#হৃদয়_মাঝারে_২
#পার্ট_৬
#হালিমা_চৌধুরী
‘তোমার ভাই পিয়াস এবং তোমার বাবা-মা আমার লোকের কাছে বন্ধী আছে। বিয়েটা করবে কিনা তা এখন তোমার ব্যাপার। আমাকে বিয়ে করলে তোমার ফ্যামিলির প্রান বাঁচাতে পারবে আর না করলে….’
মুরতাসিম কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফারিহা বলে,
‘আমি বিয়েটা করবো।’
‘ফারিহা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো! এই সাইকো টাকে বিয়ে করলে তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আর এই মুরতাসিম যে সত্য কথা বলছে সেটার কি প্রমাণ আছে ওর কাছে জিঙ্গেস করো!’
মাহতিমের কথা শুনে ফারিহা জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকায় মুরতাসিমের দিকে।
‘এই সুজন তোকে না বলেছি পিয়াস কে কল দেওয়ার জন্য!’
সুজন নামের ছেলেটি মুরতাসিমের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘এইতো কল রিসিভ হয়েছে, নে কথা বল।’
মুরতাসিম ফোন টা নিয়ে ফারিহার দিকে বাড়িয়ে দেয়। ফারিহা ফোন নিয়ে দেখে, দুজন লোক নুরুল সাহেব এবং সালেহা বেগম কে বেঁধে রেখেছে আর পিয়াস নিচে অসচেতন হয়ে পড়ে আছে।
‘বিশ্বাস হয়েছে মিস ওহ স্যরি একটু পর মিসেস মুরতাসিম হবে?’
মুরতাসিমের কথার জবাবে ফারিহা আর কিছু বলে না। তার যে কিছুই করার নেই।
‘কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন!’
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। ফারিহা নিশ্চুপ ভাবে বসে আছে।
‘ফারিহা ওদের জন্য তুমি কেনো নিজের জীবন নরকে ঠেলে দিচ্ছো? ওরা একদিন না একদিন মরেই যাবে তার জন্য তোমার এত বড় স্যাক্রিফাইস করাটা উচিত নয়।’
‘চুপ করুন, যারা আমাকে গত ১৯ বছর ধরে লালন পালন করেছে তাদের জন্য এই সামান্য স্যাক্রিফাইস কেনো মরে যেতে বললেও মরে যাবো। তাই আমার জীবনের সিদ্বান্ত আমি কিভাবে নিবো সেটা আপনাকে শিখিয়ে দিতে হবে না!’
ফারিহার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মাহতিম। যেখানে ফারিহা বিয়েটা করতে রাজি আছে সেখানে মাহতিমেরর বলার কিছু নেই। ভেবেই মাহতিম কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।
.
তমাল বাহিরে বের হয়ে আশে পাশে ফারিহা কে খুজছে। কিন্তু কোথাও ফারিহার দেখা পাচ্ছে না। তাই উপায় খুজে না পেয়ে তমাল ফোন বের করে ফারিহার একটা ছবি বের করে আশে পাশের লোকজন কে দেখাচ্ছে। কিন্তু কোনো লোক ফারিহা কে দেখেনি। শেষে একটা লোক বলেছে ফারিহা কে পাশের পার্ক টাতে দেখেছে লোকটি। তাই তমাল আর দেরি না করে সেই পার্কে চলে যায়। পার্কে এসে তন্নতন্ন করে খুজেও তমাল ফারিহা কে খুজে পায় না। ফারিহার পিক বের করে মাহতিম আবার পার্কের লোক দের দেখাচ্ছে। শেষে একটা ছেলের সামনে ফারিহার পিক টি বাড়িয়ে দেয় তমাল। ছেলেটি পার্কের একপাশে ঘাসের উপর বসে আছে। ছেলেটির চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। হয়তো প্রিয় কিছু হারানোর শোকে এমন অবস্থা হয়েছে ছেলেটির। তমাল সেসব না ভেবে ছেলেটিকে বললো,
‘এই মেয়েটি কে কোথাও দেখেছেন?’
মাহতিম ফোনের স্কিনে থাকা ফারিহার পিক দেখে আঁৎকে উঠে।
‘কেনো ফারিহা আপনার কি হয়?’
‘জ্বী ও আমার আন্টির মেয়ে, ওকে দেখে থাকলে একটু বলুন প্লিজ ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘ফারিহা কে ওই মুরতাসিম জোর করে বিয়ে করছে। মুরতাসিম ফারিহার বাবা মাকে আঁটকে রেখেছে তাই ও বিয়ে টা করতে রাজি হয়েছে।’
‘মানে কি বলছেন আপনি! মুরতাসিম কেনো ফারিহা কে জোর করে বিয়ে করতে যাবে আর কেনোই বা ওর বাবা মাকে আঁটকে রাখবে!’
‘আপনার বিশ্বাস না হলে আমার সাথে কাজি অফিসে আসেন। এখনো মনে হয় ফারিহা রা কাজি অফিসে আছে।’
‘কিন্তু আপনি ফারিহা কে চিনেন কিভাবে?’
‘সেগুলো পরে বলা যাবে, আগে আপনি আমার সাথে আসুন।’
বলেই মাহতিম হাঁটা শুরু করলো, তমাল নিরুপায় হয়ে যাচ্ছে মাহতিমের সাথে। মুরতাসিম এমন কাজ করেছে সেটা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তমালের। তারপরে ও তার বোন কে খোঁজার জন্য তাকে মাহতিমেরর সাথে যেতে হচ্ছে!
.
