হৃদস্পর্শ পর্ব ২৫

0
860

#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ২৫)
#জামিয়া_পারভীন_তানি এর লিখা

আলিফ সাইমার উদ্দেশ্য বলতে শুরু করলো,

এতো ভালবাসি তা কখনো পারিনি বুঝাতে,
যার জন্য দুইটি হৃদয় আজ আগুনে জ্বলছে।
কেনো তুমি আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বুঝতে পারলেনা,
তাইতো আজ আমি তোমার আপন হতে পারলাম না।
তোমায় ভালবেসে কখনো করিনি কোন পাপ,
তাও আজ সবার থেকে পাচ্ছি অভিশাপ।
বলতে কি পারো ভালোবাসা কেনো এতো অসহায়,
তুমি ছাড়া এই মনে অন্য কারোর আর নাই ঠাই।
#জামিয়া পারভীন #অসহায়_ভালোবাসা কবিতার অংশ

সাইমা আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, এরপর চলে আসে। রুমে এসে সাইমা পাগলের মতো নিজের হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে মেসেজ আসে,

“ আপু স্নেহা খুব অসুস্থ, আপনি প্লিজ আসুন। স্নেহা আপনাকে ছাড়া বাঁচবেনা। আমি আপনার আসার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি ।”

মেসেজের নাম্বারে সাথে সাথে ফোন দেয় সাইমা। কথা শেষ করে খুব অসহায় লাগছে নিজের কাছে। কি করবে বুঝতে না পেরে একটা চিঠি লিখে,

“ আলিফ, আই এম সরি। পারবোনা নতুন করে তোমায় ভালোবাসতে। তাছাড়া আমার মেয়েই এখন আমার কাছে সব। ও খুব অসুস্থ। আমি চলে যাচ্ছি ওর কাছে। তুমি নতুন করে কাউকে নিয়ে ঘর বেঁধো। আমার তোমাকে পাওয়া হলোনা এটাই আফসোস থেকে গেলো। ”
ইতি
সাইমা

সাইমা আলিফের ঘরে আসে, আলিফের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চিঠি টা পাশে রেখে ফোনে আশা ঠিকানা অনুযায়ী পা বাড়ায়।

আলিফ ঘুম থেকে উঠে চিঠি টা দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে। চোখে পানি চলে আসে আলিফের। “ আমি তো নিজেই তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতাম সাইমা! কেনো হুট করে চলে গেলে। এখন যদি তোমার কোন বিপদ হয়, কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করবো আমি। ”

আলিফ বোনের সাথে কথা বলে তাড়াতাড়ি সব কাগজ রেডি করে ৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ আসে। আফিয়া রেহান কে বলে আলিফকে সজীবদের বাসায় নিয়ে আসে।

রেহানের সাথে আলিফের এতো মিল হয়েছে যে চোখের রঙ ছাড়া সম্পুর্ণ একই লাগছে দেখতে, যেনো জমজ ভাই৷ রেহানের সাথে আলিফ সজীব্ দের বাসায় আসে৷ সজীব খুব চিন্তিত হয়ে বসে আছে সোফায়। দুজন কে দেখে উঠে দাঁড়ায় সজীব।

আলিফ প্রথমে কথা বললো,
• “ আসসালামুআলাইকুম ”
• “ ওয়ালাইকুম আসসালাম” সজীব বললো।
• “ প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সাইমাকে, ওর উপস্থিতি তে আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। ”
• “ হুম ”
• “ আচ্ছা সাইমার মেয়ে নাকি অসুস্থ, ও এখন কোথায়? মা মেয়ে দুজন কেই না হয় দেখে যেতাম। ”
• “ সাইমা নেই। ”
• “ নেই মানে? ভয় পাবেন না, ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, ওকে দেখেই চলে যাবো।”
• “ সাইমাকে সুইজারল্যান্ডে রেখে আসার পর থেকে ওর সাথে আমার দেখা হয়নি!”
• “ মানে কি? ”

আলিফ নিজের কাছে থাকা চিঠি সজীব কে দেখালো। সজীব চিঠি পড়ে মুচকি হাসে। আলিফ বললো,

• “ আমি সাইমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপুকে সব কাগজ রেডি করতে বলি, এর মধ্যে সাইমা কোথায় গেলো? এখানেও না আসলে কোথায় যেতে পারে? ”

