হৃদস্পর্শ পর্ব ৩

0
1005

#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ৩)
#লেখিকা_জামিয়া_পারভীন_তানি

সজীবের হ্যাচকা টানে সাইমা সজীবের উপর পড়ে যায় তখনি আশেপাশের কিছু ছেলে ওদেরকে বাজে কথা বলা শুরু করে। একজন বলে,
__ “ কি ব্যাপার ম্যাম, ঘরে কি পোষাচ্ছে না, এখন বাইরেও এসব করতে হবে। ”

আরেকজন বলে উঠে,
__ “ রাস্তার মা… এইসব তো রাস্তাতেই করবে। ”

সাইমা এইসব কথা সহ্য করতে না পেরে কানে হাত চেপে চিল্লিয়ে বলে,
__ “ অন্য মেয়েদের বাজে কথা বলার আগে নিজেদের ঘরের মেয়েদের কথা চিন্তা করবেন আগে। ”

সজীব সাইমার হাত ধরে বলে,
__ “ বাজে মানুষ দের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, চলো এখান থেকে। ”

__ সাইমা ও রাগের বশে বলে দেয়, “ যত নষ্টের মূলে তো আপনি! আমার হাত ধরতে লজ্জা করে না! ”

আশেপাশের মানুষদের চিল্লা চিল্লি তে পাশের রাস্তা দিয়ে দুইজন পুলিশ যাচ্ছিলো , তারা এগিয়ে আসে, কি হয়েছে জানতে চাইলে, লোকজন অকপটে বলে দেয়, রাস্তায় বাজে কাজ করছিলো, ধরা পড়েছে।

সাইমার লজ্জ্বায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে, আর কতো অপমানিত হবে জীবনে। একের পর এক বিপদ যেনো ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য মনে মনে দোয়া করতে থাকে।

সজীব পুলিশের সাথে খুব সুন্দর করে বলে,
__ “ দেখুন অফিসার, লোকজন বাড়িয়ে কথা বলে এটাই স্বাভাবিক। আমি আমার হবু স্ত্রীর সাথে একটু দেখা করতে এসেছিলাম। ও একটা কারণে রাগ করে উঠে যেতে লাগলে হাত ধরতে গিয়ে আমার উপর পড়ে যায়। কিন্তু জনগণ সেই ঘটনা কে এইভাবে নিয়ে গিয়ে বেশি বাজে বলে ফেলেছে। একটা মেয়েকে এতো অপমান করার রাইট কিন্তু তাদের নেই। ”

__ “ আপনার পরিচয়? ”

__ “ আমি সজীব, বিজনেসম্যান, আপাতত বাবার বিজনেস এর সব অফিস আমার দায়িত্বে। ”

__ “ আপনি আপনার বাসায় খবর দেন, আমাদের সাথে থানায় চলুন। সেখানে বাকি কথা সেরে নিয়ে না হয় বাসায় চলে যাবেন। ”

__ “ ওকে, নো প্রব্লেম। ”

সাইমা সজীব এর এইরকম কথা বার্তায় রাগ বেড়ে যায়, এখন থানায় নিয়ে যদি আরোও ঝামেলা বাড়ে, অফিসে ও কি এই রেকর্ড ছড়িয়ে যাবে, যদি চাকুরী চলে যায় কি করবে! টেনশন এ সাইমার অবস্থা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো । আর এই রাস্তার লোক গুলো বাসায় গিয়ে রটিয়ে বেড়াবে, আজ একটা মেয়ে রাস্তায় খারাপ কাজ করে ধরা পড়েছে, উনারা মহৎ মেয়েটা কে ধরিয়ে দিয়েছে পুলিশ এ, ছিহহহহ! আপন মনে ভেবে চলেছে সাইমা

থানায় আসার পর অফিসার সজীব কে বাসায় জানাতে বললে সজীব বলে,

__ “ এইভাবে বাসায় বলা ঠিক হবে না, কারণ আম্মু হার্টের রোগী। হটাৎ এভাবে কিছু শুনলে হার্ট এটাক হতে পারে। আমার আব্বু নেই, ছোট ভাই বোন, তারা আমাকে বরং ভুল বুঝবে। আর সাইমার এই দুনিয়ায় কেউ নেই! ও অনাথ মেয়ে। আপনাদের যদি কোন সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে কাজী ডাকুন, রেজিস্টার ডাকুন, বিয়েটা এখানেই করতে চাই। পরে বাসায় বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই রাগ করবে না। ”

সাইমা এইজন্য বিয়েটা করতে বাধ্য হয় কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে কখনো ক্ষমা করবেনা সজীব কে। সজীব তো মহাখুশি, পছন্দের মেয়েটা কে বউ হিসেবে পেয়ে। মনের খুশিতে থানায় মিষ্টি বিলিয়ে আসে।
এরপর বাসায় এসে সাইমার সাথে দফায় দফায় ঝগড়ার কাহিনী তো জানেন ই।

