#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ১৭)
#লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
এরই মাঝে নিপুর ফোন আসে , লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। সাইমা বড়ই দোটানায় পড়ে গেছে, একদিকে গর্ভধারিণী মা, জন্মদাতা পিতা অন্যদিকে ৮ মাস বয়সি মেয়ে। সাইমা রেহানের উপর মেয়ের দায়িত্ব দিয়ে মা বাবার মুখ শেষ বারের জন্য দেখতে আসে।
সুপ্তি আর সজল ও আসে, সজীব জানিয়ে দিয়েছিলো ফোনে সেই জন্য। সাইমা বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি, সুপ্তির গলা জড়িয়ে হাউমাউ করে কিছুক্ষণ কাঁদে।
• “ ভাবী এভাবে তোমার ভেঙে পড়লে হবেনা তো! তোমার মেয়ে আছে, ওকে কে দেখবে বলো। তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। ধৈর্য ধরো ভাবী, এগুলো সব আল্লাহর পরীক্ষা ছাড়া কিছুই না। ”
• “ হুমম, আমি ওর কাছেই যাবো। ”
সাইমা হসপিটাল এর দিকে চলে আসে, সজীব ও আসে। হসপিটাল এ গিয়ে রেহান এর কাছে যায়।
• “ কেমন আছে ও! ভালো আছে তো?”
• “ ডক্টর দেখে গেছে ভাবী, এখন আগের তুলনায় বেটার আছে। দোয়া করেন, তাড়াতাড়ি যেনো সুস্থ হয়ে যায়। ”
সাইমা সজীবের বুকে ঝুকে, যেনো শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আপন মানুষ কে হারালেও সন্তান তো ভালো আছে। এটাই অনেক সাইমার কাছে।
রেহান সাইমা কে আবার বলা শুরু করে,
• “ যখন সাইমার পালিত ভাই আর ভাবী জানতে পারে, সাইমা কে ঠেকানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সাইমার সব কিছুতে গোয়েন্দাগিরি করা শুরু করে। তখন জানতে পারে আলিফের ব্যপারে। প্রথমে আলিফকে কিডন্যাপ করে, এরপর আলিফকে বলে যেনো সাইমাকে সে ধোঁকা দেয়। প্রয়োজন এ অনেক টাকা দিতে রাজি হয় সুমন । আলিফ অস্বীকৃতি জানালে আলিফের বুকের বাঁ পাশে তিনটা গুলি করে। এরপর আলিফের লাশ একটা কম্বলের বক্সে ভরে আলিফের মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসে। এদিকে সুমন সাইমার বাবা মায়ের কাছে বলে, সাইমা আলিফের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলো। প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে এখন, এদিকে আলিফ নাকি পালিয়ে গেছে। সাইমার বাবা মায়ের এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ করে। সত্যতা যাচাই না করেই সাইমা কে গৃহবন্দী করা হয়। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে সাইমার বিয়ের আয়োজন করা হয়। সাইমা রাজী না থাকলেও সাইমার বাবা সুইসাইড করার ভয় দেখায়। সাইমা বাধ্য হয়ে বিয়ের কাগজ সরি ওটা বিয়ে ছিলো না, বিয়ের নামে উইলে সাইন করিয়ে নিয়েছিলো। তার মানে সাইমার একবার ই বিয়ে হয়েছে, সজীব ভাই এর সাথে। ”
সাইমা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়,
• “ কিহহহ! এতো বড় ধোঁকা!
সাইমা হসপিটাল থেকে বের হয়ে সোজা থানায় যায়, সজীব ও সাইমার পিছু নিতে বাধ্য হয়। কারণ সাইমার মানসিক অবস্থা ভালো নেই।
পুলিশের সহায়তায় সুমনের সাথে দেখা করে, সুমনকে সামনে পেয়েই বলে,
• “ বন্য কুকুর বনেই সুন্দর, তাকে আদর যত্ন করলে মনিবের পায়ে ছোবল দিতে দ্বিধা করে না।”
• “ ঠিক তাই! তোর দাদা আমাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত যেভাবে করেছে, আমিও ঠিক সেভাবে তোকে বঞ্চিত করেছি। যখন তোর মা আমাকে আদর করে নিয়ে আসে, তখন থেকে তোর দাদা আমাকে ধিক্কার দিয়েছে। খারাপ গালিগালাজ করেছে, তোর বাপ যেনো আমাকে কিছু না দিতে পারে তাই তোর নামে সব উইল করে গিয়েছিলো। যা করেছি বেশ করেছি! ”
• “ তুই অনাথ ছিলিস! তোকে আমার বাবা সন্তানের পরিচয় দিয়েছিলো। এখন তুই বেঁচে থেকেও তোর সন্তান অনাথ হয়ে বড় হবে। তুই যদি একবার আমাকে বলতিস সম্পত্তি লিখে দিতে, আমি দিয়ে দিতাম! কিন্তু আমার জীবনে যে ঝড় এনেছিস, তার শাস্তি তুই সহ তোর সন্তান সবাই পাবে। ”
• “ একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে! তুই কি যাদু জানিস! তোর বিয়ের নাটক করার দুদিন পর তোকে পুড়িয়ে মারার প্লান করেছিলাম, তুই পালিয়ে গেলি! এরপর তোরে খুঁজিনি কারণ সম্পত্তি তো পেয়েই গেছিলাম। এরপর কালকের এতো সুন্দর প্লান কিভাবে করলি রে! আর তোর বর কে মেরে ফেলার পর কিভাবে বেঁচে গেলো রে!”
