#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ১৮)
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
১৫ দিন পার হয়ে গেছে সাইমার জীবনের ভয়াবহ ঘটনার। সাইমা অনেকটা মানষিক ডিপ্রেশন এর মধ্যে আছে। যে বাবা মায়ের উপর রাগ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলো, তাদের কোন দোষ ছিলো না। অথচ তাদেরকে কতো অভিশাপ দিয়েছিলো মনে মনে। যখন তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো তখন তাদের সম্পর্কে ভুল ভাঙে। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাই পেলোনা সে। ভাগ্যিস শ্বশুর বেঁচে ছিলো না, নইলে হয়তো বাবা মা, শ্বশুর শাশুড়ি সবাই তার দোষে মারা যেতো।
সজলের রিসিপশনের অনুষ্ঠান পরেরদিন, যেহুতু আগেই দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছিলো তাই আর অনুষ্ঠান ক্যান্সিল করতে পারেনি। সজীব ও চাচ্ছিলো বাসায় একটা অনুষ্ঠান হোক, অন্ততঃ সাইমার মুখে যেনো হাসি ফিরে আসে সেই জন্য। অনেক আত্মীয়রা আসবে, তাদের সাথে কথা হলে সাইমার দুঃখ টা একটু হলেও কমবে। তাছাড়া ফুপিকে তো সাইমা খুব পছন্দ করে।
স্নেহা এখন অনেকটা সুস্থ, শুধু হাতের এক্সেরসাইজ রোজ করাতে হচ্ছে। নইলে হাত শক্ত হয়ে যেতে পারে। সাইমা স্নেহাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, তখন দেখে সজীব দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সাইমা শুকনো হাসি দেয়। সজীব এগিয়ে আসে, সাইমার হাত ধরে। সাইমার হাতে ঠোঁটের আলতো পরশ দিয়ে বললো,
• “ আর কতো কাল এভাবে থাকবে? একটু হাসো, সব বিপদ থেকে তো আমরা এখন মুক্তি পেয়েছি। ”
• “ আমার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে! মনে হচ্ছে আমি পাপী।”
• “ ধৈর্য ধরো সাইমা! কারণ মহান আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কর” (সূরা আল ইমরানঃ ২০০ আয়াত)।
জামিয়া পারভীন তানি
আল্লাহ হয়তো আমাদের মেয়ের বিপদ দিয়েই আমাদের পরীক্ষা করছেন!
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয় ক্ষুধা এবং তোমাদের জান, মাল ও শস্যের ক্ষতি সাধন করে পরীক্ষা করব।(এ পরীক্ষায়) ধৈর্যশীলদেরকে সুখবর দাও”(সূরা বাকারাঃ ১৫৫ আয়াত)।
আমরা আমাদের পুরষ্কার পাবোই দেখো একদিন!
“ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে” (সূরা যুমারঃ ১০আয়াত)।
তুমি আমাকে ক্ষমা করো আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দিই, চলোনা নতুন ভাবে আবার আমরা শুরু করি সব কিছু!
“যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, সেটা দৃঢ় মনোভাবেরই অন্তর্ভুক্ত” (সূরা শূরাঃ৪৩)।
তুমি তো আমার ভালো বউ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো, বাচ্চা সামলিয়ে কোরআন শরীফ পড়ো, তুমি তো আমার থেকে ভালো জানো সাইমা। তাছাড়া তুমি যথেষ্ট পর্দানশীল মেয়ে, তোমাকে পরীক্ষা করে আল্লাহ খাঁটি মানুষ বানিয়ে নিচ্ছেন।
“ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহ নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন” (সূরা বাকারাঃ ১৫৩ আয়াত)।
“আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে চিনে নিতে পারি” (সূরা মুহাম্মাদঃ ৩১ আয়াত)।
• সজীব কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে, “এখনো কি মুখ গোমড়া করে থাকবে? ”
জামিয়া পারভীন তানি
সাইমা সজীব কে জড়িয়ে ধরে, এরপর বলে,
