হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব ১৭

0
199

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

আজ প্রিয়তাদের শেষ পরীক্ষা। সাদনান বউ আর বোন কে নিয়ে যাবে। চার দিনের মতো ঢাকা ছিল। প্রিয়তার দুটা পরীক্ষা অব্দি বোন বউকে কলেজ নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যেতো। পরীক্ষা শেষ রাহান ওদের বাসায় পৌঁছে দিতো।
আর সাদনান প্রতি দিন ঠিক আবার রাতে বাড়ি চলে আসতো।
কিন্তু তৃতীয় পরীক্ষার দিন হঠাৎ সাদনানের একটা জরুরি ডিলের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হ’য়ে ছিল।
ওখানে তিন দিন থেকে কাল ঢাকা থেকে এক্কেবারে শশুর বাড়ি চলে এসছিল।
উপর উপর তিন টা পরীক্ষা থাকায় আজ প্রিয়তার পরীক্ষা শেষ হতে চলল।

———————

সকাল নয় টার বেশি সময় বাজে এখন। প্রিয়তা রেডি হয়ে নিয়েছে।
শফিক সওদাগর হোটেল চলে গিয়েছে সকালের দিকে।
বাড়িতে কেউ নেই। মফিজ ঢাকা গিয়েছে কিছু দরকার আছে ওনার সেই জন্য। সুফিয়া বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভিতরে থেকে প্রিয়তা বেড়িয়ে এলো।
সাদনান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন কিছু করছে।
প্রিয়তা কে দেখে ফোন পকেটে রেখে গাড়ির দরজা খুলে দিলো।প্রিয়তা মুচকি হাসলো। এখন সিটে বসতে দিচ্ছে গাড়ি স্টাট করার পর কি হয় এখন সেটা দেখা যাক।
প্রিয়তা বসে যেতে সাদনানও ঘুরে গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে পড়লো।
মিনিটের মধ্যে গাড়ি স্টাট করে দিয়ে মেয়েটাকে এক টানে
নিজের কোলের উপর নিয়ে এলো।মেয়ে টা চমকালো না হকচকিয়ে উঠলো না।বরং মুচকি হাসলো। এটা আজ প্রথম নয়।
গত দিন গুলোর পরীক্ষায় সময় যখন সাদনান ছিল তখন এমন করছে। প্রথম দিন অবশ্য মেয়ে টা বেশ ইতস্তত বোধ করছিলো।সাথে লজ্জা। তবে আস্তে আস্তে এখন দুটোর কোনো টাই করে না।
প্রিয়তার এসব ভাবনার মাঝে সাদনান ওকে ওর সিটে বসিয়ে দিলো। গাড়ি টা ততক্ষণে থামিয়ে নিয়েছে। সারা দাঁড়িয়ে।
সারা উঠতেই আবার গাড়ি স্টাট করলো।
তার টুকটাক কথা বলতে বলতে ওরা কলেজ পৌঁছে গেলো।
গাড়ি থামাতেই প্রিয়তা আর সারা দুজনেই নেমে পড়ল

-“মাথা ঠান্ডা রেখে সব প্রশ্নের উত্তর করবে। ঠিক আছে? ”
গাড়ি থেকে নেমে সার্ট এর হাতা বাজ করে কনুইয় পযন্ত নিতে নিতে বলল সাদনান।

-“আচ্ছা। ”
সারা বলে।

কিন্তু প্রিয়তা কিছু বলছে না। বলবে কি সে তো পাশের মেয়ে গুলোর দিকে ছলছল চোখে চেয়ে।
চেয়ে থাকবে না? ওরা যে তার সুদর্শন স্বামীর দিকে তাকিয়ে সবাই চোখ দিয়ে গিলছে। ওরা ক্যান ওনার দিকে তাকাবে? ওনি ক্যান এতো সুন্দর? কে বলেছ ওনাকে এতো সুন্দর হতে?