• তোদের মতো শয়তানের থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর দোয়া আমার কাছে আছে। আর আলিফকে তুই মেরে ফেলেছিস! কিন্তু ও আলিফ না রেহান। তোদের যম!”
• “ কি সুন্দর প্লান করেছিলাম, সব গুলো রে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ করে মারবো। তোরা আগেই বেরিয়ে গেলি, এরপর যখন তোর দিকে গুলি ছুড়লাম তখন তুই বেঁচে গেলি, মরলো তোর মেয়ে!”
• “ আরে জানুয়ার! আমার মেয়ে মরেনি! বেঁচে আছে। তোর সব কথা রেকর্ড করলাম, মরবি এবার তুই।”
সাইমা পিছনের দিকে ঘুরে আরেকবার বলে,
• “ রেহান আমার হাজবেন্ড না! আমার হাজবেন্ড সজীব। মরার আগে শুনে নে!”
সাইমা থানায় রেকর্ড এর কপি জমা দিয়ে বেরিয়ে আসে।
সাইমা বড়ই ক্লান্ত হয়ে আছে, তাই সজীব একটা হোটেলের রুম বুকড করে। ফ্রেশ হওয়া লাগবে, কিছু খাওয়া লাগবে। নইলে শত্রুদের সাথে লড়বে কিভাবে। দুজনে ফ্রেশ হয়ে নেয়, সজীব খাবার অর্ডার করে। সজীব নিজ হাতে সাইমাকে খাইয়ে দেয়, সাইমা কে একবার দেয় আরেকবার নিজে খায়৷ খেতে খেতে সাইমার চোখে পানি চলে আসে, সজীব সাইমার চোখে চুমু দেয়। এরপর বলে,
• “ সব পরীক্ষায় তুমি জিতেছো, এবারও জিতবে। এতো ভেঙে পড়ো না। ”
• “ শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য কিভাবে পারলো আমার সাথে এমন করতে? আর আলিফের তো কোন ভাই ছিলো না। রেহান কে ? তুমি জানো? ”
• “ এতো চিন্তা করোনা, রেহান যখন এতো কিছু বলেছে, বাকিটাও বলবে। ”
°°°
সুপ্তি হসপিটাল এ এসে রেহানের বুকে মাথা রাখে, আস্তে করে বলে,
• “ আপনি এতো বিপদে থাকলেন, আর আমি স্বার্থপর এর মতো রেষ্ট নিলাম কাল। যদি জানাতেন, তাহলে কি হতো। ”
• “ আসল অপরাধী কে ধরতে পারতাম না, রিস্ক নিয়েছি সেইজন্যেই। ”
রেহান সুপ্তির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
• “ এতো ভয় পেয়ো না, আমি কাঁচা খেলোয়াড় না। সব কিছু তে জয় আমারই হবে। ”
• “ মানে?”
• “ সময় হলে বুঝবে। ”
সজল ক্লান্ত হয়ে বসে আছে, তখন সজীব সাইমা আসে।
সজীব রেহানের উদ্দেশ্যে বললো,
• “ হোটেলে গিয়ে কিছু খেয়ে এসো, ওদেরকে ও নিয়ে যাও। অনেক ক্লান্ত তোমরা! ”
রেহান মাথা ঝুকে, এরপর বেরিয়ে যায়।
সাইমা মেয়ের কেবিনে ঢুকে। কি নিস্পাপ ছোট্ট মেয়েটা নিথর হয়ে পড়ে আছে।
স্নেহার ছোট্ট হাতে ঠোঁটের স্পর্শ দেয় সাইমা। স্নেহার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, মায়ের হৃদয় বলছে, “ তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাও সোনা।”
চলবে…
আজ দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না, তাও দিলাম। এটুকুই পড়েন আজ। ধন্যবাদ সবাইকে।