• “ জানো! আমি খুব পাপবোধ ফিল করতাম। কারণ আমি ভাবতাম আমি কাউকে ডিভোর্স দিয়েছি, যেখানে ইসলামে ডিভোর্স কে খুব ঘৃণার চোখে দেখা হয়। যখন রেহানের কাছে জানতে পারলাম ওটা কোনো বিয়ে ছিলো না, টাকার খেলা ছিলো মাত্র। তখন আমি বাসায় এসেই নফল নামাজ পড়েছি। আর এখন কি মনে হচ্ছে জানো! আমার জীবনে এতো বিপদ না আসলে তোমার মতো ভালো স্বামী পেতাম না। খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমার হৃদয়ের স্পর্শে আমি নতুন একটা জীবন পেয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি, সাথে আমার রাজকুমারী কেও পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমি এতো কিছু পেয়েছি, তারপর ও আমার মন খারাপ করা আসলেই উচিৎ না। ”
সজীব সাইমাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়, শক্ত করে! যেনো এই বাঁধন ছিড়ে না যায়। সজীব একটু দুষ্টুমি করে বললো,
• “ আচ্ছা সাইমা বুড়ি! তুমি তো আগে আলিফকে ভালোবাসতে, তাহলে এখন আমার প্রেমে কেনো পড়লে? আর আমি মরে গেলে আবার যদি তুমি অন্য কারোর প্রেমে পড়ে যাও তার ভয় হয়। ”
• “ আলিফ কে আল্লাহ আমার করে পাঠাননি! তাই ওকে ভুলে গেছি। আর তুমি আমার বৈধ হাজবেন্ড, তোমাকে আমার জোড়া করে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। তাই আমি তোমাকে এখন খুব ভালোবাসি। আর যদি! মরে যাও তখন যার সাথে আমার বিয়ে হবে তাকে ভালোবাসবো। ”
সজীব সাইমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায়, এরপর বললো
• “ কিহহহহ!”
• “ যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। হিহি”
জামিয়া পারভীন তানি
সাইমার মুচকি হাসি তে সজীব পাগল হয়ে যায়। যার ঠোঁটের এক চিলতে হাসি দেখার জন্য এতো দিন পাগল হয়ে ছিলো তাকে আজ হাসাতে পেরেছে। এটাই সজীবের কাছে রাজ্য জয় করার সমান। সাইমার হাসি মাখা ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নেয়। সাইমা সজীবের স্পর্শে বারবার শিহরিত হয় , নতুন করে ভালোবাসার ইচ্ছে হয়। দুজনের হৃদয়ের টান ভালোবাসার অসীম সীমানায় পৌঁছে যায়।
°°°
পার্লার থেকে একজন কে আনা হয়েছে মেহেদী পড়িয়ে দেওয়ার জন্য। প্রথমে সুপ্তি কে মেহেদী পড়িয়ে দেয়, এরপর সাইমার ইচ্ছেতে স্নেহাকেও মেহেদী দেয় অল্প একটু। স্নেহার দায়িত্ব রাহিলা কে দিয়ে দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দেয় সাইমা।
সাইমার দুই হাত ব্লক আবার সুপ্তির হাত ও ব্লক। দুইজনে এবার সজীব কে জ্বালিয়ে খাচ্ছে, একবার সুপ্তি বলছে,
• “ ভাইয়া, পিঠ চুলকাচ্ছে, একটু চুলকিয়ে দাও না! ” সজীব বাধ্য ছেলের মতো কথা শুনছে।
জামিয়া পারভীন তানি
আরেকবার সাইমা বলছে,
• “ শোনোনা! চুলগুলো বেঁধে দাও না, বিরক্ত লাগছে, খুব গরম। ” সজীব সাইমার চুলগুলো কাঁকড়া দিয়ে বেঁধে দেয়।
ওদের দুজনের হুকুম শুনতে শুনতে সজীব এবার বলে,
• “ ভাগ্যিস, মাহিরাকে ওর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, নইলে ওকেও তোদের মতো চুলকিয়ে দিতাম। ”
সাইমা সজীবের কথা শুনে সজীবের হাতের উপর কিল বসিয়ে দেয়। সজীব উঁহু করে লাফিয়ে উঠে। তখন সাইমা বলে,
• “ খুবশখ তানা চুলকিয়ে দেওয়ার, আসো আমি তোমাকে চুলকিয়ে দিই।” এই বলে সজীব এর গাল দুটো টেনে ধরে।
সজীব সাইমার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে ,
• “ আমাকেও মেহেদী দিয়ে সাজাবে নাকি? গাল তো লাল হয়ে যাবে। ”
• “ তুমি এমনিতেই লাল! তাই তোমাকে খয়েরী বাবু বানিয়ে দিলাম। ”
• “ কিহহহহহহ!”
