#হৃদয়ে_মেঘগলি
|১২|
লাবিবা ওয়াহিদ
স্কুলে এসে নীল এক অপ্রিয় কথা শুনতে পায়। সেটি হচ্ছে আনোশী চাকরি ছেড়ে দিয়েছে স্কুলের। যা শুনে নীল খুব আহত হল। আশেপাশে শূন্য নজর ফেলে তপ্তশ্বাস ফেলল। নীল খুব অসহায় কন্ঠে বিড়বিড়াল,
–“আমার জন্যেই কী স্কুল ছাড়লে আনোশী? এমন জানলে যে কখনোই তোমাকে বিরক্ত করতাম না!”
নীল হাতের কার্ডটার দিকে তাকাল। নীলের বিয়ের কার্ড এটা। বেশ কয়েকটা কার্ড এনেছিল সে। শেষ কপিটা আনোশীর জন্যে ছিল। তার করা ভুলের ক্ষমাটাও চাইতে পারল না। আজীবন আনোশীর কাছে অদৃশ্য অপরাধী হয়ে থাকতে হবে।
————
এক সাজানো, গোছানো রুমের দরজা মুখে দাঁড়িয়ে আছে আনোশী। পুরো ঘরটিতে চোখ বুলিয়ে নিল। একবার নয়, বারংবার। চোখে শান্তি মিলছে না। একবার চোখ বুলানো শেষ হলেও তৃপ্তি পাচ্ছে না। তাই আবার দেখছে। এভাবে বারবার। ঘরটা ছিমছাম। সেরকম কোনো ফার্নিচার নেই। একটা সাদা-মাটা নকশা ছাড়া খাট। খাটের চারদিকে চারটা মোটা এবং লম্বা কাঠ দেওয়া। একটা আলনা আর একটা আলমারি। আলমারির পাশেই একটা মোটা বড়োসড়ো টিনের বাক্স। এটাতে আনোশীর বাবার কাগজপত্র থাকত। আনোশী এখন তার বাবার বাড়ি। ঢাকা থেকে সুদূর গাজীপুরে। স্কুল ছেড়ে এখানেই এসেছে। এবং এখানেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অদূর ঢাকায় থেকে থেকে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। অপ্রিয় সত্য শুনেও ঢাকা মন টিকছে না। এজন্য বিষাদময় শহর ছেড়ে এক মুঠো শান্তির খোঁজে বাবার বাড়ি এসেছে। বাবার রুমের দেয়ালের রঙটাও ছাঁই রঙের। ছাঁই শুনতেই কেমন লাগে। কিন্তু সাদা-মাটা রুমটাকে এই রঙে-ই আকর্ষণীয় লাগছে। আনোশীর বাবা বড্ড সখ করে রুমে এই রঙ করেছিল।
পশ্চিমের জানালাটা খোলা। যেন রুমটায় কেউ থাকত। তবে সেসব আপাতত ভাবতে ইচ্ছে করছে না। স্মৃতিতে ভাসছে সোনালী দিনগুলো। এজন্য একপ্রকার ঘোরের মধ্যেই আনোশী টিনের বাক্সটির দিকে এগিয়ে গেল। বাক্সটিতে কোনো তালা নেই। অবশ্য ভেতরেও মূল্যবান কিছু নেই যে তালা দেওয়া লাগবে। যতদিন টিনের বাক্সটির মালিক বেঁচে ছিলো ততদিন মালিকের প্রয়োজনীয় বাক্স ছিল। এখন মালিক নেই, কারো খোলারও প্রয়োজন নেই।
তবে আনোশী বাক্সটির সামনে বসে সেটি খুলল। অনেকদিন পর খোলায় কিছুটা শব্দ হলো। আনোশী ভেতরে তাকালে দেখতে পেল বিভিন্ন হিসাবের বই-পত্র, কাগজপত্র আর হাদিসের কিছু বই। তবে আনোশী এগুলো ছাড়াও অন্য একটা জিনিস খুঁজছে। বাবার ডায়েরী। ছোটো থেকে দেখতো বাবার হাতে সবসময় ডায়েরী থাকতো। আনোশী কতবার ডায়েরীটা দেখতে চেয়েছিল কিন্তু বাবা তাকে নিষেধ করে হাসি-মুখেই বলতো,
–“না মা। এখন ডায়েরী দেখার বয়স হয়নি। যেদিন হবে সেদিন আমি নিজেই ডায়েরীটা তোমার হাতে তুলে দিবো!”
