#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ১৫)
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
মাহিরা যে সজলকে এইভাবে ডিমের ফেসিয়াল করাবে সজল এটা বুঝতে পারেনি, মাহিরাকে ধরে সজলের পুরো মুখ মাহিরার মুখে ঘষে দেয়। সজল এবার দাঁত কেলিয়ে বলে,
• “ এই নাও তোমাকে ফেসিয়ালের সাথে ম্যাসাজ ও করে দিলাম। ”
মাহিরা গালে হাত দিয়ে ন্যাকা স্বরে বলে,
• “ ও মা গো! এই ভণ্ড তো খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে আমার গাল জ্বলিয়ে দিলো।”
রেহান উপর থেকে চিল্লিয়ে বলে,
• “ শাকচুন্নি মাহিরা! ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়, শ্যালক বাবু এতো রোমান্টিক আজ দেখলাম। ”
মাহিরা রেগে মেগে রেহানের দিকে তাকায়, সজল তখন বলে,
• “ ওই মিয়া আমি তোমার শ্যালক না সমন্ধি! সুপ্তি আমার ছোট বোন! আমাকে শ্যালক শ্যালক করবানা বুঝলে!”
• “ জ্বী শ্যালক বাবু! সুপ্তি আপনার একমাত্র বোন তাই এই বোনাস টুকু আমার পাওনা!”
• “ হাহাহা ”
°°°
সাইমা সজীবের বুকে মাথা রাখে, সজীব দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে।
• “ কতো দিন পর আসবে তুমি! তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না! ”
• “ তুমি বাসায় যাও, মন খারাপ করবেনা! আর যা যা বলে দিলাম তার যেনো কোন ভুল না হয়। ”
• “ এটা যদি রেহানের কোন চাল হয়?”
• “ ওকে বিশ্বাস করতে পারো। ”
• “ যাই হয়ে যাক তুমি শীঘ্রই আসবে কিন্তু।”
সজীব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাইমা।
°°°
• “হটাৎ করে সাইমা ভাবীর সাথে রেহান কে কোথায় পাঠাচ্ছে ভাইয়া? ”
মাহিরা প্রশ্ন করে সজলকে।
• “ ভাবীর বাবার বাসায়! কেনো কি হয়েছে তাতে!”
• “ ভাইয়া তো যেতে পারতো! রেহান কেনো?”
• “ উঁহু মাহিরা! আমি এতো কিছুই জানিনা। একটু হেল্প করো তো, অফিসে যেতে হবে। ”
• “ বিয়ের পর দিন অফিসে না গেলে হয়না?”
• “ হয়না! কারণ বিয়ের অনুষ্ঠান এখনো দেরি আছে। তখন মন ভরে তোমার সাথে থাকবো। এবার একটু হাসো, এইভাবে পেঁচার মতো মুখ করে থেকো না ।”
মাহিরা সজলের বুকে কিছু কিল মারে, এরপর গলা জড়িয়ে ধরে।
°°°
সুপ্তি ঘরে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, রেহান পিছন থেকে জড়িয়ে বলে,
• “ কি হলো যাওয়ার সময় মুখ বেজার করে বিদায় দিবে? নাকি একটু ভালোবাসা দিবে! ”
• “ খুব ভয় হচ্ছে! যদি কিছু হয়ে যায়। ”
• “ ভয় না করে দোয়া করো, যেনো সুস্থ ভাবে ফিরতে পারি। ”
• “ তোমার জন্য করতে পারি অপেক্ষা চিরকাল, সুস্থ ভাবে যেও আর ফিরে এসো। ”
°°°
সাইমা নীল রঙের একটি শাড়ি পড়ে, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, মাথায় নীল রঙ এর হিজাব দেয়। হালকা সাজে, কারণ তিন বছর পর বাবার বাড়ি যাবে বলে কথা। এমনিতেই অতিরিক্ত ফরসার জন্য রক্তবরণ মুখ। হালকা সাজে সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সজীব স্নেহা কে কোলে নিয়ে আছে, আর সাইমার দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছে। এতটা মায়াময়ী লাগছে সাইমা কে। ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা, কিন্তু অল্প কিছু দিনের জন্য ছাড়তে বাধ্য সজীব।
যাওয়ার সময় সাইমার কপালে চুমু এঁকে দেয় সজীব। সাইমা শুধু বলে,
• “ শীঘ্রই আসবে আমাকে নিয়ে যেতে, খুব মিস করবো তোমাকে। ”
বিদায় বেলায় অনুভূতি গুলো খুব কষ্ট দেয়, একে অপরের দিকে বারবার তাকিয়ে দেখে। এই কয়েকটা দিনের খুনসুটি গুলো রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। কিভাবে থাকবে একে অপরকে ছাড়া।
°°°
প্লেন এ পাশাপাশি বসেছে সাইমা আর রেহান। বাস জার্নি অনেক কঠিন ছোট বাচ্চা নিয়ে, সেইজন্য প্লেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেহান। সাইমা একটু ইতস্তত বোধ করছে রেহানের পাশে। রেহান সাইমাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে,
• “ সেদিনের ব্যবহারের জন্য সরি, মাফ করবেন। আমি ভুল বুঝে আপনার সাথে অন্যায় করে ফেলেছিলাম। ”
• “ হু”
• “ আর আপনাদের বাসায় আমার পরিচয় দিবেন আপনার হাজবেন্ড হিসেবে। ”
• “ সজীব বলেছে!”