সজীব আয়নাতে নিজের মুখ আর হাত দেখে তাড়াতাড়ি করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া শুরু করে। সাইমা ও হাত ধুয়ে নেয়, মেহেদী গোটা হাতে লেপ্টে গেছে একেবারে। আর এদিকে সুপ্তি সজীবের কাণ্ড দেখে হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে।
সজীব সাইমার সামনে এসে বলে,
• “কাল অনুষ্ঠান! এখন আমি কি বলবো সবাইকে?”
• “ বলবে, বউ মেহেদী দিয়ে ঘুমিয়েছিল, খেয়াল করিনি, যখন আদর করতে গিয়েছি তখন বউ মেহেদী মাখিয়ে দিয়েছে। ”
• সজীব এর মুখ লাল হয়ে আছে, “ এই পাগলী বোনের সামনে এসব কি বলো!”
• সাইমা সুপ্তির দিকে ২৪ টা দাঁত বের করে বলে, “ এহহহহ! মনে হচ্ছে ও আদর খায় না! ”
জামিয়া পারভীন তানি
সুপ্তি লজ্জায় পালিয়ে যায় নিজের ঘরে।
সজীব সাইমার গালে নিজের গাল ঘষে দিয়ে বলে,
• “ আদরের চিহ্ন না হয় তোমার ও থাক!”
সাইমা লজ্জা পেয়ে পালিয়ে আসে, উপরে এসে দেখে সুপ্তি বেলকনিতে বসে আছে। সাইমাকে দেখেই সুপ্তি বললো,
• “ তুমি খুব খারাপ ভাবী! খুব লজ্জা দিয়েছো আমাকে। ”
• “ ইসসরে! বরের সাথে রোমান্স করতে লজ্জা লাগেনা বুঝি?”
• “ উঁহু ”
• “ কি? ”
• “ আচ্ছা ভাবী! ওর কি এখুনি যেতে হলো! ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের পরই না হয় যেতো! ”
• “ হয়তো জরুরী কাজ ওর!, যাওয়ার সময় তোকে কি বলে গিয়েছিল রেহান? কবে আসবে কিছু বলেনি? ”
• না গো! বুঝতে পারছিনা! হটাৎ করে ওর বিদেশ কেনো যাওয়া লাগলো? ও কি আমাকে ভুলে যাবে ভাবী?”
সাইমা সুপ্তির এমন কথাতে একটু চিন্তিত হয়, আসলেই তো রেহান কেনোই বা গেলো! কবে ফিরে আসবে কিছুই বলে যায়নি। তবুও সুপ্তির দিকে তাকিয়ে সুন্দর একটা হাসি দেয়, এরপর বলে,
• “ রেহান ঠিক ফিরে এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবে দেখো!”
• “ সারপ্রাইজ! আমার খুব ভালো লাগে। ”
জামিয়া পারভীন তানি
চলবে……
#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ১৯)
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
সাইমা প্রথম দেবরের গায়ে হলুদের জন্য কিচেনে গিয়ে রান্না করছে।
সাইমাকে এই বাড়িতে আসার পর থেকে কখনো রান্না করতে হয়নি। সজীব দের বাড়ির সব কাজের জন্য আলাদা আলাদা মানুষ আছে। ঘর পরিষ্কার করার জন্য দুজন মহিলা আছে, আর রাহেলা শুধু রান্না করে, গাড়ির ড্রাইভার শুধু বাজার করে আর গাড়ির দায়িত্ব পালন করে, আর দরজায় সব সময় দারোয়ান চাচা আছেই।
ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা সাইমার, এমন সময় সজীব সাইমা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। সাইমা প্রথমে চমকিয়ে উঠলেও সজীবের গায়ের গন্ধ খুব বুঝতে পারে।
• “ কি হলো! আমি পুরো ঘেমে গেছি! না ধরলেই নয়। ”
• “ তোমার ঘামের গন্ধ আমাকে পাগল করে দেয় সাইমা! আজ তোমাকে এভাবে দেখে তোমার উপর প্রেমে পড়ার কাহিনী গুলো মনে পড়ে গেলো!”
• “ তারমানে!”
• “ যখন তোমার বন্ধু ছিলাম, তখন লুকিয়ে তোমার রান্না করা দেখতাম!”
• “ কিহহহহহ!”