সজীব আলিফের দিকে একটা চিঠি এগিয়ে দেয়, চিঠি তে সাইমা লিখে রেখেছে,

“ প্রিয় সজীব,
ভালোবাসা নিও, জানি আমি তোমার খেলার পুতুল। তবুও ভালোবাসি, হুমম অবাক হচ্ছো! একজীবনে দুইজন কে কেমন করে ভালোবাসি তাইতো! হুমম, ভালোবাসি। দুজন কেই ভালোবাসি, আলিফ আমার অতীত, তাকেও ভালোবেসেছিলাম! কিন্তু আল্লাহ আমার জন্য ওকে পৃথিবীতে আনেন নি। তাই আমরা এক হতে পারিনি। আমার জন্য তুমি সজীব, তোমাকে আমার করে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। তাই যেভাবেই হোক বিয়ে হয়েছিলো। প্রথমে তোমাকে ঘৃণা করলেও পরবর্তীতে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। হুম আমি তোমাকে নিয়ে খুব সুখী থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কি জানো! আল্লাহ তায়ালা ভালো বুঝেন, তিনিই হয়তো চাননি আমরা এক হই। তাই আমি আমার কলিজার টুকরা টাকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। তুমি ওর বাবা হলেও ছোট থেকে ওকে ওত টাও সময় দাওনি। আমার কাছে বড় হয়েছে, আমার অংশ, আমার প্রাণ। আমাকে ছাড়া ও ভালো থাকবেনা। ভয় পেয়ো না! আমরা ভালো আছি। একটা জব পেয়েছি। সাথে স্নেহা কে আমার কাছে কাছে রাখার জন্য একজন মেয়ে ও পেয়েছি। আর কোনো ভয় নেই আমার। আমি সত্যিই ওকে ভালো করে বড় করে তুলতে পারবো। ভালো থেকো আমার ভালোবাসা, তোমার প্রিয়জন দের সাথে।
ইতি
সাইমা

তোমার জন্য ছোট্ট উপহার, আমার ভালোবাসা, পারলে খুঁজে নিও আমায়, যদি ভালোবাসো তাহলে।

“ হৃদয়ের স্পর্শে, প্রতিটি রন্ধ্রে মিশে আছো তুমি।
তোমার ভালোবাসায় সিক্ত, তোমার প্রেয়সী।
প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমার গন্ধ খুঁজে পাই,
ভালোবেসে হয়েছি তাই আমি প্রেম বিলাসী।

ভুলবোনা তোমার স্মৃতি, থাকবে তুমি অস্তিত্বে।
অবুঝ হৃদয় তাও শুধু তোমায় খুঁজবে।
ভালোবাসা দিয়ে করতে পারিনি তোমার মন জয়।
তাইতো একাকী করে চলে গেলে , বুঝবে!
আমি হীনা তুমি নও সম্পুর্ণ, বড়ই একা।
ভালোবাসার প্রমাণ দিতে খুঁজো আমায়, দাও দেখা। ”

• “ চিঠি টা কিভাবে পেলেন ? ” আলিফ পুরো চিঠি পড়েই জিজ্ঞেস করে সজীব কে।
• “ স্নেহা যে রুমে ভর্তি ছিলো, সেখানে রেখে বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে গেছে। ও বুঝলোনা আমাকে! ওকে ছেড়ে আসতে কতো টা কষ্ট হয়েছিলো বুঝলোনা। যদি বুঝতো আমাকে একা করে কোথাও যেতে পারতোনা। ” সজীব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।।

আলিফ হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর বললো,
• “ তাহলে করুন ভালোবাসার প্রমাণ, খুঁজুন আপনার অভিমানী ভালোবাসার মানুষ টা কে। ”

আলিফের খুব সন্দেহ হচ্ছে, রেহানের দিকে। ও হয়তো সাইমাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কিছু বলাও সম্ভব নয়। বড়ই জেদি মেয়ে, যদি এভাবে ভালো থাকে তো থাকুক। হুমম সজীব কে ও খুব ভালোবেসে ফেলেছে। আর সজীব যদি ভালোবাসা প্রমাণ করে ওকে খুঁজে আনতে পারে তাহলে থাকুক ওরা সুখে। আলিফ বরং তার মায়ের কাছে যাবে, মায়ের ভালোবাসা খুব মিস করেছে এতোদিন।

সজীব চারিদিকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে সাইমাকে। পেপারে ছবি দিয়েছে, থানায় ছবি দিয়েছে। যেকোনো মূল্যে ভালোবাসা কে খুঁজে আনবে।

“ বড্ড মিস করছি তোমায় পাগলী বউ।
খুঁজে আনবো ঠিকিই, বাঁধা দেবেনা কেউ।
করবো অপেক্ষা যতদিন কাছে না পাই।
ভালোবাসা দিয়েই তোমার মন জয় করতে চাই।
জানি আমায় ক্ষমা করে দেবে, ভালোবাসবে।
তোমার হৃদস্পর্শ পেতে হৃদয় আমার অপেক্ষা করবে। ”

চলবে….

আর দিবো না নেক্সট
কেমনে চুরি করবি কর?

( বি.দ্র. প্রেমের পরশ এর পর এটা আমার ২য় উপন্যাস। গল্প ঝরা ফুল আর প্রতিশোধ। জানিনা হৃদস্পর্শ পুরোটা কেমন লাগলো। সমালোচনা করুন সবাই, তাতে আমি ভালো শিখতে পারি। এতো দিন কষ্ট করে ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য আমার হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা আপনাদের দিলাম। ভালো থাকবেন। আবার আসছি ঈদের পর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here