হৃদয় মাঝারে সিজন২ (পর্ব ৭)

0
480

#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_৭
#হালিমা_চৌধুরী

মাঝ রাস্তায় দাড়িয়েই গল্প শুরু করে দিয়েছে তমাল আর মাহতিম। ফারিহা ওদের কান্ড দেখে বিরক্ত হয় প্রচুর।

‘ভাইয়া রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবেন বাসায় যাবেন না?’

ফারিহার কথা শুনে হুশ ফিরে তমালের। মাহতিমের সাথে গল্প করতে করতে তমাল ভুলেই গেছে তার সাথে তার বোন ও আছে।

‘আচ্ছা ফারু তুই মাহতিমের সাথে দাড়া আমি একটা সিএনজি খুজে আনি।’

বলেই তমাল রাস্তার অপর পাশে চলে যায়। মাহতিম আর ফারিহা দুজনেই নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে।

‘দেখো ফারিহা তোমার সাথে যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে যাও, এগুলো মনে রাখলে তুমি ভবিষ্যৎ এ সুখী হতে পারবে না।’

‘ভুলে যাওয়া টা কি এতোই সহজ মিস্টার মাহতিম চৌধুরী? আমার জীবনের অন্ধকার এই অতীত আমি কোনো দিনও ভুলতে পারবো কিনা জানি না। তবে আপনি আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন আমি কিন্তু কিছুই ভুলবো না। আর আপনি কি চাইতে এখানে এসেছেন সেটা হালকা কিছু হলেও আমি টের পেয়েছি। এতো কিছু হওয়ার পর আমি আর নতুন কাউকে নিয়ে ভাবতে চাই না। একা থাকতে চাই আমি, আমার পিছনে ঘুরে অযথা সময় নষ্ট করবেন না দয়া করে।’

‘তাহলে আমি কি ভাববো তোমায় নিয়ে, মুরতাসিম কে তুমি বর রুপে মেনে নিয়েছো তাই আমাকে রিজেক্ট করছো? নাকি আমি তোমার কোনো ক্ষতি করেছি আমি, যে আমাকে নিয়ে তুমি ভাবতে চাইছো না?’

‘অামি আপনার সাথে এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তাই অযথা বিরক্ত করবেন না।’

ফারিহার কথা শুনে হতাশ হয় মাহতিম। বার বার সম্পর্কের মাঝ পথে এসেই কেনো ঝড় নামে মাহতিমেরর জীবনে?

___________________________

তমাল রাস্তায় দাড়িয়ে খালি সিএনজি খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে ফিরে যেতে নিতেই হঠাৎ কেউ তমাল কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তমাল বুঝে যায় তিতির ছাড়া আর কেউ মাঝ রাস্তায় এরকম পাগলামী করবে না। তিতিরের কাজে বিরক্ত হয় তমাল। মেয়ে টা এমন কেনো, রাস্তায় হুট করে জড়িয়ে ধরা কিস করা এগুলো কোনো ব্যাপারই না তিতিরের কাছে। তমালের কাছে এগুলো ছ্যা’চ’ড়া’মি ছাড়া কিছুই মনে হয় না। এমন ভাবে তিতির চলাফেরা করে মনে হয়ে ছেলে হতে গিয়ে ভুল বশত মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে।

‘কি হয়েছে বেবি কথা বলছো না কেনো, আমি তোমাকে প্রচুর মিস করি। তার জন্যই তো এতদূর ছুটে চলে এসেছি।’

‘তুমি এরকম পাগলামী কেনো করো তিতির? এরকম ভাবে অচেনা এক জায়গায় একটা মেয়ের একা আসা উচিত নয় তুমি জানো না? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তখন কি করতে!’

‘আরে বেবি কিছু হয়নি তো, আর কে আমার কোন ক্ষতি করবে উল্টো যে আমার সাথে কিছু করতে আসবে তাকে মে*রে ফুতে রেখে আসবো।’

তিতিরের কথা শুনে বিরক্ত হয় তমাল। একটা মেয়ের এরকম ছ্যা’চ’ড়া’র মত কথা বলা উচিত নয়। একটা মেয়েকে লজ্জাবতী হতে হয়। সবাই একটা নম্র ভদ্র মেয়েকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চায়। কিন্তু তিতিরের মধ্যে লজ্জার ল ও নেই।

‘তিতির বিরক্ত লাগছে ছাড়ো আমাকে রাস্তায় সব মানুষ দাড়িয়ে আছে কি ভাবছে তারা! আর রাস্তার ওই পাশে আমার কাজিন দাড়িয়ে আছে। আমাদের একসাথে দেখলে নির্ঘাত মা কে গিয়ে বলবে।’

‘ওহ বেবি তোমার মা কে বললে আরো ভালো। আসো আমার ননদিনীরর সাথে দেখা করে আসি।’

বলেই তিতির তমালের হাত ধরে রাস্তার অপর পাশে চলে আসে।

‘কোথাই তোমার কাজিন?’

‘ওইযে ছেলেটার সাথে দাড়িয়ে আছে। এই ফারু এদিকে আয় তো!’

তমালের কথা শুনে ফারিহা ওদের দিকে তাকায়। তমালের পাশে একটা মেয়েকে দেখে অবাক হয় ফারিহা।

‘মেয়েটা কে ভাইয়া?’

