#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ২১)
লিখা জামিয়া পারভীন তানি
সুপ্তি ঘুম ভেঙে যায় হটাৎ করে, আশেপাশে রেহানকে খুঁজতে থাকে। রেহানের কোন অস্তিত্ব ও খুঁজে পায়না সুপ্তি, তাহলে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো! নিজেই নিজের প্রতিবিম্ব এর দিকে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
“ ভালোবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা একমাত্র সেইই বুঝতে পারে, যে ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলে। ”
সাইমা সুপ্তির পাশে দাড়িয়ে কথাটা বলে, তখন সুপ্তি সাইমাকে জিজ্ঞেস করে,
• “ তুমি কি ভাবে জানো ভাবী? তুমি তো তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথেই আছো!”
• “ তুমি হয়তো ভুলে গেছো, আমার অতীতের কথা। তাইনা সুপ্তি! ”
• “ কিছুটা শুনেছি, আচ্ছা কি হয়েছিলো ভাবী? ”
• “ হুমম, তবে এটুকু জেনে রেখো! আমার প্রাক্তনের চেহারা রেহানের সাথে মিল আছে! আর রেহান কে পেলেই সব সত্য জানতে পারবো। ”
• “ কিভাবে সম্ভব ভাবী!”
• “ সেটা আমার ও প্রশ্ন সুপ্তি, আমার বিশ্বাস রেহানের সাথে শীঘ্রই দেখা হবে।”
°°°
সজীব একের পর ফোন দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা। আলিফের মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা হিসেবে এই নাম্বার ই নিয়ে এসেছিলো সজীব। রিং হবার পর ও কেনো ধরছেনা এটাই বড় প্রব্লেম ।
অবশেষে ফোন রিসিভ হয়, অপরপাশ থেকে ভেসে আসে,
• Hello , who are you?
• I’m Sajib Rahman. I was looking for Rehanuzzaman. My home is in Bangladesh, now I am in Switzerland.
• Ohhh! Okay, But Rehanuzzaman will not get two days. He is admitted to the hospital.
• What happened to Rehan? What is the hospital’s name?
রেহান সম্পর্কে সব তথ্য নিয়ে কথা শেষ করে সজীব। কি এমন হয়েছে যে হসপিটাল এ যাওয়া লাগলো। মনে মনে ভেবে পায় না সজীব।
যাই হোক না কেনো? হসপিটাল এ রেহানের অনুমতি ছাড়া যাওয়া নিষেধ। রেহানের অনুমতির জন্য একদিন অপেক্ষা করা লাগবে।
সাইমা সজীবের কাঁধে হাত রাখে,
• “ কি এমন চিন্তা করছো! রেহানের খবর পেলে? ”
• “ হুমম, ওর সাথে এখন দেখা করা যাবেনা। ও এখন হসপিটাল এ আছে, ওর সাথে দেখা করতে হলে দুই দিন পর ওর বাসায় যেতে হবে। ”
• “ হসপিটাল এ যাওয়ার অনুমতি নেই, ওর বন্ধু সেই কথা জানালো। ”
• “ এ আবার কেমন কথা! সুপ্তিকে কি বোঝাবে এখন?”
• “ বোনের জন্য ওর ভাই আছে, আজ আমরা তিনজন মিলে ঘুরতে যাবো।”
• “ বিপদের মধ্যে আবার ঘুরাঘুরি কেনো? ”
• “ বিপদ সব সময় ই ঘুরে, যে কোনো মুহুর্তে আমরা মারা যেতে পারি। তাই বলে কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো!”
সাইমা আর কিছু না বলে সুপ্তি র রুমে যায়।
°°°
সাইমা গাউন পড়ে আকাশীরঙের, সাথে হিজাব বেঁধে নেয় মাথায়। হিজাব সামনের দিকে ডিজাইন করে রাখে যেনো পর্দার খেলাপ না হয়। সুপ্তি ও খয়েরী রঙের গাউন পড়ে হিজাব বেঁধে নেয়। সজীব ব্লেজার পড়ে নেয়, কারণ ওখানে আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা। স্নেহা কে টাইসের সাথে ফ্রক পড়ায়, মাথায় ক্যাপ পড়িয়ে দেয়। ছোট্ট কিউট রাজকন্যা সাইমার, দেখলেই মনে হয় ছুঁয়ে দিতে ।
সজীব আগেই খোঁজ নিয়েছিলো সুইজারল্যান্ডের জুরিখ সম্পর্কে, প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য অন্যতম জায়গা। সুপ্তির মন ভালো করতে সজীব জুরিখ কেই বেঁছে নিয়েছে।