ফারিহা আর মুরতাসিমেরর বিবাহ সম্পূর্ন হয়েছে। মুরতাসিম কাজির সাথে কথা বলছে। আর ফারিহা এক কোণে দাড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতি তে ফারিহা কাঁদতে ভুলে গেছে। এক রকম স্টাচুর মত দাড়িয়ে আছে ফারিহা।
‘চলো মিসেস মুরতাসিম।’
‘কোথাই যাবো?’
‘সেটা তোমাকে না ভাবলেও হবে।’
বলেই মুরতাসিম ফারিহা কে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে এলো। বাহিরে বের হয়ে এসে মুরতাসিম তমালের মুখোমুখি হয়। তমাল ফারিহা কে মুরতাসিমের পাশ থেকে টেনে নিজের পাশে দাড় করায়।
‘এসবের মানে কি ফারু?’
তমালের কথা শুনে ফারিহা কেঁদে দেয়। তমাল ফারিহার কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
‘এই ফারু কি হয়েছে আমাকে বল না!’
‘পিয়াস ভাইয়া আ..আর বাবা মাকে আঁটকে রেখেছে।’
বলেই ফারিহা আবার কেঁদে দেয়। তমাল মুরতাসিমেরর শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
‘এসবের মানে কি মুরতাসিম? কি করেছো তুমি আঙ্কেল আন্টি আর পিয়াসের সাথে।’
মুরতাসিম তমালের হাত থেকে নিজের শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
‘ভালোবাসার মানুষ কে আপন করে পাওয়ার জন্য এক প্রেমিকের কিছুটা পাগলামির নমূনা এগুলো তমাল। ভালোবাসার মানুষের জন্য এই মুরতাসিম খু*ন করতেও দ্বিধা করেনি। তাহলে এই সামান্য কি’ড’ন্যাপ টা করতে কোনো আমি দ্বিধাবোধ করবো!’
‘কিহ! খু*ন করেছো তুমি! তোমাকে আমি পুলিশে দিবো।’
বলেই তমাল পুলিশের কাছে ফোন দেয়।
‘কি প্রমাণ আছে তোমাদের কাছে? আর পুলিশ আমাকে এ্যারেস্ট করলেও বেশিদিন আঁটকে রাখতে পারবে না।’
মাহতিম নিজের ফোন মুরতাসিমেরর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ “ভালোবাসার মানুষ কে আপন করে পাওয়ার জন্য এক প্রেমিকের কিছুটা পাগলামির নমূনা এগুলো তমাল। ভালোবাসার মানুষের জন্য এই মুরতাসিম খু*ন করতেও দ্বিধা করেনি। তাহলে এই সামান্য কি’ড’ন্যাপ টা করতে কোনো আমি দ্বিধাবোধ করবো!’ ” মিস্টার মুরতাসিম আপনার এই কথা গুলো সযত্নে এই মোবাইলে রেকর্ড করা আছে। আশা করি আপনাকে এ্যারেস্ট করার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।’
বলেই অট্টহাসিতে মেতে উঠে মাহতিম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মুরতাসিম মাহতিমের দিকে। এরমধ্যেই পুলিশ এসে হাজির। মাহতিম নিজের ফোনে রেকর্ড করা কথা গুলো পুলিশ কে শুনায়।
‘মিস্টার মুরতাসিম আপনার কি আর কিছু বলার আছে?’
পুলিশের কথা শুনে মুরতাসিম তাচ্ছিল্য হাসি হাসে। তারপর বলে,
‘ভালোবাসার কাছে আপনাদের এসব আইন হার মানবে আমি বলে দিলাম। এ্যারেস্ট করুন আমাকে দেখবো কতদিন আমাকে আঁটকে রাখতে পারেন।’
মুরতাসিমের কথা শুনে পুলিশ তাকে এ্যারেস্ট করে। মুরতাসিম কে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় ও ফারিহার কানে কানে বলে,
‘খুব তাড়াতাড়িই দেখা হবে, সো তোমার ফ্যামিলির লোকজন কে বলবে এই মুরতাসিমেরর রত্ন টাকে যত্ন করে রাখতে। যেনো কারো কুনজর না লাগে। আর একটা কথা মনে রাখবে তুমি কিন্তু এখন আর মিস.ফারিহা নও মিসেস মুরতাসিম, সো উল্টাপাল্টা কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।’
বলেই মুরতাসিম পুলিশের সাথে চলে যায়। তমাল আর মাহতিমের মধ্যে ইতিমধ্যে বন্ধত্ব হয়ে গেছে। তা দেখে বিরক্ত হয় ফারিহা। আজ যা কিছু হয়েছে তার কিছু অংশ মাহতিমেরর জন্য তৈরি হয়েছে বলে মনে করে ফারিহা।
‘থ্যাংক ইউ মাহতিম, তোমার জন্য আজ ফারিহা কে খুঁজে পেয়েছি আমি। আর তুমি ফারিহা কে কিভাবে চিনো সেটা তো বললে না!’
‘ওহ স্যরি ভুলেই গেছি। যার সাথে ফারিহার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে সে ব্যাক্তিই আমি।’
‘বিয়ে ভেঙ্গে গেছে তারপরও ফারিহা কে বাঁচাতে ছুটে চলে এসেছো?’
তমালের কথা শুনে হাসে মাহতিম। তার পিছনের কারন টা যে তিতির সেটা হয়তো কেউ কোনো দিন জানতেই পারবে না!
চলবে……
[দুদিন গল্প দিতে পারিনি সেই জন্য সবাই ক্ষমা করবেন। আসলে গল্প দেওয়ার মত পরিস্থিতি ছিলো না আমার। তাই সবাই ক্ষমা করবেন। আমি ইচ্ছে করে আপনাদের অপেক্ষায় রাখিনি!]