সাদনান প্রিয়তা কে কিছু বলতে না দেখে মেয়ে টার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।
সাদনান দেখলো কত গুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে।
সাদনান এর বেশি কিছু পর্যবেক্ষণ করতে মন চাইলো না।
কারণ এটা নতুন কিছু নয়।এটা ওর সাথে রোজ হয়।

সাদনান আস্তে করে হেঁটে গিয়ে প্রিয়তার সামনে দাঁড়ায়।
ততক্ষণে বেচারি প্রিয়তা কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা।

সাদনান আলতো করে নিজের দানবী হাত জোড়া মেয়েটার গালে রাখল।
নিজের সিগারেটে পোড়া গোলাপি কালচে অধর জোড়া ছুঁয়ে দিল প্রিয়তার কপালে।
এসব দেখে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলোর চোখ বড় বড় করে তাকায়।তার পর সব গুলো আস্তে আস্তে সেখান থেকে কেটে পরে।
সাদনান অধর জোড়া ছুঁয়ে দিতেই মেয়েটা পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করতে টুপ করে ডান চোখ হতে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।

-” শুনো মেয়ে, তুমি আমার অনেক শখের। আমি শুধু তোমার আর তুমি শুধু আমার হয়ে থেকে যেয়েও। ( বুকের পাশে হাত টা রেখে) আমরা এইখানের প্রথম নারী এবং শেষ নারী হয়ে তুমিই থাকবে মেয়ে।”

প্রিয়তা কান্না চোখে প্রশান্তির হাসি হাসলো। এই লোকটা ওকে ভালোবাসে আর ও কি সব ভাবছিল।

কথা টা বলেই সাদনান বোন কে কিছু ইশারা করলো।
সারা এগিয়ে এসে প্রিয়তার হাত ধরে দু’জন গেইট দিয়ে কলেজের ভিতর চলে গেলো।
প্রিয়তা যেনো সাদনানের বলা কথা গুলো এখনো কানে বাজছে।
প্রিয়তা বেশ খুশি লাগছে। মন টাও সাদনানের কথায় ভালো হয়েছে। তাই বেশি কিছু না ভেবে মন খারাপ না করে পরীক্ষার হলে চলে গেলো সারার সঙ্গে।

সাদনান গাড়িতে বসে কাউকে কল দিলো।
এক বার বাজার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ হলো

-“হ্যাঁ, বাবা বাড়িতেই থাকবে আজ। তুই আন্টি-আংকেল নিয়ে বেরিয়ে পর। আমি সময় মতো পৌঁছে যাবে।”
ওপাশের ব্যাক্তি টাকে কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান ফোনটা কেটে দিলো।
তার পর এক মিনিট সময় ব্যায় না করেই গাড়ি টা স্টাট দিয়ে ঘুরিয়ে নিজ বাড়ির দিকে সাই সাই করে চলে গেলো।

———————–

-“ভাই -ভাবি আপনারা চাইলে আমরা আজ আংটি টা পরিয়ে যেতে চাই।”

রাহানের বাবার কথায় সালেহা বেগম কিছু বলবে তার আগেই আজ্জম মির্জা বলল

-“আমি চাইছিলাম কি আমার আম্মা আসবার পর ওনার সঙ্গে কথা বলে না হয় আপনাদের জানাই।
ওনার সঙ্গে কথা বলে আমি সন্ধা আপনাদের খবর দিয়ে দেবো?”
সাদনান যেনো তার বাবার কথায় বেশ বিরক্ত হলো। ওতো জানে ওর বোন রাজি। তাহলে বাবা ক্যান আবার সময় চাইছে? হুম মেয়ে রাজি কিন্তু তার বাবা তো আর জানে না।বিরক্ত হওয়া যাবে না। সামলাতে হবে।
রাহান অসহায় চোখে চাইলো সাদনানের পানে। সাদনান চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলো।

-“বাবা আমার মনে হয় না বনু তোমার উপর দিয়ে কিছু বলবে।”

ছেলের এমন কথায় আজ্জম মির্জা কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। ছেলে যা বলছে তা ঠিক
কিন্তু তবু্ও একটা “কিন্তু” থেকেই যাচ্ছে।
মেয়ের বাবা তো আবার মেয়ের বয়স কম।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি বললেন