সজীব রা একটা বাসে করে যাচ্ছে, সুন্দরী জুরিখের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করছে। সকাল সকাল বেরিয়েছে ওরা , আকাশ টা মেঘাচ্ছন্ন , বাইরে কুয়াশা। বাস থেকে নেমে ঠান্ডা পরিবেশে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এখান থেকে অন্য বাসে যেতে হবে, ট্যুর গাইড সহ একটা বাসে ২৫ জন যাবে। প্রত্যেকজনের টিকিট বাংলাদেশী টাকায় ৬০০০ করে। কিন্তু বাস ছাড়বে বেলা ১ টায়, চার ঘন্টার জন্যে ঘুরাবে। এতক্ষণ কি করবে! বুঝতে না পেরে সজীব বলে আশেপাশে ঘুরে দেখবে।
সজীব স্নেহাকে কোলে নিয়ে হাটছে, সুপ্তি আর সাইমা গল্প করছে। সজীব সামনে রেল ষ্টেশন দেখতে পায়, কয়েক মিনিট পর পর ট্রেন যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের এই একটা জিনিস সজীবের বেশ লাগে, ট্রেনের পাস থাকলে অল্প খরচে যাতায়াতের সুবিধা। পাশে একটা রেষ্টুরেন্ট এ একজন বাঙালির সাথে পরিচিত হয়। বিদেশে এসে বাঙালি পাওয়া বিশাল ব্যপার।
সজীব জিজ্ঞেস করার আগেই উনি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত খাবার ওয়ে গয়ে নামের শুকনো রুটি দেয়। পনিরের মধ্যে ডুবিয়ে গরম গরম খেতে হয় এই রুটি।
• “ এতো সুন্দর খাবার! মুখে স্বাদ লেগেই থাকবে অনেকদিন। ” সুপ্তি সজীব কে বলে।
সাইমাও বলে উঠে,
• “ হুম সত্যিই অসাধারণ ছিলো! ”
সজীব তখন বলে,
• “ এরাগে একবার এসেছিলাম, তখন খেয়েছিলাম। আসলেই অনেক মুখরোচক খাবার। ”
নাস্তা শেষ করে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বেরিয়ে আসে ওরা। হালকা হালকা কুয়াশার মধ্যে হাটতে দারুণ লাগছে। সাইমা সজীব কে বলে,
• “ এইরকম পরিবেশে যদি সারাজীবন হাটতে পারতাম!”
তখন স্নেহা কান্না শুরু করে, স্নেহাকে কোলে নেয় সাইমা।
• “ কি মামনি! ঠান্ডা লাগছে বুঝি! তোমার জন্য গরম জামা এনেছি তো!”
সাইমা একটা গরম কাপড় স্নেহার উপর দিয়ে দেয়, স্নেহা কিছুক্ষণের মধ্যেই সাইমার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে।
১ টার দিকে বাসে উঠে সবাই, ট্যুর গাইড গাইড ৫০ বছর বয়সী একজন সুইসম্যান। বেশ স্মার্ট। তিনি মাইক্রোফোন হাতে অনর্গল বর্ণনা করে যাচ্ছেন, রূপময় জুরিখের ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি। ছোট্ট জুরিখ শহর। বাসে বসে গাইডের কথা শুনছে আর বাইরে তাকিয়ে দেখছে। আকাশ মেঘলা, কখনো টিপটিপ বৃষ্টি, কখনো বৃষ্টিবিহীন। শহরটি ইউরোপের অন্যান্য শহরের চেয়ে একটু আলাদা। ছোট-বড় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ স্থান ওদের দেখানো হচ্ছে। গাড়ি যেতে যেতে প্রথমেই যেখানে থামল, সেটি জুরিখের পুরনো শহর এলাকা, যে স্থানটিতে প্রায় চারশ বছর আগের রোমানীয় সভ্যতার নানা চিহ্ন ও ঐতিহ্য রয়েছে। পুরনো ভাস্কর্য, মেডিকেল কলেজ, লেখক-শিল্পীদের বাড়ি-ঘর, কারুকাজময় স্থাপনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে গাইড ভদ্রলোক।এই এলাকায় ছবি তোলা নিষিদ্ধ , শুধু চোখ দিয়ে দেখতে হবে আর ব্রেইনে এর সৌন্দর্য্য এঁকে নিতে হবে।
এরপর ওদের নিয়ে যাওয়া হলো সুন্দরী জুরিখের রূপময় লেক এলাকায়। বিশাল লেক, লেকের দুই পাশে পাহাড় আর পাহাড়ের পাদদেশে সাজানো বাড়ি-ঘর। সব মিলিয়ে ছবির মত দৃশ্য। প্রকৃতির এক অনাবিল আচরণ। তবে বৃষ্টিটা জন্য ঘুরতে একটু প্রব্লেম হচ্ছে ওদের।
ওদের গাড়ি গিয়ে লেকের এক পাশে থামল, সেখানে অনেকগুলো স্পিডবোট বাঁধা। লেকের মাঝখানে ফোয়ারা, যেটি অনিন্দ্য দৃশ্য তৈরি করছে। এই যায়গায় ছবি তোলা যায়, সুপ্তির অনেক গুলো ছবি তুলে দেয় সজীব। সুপ্তি ও সজীব সাইমার অনেকগুলো ছবি তুলে দেয়। সাইমা সজীবের বুকের উপর পিঠ এলিয়ে দিয়ে ভর ছেড়ে দেয়। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় সাইমা। প্রাকৃতিক পরিবেশ মনে আনন্দ নিয়ে আসে।
সবার অগোচরে সজীব এর ঠোঁটে আলতো করে চুমু এঁকে দেয়। এরপর বলে,
• “ এতো সুন্দর যায়গায় নিয়ে আসার জন্য অনেকগুলো ভালোবাসা তোমার জন্য। ”
চলবে……