অথচ দেখো, আজ ডায়েরী পড়তে দেওয়ার মানুষটি নেই। কতগুলো দিন পেরিয়ে গেল তার ডায়েরীতে কেউ শব্দ বুনে না, লেখাগুলো স্পর্শ করে না। তাশুতির অবশ্য ডায়েরী নিয়ে সেরকম কোনো মাথা ব্যথা কোনোদিন ছিল না। তবে আনোশীর কৌতুহল খুব বেশি ছিল। সেসব কথা মনে করে আনোশীর ভেতরটা কেমন মুঁচড়ে উঠলো। এখনো ভাবতে কষ্ট হচ্ছে এই বাবার আপন মেয়ে আনোশী নয়। আনোশী চোয়াল শক্ত করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
কাগজপত্র হাত দিয়ে সরিয়ে খোঁজা-খুঁজি করে অবশেষে ডায়েরীটা হাতে পেল আনোশী। বেশ কিছু বই-খাতার নিচে ছিল ডায়েরীটা। তাই টিনের বাক্স খুললে সহজে চোখে দেখা যেত না। যদি কোনো ব্যক্তি খুঁজে তবেই পাবে। তবে কতজনের এই ডায়েরী সম্পর্কে ধারণা আছে? কারো-ই নেই। এজন্যই তো কত অবহেলায় পড়ে ছিল সেটা। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে পরম আদরে ডায়েরীর মলাটে হাত বুলালো। বাবার একজন বন্ধু ছিলো যে সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতো। তার-ই দেওয়া এই ডায়েরীটা। মলাটের এক কোণে লেখা ১৯৯৮। খুব পুরাতন ডায়েরী। আনোশী মনে সাহস সঞ্চার করে ডায়েরী খুলতেই দেখলো কলম দিয়ে আঁকা সাদা-মাটা একটা নবজাতক শিশুর ছবি। ছবিটা দেখে আনোশী প্রথমে চিনতে না পারলেও ছবির নিচে থাকা লেখাটুকু পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। এটা যে আনোশী। ছবিটার নিচে ছোটো ছোটো অক্ষরে লেখা,
–“এই চাঁদের বাবা হলাম। চাঁদটাকে অন্ধকারে কুড়িয়ে পেয়েছি। আমার ঘরে তুলেছি। জমিনের চাঁদ আমার ঘরে, আমার বুকে। আমার কন্যা আনোশী!”
পরের পেজে এক ছোটো হাত বড়ো মানুষের এক আঙুল ধরে আছে। সেই ছবির নিচে লেখা,
–“আমার কন্যা ঘুমোলে আমার হাত ধরে রাখে। এখনই যেন হাত ধরে বলছে, বাবা তুমি-ই তো আমার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিবে।”
আনোশীর চোখ ভিঁজে গেল এই লেখাটুকু পড়ে। পরের পৃষ্ঠায় কোনো ছবি নেই। তবে অর্ধেক পাতা জুড়ে কিছু লেখা আছে।
–“আমার আগের ডায়েরিটা আমার বড়ো মেয়ে তাশুতিকে নিয়ে লেখা ছিল। বড়ো মেয়ের আগে তার মাকে নিয়ে লিখতাম। সেটা হারিয়ে আমি বিধ্বস্ত ছিলাম। যেদিন নতুন ডায়েরিটা হাতে পাই তখন আবার নতুন করে সবকিছু লেখার শক্তি বা মানসিকতা পাচ্ছিলাম না। দোটানায় ছিলাম, লেখা উচিত নাকি উচিত নয়? ভাবনায় ব্যস্ত থাকার মাঝেই হঠাৎ শালা সাহেব তার প্রেমিকাকে নিয়ে বাড়ি এলো। আমার হাতে এক চাঁদকে তুলে দিয়ে বলল,
“এই চাঁদ আমার। আমার কাঁধেই তার দায়িত্ব।”
আমার হাত তখন কাঁপছিল। তাকে প্রথম যখন দেখলাম পলক পড়ছিল না। কাকতালীয় ভাবে আমার কোলে এসে সে কাঁদছিলো না। চমৎকার ভাবে হাসছিল। তাই আর কী, তাকে নিয়ে আমার ভেঙে-চুড়ে যাওয়া ডায়েরী লেখার মানসিকতা আবার ফিরে এলো। তার চাঁদমুখী চেহারা স্কেচ করেই ডায়েরি লেখা শুরু হলো। আশা রাখছি তাকে নিয়েই আমার ডায়েরীটা শেষ হবে। আমার শেষ নিঃশ্বাসের পূর্বেও যেন তাকে দেখে প্রাণ জুড়াতে পারি।”
কী অদ্ভুত ব্যাপার। এতগুলো বছর আগের লেখাটা সত্যি হলো। আনোশী সত্যি সত্যি মৃত্যুর আগ অবধি তার বাবার পাশে ছিলো। যখন বাবা সময় ঘনিয়ে এসেছিলো তখন আনোশীর দিকে অদ্ভুত ভাবে চেয়ে হেসেছিল। সেই হাসি বা চাহনির মানে আনোশী আজ অবধিও বুঝতে পারেনি। ডায়েরীটা পড়ে যেন বুঝে ফেলল। অঝোর ধারায় নোনাজল গড়াতে লাগল গাল বেয়ে। একে একে সব পৃষ্ঠা পড়ল আনোশী। সব পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে আনোশী এক জায়গায় গিয়ে আটকে যায়। আনোশী ভেবেছিল সে ভুল দেখেছে। এজন্য আবার পড়ল। বারবার পড়ল। তাও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এক পৃষ্ঠায় এসে বাবা লিখেছে,
–“আল্লাহ্ আমায় রক্তের সন্তান না দিলেও দুজন আত্মার সন্তান দিয়েছে। দিয়েছে দুজন জান্নাত। আমার সন্তানহারা ঘরকে পরিপূর্ণ করেছে!”
