#হৃদয়_মাঝারে_২
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_৫
মুরতাসিমের হাসির শব্দ শুনে কপাল কুচকে যায় মাহতিমের।
‘তোর হবু বউ কি করে হয় ফারিহা? ওর সাথে তো তোর বিয়েই হয়নি! আর বিয়ে হবেই বা কি করে? ওর সাথে তো আমিই তোর বিয়ে ভেঙে দিয়েছি।’
মুরতাসিমের কথা শুনে মাহতিম সজোরে একটা চড় মারে মুরতাসিমেরর গালে।
‘ছিঃহহ, তোকে আমার ভাই বলতেই লজ্জা লাগছে। তোর সাথে আমাদের সম্পর্ক টা খারাপ তাই বলে তুই ফারিহা কে ইউস করেছিস এই জন্য!’
মুরতাসিমেরর চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। রাগে থরথর করে কাঁপছে মুরতাসিম। আর ফারিহা নিরব দর্শকের মত শুধু চেয়ে আছে। মুরতাসিম মাহতিমের শার্টের কলার ধরে বলে,
‘কাজ টা তুই ঠিক করলি না। এই মুরতাসিম কে তুই চড় দিয়েছিস এর ফল তোকে ভোগ করতেই হবে। আর রইলো ফারিহার কথা, ওকে আমি ভালোবাসি আর ওর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে তার অবস্থা আমি কি করবো নিজেও জানি না!’
বলেই মুরতাসিম চলে যেতে নেয়, কিন্তু এর আগেই মাহতিম ওকে একটা ঘু’ষি দেয়। মুরতাসিম থেমে থাকেনি সেও মাহতিম কে মারতে লাগলো। তা দেখে ফারিহা দৌড়ে গিয়ে মাহতিম কে ধরে ফেলে। মুরতাসিম মাহতিম কে লা’থি দিয়েছে তাই ও নিচে পড়ে আছে। ফারিহা মাহতিম কে ধরে উঠিয়ে দেয়। তা দেখে মুরতাসিম রাগে থরথর করে কাঁপছে।
‘মাহতিমের জন্য তোর অনেক ভালোবাসা তাই না!’
বলেই মুরতাসিম অঝোরে মাহতিম কে মারতে থাকে।
‘আর ইউ মেড? আপনার ভাই হয় উনি আর আপনি উনাকে মারছেন কেনো?’
‘কে আমার ভাই? এই স্বার্থপর টা আমার ভাই?’
মাহতিম ফারিহার হাত ধরে বলে,
‘ফারিহা চলো এখান থেকে। এখানে থাকলে এই সাইকো টা নিশ্চিত আমাদের মেরে ফেলবে।’
ফারিহা দুই ভাইয়ের কারো কথাই বুঝছেনা। দুই ভাই এর মধ্যে কোনো মিল নেই এটা ফারিহা খুব ভালো করেই বুঝেছে। ফারিহাও মাহতিমেরর সাথে পার্ক থেকে চলে আসতে নেয় কিন্তু মুরতাসিম ফারিহার হাত ধরে ফেলে। ফারিহা সজোরে একটা চড় মারে মুরতাসিমের গালে।
‘ আমাকে বারবার টার্চ করার সাহস হয় কি করে আপনার?’
ফারিহার করা কাজে ফারিহা নিজেই হতভম্ব হয়ে যায়। মুরতাসিম ফারিহার হাত ধরে টানতে টানতে পার্ক থেকে বের করে আনে। মাহতিম ও ফারিহাদের পিছন পিছন আসে। গাড়ির দরজা খুলে ফারিহা কে গাড়ির ভেতর ডুকতে বলে মুরতাসিম। ফারিহা গাড়ির ভিতর না ডুকে বাহিরে যেতে চায়। কিন্তু মুরতাসিম ফারিহা কে কোলে তুলে গাড়ির ভিতরে ডুকিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে। তারপর গাড়ির দরজা লক করে গাড়ি স্টার্ট দেয় মুরতাসিম। আর মাহতিম দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে শুধু।
.
.
‘হেই তমাল বেবিইই।’
বলেই তিতির তমাল নামের ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে। তমাল ও তিতির কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।
‘তোমার মুরগি টার কি খবর তিতি?’
তমালের কথা শুনে তিতির হেসে দেয়।
‘ওটা মনে হয় এখন কোথাও মাতাল হয়ে আছে। এমন ভাবে নাচিয়েছি ওই মাহতিম চৌধুরী কে যে সে ভেবেছে আমি সত্যিই ওকে লাভ করি।’
বলেই অট্টহাসিতে মেতে ওঠে তিতির। হঠাৎ তমালের ফোন টা বেঁজে ওঠে।
‘আচ্ছা তিতি পাখি আমি একটু কথা বলে আসছি মম ফোন দিয়েছে।’
বলেই তমাল ফোন হাতে নিয়ে চলে যায়।
‘তমাল ফারু এসেছে বাসায় আর তুই কোথাই থাকিস?’
‘ফারু এসেছে ওকে ভালো ভাবে আদর যত্ন করে বিদায় করে দাও আমাকে বলছো কেনো?’
‘তোকে বলছি কেনো মানে? তুই জানিস না আমি ফারু কে তোর বউ হিসেবে দেখতে চাই!’
তমাল সাইমা বেগমের আর কোনো কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয়। তারপর আবার তিতিরের কাছে চলে আসে।
‘বেবি কি বলেছে তোমার মম?’
‘তেমন কিছুই বলেনি বাবু। আমাকে এখন বাড়িতে যেতে হবে।’
বলেই তিতিরের কপালে একটা চু’মু দিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে তমাল।
.