-“এখন বারোটা বাজে। পরীক্ষা এক টার মধ্যেই শেষ। আপনারা অপেক্ষা করুন। আমার আম্মা আসলে না হয় ওর সাথে কথা বলে নিবো।”

-“আচ্ছা ভাইজান।”
আজ্জম মির্জার কথায় রফিক আহমেদ বললেন।

রাহান বেশ কিছু কটু কথা মনে মনে আজ্জম মির্জা কে বলেও নিলেন। বেটা যে ভয় পাচ্ছে। যদি মেয়ে রাজি না হয়? কিন্তু ওনি তো আর জানে না ওনার মেয়ে যে এই ছেলে কে ভালোবাসে।যদি পাত্র কে জানতে পারে তবে এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে যাবে বিয়ে করতে। এসব ভেবে রাহান মনে মনে হাসলো।

আসলে আজ্জম আর সালেহা বেগম রাহান আর সারার বিষয় কিছু জানে না। রাহানের বাবা মা জানে তবে সাদনান বলেছে রাহান আর সারা যে আগে থেকে সম্পর্ক আছে সে টা যেনো না বলে।রাহানও ওর বাবা মাকে সুন্দর করে এই বিষয়ে প্রেকটিস করিয়ে এনেছে। সাধারণ ভাবে যেনো কথা বলে। মানি তাদের মেয়ে ভালো লেগেছে তাই প্রস্তাব এনেছে।

——————–

-“আচ্ছা আমি ক্যান তোর সাথে তোদের বাড়িতে যাচ্ছি? ”

-“বইন থুক্কু ভাবি আপনি যেখানে আমিও সেই খানে।তো আমি কি করে জানবো? আপনি বরং আপনার জামাইরে কাছে জিজ্ঞেস করেন।”

-“না মানি আমি সে রকম কিছু বলতে চাইনি। কিছু কি হয়েছে? মানে তুই কিছু জানিস? ”

-“না। বাড়ির ভিতরে চল সব জানা জাব,,,,

-“ফুফি?”
সারাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলে উঠলো প্রিয়তা। ওরা পরীক্ষা শেষ সাদনান ওদের আনতে গিয়েছে। কিন্তু প্রিয়তাকেও আজ মির্জা বাড়ি নিয়ে এসছে সে জন্যই দুজনেই বেশ চিন্তা আছে।কিন্তু সুফিয়া বেগম কে দেখে প্রিয়তা বেশ অবাক হয়েছে।

-“তোরা এসেছিস?যা ফ্রেশ হয়ে নে। প্রিয়তা তুই ফুফির সাথে আয়।”
বলেই তিনি আগে আগে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু প্রিয়তা পা বাড়াবে তার আগেই সাদনানের মা রান্না ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে কফি মগ হাতে ছুটে এলো।

-“মা তুই এটা নিয়ে সাদনান কে দিয়ে আয়।আর তুইও ওখানেই ফ্রেশ হয়ে নিস।”
কথা টা বলেই তিনি মগ টা প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিলো।

-“আর তুমি এসো আপা আমার সঙ্গে। কত কাজ বাকি।?

বলতে বলতে সুফিয়া বেগম কে নিয়ে চলে গেলো।

সারা এতো সব কথার মাঝে বেচারি নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করছে।
কিন্তু সেটাও হলো না গেস্ট রুম থেকে রাহানের বাবা মাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে। সারার মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন আর সে টা হলো “ওনারা আমাদের বাড়িতে কি করছে?”
হঠাৎ সারার বাবা এসে বলল
-” আম্মা আপনি ফ্রেশ হয়ে আমার ঘরে আসবেন একবার?”

-“আচ্ছা বাবা।”
বলেই সারা উপরে নিজের কক্ষে চলে গেলো।
আজ্জম প্রিয়তার সাথে কুশল বিনিময় করে। তার পর প্রিয়তা উপরে সাদনানের কক্ষের দিকে আগাতে লাগলো।

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here