সাইমা সজীবের দিকে ঘুরে সজীবের চুল ধরে টান দেয়। সজীব ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে। সাইমার হাত থেকে বাঁচতে সাইমাকে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করে। সাইমা সজীবের থেকে বাঁচার জন্য বলে উঠে,
• “ এইই! পায়েস পুড়ে যাবে। ”
সজীব ছেড়ে দেয়, একটা টুল নিয়ে বসে পড়ে। সাইমা যা করছে সব মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। সাইমা পায়েস রান্না করে, ওভেনে পুডিং বসিয়ে দেয়, পুডিং নামিয়ে কেক বসায়। নিজ হাতে মিষ্টি বানায়, তরমুজে ডিজাইন করে। সজীব তখন বলে,
• “ এতো কিছু কষ্ট করে করার কি দরকার? বাইরে থেকে আনিয়ে নিলেও তো পারতাম! ”
• “ তা পারতাম! অনেক আইটেম তো কিনিয়েও এনেছি। রান্না হচ্ছে শখ বুঝলে? তুমি তো নিজের বিয়েতে কোন অনুষ্ঠান করোনি! সজলের যেনো কোনো আফসোস না থাকে, সেইজন্য। তাছাড়া বড় বলতে আমিই তো বড় ভাবী। বড়দের কাছে ছোট দের এইটুকু চাওয়া থাকতেই পারে তাইনা বলো!”
• “ নিজের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি বলে আফসোস করছো নাকি?”
• “ কি যে বলোনা! সজলের বিয়েতে আমি আমার সব শখ পূরণ করে নিবোনা!”
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
সজীব একটুখানি পায়েস নিয়ে সাইমার গালে মাখিয়ে দেয়, সাইমা কিছু বলার আগে গাল থেকে পায়েস খেয়ে নেয়। সাইমা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, তখন সজীব বলে,
• “ ইয়ে মানে মিষ্টি ঠিক মতো হয়েছে কিনা দেখলাম! আহহহ! যা স্বাদ হয়েছেনা!”
এবার সাইমা সজীব কে ধাক্কা দিয়ে কিচেন থেকে বের করে দেয়, একা একা মিটিমিটি হাসতে থাকে।
°°°
সন্ধ্যার আগে থেকে সব মেহমান রা একে একে চলে আসে। সাইমা পার্লারে গিয়েছে সাজতে। ছোট দেওরের গায়ে হলুদ বলে কথা, অনেক মেহমান আসবে, এদের সামনে যাচ্ছেতাই হয়ে তো আর থাকা যায়না! অনেকেই সেজে আসবে, সাইমা না সাজলে আবার সজীব বউ বাদে অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবে। পুরুষ মানুষের মন, কখন কোন দিকে যাবে। সাইমা এই ভয়ে সব সময় নিজে পরিপাটি থাকা পছন্দ করে।
বড় করে স্টেজ করা হয়েছে, প্রায়ই ৫০ রকমের খাবার সাজিয়েছে। সাইমা অবশ্য আগেই বলে রেখেছিলো, সজলকে শুধু ছেলেরাই হলুদ লাগাবে, আর বোন হিসেবে সুপ্তি আর ফুপি সুযোগ পাবে। কারণ নন মাহরাম মেয়েরা সজল এর কপাল ছুয়ে দিক এটা ইসলামে নেই।
সাইমা অবশেষে আসে, সজীব অবাক হয়ে সাইমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এ যেনো উপর থেকে নেমে আসা কোনো হুরপরি। সজীবের হৃদয়ে ভালোবাসার ঝংকার তোলা রাজকন্যা। কাঁচা হলুদ শাড়ির সাথে ফুল হাতা ব্লাউজ পড়েছে, মাথায় লাল রঙ এর হিজাব। লাল হিজাবে লাল টুকটুকে সাইমাকে আরোও আকর্ষণীয় লাগছিলো। চোখে গাড় কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, হিজাবের সাথে ম্যাচিং ফুলের গয়না। সাইমাকে সজীবের কাছে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সজীব যেনো সাইমার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছেনা।
সাইমা নিজেও সজীবের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছেনা। কাঁচা হলুদ পাঞ্জাবি তে সজীব কে দারুণ লাগছে। ফরসা গায়ের রঙ এর সাথে ম্যাচ করেছে পাঞ্জাবি টা। চুল গুলো স্পাইক করেছে, খোঁচা খোঁচা দাড়িতে সত্যিকারের পুরুষ লাগছে সাইমার কাছে। সজীবের গাড় কালো চোখের গভীরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে সাইমার। একটু পর সুপ্তি হাতে তুড়ি মেরে বলে,
