#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ১০)
#লিখা: জামিয়া পারভীন তানি
সজীবের খুব ইচ্ছে হচ্ছে সাইমাকে একটু ছুঁয়ে দিতে, পরক্ষণেই মনে পড়ে গেল সুপ্তির কথা। সাইমার পিছনে দাঁড়িয়ে মুখে সাউন্ড করে উপস্থিতি জানান দিলো।
সাইমার কোলেই স্নেহা ঘুমিয়ে পড়েছে, সাইমা উঠে সজীব কে ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করে। সজীব বলতে চেয়েও চুপ করে যায়। সাইমা ড্রইং রুমে চলে আসে, সজীব ও পিছে পিছে আসে। দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকলো। সাইমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক ভাবে। সাইমা প্রথমে স্নেহার বিছানা রেডি করে শুইয়ে দেয়। বুঝতে পারছে সজীব হয়তো কিছু বলবে, কিন্তু এখন সুযোগ দেওয়া যাবেনা কথা বলার। স্নেহাকে পাশে নিয়েই শুয়ে পড়ে।
সজীবের খুব রাগ হয়, সাইমার এটা করা কি উচিৎ হয়েছে! ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছি অথচ ও ঘুমিয়ে গেলো। সজীব গম্ভীর মুখে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ে, সারাটা রাত ছটফট করে কাটায়। মাথায় একটা ই চিন্তা, সাইমা কোথায় যায়, কি করে। সকালে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়, আজ অফিসে যাবে না, অফিসের নাম করে বের হবে। আশেপাশে ই লুকিয়ে থাকবে, সাইমার পিছু নিয়ে হলেও জানতে পারবে সাইমা কি করে।
°°°
• “ প্রফেসর! এই টপিক্স টা বুঝতে পারিনি। একটু বুঝিয়ে দিবেন প্লিজ। ” সুপ্তি প্রফেসর চেম্বারে এসে জিজ্ঞেস করে।
• “ ক্লাসে মনযোগ কোথায় থাকে, যাও ক্লাসে! যে বুঝেছে তার কাছে গিয়ে বুঝিয়ে নাও। ”
সুপ্তি একভাবে প্রফেসর এর দিকে তাকিয়ে আছে, উফফফ কি হ্যান্ডসাম দেখতে। ফরসা গালে যেনো রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে, নাক যেনো ছোট্ট একটা পাহাড়ের মতো উঁচ, খোচা খোচা দাড়ি যেনো সৌন্দর্য দ্বিগুণ করেছে , চোখ দুটো এতো সুন্দর আর সবুজ ভাব যেনো ওই চোখের গভীরতায় সুপ্তির ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে।
• “ অসভ্য মেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো! আমার দিকে নজর দিয়ে লাভ নেই। আমি ম্যারিড।” রাগ করে বললেন প্রফেসর রেহান ইসলাম।
• “ ম্যারিড তো কি হয়েছে! ডিভোর্স দিয়েই না হয় আমাকে বিয়ে করবেন। ”
• “ কি বললে তুমি! অসভ্য মেয়ে, আরেকবার যদি সামনে আসো টিসি দিয়ে দিবো, যত্তসব ফাজিল মেয়ে। ”
• “ সরিইইইই প্রফেসর, মাথা নষ্ট করে দেয়! আপনি যা কিউট না! আসছি প্রফেসর। ”
সুপ্তি বেরিয়ে যায়, উফফফ এই মেয়ে আবার কাল থেকে কি শুরু করলো। কোথাও জব নিয়েও কি শান্তি পাবোনা! এইবার যেই জ্বালাতন করুক না কেনো! চাকুরী এইবার আমি ছাড়বো না। প্রয়োজন এ ওর বাড়িতে নালিশ দিবো। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে রেহানের। ও শুধুই একজন কে ভালোবাসে আর কাউকেই নয়।
°°°
সজীব সাইমাকে ফলো করে দেখে সাইমা ফিমেল জিম এ আসছে। সজীব চিন্তায় পড়ে যায়, সাইমা একটু মোটিয়ে গেছে তাই ও ফিট থাকতে চাচ্ছে। আর আমি কি না কি ভেবে বসে আছি। সেম অন ইউ সজীব, সেম!