এর মানে তাশুতিও বাবার রক্তের মেয়ে নয়? আনোশী আরও কয়েক পেজ পড়তেই বুঝল আসলেই তাশুতিও বাবার আপন মেয়ে নয়। আনোশীর মা মৃ* যন্ত্রণা নিয়ে সন্তান জম্ম দিয়েছিলো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই সন্তান ছিলো “মৃত”। যার কারণে তারা সন্তানের অভাব ভালোভাবেই বুঝতো। আনোশীর মা এতে পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। কিছুতেই তাকে সামলানো যাচ্ছিল না। তখনই একজন নার্স হাতে ফুটফুটে কন্যা সন্তান নিয়ে আসে এবং বলে,
–“এই বাচ্চাটার মা তাকে জম্ম দিয়ে কোথাও চলে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে, এটা আমার পাপের ফল। পাপের ফলকে আমি বয়ে বেড়াতে পারব না।”
বাচ্চা দেখে আনোশীর মা তখনই থেমে যায়। পরম মমতায় বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলল,
–“নিষ্পাপ বাচ্চারা কখনোই পাপের ফল হয়ে জম্মায় না। তারা হয় একেকজন জান্নাতি ফুল। যারা শুধু সুবাস ছড়ায়। ও এখন থেকে আমার মেয়ে। শুধু আমার, আমাদের।”
আনোশী আরও পড়বে এমন সময় দরজা খোলার শব্দ পেল। আনোশীর এতে ধ্যান ভাঙে। নিশ্চয়ই চাচী এসেছে। আনোশী ডায়েরিটা রেখে চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। চাচীকে কিছু বলবে তার জন্য মাথা উঁচু করে তাকাতেই আনোশী চমকে যায়। তার সামনে যে চাচী নয় বরং এক যুবক ছেলে দাঁড়িয়ে। তার চাইতেও অবাক করার বিষয় হচ্ছে, আনোশীর মনে হচ্ছে এই ছেলেটাকে আগে কোথাও দেখেছে। ছেলেটা করে চেয়ে আছে আনোশীর দিকে। আনোশীকে অবাক করে দিয়ে বলল,
–“আপনাকে আমি যেখানেই দেখি সেখানেই কাঁদেন। আপনি কী সবসময় কাঁদেন নাকি?”
আনোশীর বুঝতে বাকি রইল এটা অনুষ্ঠানের সেই ছবি তোলা ছেলেটা। ছেলেটার নামটাও মনে পরছে না। কী আশ্চর্য!
আনোশী নাম ছাড়াই ছেলেটার উদ্দেশ্যে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
–“তুমি এখানে কেন? কী করছো এ বাড়িতে?”
শিশির ফিচেল হেসে পালটা প্রশ্ন করে বলল,
–“আপনি এখানে কী করছেন?”
–“আমার বাবার বাড়ী, আমি থাকবো না? আশ্চর্য!”
শিশির মাথা চুলকে বলল,
–“সেটা তো আগে বলা উচিত ছিল। ভাবলাম আবার কোনো প্রেমিকের জন্য খোলামেলা ফ্ল্যাটে উঠেছেন নাকি?”