• “ আর আমাকে তুমি করে বলবেন, মানে একে আপনার ননদের হাজবেন্ড, তারপর আবার হাজবেন্ড এর অভিনয় করতে হবে আমাকে। নইলে আপনার পরিবারের কাছে ধরা পড়ে যাবো। ”
• “ হুম ”
• “ আপনি সরি তুমি আগে যাবে, এরপর আমি যাবো। ”
• “ হু”
°°°
সাইমা কলিংবেল চাপে, সানিয়া হক দরজা খুলে কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এরপর মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
• “ এতো দিন পর মায়ের কথা মনে পড়লো তোর, আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো। তুই ভালো আছিস মা! কতো খোঁজ করেছি তোর, খুঁজে পাইনি। খুব কষ্ট হতো তোর কথা ভেবে। ”
• “ কোনটার উত্তর দিবো মা! আমি বেঁচে আছি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
এরই মধ্যে সাইমার ভাবী মিলা আসে, সাইমাকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। এরপর মুখে তেজ নিয়ে বলে,
• “ কিরে মুখপুড়ি, এতো দিন পর ফিরে আসলি যে? নাকি নতুন করে ডিভোর্স দিয়ে এসেছিস। ”
সাইমা কোন কথা না বলে কষে চড় মারে, এরপর বলে,
• “ এই বাড়িতে আমার ৪০% হক আছে, আর তোর স্বামীর ৬০%। তোর স্বামীর ভাগ থেকে যদি তোকে দেয় তাহলে তুই পেলেও পাবি ১০%। অতএব বড় বড় কথা বললে জিহবা টেনে ছিড়ে দিবো। অনেক অত্যাচার করেছিস আমার মা কে! এখন তোকে আমি দেখে নিবো। ”
মিলা সাইমার এমন ব্যবহারে চমকে উঠে, চড়ের ঝোঁক টা নিতে পারেনি। এতো দিন এই মেয়ে টু শব্দ করেনি তার উপর। আজ এভাবে বদলে যেতে পারে মিলা ভাবতে পারেনি।
সাইমা মা কে জড়িয়ে ধরে গল্প করছে, তখন সাইমার ভাই আসে।
• “ এতো বছর পর কি মনে করে ফিরে আসলি! ”
• “ সম্পত্তির ভাগ নিতে নয়, বাবা মায়ের ভালোবাসা পেতে। ”
• “ তাই বুঝি মিলাকে মেরেছিস? ”
• “ যে তোর জন্মদাত্রী মায়ের সাথে খারাপ বিহেভ করে, তাকে চড় নয়, জুতা মারা উচিৎ। এই কাজ টা আমার নয় তোর করা উচিৎ। ”
• “ এই শোন, যাদের হয়ে কথা বলছিস তাদের পালতে কতো খরচ হয় জানিস?”
• “ তুই যে বাড়িতে থাকছিস তার পুরো টা বিক্রি করে দিলে তোদের বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকতে কতো খরচ হবে জানিস?”
• “ এসব বলার সাহস হয় কিভাবে তোর?”
• “ কারণ সাইমা নিরীহ মেয়ে নয়। ”
এরই মাঝে রেহান স্নেহা কে কোলে নিয়ে প্রবেশ করে। সাইমার ভাই সুমন আর মিলা যেনো ১১ হাজার ভোল্টেজ এর শক খায়। দুজনেই একসাথে বলে উঠে, “ আলিফ বেঁচে আছে কিভাবে? নাকি ওর ভুত?”
সাইমা জোরে করে হেসে উঠে,
• “ আমার হাজবেন্ড আলিফ আর আমার একমাত্র মেয়ে স্নেহা। কি ভাবছিস তোরা, আলিফ কে আমার থেকে আলাদা করতে পারবি? কখনোই নয়। ”
মিলা আর সুমন দুজনেই তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে চলে যায়, স্নেহা কে নানীর কোলে দিয়ে রেহান বলে,
• “ আপনার নাতনি কে ধরুন, আমি আসছি। ”
রেহান সুমনের পিছু নেয়, ওরা কি কথা আলোচনা করে সেটা শোনার জন্য। যা আলোচনা হয় সব কিছু রেকর্ড করে নেয় রেহান।
রবিউল হক বাড়ি ফিরে এসে মেয়েকে আর নাতনি কে ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছে। মেয়ের কাছে নিজের ভুলের জন্য বারবার ক্ষমা চাচ্ছে,
• “ আমার ভুল হয়ে গেছিলো মা, ক্ষমা করে দিস । ”
• “ আমি অতীত ভুলে যেতে চাই, দয়া করে আর অতীত টেনে আনবেনা। ”
রেহান কে দেখে রবিউল হক উঠে দাঁড়ায়, “ তু তু তু তুমি ”
রেহান মুচকি হেসে বলল,
• “ বেঁচে আছি আঙ্কেল!”
• “ কিভাবে সম্ভব? ”
• “ রাখে আল্লাহ মারে কে?”
• “ ক্ষমা করে দাও বাবা! আমি যদি তোমার সাথে সাইমার বিয়ে দিতাম আমাকে এতো খেসারত দিতে হতো না। ”
• “ এইতো চলে এসেছি, এবার সব কিছু ঠিকঠাক হবে। নো টেনশন বাবা!”
সাইমা রেহানের দিকে তাকিয়ে হাসে, “ বাহহহ! কি অভিনয় টাই না করতে পারে রেহান! ”
চলবে…….