সাইমা বুঝে গিয়েছিলো সজীব ওর পিছু নিয়েছে, তাই সে আগে জিমে এসেছিলো। স্লিম তো থাকতেই হবে, নইলে কিভাবে তোমাকে পরীক্ষা করবো সজীব। মনে মনে সাইমা একটু খুশিই হয়। ওকে ভালোবেসে না হোক! সন্দেহের টানে তো খোঁজ নিচ্ছে। এইটাই অনেক সাইমার কাছে, আর আলিফ তো তাকে ফেলে দিয়েই চলে গেছে। একজন তো অন্তত আছে সাইমার জন্য, তাও ভালোবেসে নয়। সন্তানের জন্য সংসার টিকিয়ে রাখতে চায় সে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাইমা, স্নেহা কে এসিসটেন্স এর কাছে দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
সাইমার জিম শেষ করে বের হতে এক ঘন্টা লাগে, সজীব সাইমা কে দেখে গাড়ির ডোর ওপেন করে দেয়। সাইমা কথা না বলে বসে পড়ে।
• “ আসবে তো বাড়ির গাড়িও তো ইউজ করতে পারো! এভাবে একা একা ঘুরে বেড়ানো কি ঠিক। তাছাড়া মেয়েটার দিক ও তো দেখতে হবে! তাইনা। ”
• “ তোমার বাড়ি থেকে আহামরি দূরে নয় যে গাড়ি ইউজ করতে হবে! তাছাড়া ছোট থেকে স্ট্রাগল করে বড় হয়েছি। মেয়েকেও তো মায়ের মতো সাহসী হয়ে বাঁচতে হবে তাইনা। ”
• “ ওর বাবা থাকতে ওকে কষ্ট করতে হবেনা! ”
• “ যে বাবার মেয়ের যন্ত্রণা তে ঘুম হয়না সে বাবার কোন দরকার নেই আমার মেয়ের। ”
• “ এসব কি বলছো তুমি!”
• “ গাড়ি দেখে চালাও, নইলে এক্সিডেন্ট করবে। ”
সজীবের মুড টাই খারাপ হয়ে গেলো সাইমার কথা শুনে, ও কি চলে যাবার প্লান করছে নাকি। হুম করতেই পারে, যে অবহেলা করেছি ওকে।
• “ দেখো সাইমা! আর যাই করো, কোথাও চলে যাবার কথা ভেবোনা!”
• “ মেয়েকে পিতৃ পরিচয় তো দিতে হবে, চলে গিয়ে তো ওকে এতিম করতে পারিনা!”
সজীব একটু শান্ত হয়ে বসলো, সেই আগের মতো রাগ, আগের মত তেজ সাইমার শিরায় শিরায় বইছে। এইগুলির ই তো প্রেমে পড়েছিলো সে। বাস্তবতা তাদের এতো দূরে নিয়ে গিয়েছে। ভালোবাসতেই ভুলে গেছে আজ।
• “ আচ্ছা সাইমা! বিয়ের পর তো কোথাও যায়নি, চলো না কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসি। ”
• “ সম্ভব না সজীব! আমি তো আর আগের মতো রূপসী নই। আগে নিজেকে একটু ঠিক করি, তারপর যেও। তোমার তো আবার সুন্দরী মেয়ে পছন্দ। ”
• “ তোমাকে কে বলেছে তোমার রূপ দেখে তোমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছি। ”
• “ তার মানে বিয়ের প্লান সব তোমার সাজানো ছিলো! নিজের মুখেই তাহলে স্বীকার করলে! ”
• “ না! মানে। ”
• “ হুহহহহ, আমি জানতাম, তোমার সাজানো নাটক ছিলো সেইদিন। ”
• “ অতীত ভুলে কি বর্তমান নিয়ে চলা কি ভালো না!”