আনোশীর গা জ্বলে উঠল শিশিরের এ-কথা শুনে। কড়া ধমক দিয়ে বলল,
–“মুখ সামলে কথা বলো!”
–“আচ্ছা স্যরি স্যরি। আপনি যেভাবে কাঁদেন, মনে হয় বারবার ছ্যাঁকা খান। এত ছ্যাঁকা তো ছেলে মানুষ খায়। মেয়েরাও খেতে পারে আপনাকে না দেখলে জানা যেত না।”
–“আচ্ছা পাগল ছেলে তো আপনি। মেয়েদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানেন ন? যুক্তিহীন কথাবার্তা। আমি যা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দিন। সঙ্গে ভদ্রতা বজায় রাখুন!”
–“ওমা। অভদ্রতা দেখালাম কোথায়? আচ্ছা, বাদ দিন। আমার স্বভাব এরকমই। সোজাসাপ্টা বলা। মনে যা আসবে আমি তাই বলে দিই। আর হ্যাঁ, আমি আপনার এই দয়াময় বাবার বাড়ির পেইন গেস্ট। পাশের ফ্ল্যাটের মালিক ভাড়া দিয়েছে।”
আনোশী ভ্রু কুচকে তাকাল। শিশির থেমে আবার এক নাগাড়ে বলতে লাগল,
–“আমি চাকরিহারা বেকার মানুষ। স্বপ্ন বড়ো ফটোগ্রাফার হওয়া। কিন্তু ছোটো ফাংশনেও ফটোগ্রাফার হিসেবে কেউ ডাকে না। বাপে তো এসব শুনতেই পারে না। উলটো বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বললো ঘরে বসে না থেকে চাকরি করে খা। তাহলেই নাকি ফটোগ্রাফির ভূত মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে। বাসার জন্য কত জায়গায় ঘুরলাম। হোস্টেল, মেসের নোংরা পরিবেশের জন্যে থাকিনি। এজন্য খরচ বেশি হলেও বাসাই খুঁজতে শুরু করি। সাথে চিন্তা ছিলো ল্যাপ-তোষক ফ্যান আরও কতকিছু কিনতে হবে। এত টাকা পাবো কই? এসব ভাবতে ভাবতে এ বাড়ির হুদিশ পেলাম খুব গোপনে। বলল মালিকের ভাইয়ের বাড়িতে পেইন গেস্ট হিসেবে ভাড়া দিবে। তারপর আর কী, এখানেই থাকতে শুরু করলাম। এক্সট্রা তোষক, বালিশ, ফ্যান কেনা লাগলো না। মেঘ না চাইতেই জল-এর মতো সব পেয়ে গেলাম!”
অবশেষে শিশির থামল। আনোশী বেশ কয়েকবার শিশিরের কথায় ফোড়ন কাটতে চেয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? ভাঙা রেডিও’র মতো শিশির বলেই গেছে। অসম্ভব বিরক্ত হলো আনোশী। এত বাচাল ছেলে জীবনেও দেখেনি। প্রথম অভিজ্ঞতা হলো! আনোশী চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
–“রেডিও’র কর্মক্ষমতা শেষ?”
শিশির হেসে বলে,
–“হ্যাঁ শেষ। বিরক্ত হয়েছেন বুঝি?”
আনোশী আবারও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,
–“না, না। বিরক্ত হওয়া যায় নাকি?”
–“আমি জানি বিরক্ত হয়েছেন। তবে ব্যাপার না। একসময় বিরক্তি কেটে যাবে। আমার কন্ঠ এত ফাটাবাঁশ নয়, মেয়েদের মতো!”
সূক্ষ্ম এক খোঁচা দিয়ে হাতের কালো ব্যাগটা নিয়ে আনোশীর পাশ কাটিয়ে শিশির চলে গেল বাবার ঘরটার দিকে। আনোশী অবাক হয়ে শুধু দেখল। হুঁশ এলেই শিশিরের পিছু পিছু বাবার ঘরে এলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো শিশির একপাশে হাতের ব্যাগটা রেখে আলনার শেষপ্রান্ত থেকে একটা সাদা-মাটা চাদরটি মেলল। অতঃপর সেই চাদরটা বিছানার উপরে বিছিয়ে দিল। দরজার সামনে আনোশীকে দেখতে পেলে শিশির হালকা হেসে বলল,
–“চিন্তা করবেন না। এ ঘরের কোনো জিনিসেই হাত দেইনি। শুধু আলনার নিচের অংশটুকু চাদরের জন্যে ব্যবহার করি।”
~[ক্রমশ]