচ্চি মেয়েটা ই সাইমার দুনিয়া। সব সময় মেয়ের পিছনে থাকে, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, গোসল করানো সব কিছুই সাইমা করে। চোখের মনি মেয়েটা কে কখনো চোখের আড়াল করে না। আর সজীব, সে তো অফিসের কাজে এতো ই ব্যস্ত থাকে, স্ত্রী বা মেয়েকে দেওয়ার মতো সময় ই পায় না। অবশ্য সাইমার কোন দুঃখ নেই এখন, নিজের দোষে অবেলার ভালোবাসা কে হারিয়েছে সে। সজীব নেই তো কি হয়েছে! মেয়েটা তো আছে।

সুপ্তি সাইমা কে ডাক দেয়,
• “ ভাবী! ”
• “ বলো, কি বলবে। ”
• “ জানো ভাবী, কি হয়েছে! নিচে চলো দেখতে পাবে। ”
• “ কি হয়েছে! ”

সুপ্তি সাইমাকে নিচে নিয়ে যায়, একটা মেয়ে বসে আছে। সাইমা সেতেই মেয়েটা সালাম দিলো।

• “ আমি মাহিরা! আসলে…. ”
• “ কি সাহায্য করতে পারি বলুন। ” সাইমা জিজ্ঞেস করে।
• “ আমি আসলে সজল কে অনেক ভালোবাসি, জানেন তো আমি মেয়ে মানুষ। বাসাতে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমি সজল কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। তাই পালিয়ে এসেছি বাসা থেকে। যদি একটু আশ্রয় দিতেন এই বাড়িতে। ” এক দমেই কথাগুলো বলে মাহিরা।
সাইমার মনে ঝড় উঠে যায়, সেও কাউকে ভালোবেসেছিলো কিন্তু বিয়ে ঠিক হবার পরপরই হাওয়ায় যেনো মিলিয়ে গেছে তার আলিফ। সজলের সাথে এই কিছুদিন এ সাইমার সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হলেও কখনো মাহিরার কথা বলেনি তাকে। তাহলে কি সজল ও মাহিরা কে বিপদে ফেলে চলে যেতে চাইছে। সাইমার মন খারাপ হয়ে যায়, তখন সুপ্তি বলে,
• “ জানো ভাবী, আমি তো অবাক হয়ে গেছিলাম, ছোট ভাইয়া ও প্রেম করে শুনে। বড় ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। তুমি ভাইয়া কে বলে রাজি করাও। ততোদিন না হয় ছোট ভাবী এই বাসাতেই থাকুক। ”

ছোট ভাবী শুনে মাহিরা লজ্জা পেয়ে যায়, সাইমা মুচকি হেসে বলে,
• “ তোমার ভাইয়া আসুক বাসায় কথা বলবো আজ। ওকে উপরের একটা ঘরে না হয় থাকার ব্যবস্থা করে দিও সুপ্তি। ”
• “ ছোট ভাবী, চলো। ” সুপ্তি মাহিরা কে টেনে নিয়ে যায় উপরে। যেনো ওর মত খুশি আর কেউ নেই।

সাইমা নিজের ঘরে চলে আসে, ঘর গুছিয়ে ফেলে তাড়াতাড়ি। স্নেহার খাবার রেডি করে নেয়, এরই মধ্যেই মেয়ে উঠে যায়। মেয়েকে খাওয়াতে শুরু করে তখনই সজীব ঘরে ঢুকে। ফ্রেশ হয়ে আসতেই মেয়েকে সাইমার কোল থেকে নিয়ে নেয়। বাকি খাবার খাইয়ে দেয় ততক্ষণে সাইমা ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজায়।

মেয়েকে কোলে নিয়ে কথা বলতে বলতে নিচে আসে সজীব। খাবার খেয়ে উঠে পড়ে, সাইমা খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেনা। বাচ্চার জন্য সাইমা কে তো খেতেই হবে তাই বাধ্য হয়ে নিজে খেয়ে নেয়, সুপ্তি আর মাহিরা কেও খাবার দিয়ে আসে। সজল রাত করে বাড়ি ফিরে ওর জন্য খাবার খুলে রেখে ঘরে চলে যায় সাইমা।

সজীব কে কথাগুলো কিভাবে বলবে বুঝতে পারছেনা তাও সজীবের সামনে গিয়ে বসে।
• “ সারাদিন কাজ করে এসে ক্লান্ত লাগে খুব, বুঝো না! কি বলবে বলে লাইট নিভাও। ঘুম আসছে ঘুমাবো । এমনিতেই তোমার মেয়ে কান্নাকাটি করে ঘুমের ব্যঘাত করে। এরপর যদি তুমিও এমন করো কিভাবে আমি বাঁচবো!”

• “ আসলে একটা জরুরী কথা ছিলো, তাছাড়া আমি তো তোমাকে বিরক্ত করিও না। ”

• “ ভণিতা না করে বলে ফেলো। ”

• “ সজল একটা মেয়েকে পছন্দ করে। মেয়েটার কাল বিয়ে ছিলো, বাসা থেকে পালিয়ে এসে এখানে উঠেছে। ”

• “ কিহহহহ! এতো সাহস হয় কিভাবে ওই মেয়ের। বিয়ে ছাড়াই প্রেমিকের বাড়িতে উঠার?”

