#হৃদয়_মাঝারে_২
#অন্তিম_পর্ব
#হালিমা_চৌধুরী
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো আকাশে। সূর্য প্রায় ডুবে যাবে এই অবস্থায় আছে। মুরতাসিম আর ফারিহা বাড়িতে পৌঁছে গেছে কেবলমাত্র। মুরতাসিম গাড়ি থেকে নেমে ফারিহাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। ফারিহাও ভদ্র মেয়ের মত গাড়ি থেকে নেমে যায়। তারপর দুজন তাদের নতুন ঠিকনায় পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্য রওনা হলো। বাড়ির ভিতরে ডুকে অবাক হয় ফারিহা। কয়েকজন সার্ভেন্ট কে ছাড়া ফরিহা আর কাউকে দেখতে ফেলো না। বিষয় টা বুঝতে না ফেরে ফারিহা মুরতাসিমের কাছে প্রশ্ন করেই ফেললো,
‘আপনার বাড়ির লোক নেই কেউ?’
‘না।’
‘কিন্তু শুনেছি মাহতিম আপনার ভাই তাহলে উনার তো অনেক বড় পরিবার তাহলে আপনি একা থাকেন কেনো?’
‘সেই কালো অতীতের কষ্ট টা আমি একাই ভোগ করি। তোমাকে আমার এই কালো অতীত সম্পর্কে বলে কষ্ট দিতে চাই না আমি।’
‘কষ্টের কথা কাউকে বলবেন না এটা কেমন কথা? বরং আপনি যদি আপনার অতীত সম্পর্কে আমাকে বলেন তাহলে আপনার কষ্ট টা একটু হলেও হালকা হবে।’
‘বলবো কোনো একদিন, আজ এসব কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।’
‘এজ ইউর উইশ।’
.
.
তমাল বাহিরে এসে দেখে তিতির গাড়ির দরজা খুলছে উঠার জন্য। তমাল দৌড়ে গিয়ে তিতির তে আটকে ফেলে। তিতির তমালের হাত জাটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
‘আবার কোন নাটক করতে এসেছো আমার সাথে? এতো অপমান করেও শান্তি হয়নি তোমার?’
‘ভুল হয়েছে ক্ষমা করো।’
‘তমাল তোমার বাড়িতে এসে আমি এইটুকু অন্তত বুঝেছি যে, সবাই আমাকে মেনে নিলেও তুমি আমাকে মেনে নিতে পারবে না। তুমি যদি আমাকে সত্যিকারেরই ভালোবাসতে তাহলে আমাকে একা ছেড়ে দিয়ে বলতে না যে নিজেকে বদলাও। তুমি আমাকে যদি সত্যি ভালোবাসতে তাহলে বলতে, আমি তোমার পাশে আছি। নিজেকে বদলে নাও। আমি কি তখন নিজেকে বদলাতে পারতাম না?’
‘এরকম রেগে যাচ্ছো কেনো তিতির? তোমার ভুল হয়েছে আমি সেটাই সুদরে নিতে বলেছি তোমাকে।’
‘তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে বলছো নিজেকে সুদরে নিতে? কেনো তুমি এই অসময়ে আমার পাশে থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো?’
‘তোমার সাথে আমার কথা বলাই উচিত নয়, তুমি তো ছেলেদের মন নিয়ে খেলো তুমি আমার ভালোবাসা আর কি বুঝবে?’
‘বাহহ, এখন আমি ছেলেদের মন নিয়ে খেলি তাই না? কেনো তুমিই তো বলেছো ছেলেটাকে কয়েকদিন নাচাতে! এখন যখন জানতে পারলে মাহতিম তোমার বোনের হবু বর ছিলো তখন তোমার স্বর চেন্জ হলো কেনো বলো আমাকে?’
‘তাহলে তুমি যাবে না আমার সাথে? দোষ টা তো বেশি তোমার তাহলে সেটা স্বীকার করতে আপত্তি কোথায় তোমার?’