• “ শুধু বউকে দেখে হবে? একটু আমাদেরকে ও দেখো ভাইয়া! ”
সজীব এবার লাজুক হাসি দিয়ে খেয়াল করে, সুপ্তি সাইমা একই রকম করে সেজেছে, আর স্নেহাকে হলুদ শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সজীব স্নেহা কে কোলে নিয়ে বলে, আমার পুচকে রাজকন্যা কে তো খুব সুন্দর লাগছে। স্নেহা কি বুঝলো কে জানে! সজীবের সাথে হাসতে শুরু করে।
স্টেজের দিকে তাকিয়ে সাইমা ও অবাক হয়, দুই ভাই একই রকম সেজেছে। মুখের কিছুটা মিল আছে বিধায় দুজনকে অনেকটা একইরকম লাগছে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে অনেক মজা হয়, সজলকে খাওয়ানোর সময় সুপ্তি সজলের মুখ চেপে ধরে আর সবার থেকে টাকা আদায় করে। অনেক অনেক মজা করে রাত ১২ টাই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে। বিশেষ করে সজলের বন্ধুরা সজলকে হলুদ দিয়ে রাঙিয়ে দেয়।
°°°
অনুষ্ঠান পর্ব শেষ করে রুমে আসে সুপ্তি, রেহান কে দুইদিন থেকে ফোন দিয়ে পাচ্ছে না। তাও বেশ কয়েকবার ফোন দেয়, রেহান ফোন ধরেনা দেখে মন সুইচড অফ করে দেয়। এরপর ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে।
মনেরমধ্যে এক্টাই ভয় জেঁকে বসেছে, রেহান ওর সাথে প্রতারণা করলো না তো! সবার সাথে যতই আনন্দ করা যাক, ভালোবাসার মানুষ টা পাশে না থাকলে সব আনন্দ কান্নায় পরিণত হয়।
“ ভালো যদি নাইবা বাসবে! কেনো আপন করেছিলে?
প্রেমের মিথ্যে নেশায়, কেনো আমায় জড়ালে?
কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? করে দিয়ে পর!
কোথায় গিয়ে খুঁজবো তোমায়? কাঁদে আমার মন!
ফিরে এসে ভালোবেসে করে নাও আমায় আলিঙ্গন। ”
সুপ্তির ব্যথিত হৃদয় এর ব্যথা সুপ্তি ছাড়া কেউ জানে না! এতোটা কষ্ট হচ্ছে প্রিয় মানুষ টাকে হারিয়ে। খুব করে খুঁজতে ইচ্ছে করছে, ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে। অন্ততঃ ভিডিওকলে হলেও কথা বলতে পারতো রেহান। কিন্তু নাহহহ! রেহানের কোন খবর ই পাচ্ছেনা সুপ্তি।
চলবে…..
আমি আজ পর্যন্ত যতগুলো গল্প লিখেছি, সব গল্প একাধিক বার চুরি হয়েছে। আচ্ছা আমার কি কষ্ট লাগেনা? এতো চিন্তা করে একটা কাহিনী বানায়, আর সেটা চোরেরা চুরি করে নিজের নামে চালায় তখন। অনেকে হয়তো মনে করেন, লিখতে আর কি সময় লাগে? আমার প্রতিটি পর্ব দুই থেকে তিন ঘন্টা ব্যয় করে অনেক ভেবে চিনতে লিখি। বানান ভুল থাকলে সেটা পর্যন্ত কারেকশন করে দিই। এতো কিছু করে কেউ যদি নিজের লিখা অন্যের নামে দেখে তাহলে মাথা ঠিক থাকার কথা না। সেদিন স্ক্রিনশট দিলাম, তাই আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, সবাইকে মেসেজে স্ক্রিনশট দিতে। তারপর ও অনেকেই খারাপ বিহেইভিয়ার করেছে। এটা নাকি আমার বাড়াবাড়ি ছিলো। আপনাদের অনেকেই আছে! গল্প না পেলে মেসেঞ্জারে এসে বলেন গল্প কেনো দিলেন না। এমন ভাবে বলেন যেনো আমি দিতে বাধ্য। আমার অসুখ হতে পারেনা, আমার মন খারাপ থাকতে পারেনা। আমি নিজ চিকিৎসার জন্য হসপিটাল না গিয়ে গল্প লিখি এটাই আপনাদের চাওয়া। অথচ আমি যেদিন লিখতে পারিনা, পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে দিই দিতে পারবোনা। সেগুলো আপনাদের চোখে পড়েনা?
আমি শখ করে লিখতে গিয়ে অনেক কিছু শিখে গেলাম। আপনারা লিখা পেলে খুশি আর না পেলে অপমান পর্যন্ত করতে ছাড়েন না। আসলেই ভার্চুয়াল জগতের কেউ কখনো আপন হয়না।