ফারিহার কথা শুনে মাহতিম ও ওদের দিকে তাকায়। তমালের পাশে তিতির কে দেখে অবাক হয়ে যায় মাহতিম।
.
.
‘স্যার আপনি তখন কেনো আমাকে বলেছেন আমি আপনাকে এ্যারেস্ট করতে? আমি তো আপনাকে গ্রেফতার করতে চাইনি।’

‘কিছু দিন ওই মাহতিম ভাবুক যে তার রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে গেছে। দেখি কি কি করতে পারে ওই মাহতিম চৌধুরী।’

‘কিন্তু স্যার আপনি এসব করছেনই বা কেনো? এসব করে আপনার কি লাভ?’

পুলিশের কথার জবাব দেয় না মুরতাসিম। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে যায় মুরতাসিম। নিজ গন্তব্যস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মুরতাসিম।
.
‘বেবি এই ছ্যাকা খোর ছেলেটা এখানে কি করছে?’

তিতিরের কথা শুনে ফারিহা ও তমাল দুজনই অবাক হয়।

‘কি বলছো তিতির ও কেনো ছ্যাকা খোর ছেলে হতে যাবে? ও তো ভালো একটা ছেলে।’

‘আরে বেবি এই সেই ছেলে যে কিনা দিনের পর দিন আমার পিছনে কু*কুরের মত ঘুরেছে। কয়েকদিন আগে তো ওকে আমি ছোট খাটো একটা ধোঁকা দিয়েছি। তাই ভাবলাম মাতাল হয়ে কোথাও পড়ে আছে। কিন্তু ওকে দেখছি নতুন শিকারের পিছনে পড়েছে।’

তিতিরের কথা শুনে আরেক দফা অবাক হয় ফারিহা আর তমাল। আর মাহতিম নিশ্চুপ ভঙ্গিতে একপাশে দাড়িয়ে আছে।

‘আচ্ছাহ আপনি একটা মেয়ে হয়ে কি সব উল্টা পাল্টা ভাষায় কথা বলছেন? আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না? আমাকে শিকার মনে হয় আপনার? নিজে একজন মেয়ে হয়ে কি করে বলতে পারলেন আমি আরেক জনের শিকার? আমি যদি মাহতিমের শিকার হই তাহলে আপনি তমাল ভাই এর কি? মাহতিম কে আপনি ধোঁকা দিয়ে এখন অন্য ছেলের সাথে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাহহ!’

ফারিহার কথা শুনে চুপসে যায় তিতির। আর মাহতিম মুগ্ধ নয়নে ফারিহার তেজি কথা গুলো শুনছে। তিতির ন্যাকা স্বরে তমাল কে বলে,

‘বাবু এই মেয়ে টা এতো বেয়াদ্দব কেনো?’

তমাল তিতির কে ধমকে বলে,

‘একদম চুপ করো তুমি। ফারিহা যা কিছু বলেছে একটুও ভুল বলেনি। পারলে নিজেকে ফারিহার মত স্ট্রং করে গড়ে তুলো। পুরুষের মত পোষাক না পরে একটু মেয়ে দের মত মাঝে মাঝে শাড়ি পরেও নিজেকে আয়নায় দেখবে কেমন লাগে। আর তুমি মাহতিমের সাথে কাজ টা ঠিক করলে না। আগে নিজেকে পরিবর্তন করে তারপর আমার সামনে আসবে, এর আগে তোমাকে যেনো আমার আশে পাশেও না দেখি।’

তমালের কথা শুনে তিতির কিছুটা অপমান বোধ করে। সেই জায়গায় না দাড়িয়ে থেকে তিতির চলে যায়।

‘স্যরি ভাইয়া আমি আসলে মেয়েটাকে এভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি। কিন্তু এই মেয়ে কে কেমন খাঁপ ছাড়া বেপোরোয়া মনে হচ্ছে আমার। একদম সহ্য করতে পাচ্ছি না, নিজে একটা মেয়ে হয়ে কি বাজে ভাবে আমাকে নিয়ে কথা বলেছে।’

তমাল ফারিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

‘তুই কিছু ভুল করিস নি ফারু। তুই উচিত জবাবই দিয়েছিস। কেমন যেনো মেয়েটা একদম সহ্য করতে পারি না ওর এসব উল্টা পাল্টা চলা, কিন্তু আমার পিছনে ও জোঁকের মত পড়ে আছে। এখন একটু হলেও বদলাতে হবে ওকে।’

‘আচ্ছাহ ভাইয়া আমাদের বাড়িতে যাওয়া উচিত।’

‘হু, কিন্তু কোনো রিক্সা, সিএনজি কিছুই খুজে পাচ্ছি না।’

‘তমাল আমার গাড়িতে করেই তোমরা যেতে পারো, যদি তোমাদের কোনো সমস্যা না থাকে।’

‘আরে সমস্যা থাকবে কেনো। তুমি যখন চাইছো তাহলে তোমার গাড়িতে করে যেতেই পারি।’

‘আচ্ছাহ চল তাহলে।’

বলেই তমাল আর মাহতিম গাড়িতে গিয়ে বসে। ফারিহা ও গাড়িতে গিয়ে বসে। মাহতিম গাড়ি স্টার্ট দেয়, গাড়ি তার আপন গতি তে চলতে থাকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

চলবে……

[ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here