‘না আমি আর কোনোদিন তোমার কাছে ফিরে যাবো না। তোমার কাছে আমি কেমন জানো? কচু পাতায় পানি পড়লে সেই পানি যতটুকু ক্ষনস্থায়ী, ঠিক তেমনই আমি তোমার কাছে। জীবনে অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হও সেই দোয়াই করছি তোমার জন্য। আর এই তিতির তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবে।’
তিতিরের কথা শুনে তমালেন চোখে পানি টলমল করছে। তমাল চাইলে তিতির কে আটকাতে পারে কিন্তু নিজের ইগোর জন্য আটকাতে পারছে না। তমালের চিৎকার দিয়ে খুব বলতে ইচ্ছে করছে, ‘ আমিও তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো, নতুন কাউকে নিয়ে সুখী হতে পারবে না এই তমাল মির্জা।’ কিন্তু নিজের ইগোর জন্য কিছুই বলতে পারছে না।
তিতির গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করছে আর ভাবছে,
‘এতো ছোট জীবনে অধ্যায়ের শুরুতে এতো কষ্ট নিয়ে জীবনের অধ্যায় শুরু করতে হবে কখনো কল্পণাও করতে পারেনি সে। জীবনে কষ্ট পেয়েও কাদতে পারেনি, কাউকে জরিয়ে ধরে কান্না করে কষ্টের কথা বলার সুযোগ হয়নি। কারন বাবা মা যে ছোট বেলা থেকেই বিদেশ থাকে। বাড়ির সার্ভেন্ট দের কাছেই তার বেড়ে উঠা। জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময় মুখে হাসি নিয়ে কাটাতে হচ্ছে। কষ্টের কথা না পারছে কাউকে বলতে না পারছে নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখতে।
জীবনটা যেন একটা শ্রোতবহুল নদীর মতো,
নদীতে যেমন বাঁক থাকে,ঢেউ থাকে ঠিক তেমনি আমাদের মানব জীবনেও সুখ -দুঃখ থাকে, সুখটাকে যেমন আমরা সবার সাথে একসাথে উপভোগ কিংবা সেলিব্রেট করতে পারি ,
কিন্তু দুঃখটাকে সবার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়না। তবে তুমি যদি সত্যি আমাকে বলতে যে তিতির ভুল হয়েছে আমাদের দুজনেরই। চলো সব ভুলে গিয়ে আবার একসাথে বাঁচি আমরা। কিন্তু এগুলো তো কিছুই বলা হয়নি তিতির কে তাহলে কেনো সে সবার কাছে সস্তা হবে?’
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই তিতির নিজের গন্তব্যের বুকে পাড়ি দিচ্ছে। এবাবেই শত শত ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ইগোর জন্য!
__________________________
ফুলে সজ্জিত ঘরে বসে আছে ফারিহা, ঘরের মধ্যে ফুলের গন্ধ মৌ মৌ করছে। ফারিহা তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোই ভাবছে বারবার। হঠাৎ দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করে মুরতাসিম। ফারিহা মুরতাসিম কে আসতে দেখে বিছানা থেকে নামে তাকে সালাম করার জন্য। মুরতাসিম কে সালাম করতে যেতেই ফরিহাকে ধরে ফেলে মুরতাসিম।
‘তোমার জায়গা আমার পায়ে নয়, বুকে।’
বলেই মুরতাসিম ফারিহা কে জড়িয়ে ধরে। তারপর ফারিহা কে ছেড়ে একটা রিং বের করে হাঁটু গেড়ে বসে মুরতাসিম ফারিহাকে বলে,
‘তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেদিনই জেনেছিলাম তুমি আমার। সময়ের বোবা টানেলের লম্বা পথ পেরিয়ে আজ এসে দাড়িয়েছি তোমার সামনে। আজ আমার সমস্তটা জুড়েই তোমার বসবাস। ভালবেসে গ্রহণ করো এ অধমকে, তোমার জন্যেই দেওয়ানা রয়ে যাবে এই দিল আজীবন। তুমি অপরুপ সুন্দরী, তুলনাহীন ভালো মন তোমার। আমি রুপের প্রেমে পড়তেই পারতাম , তোমার রুপ প্রেমে পড়ার মতোই। তবে আমি প্রেমে পড়েছি তোমার মনের। তোমার মনের শুদ্ধতা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে চলেছে কেবল। তোমার প্রেমের শুদ্ধ অনলেই পুড়তে চাই সারাটি জীবন। সুযোগ দিও মনের ঘরের বাসিন্দা হতে মন-সুন্দরী।’
মুরতাসিমের কথা শুনে ফারিহা বিষ্ময়ে জর্জরিত হয়ে যায়। কেউ এভাবেও প্রোপোজ করতে পারে?
‘কি হলো মন সুন্দরী, তোমার মনের ঘরের বাসিন্দা হতে দিবে না আমাকে?’
ফারিহা কিছু না বলে তার হাত বাড়িয়ে দেয় মুরতাসিমের দিকে৷ মুরতাসিম খুব যত্ন সহকারে ফারিহার হাতে রিং টি পরিয়ে দেয়।
‘শুনুন, আমি চাই আর দশ টা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মতোই আমাদের সম্পর্ক টাও স্বাভাবিক হবে।’
‘তবে তাই হোক প্রেয়সী।’
বলেই মুরতাসিম ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে। কেউ ভালোবাসার মানুষ কে আকড়ে ধরে বেঁচে আছে খুশিতে, কেউবা ভালোবাসার মানুষ কে হারিয়ে কাঁদছে। এটাই জীবন, তারপরও বলবো জীবন সুন্দর। কারন সব ভালোবাসা কখনোই পূর্ণতা পায় না।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,
[ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]