মুরতাসিম একটা কাজি অফিসের সামনে এসে গাড়ি থামায়। তারপর গাড়ি থেকে নেমে ফারিহা কে নামতে বলে।
‘নেমে এসো গাড়ি থেকে।’
‘আপনি এখানে এনেছেন কেনো আমাকে?’
‘জানিস না এখানে মানুষ কেনো আসে?’
মুরতাসিমেরর কথা শুনে ফারিহার মনে অজানা একটা ভয় জেঁকে বসে।
‘ম..মানে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?’
মুরতাসিম ফারিহার কোনো কথার জবাব না দিয়ে ফারিহা কে টেনে কাজি অফিসের ভেতর নিয়ে যায়।
.
মাহতিম ফারিহাদের গাড়ি ফলো করতে করতে কাজি অফিসের সামনে এসে দাড়ায়। মাহতিম দেখে মুরতাসিমেরর গাড়ি কাজি অফিসের সামনেই। তাই মাহতিম আর কোনো কিছু না ভেবেই কাজি অফিসের মধ্যে ডুকে যায়। গিয়ে দেখে ফারিহা একটা চেয়ারে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আর মুরতাসিম আর দুইটা ছেলে কাজির সাথে কথা বলছে। মাহতিম দৌড়ে ফারিহার কাছে চলে আসে।
‘ফারিহা তুমি এখানে কেনো এসেছো? এই মুরতাসিম অনেক ডেন্জারাস ছেলে ও তোমাকে মেরে ফেললেও কেউ টের পাবে না।’
‘আমি কি আর এখানে শখের বশে এসেছি! আপনার ভাই জোর করে এনেছে আমাকে। এখানে থেকে কিভাবে পালাবো নেই টেনশনই করেছি এতক্ষন।’
‘ফারিহা মুরতাসিম এখন কাজিরর সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত এখনই পালাবার মক্ষম সময়।’
বলেই ফারিহার কোনো কথার অপেক্ষায় না থেকে মাহতিম ফারিহা কে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে। তারপর ফারিহা কে গাড়িতে উঠতে বলে মাহতিম গাড়িতে গিয়ে বসে। ফারিহা গাড়ির দরজা খুলে ডুকার আগেই মুরতাসিম ওর হাত ধরে ফেলে।
‘কোথাই পালাচ্ছিস তুই? তুই কি আমাকে আর সব স্টুপিট ছেলেদের মত কেয়ারলেস মনে করেছিস?’
‘আমার হাত ছাড়ুন বলছি।’
‘ না ছাড়লে কি করবি তুই? চিৎকার দিবি? নাকি এই স্বার্থপর টা তোকে বাঁচাবে?’
মুরতাসিম কে আসতে দেখে মাহতিম গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।
‘দেখ মুরতাসিম ভালো ভাবে বলছি ফারিহা কে ছেড়ে দে।’
‘ফারিহা কে ছাড়বো না একেবারে নিজের সাথে বেঁধে রাখবো।’
বলেই বাঁকা হাসে মুরতাসিম। তারপর ফারিহা কে টেনে কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে যায় মুরতাসিম। মাহতিম ও ওদের পিছন পিছন কাজি অফিসে যায়।
‘কাজি সাহেব সব রেডি তো?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ সব কিছু তৈরি আছে।’
‘তাহলে শুরু করেন বিয়ে পড়ানো।’
‘খবরদার বলছি আপনি বিয়ে পড়াবেন না। যেখানে পাত্রী রাজি না সেখানে কিভাবে আপনি বিয়ে সম্পূর্ণ করবেন?’
ফারিহার কথা শুনে বাঁকা হাসে মুরতাসিম। রাজি হয়ে যাবে তো জান। শুধু সময়ের অপেক্ষায় আমি।’
‘মানে?’
‘মানে টা খুব সহজ। এই সুজন পিয়াস কে ফোন দে তো।’
সুজন নামের ছেলেটা পিয়াস কে ফোন দিতে ব্যাস্ত হয়ে যায়।
‘ভাইয়াকে আপনি ছিনলেন কি করে?’
ফারিহার কথার কোনো জবাব দেয় না মুরতাসিম।
.
তমাল বাসায় আসতেই সাইমা বেগম তার পিছনে পড়েছে। কারন ফারিহা কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। সাইমা বেগমের কথা শুনে বিরক্ত হয় তমাল।
‘ফারিহা কে তুমি বাহিরে যেতে দিয়েছো কেনো সেটা বলো!’
‘ ও বলেছে ও বাহিরে ঘুরে দেখবে তাই আমি আর কিছু বলিনি। তুই একটু আশেপাশে দেখনা মেয়েটা কোথায় গেছে।’
সাইমা বেগমের কথা শুনে বিরক্ত হয় তমাল। ফোন নিয়ে ফারিহার নাম্বারে কল দেয় তমাল। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয় তমালের ফোন।
‘এই তোর কি কোনো কান্ডব জ্ঞান নেই? একা একা বাড়ি থেকে বের হয়েছিস কেনো?’
‘ভাইয়া ওই মুরতাসিম আমাকে আঁটকে….’
আর কিছু বলার আগেই কল কেটে যায়। তমাল কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বললেও কোনো কাজ হলো না।
‘কি হয়েছে তমাল? ফারিহা ঠিক আছে তো?’
‘জানি না মা, ও মুরতাসিম কে নিয়ে কিছু বলছিলো তার আগেই কল কেটে যায়।’
বলেই তমাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ফারিহা কে খুজার উদ্দেশ্যে।
চলবে…