সাইমা আত্মহত্যা করার ভয় দেখালে সজীব বলে দেয় পাপের কাজ করলে করো।

°°°

__ “ দেখুন মিঃ সজীব, আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছেন বলে কখনো ক্ষমা করবোনা আপনাকে। ”

__ “ না করলে না করবে! আমার সাথে সংসার করবে ব্যাস। কতো মেয়েই তো আছে মনের মতো মানুষকে না পেয়ে ঘর করে, তুমিও তাদের মাঝে একজন! ”

__ “ আমি কারোও করুণার পাত্রী না! যে যা বলবেন তাই শুনতে হবে। ”

__ “ কি করবে তুমি হ্যাঁ, আগের হাজবেন্ড এর থেকে যেভাবে পালিয়েছো সেভাবেই আমার থেকে পালাবে? ভাবলে ভুল ভেবেছো! আমার সাথে ই থাকতে হবে তোমাকে, আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি। ”

__ “ তাহলে মেরেই চলে যাবো! ”

__ “ কিভাবে মারবে, মারো। ” বলতে বলতে সাইমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়, সাইমা লোকসমাজের কথা ভেবে না পারছে চিৎকার করতে, না পারছে সজীবের থেকে নিজেকে মুক্ত করতে। সজীব সাইমার ঠোঁট, গলা, কানে একের পর এক চুমু দিতে থাকে। সাইমা নখ দিয় সজীবের মুখ আঁচড়ে দেয়, তবুও ছাড়ে না। বিছানায় ফেলে সম্পুর্ণ নিজের করে নেয়। কিছুক্ষণ পর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে হারায় সজীব। কিন্তু সাইমার চোখে অঝোরে পানি পড়তে থাকে।

সারারাত ফুঁপিয়ে কেঁদে চোখ ফুলে গেছে। সজীব সকালে উঠে রাতের ব্যবহার এর জন্য বারবার ক্ষমা চাইছে। কিন্তু কিছুতেই কথা বলে না সাইমা ।

__ “ বলেছিলাম তো, মাথা টা গরম আছে, রাগিও না। তাও এমন কড়া কথায় কখন যে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। প্লিজ ক্ষমা করো, সাইমা! ”

সাইমার মুখে জবাব নেই, মাথা নীচু করে আছে। সজীব মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে, ভালো বেসে যা পাওয়া যায় তা জোর করে আদায় করে কখনোই শান্তি আসেনা। ভালোবাসার জন্য একের পর এক ভুল করে চলেছে আর সাইমার চোখে খারাপ হয়ে যাচ্ছে সে।

সাইমার হাত ধরে হাতে কিস করে সজীব, সাইমা যেনো রোবট হয়ে গেছে। হাত সরানো তো দূরে থাক, কোন রিয়েকশন নেই সাইমার ভিতর।

সাইমা হুট করে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে আধাঘন্টা পর। সজীব ততক্ষণে ব্রেড জেলী দিয়ে সাজায়, ডিম হাফ বয়েল করে নেয়, কফি বানিয়ে বিছানায় বসে ওয়েট করছিলো। সাইমা বের হতে সজীব খেয়াল করে ভেজা চুলে সাইমা কে অনেক আকর্ষণীয় লাগছিলো, চুল বেয়ে পানি পড়াতে মনে হচ্ছিলো যদি চুল গুলো ছুঁয়ে দেওয়া যায়।

সাইমা সজীবের দিকে একবার তাকিয়ে রেডি হয়ে নেয়, চুল গুলো আঁচড়ে নেয়। না খেয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে সজীব অনুরোধ করে যেনো খেয়ে যায়।

__ “ তুমি না খেলে আমিও খাবো না! যতক্ষণ তুমি না খেতে বলবে। হাজবেন্ড না মানো! বন্ধু তো মানতে। বন্ধু হিসেবে কথা শোনো প্লিজ। ”

__ “ আপনি তো বিশ্বাস ঘাতক , বন্ধু হবার যোগ্যতা রাখেন আপনি! ”

__ “ আসলে কালকে মায়ের সাথে ঝগড়া হওয়া তে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। মাফ করে দাও না প্লিজ! ”

সাইমা কিছু না বলে নাস্তা করে নেয়, “ অফিসে যাচ্ছি, পারলে আপনি নিজের বাসায় গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েন। ” বলেই বেরিয়ে যায়।

°°°
সারাদিন অফিসে কাজ শেষে সজীব মায়ের কাছে যায়, কাজের মেয়ে দরজা খুলে দেয়। মায়ের রুমে গিয়ে দেখে সুপ্তি আর সজল মায়ের পাশে বসে আছে। সুপ্তি মায়ের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে দেখেই বুঝে মায়ের জ্বর।
মায়ের পাশে বসে সজীব,