সাইমা একটু জোরে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
°°°
• “ অনেক দিন হয়ে গেলো, মেয়েটার কি খবর পাবেনা রবি! ” খুব চিন্তায় ভেঙে পড়েছে সানিয়া হক। এক টা মাত্র মেয়ে এতো দিন ধরে নিখোঁজ।
• “ যে নিজে থেকে হারিয়ে যেতে চায়, তাকে কি খুঁজে পাওয়া যায় সানিয়া। তার চেয়ে বরং ছেলের বউয়ের লাত্থি ঝাটা খেয়ে যেভাবে বেঁচে আছো সেভাবেই থাকো। ”
• “ হুমম, পাপের শাস্তি পাচ্ছি। নিজের মেয়ের সাথে পাপ করেছি বলেই অন্যের মেয়ে আমাদের শাস্তি দিচ্ছে। ”
• “ ঠিকই বলেছো! ছেলেটা এভাবে অমানুষ হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। ”
বুকে ব্যথা হয় আজকাল রবিউলের, মেয়েটা কে হারিয়ে কষ্ট যেনো সহ্য হয়না। সানিয়ার তো প্রায়ই মাথা ব্যথা লেগেই থাকছে। এতো কষ্ট কিভাবে সহ্য করে সে, মেয়ের কষ্ট সাথে ছেলের বউয়ের অত্যাচার। সারাদিন বুড়ো বুড়ি কে কাজ করতে হয়। ছেলের বাড়িতে যেনো বিনা পয়সার শ্রমিক ওরা দুজন।
°°°
সাইমা বাসাতে আসতেই রাহিলা কে স্নেহাকে ধরিয়ে দেয়, সজীবের ঘরে গিয়ে পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে যাবে, তার আগেই সজীব দেয়ালের সাথে সাইমাকে চেপে ধরে। দুজন দুজনের নিঃশাসে কেঁপে উঠছে।
• “ অনেক তো হলো একটু কি নিজেদের মতো ভালো থাকা যায়না!”
• “ ছাড়ো এখন, প্রচুর ঘেমে আছি। শাওয়ার না নিলে ঘাম বসে বাবুর ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ”
• “ তুমি ঘামলে ওর ঠাণ্ডা লাগবে কেনো?”
• “ অসভ্য! জানো না ও আমার কাছে এখনাও খায়। ”
• “ কি খায়, আমাকেও দিও। ”
• “ উফফফফফ!”
সাইমা ক্ষেপে লাল হয়ে গেছে, সজীব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। অসভ্য ছেলে, কি যা তা বলে।
সজীব মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
সাইমা শাওয়ার নিয়ে বের হলে দেখে সজীব স্নেহা কে নিয়ে খেলছে। সাইমাকে দেখেই সজীবের মাথায় ভুত চেপে গেলো। স্নেহা কে বলতে শুরু করে ,
• “ মামনি খুব পঁচা, তোমাকে কত্ত আদর করে, কতো খেতে দেয়, কিন্তু দেখো আমাকে খেতেই দেয় না। তোমার আব্বুর ক্ষুধা লেগেছে তাও তোমার আম্মু খেতে দেয় না। আম্মুকে একটু বকে দাও তো। ”
স্নেহাও মুখে দ্দ শব্দ করে যেনো বাবার সাথে তাল মিলাচ্ছে, সাইমার রাগ উঠে যাচ্ছে। লজ্জ্বায় চলে আসে সজীবের সামনে থেকে।
সুপ্তি খুব মন খারাপ করে বসে আছে দেখে সাইমা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে! সুপ্তি সাইমাকে জড়িয়ে এক প্রকার কেঁদে ই দেয়।
• “ ভাবী! আমি কিছুই জানিনা। কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা। ”
• “ বুঝিয়ে বলো। ”
• “ প্রফেসর নতুন এসেছেন, আমি উনার প্রেমে পড়ে গেছি। কিন্তু উনি বলেছেন উনি ম্যারিড। ”
• “ পাগলী মেয়ে, তোমার জন্য নতুন বর খুঁজে এনে দিবো। মন খারাপ করোনা তো। ”
• “ ধ্যাত! কি যে বলোনা। ”
সুপ্তি বারান্দায় চলে আসে, সাইমা ও বারান্দায় এসে দুজনে গল্প করতে থাকে।
সজীবের মাথা টা গরম হয়ে যাচ্ছে, এই মেয়েকে একটু সময় দিবো বলে অফিস মিস করলাম। আর ওই মেয়ে বাচ্চাকে কাঁধে চাপিয়ে দিব্বি ননদের সাথে গল্পে মেতেছে। ফাজিল মেয়ে একটা।
চলবে….