• “ ওরা তোমার অনুমতি নিয়েই বিয়ে করতে চায়। সুপ্তির ইচ্ছে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হোক। ”

• “ নাহহহ! কোন অনুষ্ঠান হবেনা। যদি বিয়ে করার ইচ্ছে হয় কোর্ট ম্যারেজ করে নিতে বলো। ”

• “ তোমার সব শখ মাটি চাপা দিয়েছো, অন্তত ভাই বোনের আবদার গুলো তো রাখো। ”

সজীব রেগে যায়, সাইমার সামনে থেকে উঠে সুপ্তির ঘরে এসে অবাক হয় মেয়েটাকে দেখে। অবশেষে রাজি হয় সুপ্তির আবদারে। ততক্ষণে সজল বাসায় চলে আসে, পরিস্থিতি দেখে চক্ষু চড়কগাছ হবার অবস্থা।

• “ তোর না কাল বিয়ে, তুই কি করছিস এখানে? ” সজল ভয়ে ভয়ে মাহিরা কে জিজ্ঞেস করে।

মাহিরা কিছু বলার আগেই সুপ্তি বলে,
• “ প্রেম করার সময় মজা নাও ভাইয়া, আর বিয়ে করার সময় পালিয়ে যাও তাইনা! ”
• “ কিসের প্রেম! ও শুধুই আমার ক্লাসমেট ছিলো, আমি আমার ক্লাসমেট কে বিয়ে করবোনা। ”

সজীব একবার মাহিরার দিকে তাকায় অন্যবার সজলের দিকে, মাহিরা সজীব কে বলে ,
• “ ভাইয়া! ও ভয়ে এসব বলছে, ওকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা। দয়া করে আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না। ”

ছোটখাট ঝামেলায় পড়ে যায় সবাই, একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সবাই। সাইমা সবাইকে শান্ত হয়ে বসতে বলে। সজলকে নিয়ে বাইরে আসে,
• “ তুমি কি সত্যিই ওকে বিয়ে করবেনা! কথা শুনে মনে হচ্ছে ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে । কেউ যদি ভালোবাসে তাকে ফিরিয়ে দিও না সজল। মেয়েটা অনেক ভালো, তোমার বউ হলে তোমাকে অনেক সুখে রাখবে দেখিও। ”
• “ কিন্তু ভাবী!”
• “ কোন কিন্তু নয়, তোমার ভাই ও রাজী। ”

সজল তাড়াতাড়ি ঘরে এসে বলে, সে বিয়েতে রাজি। তবে শর্ত একটাই মাহিরার বাবা মায়ের উপস্থিতি তে বিয়ে করবে। যদি মাহিরা ওর বাবা মা কে না আনতে পারে তাহলে বিয়েতে সে রাজি হবে না কখনোই।

পরিস্থিতি শান্ত হলে সবাই যে যার ঘরে চলে আসে, সাইমা তখন সজীব কে জিজ্ঞেস করে,

• “ কাল না হয় সুপ্তিকে সাথে নিয়ে ওই বাড়িতে চলো, কথা পাকা করে আসি। ”
• “ তোমাকে যেতে হবেনা কোথাও, আমি আর সুপ্তি ই যাবো। ”

সাইমা বারান্দায় আসে, কতো দিন সে বাসার বাইরে যায়নি। কতো টা আনন্দ নিয়ে একটা আবদার করলো সে। অথচ সজীব না করে দিলো। একটা ভুল একে অপরের থেকে শত বর্ষ দূরে নিয়ে গেছে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুইফোটা চোখের জল বিসর্জন দিয়ে স্নেহার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবে, “ ভালোবাসতে পারিনি তোমাকে, শুধু মেয়ের জন্যই কোথাও যাবোনা। তুমি তো ভালোবাসতে
অনেক, তাহলে তুমি কেনো ভালোবাসার মানুষকে ক্ষমা করতে পারো না।” উঠে যায় রুম থেকে, রান্নাঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে কাঁদে। কারণ ঘরের মধ্যে কেঁদে ঘুমের ডিস্টার্ব দিতে চায় না সাইমা।

নিজেকে হালকা করে আবার ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। কাঁদার পর ঘুম ভালো আসে, ঘুমিয়ে ও পড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই।

সজীব যেই রূপের জন্য সাইমাকে ভালোবেসেছিলো সেটা আর নেই। কষ্টের জন্য, আর অযত্নে চেহেরা অনেকটা খারাপ হয়ে গেছে সাইমার, তাছাড়া বাচ্চা পেটে আসলে চেহেরার একটু অবনতি হয় ই। সব মিলিয়ে সাইমাকে দেখলে মনে হয় অনেকটা মুটিয়ে গেছে আর বয়স্ক লাগে। সাইমা অপরাধ করার পর থেকে ওর প্রতি মন আর টানে না সজীবের। চেহেরা খারাপ হয়ে যাবার পর থেকে আরোই সহ্য করতে পারেনা। ভুলেও সাইমার দিকে তাকায়না এখন আর।

সকালে সজীব সুপ্তি কে নিয়ে চলে যায়, স্নেহা কে ঘুম পাড়িয়ে সাইমা আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে অচেনা লাগে বড়। ফরসা চেহারা মলিন হয়ে আছে, চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবে, “তাহলে কি সজীব এই সৌন্দর্য কেই ভালোবেসে ছিলো। মানুষ টাকে কি কখনোই ভালোবাসেনি তাহলে!”

প্লান করে মনে মনে, “ যদি চেহারা কেই ভালোবেসে থাকে তাহলে সে চলেই যাবে সব ছেড়ে। সেইজন্য আগে সজীব কে পরীক্ষা করবে, পরে ডিসিশন নিবে। অহংকারী ছিলো বেশ ছিলো, কতদিন আর গলগ্রহ সহ্য করে থাকা যায়? ”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here