__ “ আম্মা, কেমন আছো এখন! ”

__ “ হতভাগা, কুলাঙ্গার ছেলে, তুই কেনো এসেছিস, মায়ের মরা মুখ দেখতে নাকি রে? ”

__ “ সুপ্তিই তো কল দিয়ে বললো, সারাদিন আমার নাম জপছিলে, এখন আমাকে দেখে আর ভালো লাগছেনা বুঝি!”

__ “ ছেড়ে দে না মেয়েটা কে! অনেক সুন্দরী বউ আছে আমার হাতে। ”

__ “ তোমরা মেয়ে জাতি ই মেয়েদের জন্য ক্ষতিকর, জানো!”

__ “ নিজের মা কে তুই ক্ষতিকর বলতে পারলি! তোর মতো ছেলে জন্ম দেওয়ার আগে মরে গেলাম না কেনো? ”

__ “ আমি জন্মের সময় তুমি মরে গেলে তো তোমার ভালো ভালো দুই সন্তান সুপ্তি আর সজল আসতো না! ”

__ “ হারামজাদা শয়তান ছেলে, মায়ের সাথে মশকরা করিস! ”

__ “ তো কার সাথে করবো? ”

__ “ যা তোর বউয়ের কাছে যা!”

__ “ মন খারাপ করো না আম্মা, মেয়েটা অনেক ভালো। ইচ্ছে করে ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলাম, এখন ছেড়ে দেওয়া যাবেনা। তাছাড়া তোমার ছেলে যাকে ভালোবাসে তার থেকে তোমার ছেলেকে আলাদা করলে তোমার ছেলে যে কষ্ট পাবে বোঝো না! ”

__ “ বউ কবে নিয়ে আসবি? ”

__ “ ও আমাকে মেনে নেয়নি এখনো, একটু শান্ত হোক, নিয়ে আসবো। ”

__ “ দূর হো চোখের সামনে থেকে। ”

হাসিমুখে বেরিয়ে আসতে নিলে দুই ভাই বোন সজীবের পিছু ধরে, ভাবীর ছবি দেখবে বলে।

সজীব ফোন থেকে ছবি দেখায়, সজল বলে,

__ “ ভাইয়া, তোমার চোখ আছে বৈকি। ”

__ সুপ্তি বলে, “ দেখতে হবে না কাদের ভাই, এই জন্যই তো বলি, এতো মেয়ে দেখাই, ভাইয়ার মনে ধরে না কেনো। তলে তলে প্রেম করলে কি আর অন্য মেয়ে চোখে পড়ে? ”

সজীব দুই ভাইবোনের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

__ “ সব সময় বেশি পাকা পাকা কথা, এখন তোরা মা কে দেখে রাখ, পরে আসবো আবার। ”

সুপ্তি হাসির ছলে বলে,

__ “ বউ যে ওয়েট করছে, তাড়া তো থাকবেই। ”

__ “ মার খাবি! ”

সুপ্তি দৌড়ে পালায়, সজীব হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে। নিজের গাড়ি থাকতেও সিএনজি নিয়ে নেয়, কারণ সাইমা জানেই না এখনো সজীবের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কেমন। সাইমার সামনে নিজেকে সব সময় গরীব ঘরের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়েছে সজীব। কেনো মিথ্যে বলে নিজেও জানেনা। হয়তো সাইমার মন পরীক্ষার্থে।

সাইমা সন্ধ্যার আগে আগে ফিরে আসে, রাস্তায় কিছু বাজার ও করে নেয়। বাসায় এসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে মুরগী পরিষ্কার করে, কেটেই নিয়ে এসেছে। মশলা রেডি করতে করতেই সজীব চলে আসে। দরজা খুলে দিয়ে রান্নাঘরে চলে আসে। ২ ঘন্টা পর ভাত, তরকারী, সব্জি রান্না করা শেষ করে।

২ ঘন্টার ভিতর অবশ্য সজীব ঘর পরিষ্কার করে নিজে ও শাওয়ার নিয়ে নেয়। সাইমা ঘেমে থুপথুপে ভিজে গেছে, সাইমার দিকে এগিয়ে যায় সজীব। হাত দিয়ে কপালের গজাম মুছে দিতেই, হাত সরিয়ে নেয়। ওয়াশরুমে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর সাইমা খাবার সার্ভ করে, ডিনার শেষ হলে সজীব বলে,

__ “ আজ নিজে বাজার করেছো ভালো কথা, এরপর আর যাবে না। আমি পছন্দ করি না আমার বউ বাজার করবে। ”

সাইমা কিছু না বলে, বাসন পরিষ্কার করে নেয়।
রাত ১০ টা বেজে গেছে,
সাইমা চাদর বালিশ নিয়ে মেঝেতে যেতে নিলে, সজীব কোলে তুলে নেয়। বিছানায় বসিয়ে দেয়।

__ “ ভালো করছেন না!”

সজীব সাইমার পায়ে হাত দেয়, অন্য হাত দিয়ে পকেট থেকে নূপুর বের করে দুই পায়ে পড়িয়ে দেয়।

__ “ এই নূপুর তোমাকে দেখার পর কিনেছিলাম, তোমার সুন্দর পা দুটো তে পড়াবো বলে। সুযোগ হয়নি আগে। ”

সাইমা বিছানা ছেড়ে নেমে যাচ্ছিলো, হাত ধরে সাইমার,

__ “ যেও না ফেলে আমায় একাকী,
হতে চাই আমি তোমার জীবন সাথী।

__ “ আমি আলিফ কে ভালোবাসি, বাসবো ও। ”

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here